০৯. টেলিমেট্রি টেবিলটার সামনে বসে
টেলিমেট্রি টেবিলটার সামনে বসে আছেন অসকার গোল্ডম্যান। চিন্তিতভাবে কফির কাপে চুমুক দিচ্ছেন। এই সময় সেখানে এসে হাজির হল রেনট্রি। সাংঘাতিক উত্তেজিত। চোখ তুলে চাইলেন গোল্ডম্যান। রেনট্রির চেহারা দেখেই অনুমান করলেন, খারাপ খবর আছে।
বলে ফেল, বললেন গোল্ডম্যান।
সেন্সর রিডিঙে কোন গোলমাল নেই, কনফার্ম করেছে আমাদের মেন কম্পিউটার।
তার মানে সত্যিই ধ্বংস হতে যাচ্ছে ট্রিনিটি ফল্ট, সঙ্গে টেনে নিয়ে যাবে স্যান আজিকেও?
মাথা ঝাঁকাল রেনট্রি।
কম্পিউটার বলছে, আগামী পনের ঘণ্টার মধ্যেই ভয়ংকর ভূমিকম্প হবে স্যান আজি ফল্টে।
পুরো স্যান আন্দ্রিজে? মানে আমি বলতে চাইছি, বাজা ক্যালিফোর্নিয়া উপকূল পর্যন্ত?
কম্পিউটারের মতে, স্যান আজি আর ট্রিনিটি ফল্ট জংশন ধ্বংস হয়ে যাবার সঙ্গে সঙ্গে তের ফুট লস মেকআপ করার চেষ্টা করবে রকপ্লেটগুলো এবং তাহলেই গেছি আমরা। আর শুধু আমরাই নই, স্যান ফ্রানসিসকো, লস এঞ্জেলস, স্যান ডিয়েগোর নিশানা মুছে যাবে ম্যাপ থেকে।
আংশিক মহাপ্রলয়, ভীষণ গম্ভীর দেখাচ্ছে গোল্ডম্যানকে।
আরও একটা খবর জানিয়েছে কম্পিউটার।
এরপর আরও আছে নাকি? ব্ল্যাক প্লেগ ফিরে আসার কথা বলছে নাকি বোকা যন্ত্রটা?
না, না ওসব কিছু নয়, তাড়াতাড়ি বলল রেনট্রি। ওই ভূমিকম্পটাকে দুর্বল করার, চাই কি একেবারে বন্ধ করে দেবারও উপায় একটা আছে।
তুমি যে বলেছিলে, ওভাবে?
কম্পিউটার বলছে, একটু অন্যভাবে হলে ভাল হয়। একটা জায়গায় মিশেছে স্যান আজি আর ট্রিনিটি ফল্ট। কৃত্রিম ছোটখাট ভূকম্পন ঘটিয়ে স্যান আন্দ্রিজের ওপর ট্রিনিটির চাপ সরিয়ে দিতে পারলে কোন দুর্ঘটনা ঘটবে না আর।
কিন্ত ভূকম্পন ঘটাবে কি করে?
ওই তো, নিউক্লিয়ার এক্সপ্লোশন।
একটা কথা বল তো, এই এলাকায় ঘন ঘন ভূমিকম্পের কারণ কি এই চাপ? জিজ্ঞেস করলেন গোল্ডম্যান।
হ্যাঁ। আগেও বলেছি একথা।
ব্যাপারটা পুরোপুরি প্রাকৃতিক?
তা ছাড়া আর কি?
ঠিক আছে, কফির কাপটা টেবিলে রেখে দিয়ে উঠে দাঁড়ালেন গোল্ডম্যান। এই ভূমিকম্প-টস্প ঘটান আমার দায়িত্ব নয়। কিন্তু তোমার কথাও ফেলা যায় না। ব্যাপারটা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাচ্ছি। যা করার, তারাই করবেন। হাত তুলে একজন গার্ডের দিকে ইশারা করলেন তিনি। ছুটে এল লোকটা।
স্যার? জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাল গার্ড।
রেডিওম্যানকে বল, পেন্টাগনে জেনারেল ডেভিসের সঙ্গে যোগাযোগ করুক। আমার টপ প্রায়োরিটি কোড ব্যবহার করতে বল। যাও।
যাচ্ছি, স্যার, বলেই ছুটে চলে গেল লোকটা।
মিস্টার গোল্ডম্যান… বলল রেনট্রি।
কি?
অস্টিন এবং মার্লিন। ওই এলাকাতেই আছে ওরা, না?
হঠাই কঠিন হয়ে গেল গোল্ডম্যানের মুখ। ধপাস করে আবার চেয়ারে বসে পড়লেন তিনি।
যদি ঠিক ওই এলাকায় না-ও থাকে, এর আশেপাশেই কোথাও আছে। বিস্ফোরণের ফলে পাথর ধস ঘটতে পারে। চাপা পড়ে মারা যেতে পারে ওরা। এদিক ওদিক তাকালেন গোল্ডম্যান। একটা তাঁবুর পাশে দাঁড়িয়ে এদিকেই তাকিয়ে আছে রেঞ্জার। হাত তুলে ইশারা করলেন গোল্ডম্যান।
দ্রুত এগিয়ে এল লোকটা, কিছু বলবেন, মিস্টার গোল্ডম্যান?
কর্নেল অস্টিন আর ডকটর মার্লিন বেকির কোন খোঁজ পাওয়া গেছে?
ওদের কোন চিহ্নই খুঁজে পাচ্ছে না সার্চ পার্টি।
মিস্টার গোল্ডম্যান, আমাদের হাতে কিন্তু সময় আর বেশি নেই। বলল রেনট্রি।
পানির ধারা ছুঁড়লে কেমন হয়, রেনট্রি? এতেও কাজ হবে, বলেছিলে না?
এখন আর সময় নেই। পাঁচ মাইল পাইপ ফেলে পাম্পে জুড়ে পানি ছোড়া…
নাহ, মিস্টার গোল্ডম্যান, এদিক ওদিক মাথা নাড়াল রেনট্রি, অত সময় দেবে না টিনিটি ফল্ট।
মুখ কালো হয়ে গেছে গোল্ডম্যানের। বনের দিকে চেয়ে আছেন। গভীর চিন্তায় মগ্ন। তোমারা কোথায়, অস্টিন! আপন মনেই বিড় বিড় করলেন তিনি।
দীর্ঘ কয়েক মনিট নীরবতা। তারপর দুজন লোক এসে দাঁড়াল সেখানে। হাতে পোর্টেবল রেডিও রিসিভার।
জেনারেল ডেভিস লাইনে আছেন, স্যার, রিসিভারটা গোল্ডম্যানের দিকে বাড়িয়ে ধরল রেডিওম্যান।
রিসিভারটা হাতে নিলেন গোল্ডম্যান। রেনট্রির দিকে তাকালেন। তাহলে নিউক্লিয়ার এক্সপ্লোশন ছাড়া আর কিছু কারর নেই?
না। মাথা নিচু করল রেনট্রি, আমি দুঃখিত, মিস্টার গোল্ডম্যান।
হু… রিসিভার কানে ঠেকালেন গোল্ডম্যান।
আবার আধো ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে অস্টিনকে। কিন্তু এবারে অপারেশন টেবিলে নয়, ইজি চেয়ারের মত একটা চেয়ারে আধশোয়া করে রাখা হয়েছে। দেখতে অনেকটা হেয়ার ড্রাইয়ারের মত যন্ত্র তার মাথায়। আগের জায়গাতেই শুয়ে আছে সাসকোয়াচ। তার মাথায়ও একই ধরনের একটা যন্ত্র লাগান।
পরীক্ষাগারে দারুণ কর্মব্যস্ততা। টেকনিশিয়ানরা ব্যস্তভাবে আসছে যাচ্ছে। দুধ সাদা অদ্ভুত একটা আভা বেরচ্ছে ঘরের দেয়ালগুলো থেকে। দুহাতে দুমুঠো রেকর্ডিং ক্যাসেট নিয়ে শান্তভাবে ঘরে ঢুকল শ্যালন। একপাশের দেয়ালের দিকে এগিয়ে গেল। সারি সারি কম্পিউটার কনসোল বসানো দেয়ালে। একটা পটে একটা ক্যাসেট বসিয়ে দিল শ্যালন। যন্ত্রটার পাশের তিনটে বোতাম টিপল। সঙ্গে সঙ্গেই দেয়ালে বসান বিশাল এক টি.ভি. মনিটরের পর্দায় কতগুলো আঁকাবাঁকা রেখা ফুটে উঠল। দীর্ঘ এক মিনিট রেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে দেখল সে। মৃদু হাসল। সুট থেকে ক্যাসেটটা বের করে পাশে দাঁড়ান একজন সহকারীর হাতে নিল। হাতের অন্য ক্যাসেটগুলোও দিয়ে দিল কি ভেবে।
কাউন্সিল চেম্বারে নিয়ে যাও এগুলো, নির্দেশ দিল শ্যালন। হাতে তুড়ি দিয়ে ঘরে তার লোকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করল শ্যালন।
আমাদের কাজ শেষ, লোকেরা ফিরে চাইতেই বলল সে। যন্ত্রপাতিগুলো নিয়ে যাও।
কেউ কোন প্রশ্ন করল না। কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। আধ মিনিটের মধ্যেই ভোজবাজির মত সমস্ত যন্ত্রপাতিগুলো অদৃশ্য হয়ে গেল ঘর থেকে। অস্টিন, সাকোয়াচ আর শ্যালন বাদে সবাই চলে গেছে।
ধীরে ধীরে পুরো জেগে উঠল অস্টিন। যন্ত্রের আবেশ সরিয়ে নেয়া হয়েছে তার ওপর থেকে। শ্যালনের দিকে তাকাল সে।
ওঠো। চল যাই আমরা, বলল শ্যালন। এখানে আর থাকার দরকার নেই তোমার।
ও, বসে থেকেই সাসকোয়াচকে দেখিয়ে জিজ্ঞেস করল অস্টিন। ওকে জাগাচ্ছ না কেন? সঙ্গে নেবে না?
আপাতত দরকার নেই ওকে…
বুঝেছি, ড্রাই ডকে রেখেছ। আমাকে এভাবে ফেলে রাখার পরামর্শ দিয়েছিল দুয়েকজনে। দরকার পড়লেই ব্যাটারি চার্জ করে জাগিয়ে দেয়া হবে।
এই পরামর্শে নিশ্চয়ই কান দেননি বিশেষজ্ঞরা?
না।
এস, হাত বাড়াল শ্যালন। আমার হাতটা ধরে এগোও।
শ্যালনের হাতটা ধরে উঠে দাঁড়াল অস্টিন। টলছে। পায়ে জোর পাচ্ছি না কেন?
যান্ত্রিক ঘুমের প্রতিক্রিয়া, বলল শ্যালন। ভয় নেই, মিনিট খানেকের মধ্যেই চলে যাবে।
এ ধরনের ঘুমের নাম দিয়েছেন আমাদের বিজ্ঞানীরা, ইলেকট্রোস্লীপ।
জানি।
প্রায় একটা বছর ইলেকট্রোস্লীপ পদ্ধতিতে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছিল আমাকে।
তোমাকে বায়োনিক ম্যান বানানোর সময়ে?
হ্যাঁ, বায়োনিক রিসার্চ ল্যাবরেটরীতে অবস্থানের দিনগুলোর কথা ভাবছে অস্টিন।
হাত ধরে অস্টিনকে দরজার কাছে নিয়ে গেল শ্যালন। নিঃশব্দে আপনাপনি খুলে গেল দরজা। কম্পাউন্ডে বেরিয়ে এল দুজনে।
পথ দেখিয়ে নিয়ে যাচ্ছে শ্যালন অস্টিনকে। ভূগর্ভে জটিল এক রহস্য গড়ে তোলা হয়েছে। আশ্চর্য, অদ্ভুত! দেখেশুনে অস্টিনও অবাক না হয়ে পারছে না। কঠিন পাথর খুঁড়ে বিশাল এক গুহা বানিয়ে তা দেয়ালে ক্রিস্টালের আস্তরণ লাগান হয়েছে। এরপর ওই গুহায় তৈরি হয়েছে বাড়িঘর।
শ্যালনের হাত ধরে এগিয়ে চলেছে অস্টিন। একের পর এক অসংখ্য করিডোর পেরোচ্ছে। দুপাশে সারি সারি ঘর। কোনটা ইলেকট্রোনিক ইকুইপমেন্টে ঠাসা, কোনটায় ভরে রাখা হয়েছে শাকসব্জি আর অন্যান্য খাবার, কোনটা মেডিক্যাল রুম, কোনটা লিভিং রুম।
অবশেষে একটা বিশাল ডিম্বাকৃতি ঘরের দরজার সামনে এসে দাঁড়াল দুজনে।
কাউন্সিল চেম্বার, বলে অস্টিনকে ভেতরে ঠেলে দিল শ্যালন।
বিরাট এক টেবিল ঘিরে বসে আছে সাতজন নারীপুরুষ। দুজনকে চেনে অস্টিন। একজন এপ্লয়। মাথায় আর আবরণ নেই এখন তার। ধূসর সাদা চুল। ঘরের লোকদের মধ্যে সে-ই বয়স্ক। টেবিলের এক মাথায় বসে আছে।
অস্টিনের চেনা দ্বিতীয়জন ফলার। বয়েসে তরুণ। অস্টিনের দিকে একবার চেয়েই ক্লান্তভাবে মুখ ফিরিয়ে নিল সে। অন্যেরা গভীর আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছে। অস্টিনের দিকে।
টেবিলের একপাশে, মাঝামাঝি জায়গায় রাখা একটা চেয়ার এনে অস্টিনকে বসিয়ে দিল শ্যালন। তারপর ঘুরে গিয়ে টেবিলের অন্য মাথায় রাখা একটা খালি চেয়ারে বসল।
দাঁড়িয়ে অস্টিনের দিকে বিচিত্র ভঙ্গিতে হাত নাড়াল এপ্লয়। বুঝল অস্টিন, আজব এই লোকগুলো বাইরের কাউকে এভাবেই অভ্যর্থনা জানায়। এটাই ওদের রীতি।
আমি এপ্লয়, বল সে। আমাদের কলোনীতে আপনাকে সাদর অভ্যর্থনা জানাচ্ছি।
চেয়ারে হেলান দিয়ে বসল অস্টিন। মৃদু হাসল এপ্লয়ের দিকে তাকিয়ে।
স্বাগতম, কর্নেল অস্টিন, বলল এপ্লয়, আপনিও আমাদের মত স্পেস ট্রাভেলর। আপনার সঙ্গে কথা বলতে ভালই লাগবে।
পৃথিবীর লোক নন আপনারা, না? জিজ্ঞেস করল অস্টিন।
মহাকাশ থেকে এসেছি।
মহাকাশের কোন গ্রহ থেকে?
হাসল এপ্লয়, তা তো নিশ্চয়ই। তবে আপনাদের আর আমাদের গ্যালাক্সি একটাই। পৃথিবীর উল্টো দিকে এই গ্রহটা। স্যাজিট্যারিয়াস আর্মে অবস্থিত, এখান থেকে ষাট হাজার আলোক-বছর দূরে।
ষাট হাজার আলোক-বছর! ভুরু কোঁচকাল অস্টিন। তার মানে ওখান থেকে আসতে সুপারলাইট গতিবেগের দরকার।
হ্যাঁ, বলল শ্যালন।
আসতে কোন অসুবিধে হয়নি আপনাদের? এপ্লয়ের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করল অস্টিন।
না।
তোমাদের মত ভোতা স্পেসক্র্যাফট নিয়ে তো চলাফেরা করি না আমরা, বলল ফলার।
পৃথিবীতে কি উদ্দেশ্যে এসেছেন? এপ্লয়কে জজ্ঞেস করল অস্টিন। ফলারের কথায় কানই দিল না।
আপনাদের জীবজগৎ পরীক্ষা করে দেখতে এসেছি, এপ্লয়ের কণ্ঠে মৃদু উত্তেজনা। বিশেষ করে আদিম জীবের বংশধর কিছু আছে কিনা জানা প্রয়োজন আমাদের। দুটো গ্রহেরই লাইফ সাইকেল পায় এক। ইভলুশনও নিশ্চয়ই এক হবে।
বিজ্ঞানে আমাদের চেয়ে এগিয়ে আছেন আপনারা, ধরে নিতে পারি। বলল অস্টিন।
অনেক! বলল এপ্লয়।
দেখেশুনে বিরক্তি ধরে গেছে আমার। বাইরের যে কোন গ্রহ থেকে লোক আসছে, দেখি আমাদের চেয়ে বুদ্ধিমান। এই গ্যালাক্সিতে আমরাই সবচেয়ে পিছিয়ে আছি।
এমনভাবে কথা বলছেন, কর্নেল, কৌতূহলী হয়ে উঠেছে এপ্লয়, যেন রোজই পৃথিবীতে বাইরের গ্রহ থেকে লোক আসছে যাচ্ছে।
আসলে, আসলে আপনারা সবাই… বলতে গিয়েও থেমে গেল সে। তারপর একটু ঘুরিয়ে বলল, এ পর্যন্ত অনেক লোককেই পরীক্ষা করে দেখার জন্যে আমাদের ল্যাবরেটরীতে এনেছি। কম বেশি সবাই অস্বাভাবিক ছিল।
আট ফুট লম্বা, ভয়ঙ্কর এক বিশাল দানবকে দিয়ে টেনে হিচড়ে আনালে মানুষ ভয় পেতে বাধ্য। প্রতিবাদ করল অস্টিন, এই সহজ কথাটা বুঝছেন না, এটা কিন্তু রীতিমত অস্বাভাবিক ঠেকছে আমার কাছে।
খোঁচা খেয়ে চুপ করে গেল এপ্লয়।
বেরিয়ে যাবার আগে কিন্তু ওদের মেমোরি থেকে আমাদের কথা মুছে দেয়া হয়, বলল শ্যালন।
তাতে কি? বল অস্টিন। আসলে এখানে ঢোকানোর আগেই সাংঘাতিক ভয় পাইয়ে দেয়া হয় ওদের। এরপর যদি মাথা ঠিক রাখতে না পারে ওরা, তো দোষ দেয়া যায় না। যেভাবে জন্তু জানোয়ারের মত ধরে নিয়ে আসা হয়…
কর্নেল অস্টিন।
জু-কীপারদের দুচোখে দেখতে পারি না আমি। ক্ষেপে উঠেছে অস্টিন।
চেয়ারে ঝুঁকে বসেছে এপ্লয়। সমগোত্রীয় অন্য সবার চাইতে আপনি আলাদা, কর্নেল…
সমগোত্রীয় কোটি কোটি পৃথিবীবাসীর সবাইকে ল্যাবরেটরীর গিনিপিগ এখনও বানাতে পারেননি কিন্তু।
বিশিষ্ট বেশ কিছু লোককে অবশ্য পরীক্ষা করেছি। বলল শ্যালন। কিন্তু কাউকেই তেমন উল্লেখযোগ্য মনে হয়নি।
ফলার তো বলে, এরা এক্কেবারে আদিম। যোগ করল এপ্লয়।
পৃথিবীতে একটা প্রবাদ আছে, বলল অস্টিন, সেটা হল, পাগলে কি না বলে, ছাগলে কি না খায়।
কর্নেল, থমথমে গলায় বলল ফলার, বললেনই যখন, পৃথিবী ছাড়ার আগে আপনাদের একটা বড় শহরে পাগলামি দেখিয়ে যাবার খুবই ইচ্ছে আমার। সেটা আপনাদের লস এঞ্জেলসও হতে পারে।
ধন্যবাদ, ব্যঙ্গের হাসি হাসল অস্টিন। পাগলদের এড়িয়ে যেতে জানে লস এঞ্জেলসের লোকেরা।
থাক থাক, ঝগড়া বিবাদ করে লাভ নেই। বাধা দিল এপ্লয়। তা কর্নেল অস্টিন, একটা কথার জবাব দেবেন? আমাদের এত আন্ডার এস্টিমেট করছেন কি করে?
প্রথমত, অনেক অদ্ভুত এবং আশ্চর্য জিনিস দেখেছি আমি জীবনে। দ্বিতীয়ত, বর্বর হলেও মহাকাশ সম্পর্কে অতি সামান্য জ্ঞান আমাদের আছে। তাই জানি, মহাকাশের অসংখ্য গ্রহে অতি বুদ্ধিমান জীবের বাস সম্ভব। তৃতীয়ত, আপনারাই প্রথম নন।
প্রথম নই মানে?
আপনারাই শুধু নন, এর আগেও ভিনগ্রহবাসী বুদ্ধিমান জীবের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছে আমাদের। একটু আগেই তো বললাম।
টেবিলের চারধারে বসা প্রতিটি লোক অবাক হয়ে অস্টিনের মুখের দিকে তাকাল। ওরা যেন ভেবে রেখেছিল, পৃথিবীর বাজার ওরাই প্রথমে দখল করেছে।
অনগ্রহবাসী আগেই এসেছে? জিজ্ঞেস করল শ্যালন।
জানি না। তবে তোমাদের এখানে আসার আগেই ওদের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছে আমাদের, বলল অস্টিন। কেপ কেনেডীতে। বছর দেড় কি দুই আগে!
কোন গ্রহবাসী ছিল ওরা? জিজ্ঞেস করল এপ্লয়।
কাছাকাছি একটা গ্যালাক্সি থেকেই এসেছিল। গ্রহটার নাম তাউ সেতী।
ওহ্ ওরা! নাক সিটকাল ফলার, ওরা তো সবাই পাগল। গ্ৰহটার নামই দিয়েছি আমরা পাগলা গ্রহ। অদ্ভুত একটা রেডিয়েশন দিয়ে সারাক্ষণ গ্রহটাকে ঘিরে রেখেছে ওরা। বাইরের কেউ যেন যেতে না পারে তারজন্যে এই ব্যবস্থা।
ঠিকই তো করেছে। দেখছি আরও কিছু লোক আছে, যারা জু কীপারদের পছন্দ করে না।
মাথামোটারা!
তুমি থাম, ফলার! এবারেও বাধা দিল তাকে এপ্লয়ই। হ্যাঁ কর্নেল, কি করে সেতীয়ানদের সঙ্গে সাক্ষাৎ হল আপনাদের?
একটা স্পেস শাটল ভেঙে পড়েছিল সাগর উপকূলে। চারজন লোক ছিল ভেতরে। একজন আগেই প্যারাসুট জাতীয় একটা জিনিস পরে লাফিয়ে নামে। কোন ক্ষতি হয়নি তার। অন্য তিনজন মারা গেছে র্যারিয়েশনে আমাদের মহাকাশযানে করে লোকটাকে তার মাদার শিপে পৌঁছে দিয়েছি আমিই।
সে যাই হোক, কথার মোড় ঘোরাল এপ্লয়। আপনি একটা অসাধারণ সৃষ্টি, কর্নেল, অস্টিন।
কিন্তু বুঝতে পারছি না আমি কিছুতেই, শ্যালনের দিকে চোরা দৃষ্টি হানল অস্টিন, অত খাতির তোয়াজ করা হচ্ছে কেন আমাকে?
আপনাকে বেশ কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞাস্য আছে শ্যালনের। অস্টিনের প্রশ্নটা এড়িয়ে গেল এপ্লয়। ওর স্পেশালিটি নায়োসিনথেনিক-অতি উন্নত বায়োনিক কনস্ট্রাকশন। সাসকোয়াচ ওরই সৃষ্টি।
তীক্ষ্ণদৃষ্টিতে শ্যালনের দিকে তাকাল অস্টিন। ট্যালেন্টেড লেডী। পরীক্ষার জন্যে এতদিনে নিজের সাবজেক্ট পেয়েছে।