০৩. দরজা ভাল করে বন্ধ করতে না করতেই
দরজা ভাল করে বন্ধ করতে না করতেই খাবার ঘরের দরজা দিয়ে ছুটে বেরিয়ে এলেন মিসেস চ্যালেঞ্জার। অগ্নিমূর্তি মহিলার। স্বামীর পথ আগলে দাঁড়ালেন উনি-যেন ক্রুদ্ধ মুরগী পথ আগলে দাঁড়িয়েছে বিশাল এক বুলডগের! বোঝা গেল যে আমাকে বেরুতে দেখেছেন প্রফেসর-গিন্নী, কিন্তু আবার ফিরে আসাটা খেয়াল করেননি।
একটা অসভ্য জানোয়ার তুমি, জর্জ, চিৎকার করে বললেন মিসেস চ্যালেঞ্জার, এমন সুন্দর ভদ্র যুবকটিকে মেরেছ।
বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে পিছনের দিকে দেখালেন প্রফেসর। এই যে আমার পিছনে বহাল তবিয়তেই আছে সে।
প্রফেসর-গিন্নীর যেন গুলিয়ে যাচ্ছে সব—সঙ্গত কারণেই। অপ্রস্তুত ভাবে বললেন মহিলা, আপনাকে খেয়াল করিনি আমি।
আমি ঠিকই আছি, ম্যাডাম, তাকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করলাম আমি।
ওহ! মেরে আপনার মুখে দাগ করে দিয়েছে। জর্জ, তুমি একটা আস্ত জানোয়ার। প্রত্যেক সপ্তাহে একই অবস্থা আর সবাই মুখরোচক গল্প করে তোমাকে নিয়ে। আমার ধৈর্যের বাঁধ তুমি ভেঙে দিয়েছ।
বাজে বোকো না।
আমি বাজে বকছি না। আর এটা গোপনীয় কিছু নয়, পাড়ার সবাই জানে। তোমাকে নিয়ে সবাই ঠাট্টা মশকরা করে। মান মর্যাদা নেই তোমার? তোমার মত লোক কোথায় বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সম্মানীয় প্রফেসর হবে, হাজার হাজার ভক্ত ছাত্র-ছাত্রী থাকবে, আর তা না করে গুন্ডামি করে বেড়াচ্ছ—কোথায় তোমার মান সম্মান?
আমার মান আমার কাছে, জবাব দিলেন প্রফেসর।
আমাকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে শেষ করলে তুমি। তুমি একটা সাধারণ গুন্ডাতে পরিণত হয়েছ।
চুপ করো, জেসি।
কেন চুপ করব, তুমি একটা নিতান্ত নিকৃষ্ট মানুষ।
পরে কিন্তু আমার দোষ দিও না। বলে আমাকে অবাক করে দিয়ে জেসিকে তুলে নিলেন প্রফেসর। একটা উঁচু কালো মার্বেল পাথরের স্তম্ভের উপর বসিয়ে দিলেন। প্রায় সাত ফুট উঁচু হবে, ভাল করে ভারসাম্য রাখতে পারছেন না জেসি, ভয়ে সিটিয়ে গেছেন।
নামিয়ে দাও বলছি! চিৎকার করে উঠলেন তিনি।
প্লীজ বলো, তবে নামাব।
অমানুষ, এই মুহূর্তে নামিয়ে দাও আমাকে।
জেসির কথায় ভ্রক্ষেপ না করে আমাকে বললেন চ্যালেঞ্জার, পড়ার ঘরে এসো, ম্যালোন।
স্যার, মহিলার অবস্থা দেখে বললাম আমি।
এই দেখো ম্যালোনও তোমার জন্যে সুপারিশ করছে। প্লীজ বলো, নামিয়ে দেব।
ওহ, একটা বর্বর তুমি। প্লীজ, প্লীজ।
তাঁকে নামিয়ে দিলেন প্রফেসর।
ভদ্রতা বজায় রেখে চলতে হবে তোমাকে, জেসি। ম্যালোন একজন সাংবাদিক, কি না কি লিখে দেবে, আমাদের পাড়ায় ডজন খানেক বেশি বিক্রি হবে ওই কাগজ।
আপনি সত্যিই একজন বেয়াড়া স্বভাবের মানুষ, স্যার। রাগের সাথে বললাম আমি।
হো হো করে হাসিতে ফেটে পড়লেন প্রফেসর। এখনই আবার মিল হয়ে যাবে আমাদের। বলে বিরাট হাত দুটো জেসির দুই কাঁধে রেখে বললেন, তুমি যা বলো সবই ঠিক। তোমার কথা মেনে চললে আমি অনেক ভাল হতে পারতাম। কিন্তু তাতে আমি ঠিক জর্জ এডওয়ার্ড চ্যালেঞ্জার হতে পারতাম না। পৃথিবীতে ভাল ভাল মানুষ অনেক আছেন কিন্তু জি. ই. সি. আছে একজনই।
মিনিট দশেক আগে যে ঘর থেকে নাটকীয় ভাবে বেরিয়েছিলাম আমরা আবার সেই ঘরেই ফিরলাম।
হাতের ইশারায় একটা চেয়ার দেখিয়ে এক বাক্স চুরুট ঠেলে দিলেন প্রফেসর, আসল স্যান জুয়ান–কলোরাডো।
একটা চুরুট তুলে নিয়ে দাঁতে কামড়ে কাটতে যেতেই হা হা করে উঠলেন প্রফেসর। করো কি! করো কি! ক্লিপ করে কাটতে হবে, তাও খুব সম্ভ্রমের সাথে। এখন আরাম করে হেলান দিয়ে আমার কথা শোনো, তোমার কোন প্রশ্ন থাকলে কথা শেষ হলে পরে জিজ্ঞেস করবে, আমার কথার মাঝখানে কথা বলবে না।
প্রথম কথা হচ্ছে, সঙ্গত কারণে বের করে দেয়ার পরেও আবার কেন তোমাকে বাড়িতে ঢুকতে দিলাম। কারণটা হচ্ছে ওই পুলিশ অফিসারের কাছে তোমার মন্তব্য। তোমার পেশার লোকদের কাউকেই এক টেবিলে বসে কথা বলার যোগ্য মনে করি না আমি। তোমার আজকের আচরণে বুঝলাম যে, সাংবাদিক হলেও তুমি আর সবার চেয়ে উন্নত ধরনের, তুমি ভিন্ন রকম চিন্তাধারা পোষণ করো। ছাইটা তোমার বাম দিকে বাঁশের টেবিলে রাখা ছোট্ট জাপানী অ্যাশট্রেতে ফেলো।
যেন ক্লাশ নিচ্ছেন এমনভাবে একটানা কথাগুলো বলে গেলেন প্রফেসর। টেবিলের উপর ছড়ানো কাগজের স্তুপের মাঝ থেকে একটা জীর্ণপ্রায় স্কেচ খাতা হাতে নিয়ে রিভলভিং চেয়ার ঘুরিয়ে আমার মুখোমুখি হলেন।
এখন তোমাকে আমি দক্ষিণ আমেরিকার কথা বলব। কোন রকম মন্তব্য শুনতে চাই না। আর একটা কথা একবার যা বলব তা আমার অনুমতি ছাড়া পুনরাবৃত্তি করা চলবে না। অনুমতি হয়তো কোনদিনও না-ও দিতে পারি আমি পরিষ্কার?
কঠিন শর্ত আরোপ করলেন আপনি—একটা ছোট্ট রিপোর্ট…
সঙ্গে সঙ্গে নোট বইটা আবার টেবিলে রেখে দিলেন চ্যালেঞ্জার। কথা এখানেই শেষ—আসতে পারো তুমি।
না, না, যে কোন শর্তই আমি মানতে রাজি আছি। বুঝতে পারছি, রাজি না হয়ে উপায় নেই আমার।
না, কোন পথই খোলা নেই তোমার। ঠিক আছে আমি কথা দিচ্ছি।
ভদ্রলোকের কথা তো?
একেবারে মরদ কা বাত হাতী কা দাঁত।
বেশ। তুমি হয়তো শুনেছ, দুবছর আগে আমি দক্ষিণ আমেরিকায় গিয়েছিলাম অনুসন্ধানের কাজে। আমার আবিষ্কার পৃথিবীর বিজ্ঞানের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। আমার যাওয়ার আসল উদ্দেশ্য ছিল ওয়ারলেস আর বেটসএর কিছু কিছু সিদ্ধান্ত নিজে পরখ করে দেখা। কিন্তু একটা আশ্চর্য ঘটনা আমার অনুসন্ধান আর চিন্তাধারার মোড় ঘুরিয়ে আমাকে সম্পূর্ণ এক ভিন্ন পথে নিয়ে যায়।
তুমি নিশ্চয়ই জানো কিংবা হয়তো এই আধা-শিক্ষিত বয়সে নাও জানতে পারো-আমাজন নদীর আশেপাশে বিস্তর এলাকা আছে যেখানে এখনও মানুষের পা পড়েনি। অনেক উপনদীই আমাজনে এসে মিশেছে যাদের কোন চিহ্ন পাওয়া যাবে না আধুনিক মানচিত্র বা চার্টে। এরকম একটা উপনদীর সঙ্গমস্থলে কিউকামা ইন্ডিয়ানদের বাস। ওদের কিছু লোকের রোগ আমি ভাল করে দিয়েছিলাম। তাছাড়া আমার ব্যক্তিত্বও ওদের মনে গভীর দাগ কাটে। তাই আবার আমি যখন ওদের মধ্যে ফিরলাম তখন সবাইকে আমার জন্যে অধীর ভাবে অপেক্ষা করতে দেখে অবাক হইনি। ওদের ইশারা ভাষায় বুঝলাম যে কেউ একজন খুব অসুস্থ, আমার চিকিৎসা অতি জরুরী। ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেখলাম রোগী একটু আগেই মারা গেছেন। অবাক হয়ে লক্ষ করলাম রোগী রেড ইন্ডিয়ান নন—তার গায়ের রঙ সাদা। পরনে শতছিন্ন জামা, চেহারায় দীর্ঘ দিন ধরে কঠিন অবস্থার সঙ্গে সংগ্রাম করার ছাপ। স্থানীয় লোকেরা কেউ চেনে না ওঁকে—একাকী মরণাপন্ন অবস্থায় বনের ভিতর থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন লোকটি।
পিঠে ঝুলানো ক্যানভাস ব্যাগটা ওঁর পাশেই পড়ে ছিল, সেটা পরীক্ষা করে জানতে পারলাম, তার নাম মেপূল হোয়াইট, আর ঠিকানা: লেক এভিনিউ, ডেট্রয়েট, মিশিগান। ব্যাগের ভিতরে আর যা পাওয়া গেল তা থেকে স্পষ্টই বোঝা যায় যে লোকটি একজন চিত্র শিল্পী এবং কবি, মনের খোরাক জোগাতে বেরিয়েছিলেন। ব্যাগে আরও পাওয়া গেল কয়েকটা হাতে আঁকা ছবি, একটা রঙের বাক্স, একবাক্স রঙীন চক, কয়েকটা ব্রাশ আর তোমার সামনে ওই কালিদানীর ওপর রাখা হাড়টা। ব্যাক্সটারের লেখা এক কপি মথ এবং প্রজাপতি বইও ছিল ব্যাগে।
চলে আসব এমন সময়ে নজরে পড়ল মেপলের ছিন্ন জ্যাকেটটা থেকে কি যেন বেরিয়ে আছে। এই স্কেচ খাতাটা। তোমাকে দিচ্ছি খাতাটা, এক এক করে পাতা উন্টে দেখো।
একটা সিগার ধরিয়ে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আমার মুখের ভাব লক্ষ করতে লাগলেন প্রফেসর।
আশ্চর্য কিছু বেরিয়ে পড়বে আশা নিয়ে খাতাটা খুললাম আমি, তবে সেটা কি ধরনের চমক হতে পারে তার কোন ধারণাই ছিল না আমার। প্রথম পাতা দেখে নিরাশ হলাম, একটা খুব মোটা মানুষের ছবি আঁকা রয়েছে। নিচে লেখা, সেইল বোটের জিমি কোলভার। পরের কয়েক পাতায় ছোট ছোট স্কেচে দেখানো হয়েছে ইন্ডিয়ানদের কিছু আচার অনুষ্ঠান। আরও কয়েকটা বিভিন্ন বিষয়ের ছবি আর সেগুলোর নামের পর দুই পাতা ভরা বিদঘুটে চেহারার লম্বা নাকওয়ালা টিকটিকি জাতীয় এক জন্তুর স্কেচ। বুঝতে না পেরে আমি প্রফেসরকে জিজ্ঞেস করলাম, এগুলো নিশ্চয়ই কুমীর?
অ্যালিগেটর-দক্ষিণ আমেরিকায় কুমীর নেই। কুমীর আর অ্যালিগেটরের মধ্যে তফাত হচ্ছে…
না, আমি বলছিলাম যে আমি তো এগুলোর মধ্যে আশ্চর্য কিছুই দেখছি না —আপনার কথা থেকে অন্য রকম ধারণা হয়েছিল আমার।
চ্যালেঞ্জার হেসে বললেন, পরের পৃষ্ঠা দেখো।
দেখলাম, কিন্তু সন্তুষ্ট হতে পারলাম না। পুরো পাতা জুড়ে একটা ভূদৃশ্য আঁকা রয়েছে– কিছু কিছু রঙও ব্যবহার করা হয়েছে। মুক্ত আকাশের নিচে যারা ছবি আঁকেন তারাই এ ধরনের খসড়া করেন–পরে খুঁটিনাটি বসিয়ে দেন। দূরে হালকা সবুজ গাছ, প্রান্তরটা ক্রমে উপরের দিকে উঠে গিয়ে একটা খাড়া পাহাড়ের নিচে শেষ হয়েছে। গাঢ় লাল রঙ পাহাড়ের, অনেকটা বেসল্ট পাথরের সারির মত। পাজরের হাড়ের মত যেন দেখাচ্ছে। উঁচু দেয়ালের মত একটানা দুদিকে প্রসারিত হয়েছে পাহাড়টা। এক জায়গায় পিরামিডের মত উচু হয়ে রয়েছে। একটা পাথর। বিরাট একটা গাছ মুকুটের মত শোভা পাচ্ছে পিরামিডের মাথায়। মনে হয় আশে পাশের খাড়া এবড়োখেবড়ো মূল পাহাড়শ্রেণী থেকে একটা ফাটল ওটাকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে। পরের পাতায় একই জায়গার আর একটা স্কেচ-তবে অনেক কাছে থেকে আঁকা। এখানে অনেক খুঁটিনাটিই পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে।
কি বুঝছ? আগ্রহ ভরে জিজ্ঞেস করলেন চ্যালেঞ্জার।
গড়নটা অসামান্য সন্দেহ নেই, বললাম আমি, তবে ভূতত্ত্ববিদ্যায় আমার জ্ঞান সীমিত। মনে সাড়া জাগাবার মত কিছু তো দেখছি না।
কিন্তু উনি বললেন, অপূর্ব, অসামান্য, অবিশ্বাস্য। পৃথিবীর কেউ কোন দিন স্বপ্নেও ভাবেনি যে এমনটি সম্ভব। পরেরটা দেখো!
পাতা উল্টাতে নিজের অজান্তেই বিস্ময়ে একটা শব্দ অস্ফুটে বেরিয়ে এল আমার মুখ থেকে। সমস্ত পাতা জুড়ে আঁকা একটা ছবি, এমন অদ্ভুত জীব আমি জীবনে দেখিনি। মাথাটা মুরগীর মত, দেহ বিরাটকায় গিরগিটির, লেজের উপর সারি সারি গজালের মত কাঁটা। বাঁকা পিঠের উপর ফালি ফালি ঝালর–মনে হয় ডজন খানেক মুরগীর ঝুঁটি যেন সারি বেঁধে পরপর বসানো রয়েছে। জন্তুটার সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে মানুষের মত আকৃতির ছোট্ট এক বামন; বিস্ময়ের সাথে চেয়ে দেখছে লোকটা।
কি বুঝছ? বিজয়ের গর্বে হাত দুটো ডলতে ডলতে জিজ্ঞেস করলেন প্রফেসর।
বিরাট, বিশাল একটা দানব।
এমন একটা ছবি কেন আঁকলেন তিনি?
সম্ভবত মদের মাত্রা বেশি হয়ে গিয়েছিল! জবাব দিলাম আমি।
ওহ! এর চেয়ে ভাল কোন কারণ খুঁজে পেলে না তুমি? ক্ষুব্ধ হলেন প্রফেসর।
আপনার ব্যাখ্যা কি, স্যার?
সুস্পষ্ট ভাবেই বোঝা যাচ্ছে যে ওই জন্তুটা জীবন্ত এবং জীবন্ত অবস্থাতেই ওই ছবিটি এঁকেছেন শিল্পী।
হেসেই ফেলতাম আমি—কিন্তু প্রফেসরের সঙ্গে প্রথম দর্শনের তুমূল কান্ডের কথা মনে করে হাসতে সাহস হলো না।
আমি ব্যঙ্গের সুরে বললাম, সন্দেহ নেই, কোনই সন্দেহ নেই। কিন্তু ওই ছোট্ট মানুষটা আমাকে ধোঁকা লাগিয়ে দিচ্ছে। লোকটা যদি ইন্ডিয়ান হত তাহলে বলা যেত যে সে পিগমী-কিন্তু দেখে মনে হচ্ছে সানহ্যাট পরা একজন ইউরোপীয়।
নাক দিয়ে খ্যাপা মহিষের মত আওয়াজ করলেন প্রফেসর। বললেন, সত্যি সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছ তুমি, ঘুণে ধরা মগজ, আর সেই মগজের নিষ্ক্রিয়তা সম্বন্ধে আমার মতামত এবার আরও প্রশস্তির সুযোগ পেল—চমৎকার!
প্রফেসরের কথা এমনই অযৌক্তিক আর হাস্যকর যে রাগতেও পারলাম না আমি। আর চ্যালেঞ্জারের মত লোকের উপর রাগ করতে হলে সব সময়ে কেবল রেগেই থাকতে হবে। ক্লান্ত হাসি হাসলাম আমি, আমার মনে হয় লোকটাকে বেশি ছোট দেখাচ্ছে।
এই যে দেখো, সজোরে বললেন চ্যালেঞ্জার। সামনে ঝুঁকে পড়ে তার মোটা রোমশ আঙ্গুল রাখলেন ছবির ওপর। ওই জন্তুটার পিছনে এই গাছটা দেখেছ? হয়তো ভেবেছিলে ওটা ড্যানডিলাইয়ন বা ব্রাসেলস্প্রাউট, তাই না? জেনে রাখো ওটা একটা আইভরি পাম গাছ। প্রায় পঞ্চাশ ষাট ফুট পর্যন্ত হয় লম্বায়। বুঝছ না কেন যে মানুষের ছবিটা এখানে আঁকার একটা উদ্দেশ্য আছে। তিনি কিছুতেই দানবটার সামনে ওভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে সাহস পেতেন না—প্রাণভয় সকলেরই আছে। নিজেই নিজের স্কেচ করেছেন মাপের মাত্রা বা স্কেল বোঝাবার জন্যে। পাঁচ ফুট মত ছিলেন তিনি লম্বায়, পিছনের গাছগুলো দশগুণ অর্থাৎ পঞ্চাশ ফুট উঁচু।
সর্বনাশ! চেঁচিয়ে উঠলাম আমি, তার মানে, আপনার মতে জন্তুটা—মানে চারিংক্রশ স্টেশনেও ওটার খাচার জায়গা হবে না।
একটু অতিরঞ্জন হয়ে থাকবে কিন্তু জন্তুটা অবশ্যই প্রাপ্ত বয়স্ক।
কিন্তু, একটা স্কেচ দেখে নিশ্চয়ই মানুষের এতদিনের অভিজ্ঞতা সব মিথ্যা বলে বাতিল করে দেয়া যায় না। তাড়াতাড়ি বাকি পাতাগুলো উল্টে দেখলাম, আর কোন ছবি নেই খাতায়। একজন আমেরিকান শিল্পীর একটা ছবি দেখেই আপনার মত বিখ্যাত বিজ্ঞানীর এমন একটা চুড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসা কি ঠিক হচ্ছে? কে জানে সে শিল্পী হয়তো হ্যাশিশের প্রভাবে, জ্বরের ঘোরে, কিংবা মনের নিছক উদ্ভট কল্পনার বশে এঁকেছে ছবিটা?
জবাব দেয়ার জন্যে একটা বই হাতে তুলে নিলেন চ্যালেঞ্জার। এই বইটা আমারই এক গুণী বন্ধু রে ল্যাংকেস্টরের লেখা। এখানে একটা ছবি আছে–হ্যাঁ এই যে, ছবির নিচে লেখা-ডাইনোসর স্টিগেসরাসের সম্ভাব্য আকৃতি, পিছনের পা এক একটা দু জন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের সমান, দেখো এই যে ছবি।
খোলা বইটা বাড়িয়ে দিলেন প্রফেসর। ছবিটা দেখে চমকে উঠলাম আমি। অদ্ভুত মিল রয়েছে এই ছবিটার সাথে স্কেচটার।
আশ্চর্য মিল ছবি দুটোর মধ্যে—সত্যিই লক্ষ্যণীয় বিষয়।
কিন্তু তবু তুমি স্বীকার করবে না এটা সত্য?
এটা ঘটনাচক্রে হতে পারে, বা শিল্পী হয়তো এই ছবিটাই কোনদিন দেখেছিলেন। ছবিটা তার মনে গেঁথে গিয়েছিল-পরে ঘোরের বশে আবার এঁকে ফেলেছেন?
ভাল কথা, শান্ত গলাতেই বললেন প্রফেসর, এই প্রসঙ্গ এখানেই থাকুক। এবার আমি এই হাড়টা একটু পরীক্ষা করে দেখতে অনুরোধ করব তোমাকে। বলে আমার হাতে হাড়টা তুলে দিলেন প্রফেসর। ইঞ্চি ছয়েক লম্বা, আমার বুড়ো আঙ্গুলের সমান মোটা। হাড়ে মাংসের কোমল অংশ একদিকে শুকিয়ে আছে, অর্থাৎ বেশি দিনের পুরানো নয়।
এটা কিসের হাড়? প্রফেসর জিজ্ঞেস করলেন।
সতর্কতার সাথে পরীক্ষা করলাম আমি হাড়টা। প্রায় ভুলে যাওয়া স্মৃতি মনে আনার চেষ্টা করলাম।
মানুষের –স্বাস্থ্যবান কোন মানুষের কণ্ঠার হাড় হতে পারে এটা। আমি আন্দাজে বললাম।
মানুষের কণ্ঠার হাড় বাঁকা হয়, একটু বিরক্তির সাথেই হাত নেড়ে আমার কথা উড়িয়ে দিলেন প্রফেসর, এটা সিধে। আর এই খাজটা দেখে বোঝা যায়, একটা মজবুত পেশী ছিল এখানে। কণ্ঠার হাড়ে এরকম খাঁজ থাকে না।
তাহলে আমি স্বীকার করতে বাধ্য হচ্ছি যে এটা কি আমি জানি না।
লজ্জার কিছু নেই তোমার—দক্ষিণ কেনসিংটনের সমস্ত লোক ডাকলেও হয়তো তাদের কেউ বলতে পারবে না। ওষুধের বাক্সের ভিতর থেকে একটা ছোট্ট হাড় বের করলেন চ্যালেঞ্জার। মটর দানার চেয়ে সামান্য বড় হবে। আমার হাতে দিয়ে বললেন প্রফেসর, এখন যেটা তোমার হাতে দিলাম সেটাও একই ধরনের হাড়-মানুষের। আর ওই বড় হাড়টা যে ফসিল নয় তা ওই শুকিয়ে যাওয়া অংশ দেখেই বোঝা যায়।
হাতির হাড় এমন…
যাতনায় মুখ বিকৃত হয়ে গেল প্রফেসরের। না, দক্ষিণ আমেরিকায় হাতি আছে এমন কথাও বোলো না…লোকে হাসবে।
হাতি না হোক, দক্ষিণ আমেরিকার কোন বড় জন্তু হতে পারে—টাপির বা অন্য কিছু?
দেখো, আমার যে কাজ তা আমি ভাল বুঝি-ওটা টাপির বা অন্য কোন জন্তুর হাড় নয়। ওটা বিরাট শক্তিশালী আর ভয়ঙ্কর কোন জন্তুর হাড়। জীববিজ্ঞানের রেকর্ডভুক্ত না হলেও এই জন্তু আজও পৃথিবীর বুকেই বেঁচে আছে। কি, বিশ্বাস হচ্ছে না?
পুরোপুরি বিশ্বাস না হলেও ব্যাপারটা অবশ্যই আমার মনোযোগ আকর্ষণ করছে।
তাহলে হতাশ হবার কারণ নেই—তোমার মধ্যে যুক্তি আছে, কাজেই কোন না কোন সময়ে তুমি নিশ্চয়ই বুঝবে। এবার বাকিটা বলছি। এই ঘটনার পরে আমার পক্ষে আরও বিস্তারিত না জেনে ফেরত আসা অসম্ভব হয়ে পড়ল। শিল্পী কোনদিক থেকে এসেছিলেন বনে তার অনেক নিদর্শনই পাই আমি। তবে তার খুব একটা দরকার ছিল না, ভূতুড়ে এক জায়গার কথা প্রচলিত আছে ওখানকার উপজাতীয়দের মধ্যে-কারুপুরির কথা নিশ্চয়ই শুনেছ!
না তো?
কারুপুরি হচ্ছে জঙ্গলের ভূত। ওরা বিশ্বাস করে ওই ভূত খুবই সাঘাতিক, ওর কাছ থেকে যত দূরে থাকা যায় ততই মঙ্গল। কারুপুরির আকৃতি বা প্রকৃতি সম্পর্কে কেউ কিছু বলতে পারে না, কিন্তু আমাজন এলাকার সব লোকই ওকে ডরায়। কারুপুরি কোন দিকে থাকে সেটা তারা সবাই জানে। আমেরিকান শিল্পী এসেছিলেন সেই দিক থেকেই। ভয়াবহ কিছু একটা আছে ওদিকে বুঝলাম কিন্তু সেটা কি তা খুঁজে বের করাই আমার কর্তব্য হয়ে দাঁড়াল।
কি করলেন আপনি? ততক্ষণে আমার অবিশ্বাস দূর হয়ে গেছে,–এই লোকটির সত্যিই আকর্ষণ ক্ষমতা আছে, আপনাআপনিই শ্রদ্ধা এসে যায় তার উপর।
অনেক চেষ্টার পর কিছু স্থানীয় লোককে রাজি করালাম। ওরা তো প্রথমে ওই বিষয়ে কথা বলতেই নারাজ। তোয়াজ, উপহার-শেষ পর্যন্ত এমন কি মারধরের ভয় দেখিয়ে রাজি করাতে হল। দুজন গাইডকে রেখে অনেক বাধা বিঘ্ন পেরিয়ে—সব কিছু বলার দরকার নেই, কোন্দিকে গেলাম তা-ও বলব না—আমরা গিয়ে পৌঁছলাম এমন এক জায়গায় যেখানে হতভাগ্য মেপল হোয়াইট ছাড়া কেউ কোনদিন যায়নি। এইটা দেখো।
একটা হাফ প্লেট ছবি আমাকে এগিয়ে দিলেন প্রফেসর।
ছবিটা অপরিষ্কার হওয়ার কারণ ফেরার পথে নৌকা উল্টে ফিল্ম প্লেটের কেসটা ভেঙে গিয়েছিল। প্রায় সব ছবিই নষ্ট হয়ে গেছে। এই একটাই কিছুটা এসেছে। কেউ কেউ বলেছে এটা নাকি জাল ছবি—সে নিয়ে তর্ক করার মত মনের অবস্থা এখন আমার নেই।
ছবিটা সত্যিই ঝাপসা। কোন নির্দয় সমালোচক যদি এই ছবিকে জাল বলে থাকেন তবে খুব একটা দোষ দেয়া যায় না তাকে। অনেকক্ষণ মনোযোগ দিয়ে ছবিটা দেখে বুঝলাম, স্কেচে যে ছবি দেখেছি এটাও সেই একই জায়গার।
মনে হচ্ছে শিল্পীর আঁকা জায়গারই ছবি এটা, বিস্ময়ে অবাক হয়ে বললাম আমি।
ঠিকই ধরেছ তুমি, বললেন প্রফেসর। মেপলের তাঁবুর বেশ কিছু চিহ্ন আমি দেখেছি পথে। এই ছবিটা দেখো এবার।
আর একটা ছবি দিলেন তিনি আমার হাতে। একই ছবি—আরও কাছে থেকে তোলা। পিরামিডের মত পাথরটা আর তার উপরের গাছটা স্পষ্ট চিনতে পারলাম আমি।
উৎসাহের সঙ্গে বললাম, আর কোন সন্দেহ নেই আমার।
যাক, তবু কিছু অগ্রগতি হয়েছে। ছবির উপরের দিকটা দেখো। কিছু দেখতে পাচ্ছ?
একটা বিরাট গাছ।
আর গাছের উপর?
একটা বিশাল পাখি।
একটা লেন্স আমার দিকে এগিয়ে দিলেন প্রফেসর।
হ্যাঁ, একটা বিরাট পাখি বসে আছে ওই ডালে। মস্তবড় ঠোঁট। মনে হয় একটা বড় পেলিকান।
তোমার চোখ খারাপ, ওটা পেলিকানও নয়, কোন পাখিও নয়। গুলি করে মেরেছিলাম আমি ওকে। তার ওই একটি মাত্র প্রমাণই সঙ্গে করে আনতে পেরেছিলাম।
ওটা আছে আপনার কাছে? উৎসাহিত হয়ে জানতে চাইলাম আমি। যাক শেষ পর্যন্ত অন্তত একটা প্রমাণ পাওয়া যাবে।
ছিল, এখন নেই। দুঃখের সাথে বললেন প্রফেসর। ওই যে নৌকাডুবির কথা বলেছি, তাতে ওটাও হারিয়েছি আমি। কেবল পাখার কিছু অংশ রয়ে গেছিল আমার হাতে। এই যে, এটুকুই শুধু প্রমাণ। বলে প্রফেসর ড্রয়ার থেকে পাখার টুকরা অংশটা বের করে আমার সামনে বিছিয়ে দিলেন। প্রায় দুই ফুট লম্বা, বাদুড়ের পাখার মত।
এত্তো বড় বাদুড়! বলে উঠলাম আমি।
বাদুড়ও নয়—কোন পাখিও নয়; কি ওটা? জিজ্ঞেস করলেন প্রফেসর।
আমার বিদ্যার দৌড় শেষ। তাই সহজ ভাবে স্বীকার করলাম, জানি না।
বইটা আবার হাতে তুলে নিলেন তিনি, পাতা উল্টে একটা ছবির দিকে আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করলেন। এই যে, বলে বিশাল বড় এক বিদঘুটে উড়ন্ত সরীসৃপ দানবের ছবি দেখালেন প্রফেসর। এটা জুরাসিক যুগের ডাইমরফোড়ন বা টেরাড্যাকটিলের একটা চমৎকার ছবি। পরের পাতায় ডানার গড়নের ছবি আছে। নমুনাটা তার সাথে মিলিয়ে দেখো।
মিলিয়ে দেখতে গিয়ে আমার সারা দেহ উত্তেজনায় শির শির করে উঠল। হুবহু মিলে যাচ্ছে সব। না, আর কোন সন্দেহই নেই আমার। আন্তরিকতার সাথেই তা জানালাম আমি প্রফেসর চ্যালেঞ্জারকে। চেয়ারে আরাম করে হেলান দিয়ে স্মিত হাস্যে উপভোগ করলেন তিনি নিজের সাফল্য।
এত বিশাল কোন প্রাণীর কথা আমি কোনদিন শুনিনি। আপনি বিজ্ঞান জগতের কলম্বাস। এক হারানো পৃথিবী খুঁজে বের করেছেন। প্রথমে অবিশ্বাস করেছিলাম বলে ক্ষমা চাইছি। আমি সাংবাদিক মানুষ, সঠিক প্রমাণ দেখলে চিনতে আমার ভুল হয় না, যে কেউ এই প্রমাণে সন্তষ্ট হতে বাধ্য।
তৃপ্তির সাথে আর একটা চুরুট ধরালেন প্রফেসর।
কি করলেন আপনি তারপর?
তখন বর্ষাকাল, আমার রসদ প্রায় ফুরিয়ে এসেছে। পাহাড়ের কিছু অংশ ঘুরে দেখলাম—কিন্তু উপরে ওঠার কোন পথ খুঁজে পেলাম না।
আর কোন প্রাণী দেখেছিলেন?
না, দেখিনি—তবে মালভূমির উপর থেকে বিভিন্ন রকমের বিকট আওয়াজ শুনেছি।
কিন্তু মেপলের আঁকা ছবিটা? ওটা তিনি কিভাবে আঁকলেন?
মনে হয় উপরে ওঠার কোন পথ খুঁজে পেয়েছিলেন। সেখানে হয়তো ওই বিকট জন্তুর দেখা পান তিনি। ওঠানামা যদি খুব শক্ত কাজ না হত তাহলে ওই জন্তুগুলো নেমে এসে আশে পাশের জায়গা চষে বেড়াত।
ওরা উপরে গেল কিভাবে?
এই প্রশ্নের কেবল একটাই সমাধান হতে পারে। আর সেটা কঠিন কিছু নয়। জানো নিশ্চয়ই, দক্ষিণ আমেরিকাকে গ্র্যানিট মহাদেশ বলা হয়। অনেক আগে কোন এক সময়ে আগ্নেয়গিরির উর্ধ্ব চাপে এর জন্ম। লক্ষ করেছ নিশ্চয়ই পাহাড়ের পাথরগুলো বেসল্ট…অর্থাৎ আগ্নেয় শিলা। পুরো জায়গাটা প্রায় ইংল্যান্ডের সাসেক্সএর সমান একটা চাকা, চাপের মুখে প্রাণী সহ উপরের দিকে উঠে গেছে।
অকাট্য প্রমাণ আছে আপনার হাতে, কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দিন, ওরা লুফে নেবে।
সরল মনে আমিও তাই ভেবেছিলাম, তিক্ত কণ্ঠে বললেন প্রফেসর। কিন্তু প্রতি পদে অবিশ্বাস, ঈর্ষা আর নিরেট বুদ্ধির লোকগুলোর কাছ থেকে কেবলই বাধা পেয়েছি আমি; সহযোগিতা পাইনি।
কিন্তু তাই বলে এত বড় একটা আবিষ্কার আপনি গোপনে রাখতে পারেন না!
আমার কথা যারা অবিশ্বাস করে তাদের কাছে নাকিকান্না কাঁদতে যাওয়া আমার স্বভাব বিরুদ্ধ। ওদের ব্যবহারে আমার ঘেন্না ধরে গেছে, তাই এমন অকাট্য প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও আমি চুপ করে রয়েছি। এই কারণেই সাংবাদিকরা জ্বালাতন করতে এলে আমি নিজেকে ঠিক সামলে রাখতে পারি না।
নীরবে চোখের ওপর হাত বুলালাম আমি। রীতিমত টনটন করছে।
আমার স্ত্রী আমার ব্যবহারে বারবার আপত্তি জানিয়েছেন, কিন্তু আমার বিশ্বাস, আমি যা করেছি, যেকোন আত্মসম্মান বোধসম্পন্ন মানুষই তাই করতেন।
আপনার মনোভাব আমি বুঝতে পেরেছি। একটা কার্ড বের করে আমার হাতে দিলেন প্রফেসর।
আজ রাতে আমি তোমাকে প্রদর্শনীতে আসার দাওয়াত করছি। মিস্টার পারসিভ্যাল ওয়ান, একজন প্রাণীতত্ত্ববিদ পন্ডিত, রাত সাড়ে আটটায় যুগ এবং কালের ইতিহাস সম্বন্ধে বক্তৃতা দেবেন। সেখানে এই বিষয়ে যাতে আলোচনা হয় তার আপ্রাণ চেষ্টা করব আমি।
আমি অবশ্যই আসব।
তুমি এলে খুশি হব আমি; অন্তত এটুকু সান্ত্বনা থাকবে যে, দর্শকমন্ডলীতে আমার একজন মিত্র আছে। তবে মনে থাকে যেন এই বিষয়ে এক অক্ষরও ছাপানো চলবে না।
কিন্তু আমাদের বার্তা সম্পাদক মিস্টার ম্যাকারডল তো জানতে চাইবেন, কি জানলাম আমি, আমতা আমতা করে বললাম আমি।
তাকে যা খুশি বলতে পারো তুমি। কিন্তু আর কাউকে যদি আমাকে বিরক্ত করতে পাঠায় তবে ঘোড়ার চাবুক নিয়ে হাজির হব তার অফিসে।…তোমাকে যতটুকু সময় বরাদ্দ করেছিলাম তার চেয়ে অনেক বেশি দিয়ে ফেলেছি। আমার সময় পৃথিবীর সবার জন্যে—কারও একার জন্যে নয়। সাড়ে আটটায় দেখা হবে।
হাত মিলিয়ে আমাকে বিদায় দিলেন প্রফেসর চ্যালেঞ্জার।