০৫. লর্ড জন রক্সটন
লর্ড জন রক্সটন আমাকে ভিগো স্ট্রীট দিয়ে নিয়ে গেলেন। একটা অপরিষ্কার প্রবেশ পথ দিয়ে এগিয়ে বিখ্যাত অভিজাত পাড়ায় ঢুকলাম আমরা। মেটে রঙের লম্বা গলির মাথায় একটা দরজা খুলে তিনি বাতি জ্বেলে দিলেন। রঙিন শেডের ভিতর থেকে কয়েকটা বাতি একসাথে জ্বলে উঠল। বিরাট ঘরটা ভরে উঠল গোলাপী ছটায়। অসাধারণ আয়েশ আর মার্জিত রুচির পাশাপাশি ঘরটাতে পৌরুষের ছাপ রয়েছে। রুচিবান, ধনী আর অবিবাহিত যুবকের অগোছালো একটা ভাব সহজেই ধরা পড়ে। দামী নরম পশমী কার্পেট ছাড়াও রামধনু রঙের টুকরো টুকরো কার্পেট ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে মেঝেতে সম্ভবত পুবদেশীয় কোন বাজার থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। দেয়ালের ছবিগুলো দেখে আমার আনাড়ি চোখেও ধরা পড়ল যে ওগুলো মূল্যবান, দুর্লভ সংগ্রহ। সারি সারি কাপ, মেডেল আর শীল্ড দেখে বোঝা যায়, খেলাধুলা, দৌড় ঝাপ সবদিকেই দক্ষতা আছে রক্সটনের।
ফায়ার প্লেসের কাছে কারুকাজ করা তাকটার উপরে দেয়ালে ঝুলানো রয়েছে দুটো বৈঠা-গাঢ় নীল একটা বৈঠার উপর আড়াআড়ি ভাবে রাখা আরেকটা গোলাপী রঙের বৈঠা; অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের নৌকা বাইচ বিজয়ীর পরিচয় বহন করছে।
দেয়ালে আরও রয়েছে নানা ধরনের বিচিত্র প্রাণীর মাথা, পৃথিবীর কোনো দেশের জীবজন্তুই বাদ নেই; সেগুলোর মধ্যে সাদা গন্ডারের মাথাটাই সবার আগে দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
দুর্লভ পুরনো টেবিলটার সামনে একটা আর্মচেয়ারে আমাকে বসিয়ে দুটো বড় গ্লাসে হুইস্কি আর সোডা ঢেলে একটা গ্লাস আমার সামনে নামিয়ে রেখে নীরবে উল্টোদিকের একটা চেয়ারে বসলেন রক্সটন। একটা সিগার তুলে নিয়ে রূপার চুরুটদানীটা আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে চকচকে চোখে একদৃষ্টে আমাকে দেখতে লাগলেন। নীল চোখ, অনেকটা বরফগলা সরোবর রঙের।
চুরুটের নীলচে ধোঁয়ার ভিতর দিয়ে ভাল করে দেখলাম তার চেহারা। অবশ্য খবরের কাগজের ছবি থেকে এই মুখ আমার কাছে আগে থেকেই সুপরিচিত। টিয়াপাখির ঠোঁটের মত নাক, বসা গাল, লালচে চুল, পুরুষালী গোঁফ, আর চিবুকের উপর উদ্ধত একগোছা দাড়ি। রোদ আর খোলা বাতাসে গায়ের চামড়া মাটির টবের মত সুন্দর লালচে হয়েছে। শক্ত করে চুরুটটা কামড়ে ধরে অস্বস্তিকর নীরবতার মাঝে তিনি অনেকক্ষণ একদৃষ্টে চেয়ে রইলেন আমার দিকে। অসহ্য নীরবতা।
শেষ পর্যন্ত নীরবতা ভাঙলেন তিনি। বললেন, আমরা দুজনেই আজ একটা অস্বাভাবিক কাজ হাতে নিলাম, কি বলেন?
অবশ্যই, একটু চিন্তা করে জবাব দিলাম আমি।
আগে থেকে নিশ্চয়ই এমন কোন চিন্তা ছিল না আপনার?
না। হলে যাবার সময়েও ভাবিনি এভাবে জড়িয়ে পড়ব।
আমিও না। কিন্তু কথা হচ্ছে শেষ পর্যন্ত আমরা দুজনেই ফেঁসে গেলাম। মাত্র তিন সপ্তাহ আগে ফিরেছি ইউগান্ডা থেকে, তারপর আবার গিয়েছিলাম স্কটল্যান্ডে একটা চুক্তি সই করতে। বেশ কর্মব্যস্ততা, কি বলেন?
কিন্তু সেটা করেছেন আপনার ব্যবসার খাতিরেই। আমি দৈনিক গেজেটে কাজ করি, এই সবই আমার লাইনের।
অবশ্যই, সেটা আপনি আগেই খুলে বলেছেন। একটা ছোট্ট কাজ আছে আমার, আপনি যদি সাহায্য করেন বাধিত হব।
সাহায্য করতে পারলে অবশ্য আনন্দিতই হব আমি।
ঝুঁকি নিতে রাজি আছেন তো?
কেমন ঝুঁকি?
মানে, আমি ব্যালিঞ্জারের কথা বলছি, ঝুঁকিটা ওঁকে নিয়ে। ব্যালিঞ্জারের কথা। নিশ্চয়ই জানেন আপনি?
না তো?
কোথায় ছিলেন এতদিন? স্যার জন ব্যালিঞ্জারের নাম শোনেননি। উত্তরাঞ্চলের সবচেয়ে ভাল জকি। সমতল মাঠ হলে অবশ্য সব সময়েই তাকে হারাতে পারি আমি, কিন্তু ঘোড়ার হার্ডল রেসে তিনি আমার ওস্তাদ। লুকানো ছাপানোর কিছু নেই, প্রতিযোগিতার সময় ছাড়া রাতদিন তিনি কেবল মদ খান। আর এমনই খাওয়া খান বলেন, গড়পড়তা পুষিয়ে নিচ্ছি! আবোল তাবোল বকতে আরম্ভ করেছেন গত মঙ্গলবার থেকে। ডাক্তার বলেছেন, এই সময়ে কিছু খাবার পেটে না পড়লে বাদবাকি খোদার ইচ্ছা। কিন্তু মুশকিল হয়েছে বিছানায় রিভলভার আছে একটা, সবাইকে সাবধান করে দিয়েছেন, কেউ কাছে যাবার চেষ্টা করা মাত্র গুলি করবেন। খুবই গোঁয়ার লোক, গুলি চালাতে ওস্তাদ। কিন্তু তাই বলে একজন গ্র্যান্ড ন্যাশনাল বিজয়ী জকিকে এভাবে মরতে দেয়া যায় না, কি বলেন?
কি করতে চান আপনি?
ভাবছি আমরা দুজনে যদি একসাথে ছুটে যাই ওঁর দিকে তাহলে আমাদের একজনকে হয়তো গুলি করার সুযোগ পাবেন তিনি, কিন্তু অন্যজন কাবু করতে পারব ওঁকে। তারপর টেলিফোনে পাকস্থলী পাম্পের জন্যে খবর পাঠালে ওরাই বাদবাকি ব্যবস্থা করবে এই ঘরের ঠিক ওপরের ঘরেই আছেন তিনি।
আমি যে খুব একটা সাহসী লোক তা নয়। আমার আইরিশ চিন্তাধারায় অজানা অচেনাকে কতকটা অহেতুক ভাবেই আমি ভয় পাই। কিন্তু পাছে লোকে ভীতু মনে করে সেই ভয়ে, আত্মসম্মান রক্ষার খাতিরে আগুনে ঝাপ দিতেও দ্বিধা করব না আমি। রক্সটনকে বললাম, আমি সাহায্য করতে প্রস্তুত।
লর্ড রক্সটন বিপদের কথা আবার স্মরণ করিয়ে দিয়ে আরও উস্কে দিলেন আমাকে, কথা বলে সময় নষ্ট করে লাভ নেই, চলুন!
উঠে দাঁড়ালাম আমি। রক্সটনও দাঁড়ালেন।
ঠেলে আমাকে আবার চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে মুচকি হেসে হাত বাড়িয়ে দিলেন রক্সটন। এখন থেকে আমরা বন্ধু-তুমি আমাকে জন বলে ডাকতে পারো।
জ্যাক ব্যালিঞ্জারের কি হবে?
আজ সকালে আমি নিজেই তার ব্যবস্থা করেছি। আমার কিমোনোর নিচের দিকে কেবল একটা ফুটো হয়েছে-মাতাল অবস্থায় হাত কেঁপে তার তাক ঠিক হয়নি। সপ্তাহখানেকের মধ্যে ঠিক হয়ে যাবেন। যাক, তুমি আমার তরুণ বন্ধু, কিছু মনে করোনি তো? প্রফেসর সামারলী হলেন বুড়ো মানুষ, যত ঝামেলা আমাদের দুজনকেই পোহাতে হবে। অত্যন্ত বিপদসঙ্কুল জায়গা আমাজন। ওখানে নির্ভরযোগ্য বন্ধু দরকার। আচ্ছা বলো তো, তুমিই কি সেই ম্যালোন আয়ারল্যান্ডের জাতীয় দলের পক্ষে যার খেলার সম্ভবনা আছে?
রিজার্ভে হয়তো আমার নাম থেকে থাকবে।
তাই বলো, চেহারাটা চেনা চেনা মনে হচ্ছিল। রিচমন্ডের বিরুদ্ধে যে ট্রাই করেছিলে তুমি, সত্যিই অপূর্ব! এত সুন্দর কাটিয়ে নিয়েছিলে—এই মৌসুমে ওরকম সুন্দর আর কোন টাচ ডাউন দেখেছি বলে মনে পড়ে না। রাগবি ম্যাচ আমি পারতপক্ষে মিস করি না।
ধন্যবাদ।
যাক, আসল কথায় আসা যাক। জাহাজ কবে কবে ছাড়বে তা টাইমস-এর প্রথম পাতায় দিয়েছে। তোমার আর প্রফেসরের যদি কোন অসুবিধা না থাকে তবে আমার মনে হয় সামনের বুধবারে পারা যাচ্ছে যে জাহাজটা ওটা নেয়াই ভাল হবে। তোমার সাজ সরঞ্জামের কতদূর কি?
আমার কাগজ থেকে ওরাই সব ব্যবস্থা করবে।
গুলি ছোড়ায় হাত কেমন তোমার?
টার্গেট বড় হলে প্রায়ই লাগাতে পারি।
হায় আল্লাহ! এই অবস্থা। দক্ষিণ আমেরিকায় গুলি সোজা চালাতে না জানলে বিপদ আছে। কারণ প্রফেসর চ্যালেঞ্জার যদি পাগল বা মিথ্যাবাদী না হয়ে থাকেন তবে আমরা বহু অদ্ভুত জিনিস দেখব ওখানে। অস্ত্র আছে তোমার?
ওক কাঠের তৈরি আলমারিটার সামনে এসে দাঁড়ালেন রক্সট্রন। সেটা খুলতেই আমার চোখে পড়ল সারি সারি ঝকঝকে বন্দুক আর রাইফেলের নল। পাইপ অরগ্যানের মতই দেখাচ্ছে।
দেখি আমার এখান থেকে তোমার জন্যে কোন ব্যবস্থা করতে পারি কিনা। বলে একটা একটা করে বিভিন্ন ধরনের রাইফেল বের করে সশব্দে খুলে আবার বন্ধ করে যথাস্থানে রাখতে লাগলেন। কোনো মা-ও বোধহয় ছেলেমেয়েকে এতটা যত্ন করেন না।
এটা হচ্ছে ব্ল্যান্ডের .৫৭৭ অ্যাক্সাইট এক্সপ্রেস। সাদা গন্ডারটা এটা দিয়েই শিকার করেছিলাম আমি। আর দশগজ এগুতে পারলেই ওর শিকারের খাতায় আমার নামটা লেখাতে হত!
আরেকটা রাইফেল বের করলেন জন। এই যে—আরেকটা প্রয়োজনীয় অস্ত্র। .৪৭০, টেলিসকোপিক সাইট, ডবল নিক্ষেপকারী—সাড়ে তিনশো গজ পর্যন্ত খুব মারাত্মক। তিন বছর আগে এটা ব্যবহার করেছিলাম পেরুর ক্রীতদাস ব্যবসায়ীদের উপর।
মানে? আপনি মানুষ খুন করেছেন ওই রাইফেল দিয়ে!
হ্যাঁ, কেবল একটা নয়—একদল লোক মেরেছি। মানুষের জীবনে এমনও সময় আসে যখন অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে না পারলে সারা জীবন গ্লানি বহন করতে হয়। আমিও তেমনি রুখে দাঁড়িয়েছিলাম অত্যাচার আর অবিচারের বিরুদ্ধে। পেড্রো লোপেজকে খতম করেছিলাম পুটোমায়ো নদীর ফিরাসোতে। সে ছিল ওদের সর্দার।
সুন্দর একটা তামাটে আর রূপালী রঙের রাইফেল বের করলেন রক্সটন।
এতে পাঁচটা গুলি পর পর বেরিয়ে আসে। এটার হাতে জানটা সঁপে দিয়ে নিশ্চিন্ত হতে পারো তুমি। আলমারি বন্ধ করে রাইফেলটা আমার হাতে তুলে দিলেন তিনি। তারপর জিজ্ঞেস করলেন, আচ্ছা, প্রফেসর চ্যালেঞ্জার সম্বন্ধে তুমি কি জানো?
গতকাল পর্যন্তও তাঁকে আমি চিনতাম না।
আমিও না। আশ্চর্য, আমরা কেউ তাঁকে চিনি না অথচ তাঁর নির্দেশমত দক্ষিণ আমেরিকাতে যাচ্ছি। অন্যান্য বিজ্ঞানীরা কিন্তু তাকে খুব একটা পছন্দ করেন বলে মন হলো না। তা তুমি এটার মধ্যে জড়ালে কি করে?
সকালবেলার ঘটনার সংক্ষেপে বর্ণনা দিলাম আমি। খুব মনোযোগ দিয়ে সব ঘটনা শুনে দক্ষিণ আমেরিকার একটা ম্যাপ বিছালেন তিনি টেবিলে।
আমার বিশ্বাস তোমাকে যা বলেছেন তার প্রতিটি অক্ষর সত্যি, সরলভাবে বললেন তিনি। দক্ষিণ আমেরিকা যে কেমন জায়গা সে সম্বন্ধে আমার কিছুটা ধারণা আছে। ড্যারিয়েন থেকে ফুয়েগো পর্যন্ত এলাকা সম্ভবত পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর আর চমকপ্রদ। মানুষ এখনও ভাল করে চেনে না এই সব এলাকা। আয়তনে প্রায় ইউরোপের সমান। এই দুর্গম জঙ্গলে কোন কিছু আবিষ্কারেই আমি অবাক হব না।
রক্সটনকে তার ঘরের গোলাপী আভার মধ্যে রেখে বিদায় নিলাম। তিনি তখনও প্রিয় রাইফেলটায় তেল দিতে দিতে মুচকি হাসছিলেন। বুঝলাম, নতুন অভিযানের অজানা ঝুঁকি তার মনে রোমাঞ্চ জাগিয়েছে।
ঘটনাবহুল দিনের শেষে ক্লান্ত দেহে বার্তা-সম্পাদক মিস্টার ম্যাকারডলকে পুরো ব্যাপারটা জানালাম আমি। শুনে পরদিন সকালেই পত্রিকা প্রধানের সাথে কথা বলে সব ঠিকঠাক করে দেবেন বলে জানালেন তিনি। আমার প্রতি নির্দেশ হলো আভিযানের পুরো রিপোর্ট আমি মিস্টার ম্যাকারডলকে পাঠাব। প্রফেসর চ্যালেঞ্জার যদি অনুমতি দেন তাহলে সেগুলো সম্পাদনা করে সাথে সাথেই ছাপা হবে, নইলে প্রফেসরের ইচ্ছানুযায়ী পরে ছাপা হবে।
ফোন করে সাংবাদিক পেশার গোষ্ঠী উদ্ধারকরা বেশ কিছু মন্তব্য শোনার পর প্রফেসরের কাছ থেকে শুনলাম, আমরা কোন্ জাহাজে যাচ্ছি জানালে প্রাথমিক নির্দেশ তিনি জাহাজেই পৌঁছে দেবেন।
ফ্রান্সিসকা জাহাজ। টিপ টিপ করে বৃষ্টি পড়ছে, কুয়াশাও রয়েছে। তিনজন লোক চকচকে বর্ষাকোট পরে এগিয়ে আসছেন ঘাটের দিক থেকে। তাদের আগে আগে আসছে একজন কুলি; ট্রলিতে উঁচু করে বোঝাই করা হয়েছে ট্রাঙ্ক, মোড়ক আর রাইফেলের বাক্স। প্রফেসর সামারলী পা টেনে টেনে মাথা নিচু করে হাঁটছেন। মনে হচ্ছে, এই অভিযানের সাথে নিজেকে জড়িয়ে ফেলে এরই মধ্যে নিজের উপরেই রাগ হচ্ছে তাঁর।
এমন সময় পিছন থেকে একটা গলার আওয়াজ এল–প্রফেসর চ্যালেঞ্জার; কথামত বিদায় জানাতে এসেছেন।
না, আমি আর জাহাজে উঠব না, বললেন প্রফেসর। অল্প কথাই বলার আছে আমার, আর তা সব এই খামের ভিতরেই লেখা আছে। কিন্তু আমাজনের পাড়ে মানাওস শহরে পৌঁছানোর আগে খোলা যাবে না চিঠি। কবে কখন খুলতে হবে তাও লেখা আছে খামের উপর।
আমি কিছু বলতে গেলাম, কিন্তু তার আগেই হাত তুলে আমাকে থামিয়ে দিয়ে চ্যালেঞ্জার বললেন, না, ম্যালোন, তোমার সংবাদ প্রেরণে কোন বিধি নিষেধ প্রয়োগ করব না আমি কিন্তু ঠিক কোথায় যাচ্ছ তা ফাঁস করা চলবে না। আর কোন খবরই তোমরা ফিরে না আসা পর্যন্ত ছাপানো চলবে না।
বিদায় নিয়ে গোড়ালির উপর সাঁই করে ঘুরে ফিরে গেলেন চ্যালেঞ্জার তার ট্রেনের দিকে।
আমাদের যাত্রা শুরু হলো।