একদা নিজের ফেইক আইডি থেকে জামাই কে ম্যাসেজ দিলাম। প্রোফাইল পাকিস্তানি এক সুন্দরী মেয়ের ছবি দিয়ে ভরপুর। একটিভিটিস ভালো থাকার ফলে সহজে কেউ ধরতে পারবে না আইডি টা ফেইক। রিকুয়েস্ট লিস্ট এ একদিন ঝুলে থাকার পর জামাই তার ফ্রেন্ডলিস্টে জায়গা করে দিলো। এবং প্রথম নক তার কাছ থেকেই পেলাম,
_ হ্যালো বিউটিফুল।
_ হাই। কেমন আছেন?
_ ভালো। আপনি?
_ জ্বি ভালো। কি করেন?
_ অফিসে বসে বসে বোর হচ্ছিলাম। এখন আপনার সাথে কথা বলছি, ভালো লাগছে।
ম্যাসেজ দেখে আমার চোয়াল ঝুলে পড়লো। যাকে ফোন দিলে ব্যস্ততা দেখিয়ে ফোন কেটে দেয়, যে মানুষকে ম্যাসেঞ্জারে নক দিলে এন্সার আসে ” টক টু ইউ লেটার ” সেই মানুষ নাকি বোর হচ্ছিলো! আবার অন্য মেয়ের সাথে চ্যাট করছে দেখে ভালো লাগছে। দাঁতে দাঁত চেপে ম্যাসেজিং চালিয়ে গেলাম। এক পর্যায়ে জিজ্ঞেস করলাম,
_ আপনি কি বিবাহিত?
_ না, আমি ব্যাচেলর। আচ্ছা আপনার সাথে পরে কথা বলছি। বস ডাকছে।
আমার বুক ধরফর করছে। দু বছর ধরে যার সাথে সংসার করছি, উনি নাকি ব্যাচেলর। মরন!! চরিত্রহীন, লম্পট কোথাকার। ফ্লোরে বসে বসে কপাল চাপরাতে লাগলাম। এর একটা বিহীত করা দরকার। বেটাকে হাতে নাতে ধরতে হবে। আর তার জন্য ম্যাসেজিং কন্টিনিউ করা ফরয। মনে মনে নীল নকশা আঁকিয়ে ফেললাম। জামাই প্রতিদিন রাতে আমার পাশে বসে বসেই ফেইক আইডির সাথে চ্যাট করে। আমি কখনো রান্নাঘরে গিয়ে রিপ্লাই দেই আবার কখনো ফোন সাইলেন্ট করে পাশে থাকা অবস্থাতেই রিপ্লাই দেই। চ্যাটিং করার সময় সে আবার মুচকি মুচকি হাসে! জামাই যতবার ফেইক আইডি তে ম্যাসেজ পাঠায়,
_ আপনি এত সুন্দর কেনো? ততবার আমার ভেতরটা তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে। ঠাঁকুমার ঝুলির শাকচুন্নির সেই বিশেষ উক্তি মনে পড়ে যায়, ” রূপে গুনে আমি নই কম কোনো অংশে ” এভাবেই চলতে থাকে আরো কয়েকদিন।সেদিন সন্ধ্যায় হঠাৎ করে জামাই ফেইক আইডিতে প্রপোজ করে বসে।
_ একটা কথা অনেকদিন ধরে বলতে চাচ্ছিলাম।
_ কি কথা?
আমি না আপনাকে ভালোবাসি। আই লাভ ইউ। তাড়াহুড়োর কিছু নেই। আপনি সময় নিন। এন্সার পরে জানালেই হবে। তবে আমি কিন্তু সত্যিই বলেছি। আমার তো মাথায় হাত। এই ছিলো ওর মনে?! বাসায় সুন্দরী বউ রেখে ফেইক আইডিতে আই লাভ ইউ বলা হচ্ছে? সংসারই করবো না আর ওর সাথে। ভুল মানুষকে বিয়ে করেছিলাম। বিশ্বাস করেছিলাম। সেই বিশ্বাস এভাবে ত্রিখন্ডিত করলো? মনের দুঃখে কাঁদতে শুরু করি। আজই বাসা ছেড়ে চলে যাবো। আলমারিতে থেকে কাপড় বের করে গোছানো শুরু করি। এমন সময় আবার টুং করে ম্যাসেঞ্জারে নক আসে,
_ তুমি তো একটু কিছু হলেই ব্যাগ গুছিয়ে বাপের বাড়ি রওনা দাও। এখন আবার গুছানো শুরু করো না। রাতে রুই মাছ দিয়ে ভাত খাবো। আলু, টমেটো দিয়ে মজা করে ঝোল রাঁধবে। ফোনের হাতে নিয়ে অসহায় ভঙ্গিতে ধপ করে ফ্লোরে বসে পড়লাম। এইডা কিছু হইলো?
গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প











