সিক্স মিলিয়ন ডলার ম্যান: ০৮. মেয়েটির নাম শ্যালন

সিক্স মিলিয়ন ডলার ম্যান: ০৮. মেয়েটির নাম শ্যালন

০৮. মেয়েটির নাম শ্যালন

মেয়েটির নাম শ্যালন। অপরূপ সুন্দরী। একটা ধবধবে সাদা অপারেটিং টেবিলে শুয়ে আছে অস্টিন, তার ওপর ঝুঁকে আছে মেয়েটি। প্রথম পুরুষটির নাম এপ্লয়, দ্বিতীয়জন ফলার। দুজনেই শ্যালনের সহকারী। টেবিলটার দুদিকে দাঁড়িয়ে আছে। কিম্ভুত দর্শন কতগুলো টেস্ট ইকুইপমেন্ট ঘরের দেয়ালে বসান হয়েছে। আইস টানেলের ক্রিস্টাল-আলোর মতই আলো বেরুচ্ছে যন্ত্রপাতিগুলো থেকেও।

কাজ শুরু করব? জিজ্ঞেস করল এপ্লয়।

হ্যাঁ, বলল শ্যালন। ওর কনশাসনেস লেভেল থারটিটুতে স্থির হবে।

চোখ খুল অস্টিন। ঘুম ঘুম ভাব। ইলেকট্রোস্লীপ পদ্ধতিতে তাকে আধো ঘুম অবস্থায় রাখা হয়েছে। অচেতন নয়, আবার পুরোপুরি চেতনাও নেই।

কতটা নায়াসিনথেটিক, বের করতে হবে আগে, বলল শ্যালন।

ঠিক আছে, বলল এপ্লয়।

কাপড় জামাগুলোতে বায়োনিক কিছু আছে কিনা, আমার মনে হয় তাও দেখা উচিত, বলল ফলার। সব ব্যাপারেই অত্যন্ত সতর্ক সে।

কারেক্ট, সায় দিল শ্যালন।

ঘরটা পরীক্ষাগার। অদ্ভুত এক ধরনের ক্রিস্টালে তৈরি দেয়াল, মেঝে, সিলিং। উজ্জ্বল আলো বিকিরিত হচ্ছে ঘরের প্রতিটি ইঞ্চি জায়গা থেকে। ফলারের নির্দেশে অস্টিনের গা থেকে সমস্ত পোশাক খুলে নিল এপ্লয়। পরীক্ষা করে দেখবে ওগুলো।

কালোগ্লাভস পরে নিয়েছে শ্যালন। অ্যান্টেনাযুক্ত একটা চ্যাপ্টা প্রোব নিয়ে অস্টিনের ডান পায়ে চেপে ধরল। ছোট্ট ডায়ালে রিডিং দেখল। একই ভাবে বা পা-টাও পরীক্ষা করল মেয়েটা।

পুরো ডান পা-টা নায়োসিনথেটিক, ঘোষণা করল শ্যালন, কিংবা ফাস্টজেনারেশন বায়োনিক। বাঁ পা-টাও ডান পায়ের মতই। বাঁ হাতটাও।

মারজারন পাওয়ার? জিজ্ঞেস করল এপ্লয়।

না, নিউক্লিয়ার।

চোখ?

স্পেকট্রানলেজারটা চালু কর তো, আদেশ দিল শ্যালন।

কয়েকটা সুইচ টিপল এপ্লয়। সিলিঙের এক জায়গা থেকে একটা তীব্র উজ্জ্বল আলোকরশ্মি সোজা এসে পড়ল অস্টিনের ডান চোখে। চোখটা পরীক্ষা করল শ্যালন। অস্টিনের মাথাটা সামান্য একটু ডানে কাত করে ধরে আলোকরশ্মি ফেলল বাঁ চোখে। পরীক্ষা করল এই চোখটাও।

ইনফ্রা-রেড, সঙ্গীদের জানাল শ্যালন।

নিজের দেহের ওপর নিয়ন্ত্রণ-ক্ষমতা নেই অস্টিনের। চিন্তা করতে পারছে ঠিকই, কিন্তু একটা আঙ্গুল পর্যন্ত নড়ানর ক্ষমতা নেই। এমন কি চোখের পাতা পর্যন্ত নড়াতে পারছে না। পুরোপুরি ঘুম আসছে, এমন একটা অনুভূতি আছে সারাক্ষণই, কিন্তু ঘুমোচ্ছে না। আসলে পারছেই না। ইলেকট্রোস্লীপ মেশিনই এর জন্যে দায়ী। ওটার মিটার হাফ স্লীপ নির্দেশ করছে।

ওর মাংসপেশীর স্পর্শকাতরতা পরীক্ষা করে দেখা যাক এবার, বলল শ্যালন। এপ্লয়কে আদেশ দিল সে, লোহার বার নিয়ে এস। অস্টিকন স্কোলোমিটার চালু আছে?

এগিয়ে গিয়ে দেয়ালে বসান ইন্টারকমের সুইচ টিপল এপ্লয়। কাউকে ডাকল। ঘরে এসে ঢুকল একজন টেকনিশিয়ান। তাকে লোহার বার আর অন্যান্য দুয়েকটা যন্ত্রপাতি আনার নির্দেশ দিল এপ্লয়।

একটা দুইঞ্চি ডায়ামিটারের লোহার বার এনে অস্টিনের বায়োনিক হাতের পাশাপাশি রাখল টেকনিশিয়ান। অ্যানের পকেট থেকে একটা কালো ধাতব বাক্স বের করে রাখল বাহুর পাশে, লোহার বারের কাছেই।

রেডি, বলল এপ্লয়। সিকোয়েন্স শুরু। মেজারিং, হা…এইবার…

আপনাআপনি অস্টিনের বায়োনিক হাতের মুঠো চেপে ধরল লোহার বারটা, নিজের ইচ্ছের বিরুদ্ধেই। কোন ধরনের চুম্বক যেন টেনে নিয়ে গিয়ে তার মুঠোকে লোহার বার চেপে ধরতে বাধ্য করেছে। ক্রমেই বারের ওপর শক্ত, আরও শক্ত হচ্ছে হাতের চাপ। আশ্চর্য! তার হাতের ভয়ানক চাপে ক্রমেই চেপ্টা হয়ে যাচ্ছে বারটা।

ফরটি-ফাইভ ল্যাটস, মিটারের রিডিং পড়ে যাচ্ছে শ্যালন, ফিফটি…ফিফটি ফাইভ…সিক্সটি…সিক্সিটি ফাইভ…সিক্সিটি সেভেন…সিক্সিটি এইট পয়েন্ট ফোর… ফোর, ম্যাক্সিমাম…

দারুণ, চমৎকৃত হল এপ্লয়।

ভিজুয়্যাল ম্যাক্রোডিনামিকস দেখতে হবে এবার।

চিত হয়ে টেবিলে পড়েই আছে অস্টিন। নিজেকে সাহায্য করতে পারছে না। তার মাথার একপাশে আরেকটা ধাতব বাক্স রাখল টেকনিশিয়ান। দেয়ালে বসান একটা আই চার্টে বিচিত্র সব রেখা ফুটে উঠতে লাগল।

জুম চালু কর, টেকনিশিয়ানকে আদেশ দিল এপ্লয়, এখুনি…

রেখাগুলোর রং পরিবর্তিত হচ্ছে ক্ষণে ক্ষণে। সেদিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আধমিনিট চেয়ে থাকল শ্যালন। টোয়েন্টি টু ওয়ান, বলল সে। মান অতি উন্নত।

অবিশ্বাস্য! অবাক কণ্ঠে বলল ফলার।

এমন কি আমাদের জন্যেও! সত্যি একটা আজব সৃষ্টি লোকটা। নিউরোইউনাসিক স্ক্যান দেখতে হবে এখন।

অস্টিনের চাঁদিতে দুটো যন্ত্র ঠেকানো হল। রেডি, বলল ফলার।

মৃদু গুঞ্জন উঠল একটা বিশেষ কম্পিউটারে। দেয়ালের এক জায়গায় আবরণ সরে গেল। ভেতর থেকে ঠেলে বেরিয়ে এল একটা মেটাল বোর্ড। কয়েকটা ইলেকট্রোনিক ইকুইপমেন্ট বসান তাতে। কোনটার দেহে, কোনটার মাথায় টুপটাপ জ্বলছে নিভছে রঙিন আলো। একটানা দশ সেকেন্ড আলোগুলো জ্বলল নিভল। তাপর আচমকা থেমে গেল।

সিকোয়েন্স শেষ, ঘোষণা করল মেয়েটি। ভেন্টিকুলার প্রোব করব এখন। ওর চেতনাসীমা বিশের নিচে নামিয়ে দাও।

একটা যন্ত্রের গোটা তিনেক সুইচ টিপল ফলার। নামছে।

টের পাচ্ছে অস্টিন, পুরো ঘুমিয়ে পড়ছে সে। জেগে থাকার চেষ্টা করল। কিন্তু পারল না। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই গভীরভাবে ঘুমিয়ে পড়ল সে।

কয়েক ঘণ্টা পর জেগে উঠে দেখল অস্টিন, পরীক্ষাগার খালি। একটা যন্ত্রপাতিও চোখে পড়ল না কোথাও। সব জায়গামত সরিয়ে রাখা হয়েছে নিশ্চিয়ই। টের পেল, আবার কাপড় জামা পরিয়ে দেয়া হয়েছ তাকে। বার কয়েক চোখের পাতা মিটমিট করল সে, তারপর দুহাতে রগড়াল।

হঠাৎই মনে পড়ল তার, হাত দুটো বাঁধা ছিল, এখন খোলা। একলাফে উঠে বসল অস্টিন। প্রথমেই বাঁ পাশে তাকাল। তারপর থেকে দশ ফুট দূরে আরেকটা একই ধরনের অপারেটিং টেবিলে শুয়ে আছে সাসকোয়াচ। আবার জোড়া লাগিয়ে দেয়া হয়েছে তার ছেড়া হাতটা।

ঘুম ভেঙেই ওই বদখত চেহারা দেখতে চায় কেউ! আপন মনেই বিড় বিড় করল অস্টিন। কণ্ঠে বিরক্তি। একবার দেখেই মুখ ঘুরিয়ে নিল সে। অন্যপাশে তাকাল। দেয়ালে হেলান দিয়ে তাকিয়ে আছে মেয়েটা। তার দিকেই চেয়ে আছে। উজ্জ্বল পিঙ্গল মেয়েটার হাত মুখের চামড়ার রঙ। গলায় একটা হীরের নেকলেস। পরনে জাম্প সুট। সপ্রশংস দৃষ্টিতে শ্যালনের দিকে তাকাল অস্টিন।

হ্যাঁ, এমন চেহারা দেখলে তবেই না ভাল লাগে, বলল অস্টিন।

থ্যাংক ইউ, কর্নেল। হাসল শ্যালন।

কয়েক ঘণ্টা আগেও এঘরে ছিলে নিশ্চয়ই?

ছিলাম।

কে তুমি?

শ্যালন।

পুরো পরিচয়?

ওসব পরে শুনবেন, আবার হাসল মেয়েটা। এখন শুধু জেনে রাখুন, আপনার কোন ক্ষতি করা হবে না।

সেটা বুঝতেই পারছি। নইলে এতক্ষণে লাশ হয়ে যেতাম আমি। এদিক ওদিক তাকাল অস্টিন, মার্লিন বেকি কোথায়?

আছে। ভাববেন না, ভালই আছে সে।

ওকে নিয়ে কি করেছ তোমরা?

আপনাকে নিয়ে যা করেছি। পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে ওকে।

ওর কোন ক্ষতি না হলেই ভাল। শ্যানের চোখে চোখে তাকাল অস্টিন। তা বললে না, তুমি কে? কি কাজ কর? ওই দানবটাই বা কার সৃষ্টি? সাসকোয়াচকে দেখিয়ে জিজ্ঞেস করল সে।

ওকে সাসকোয়াচ ডাকি আমরা, হেসে বলল শ্যালন। সোজা হয়ে দাঁড়াল। তারপর গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে এল অস্টিনের দিকে, বহুদিন আগে থেকেই ইন্ডিয়ানরা জানে ওর নাম। আমাদের সহায়তা করে সে, এমন কি কোন কোন ব্যাপারে রক্ষাকারীও বলতে পারেন। অস্টিনের আসল প্রশ্নের জবাবটা এড়িয়ে গেল মেয়েটা।

রোবট না?

হ্যাঁ।

বায়োনিক?

মাথা নাড়াল শ্যালন। নায়োসিনথেটিক, বলল সে। কয়েকটা বেসিক জিনিস আপনারই মত, কিন্তু অনেক নীরস।

আমাদের বেস ক্যাম্প ধ্বংস করতে পাঠান হয়েছিল কেন ওকে?

আপনাদের বসান সেন্সরে আমাদের অস্তিত্ব প্রকাশ পেয়ে যাচ্ছিল প্রায়। বলল মেয়েটা। নিজেদের রক্ষা করার জন্যেই আপনাদের ক্যাম্পটা ধ্বংস করতে পাঠিয়েছি সাসকোয়াচকে।

এবং পরে আমাকে ধ্বংস করতেও পাঠিয়েছিলে?

না, আপনাকে ধরে আনতে, কৌতূহলী হয়ে উঠেছিলাম আমরা। সাধারণ মানুষের চাইতে আপনি আলাদা, দেখেই বুঝেছিলাম। কাজেই পরীক্ষা করে দেখার লোভটা সামলাতে পারিনি। একটু থামল শ্যালন জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাল, আপনার মত আর কেউ আছে, কর্নেল অস্টিন?

নিশ্চয়ই, হালকা গলায় বলল অস্টিন, একটা পুরো বায়োনিক আর্মি আছে আমাদের।

হঠাৎ দেয়ালের এক জায়গায় বসান একটা লাল বাতি দপ দপ করে জ্বলে উঠল। সেদিকে একটা আঙ্গুল তুলে অস্টিনকে দেখাল শ্যালন, হাসল।

আপনি মিছে কথা বললেন। বাতিটা এই কথাই জানাল।

মিছে কথা বললেই বুঝি জানান দেয় বাতিটা? জিজ্ঞেস করল অস্টিন।

বাইরের লোক হলে। অস্টিনের পুরো দেহের ওপর একবার দৃষ্টি বুলিয়ে আনল শ্যালন। বিশ্রাম নিন এখন। পরে আপনার ওপর আরও কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা চালাব। আমাদের সব প্রশ্নের উত্তর জানা হয়ে গেলেই আপনার প্রশ্নের উত্তর দেয়া হবে।

তা ভাল, বলল অস্টিন। কিন্তু আমাকে তোমাদের গোপন কথা জানালে, বাইরের লোককে জানিয়ে দিতে পারি আমি?

তা পারবেন না কোনদিনই, রহস্যময় হাসি হাসল শ্যালন।

অতটা শিওর হচ্ছো কি করে? বন্দীদের মুক্তি দাও না নাকি কখনও?

অস্টিনের একেবারে গা ঘেঁষে এসে দাঁড়াল শ্যালন। যেন কতকালের পরিচয় তার সঙ্গে।

অস্টিনের চুলে আঙ্গুল চালাতে শুরু করল শ্যালন। হঠাৎই মুখ নিচু করে চুমু খেল তার গালে। তারপ কানের কাছে মুখ নিয়ে এসে ফিস ফিস করে বলল, বুঝতেই পারছ, তোমাকে মেরে ফেলার সামান্যতম ইচ্ছেও নেই আমার।

হাত বাড়িয়ে শ্যালনকে ধরতে চাইল অস্টিন। কিন্তু ততক্ষণে তার নাগালের বাইরে চলে গেছে মেয়েটা। অস্টিনের দিকে তাকিয়ে একবার হাসল, তারপরই অদৃশ্য হয়ে গেল। ভোজবাজি যেন।

এদিক ওদিক তাকাল অস্টিন। কিন্তু ঘরের কেথাও নেই শ্যালন। কি করে কোন পথে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল সে?

তিন সেকেন্ড পরই আবার আগের জায়গায় শ্যালনকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখল অস্টিন। তার দিকে তাকিয়ে হাসছে।

আরে, আশ্চর্য ত! ভুরু কোঁচকাল অস্টিন, যাদু জান নাকি তুমি?

উত্তরে শুধু হাসল শ্যালন।

একটা কথা বলবে? জানতে তাকাল অস্টিন, কোন্ দেশে বাড়ি তোমার?

কোন দেশ নয়, অস্টিন, বল কোন্ জগৎ।

হ্যাঁ, কোন্ জগৎ?

আসছি আমি, আবার ভোজবাজির মত অদৃশ্য হয়ে গেল শ্যালন।

গল্পের বিষয়:
অনুবাদ
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত