একজন কৃষকের গল্প* বলি, যার একটি ঘোড়া ও একটি ছাগল ছিলো।
একদিন ঘোড়াটি অসুস্থ হয়ে পড়লে কৃষক খুবই উদ্বিগ্ন হলেন।ওটি তার অতি আদরের। তিনি একজন প্রাণী-ডাক্তার ডাকলেন।
ডাক্তার অসুস্থ ঘোড়াকে পরীক্ষা করে বললেন, “ঘোড়াটি ভাইরাস আক্রান্ত হয়েছে। একে তিন দিন পর্যন্ত ঔষধ দিয়ে দেখতে হবে। যদি অবস্থার উন্নতি না হয়, তবে সংক্রমণ এড়ানোর জন্য মেরে ফেলতে হতে পারে।” পাশে থাকা ছাগলটি সবকিছু দেখছিলো।
পরদিন ঘোড়াটিকে ঔষধ দেওয়া হলো।
সবাই চলে গেলে পর, ছাগলটি ঘোড়ার কাছে এসে বললো, “সাহস করো,বন্ধু! গায়ে শক্তি নিয়ে ওঠে দাঁড়াও। নয়তো ওরা তোমাকে ঘুম পারিয়ে দেবে।”
দ্বিতীয় দিনেও ঔষধ দিয়ে তারা চলে গেলো।
ছাগলটি আবারও কাছে এসে বললো, “আরে ওঠো না, ভাই! তুমি তো সত্যিই মারা পড়বে দেখছি! এই যে আমি তোমাকে সাহায্য করছি, তুমি শক্তি দাও। এক… দুই… তিন।”
তৃতীয় দিনে ডাক্তার এসে ঔষধ দিলেন এবং মালিককে বললেন, “আপনার ভাগ্য খারাপ। ঘোড়াটিকে মনে হয় বাঁচানো যাবে না। আগামিকাল ঘোড়াটিকে সত্যিই মাটিতে পুঁতে দিতে হবে,
না হলে ভাইরাস ছড়িয়ে মানুষ ও প্রাণী সকলের ক্ষতির কারণ হবে।
তারা চলে যাবার পর ছাগলটি কাছে এসে বললো, “শুনো বন্ধু ঘোড়া! এখন না হলে আর হবে না। তুমি চেষ্টা করো, আমিও শক্তি দিচ্ছি। এই যে…এক…দুই…তিন, হ্যাঁ আস্তে আস্তে শক্তি দাও। আরে বাহ্! তুমি তো পারছো…হ্যাঁ…আরেকটু। হাহ্! এই যে তুমি তো দাঁড়িয়ে গেছো, ভাই! চমৎকার!…তুমি তো অসাধ্য সাধন করলে! এবার দেখো তো হাঁটতে পারো কি না!”
কৃষক হঠাৎ এসে উপস্থিত! তিনি এসে দেখলেন, তার ঘোড়াটি মাঠজুড়ে দৌড়াচ্ছে। এ দৃশ্য দেখে খুশিতে আত্মহারা কৃষক চিৎকার করে বলতে লাগলেন, “তোমরা এসে দেখো…আমার ঘোড়াটি সুস্থ হয়ে গেছে! এটি দৌড়াচ্ছে। আমি মুগ্ধ! ছাগলটিকে জবাই করে আমরা একটি ভোজের আয়োজন করে মজা করবো!”
———————–
ব্যক্তিগত জীবনে এরকম অভিজ্ঞতা পেয়েছি অনেকবার। দেখেছি আরও বেশি। ভালো থাকাটাই সবচেয়ে কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভালো করতে থাকাটা জীবনের কঠিনতম সংগ্রামের একটি। কর্মজীবনে যারা গাধার খাটুনি খেটেও যথার্থ মূল্যায়ন পাচ্ছেন না, তবু পৈত্রিক স্বভাব নিয়ে
প্রতিষ্ঠানের জন্য শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন, সেসব মানব সন্তানের জন্য গল্পটি উৎসর্গ করছি।