০২. বিজ্ঞানের এক আশ্চর্য পুনঃসৃষ্টি
বিজ্ঞানের এক আশ্চর্য পুনঃসৃষ্টি স্টিভ অস্টিন পৃথিবীর প্রথম সফল সাইবর্গ। আধা মানুষ, আধা যন্ত্র। মানুষের স্বাভাবিক স্বভাবচরিত্র, আবেগ প্রবণতা, চিন্তাধারা সবই আছে তার। এর পাশাপাশিই আছে অপরিসীম যান্ত্রিক শক্তি। দৈহিক শক্তিতে তার সমকক্ষ তো দূরের কথা, কাছাকাছিও আসতে পারে এমন মানুষ পৃথিবীতে একজনও নেই। যে কোন রেসের ঘোড়াকে দৌড়ে হারিয়ে দিতে পারে সে, সাঁতারে তার তুলনায় ডলফিন কিছুই না।
জীবন্ত যান্ত্রিক মানুষে পরিণত হওয়ার আগেও স্টিভ অস্টিন কিন্তু আর দশজন সাধারণ মানুষের মত ছিল না। বুদ্ধি ছিল তার অতি প্রখর। খুবই অল্প বয়েসে বিমান চালনা শিখেছে। কলেজে, যে কোন খেলাধুলা বিশেষ করে ফুটবলের যাদুকর বলা হত তাকে। অ্যারোডাইনামিকস, অ্যাসট্রোনমিক্যাল ইনঞ্জিনীয়ারিং এবং ইতিহাস, তিনটে বিষয়েই মাস্টার ডিগ্রী নিয়েছে। লেখাপড়া করার সময়েই কুস্তি শিখেছে, ব্ল্যাক বেল্ট পেয়েছে কারাত এবং জুডোতে। পড়ালেখার পালা সাঙ্গ হতেই যোগ দিয়েছে ভিয়েতনাম যুদ্ধে, ফাইটার প্লেনের পাইলট হিসেবে।
বেপরোয়াভাবে শত্রু এলাকায় ঢুকে পড়ে একদিন অস্টিন। গুলি খেয়ে জঙ্গলের মাঝে পড়ে যায় তার প্লেন। কিন্তু ধরতে পারেনি তাকে শত্রুপক্ষ। মারাত্মক আহত অবস্থায় কোনমতে মিত্রশিবিরে ফিরে আসে সে। সঙ্গে সঙ্গে পাঠান হয় তাকে আমেরিকায়, হাসপাতালে। সেরে উঠেই অ্যাসট্রোনট ট্রেনিং প্রোগ্রামে যোগ দেবার জন্যে দরখাস্ত করে সে। নির্বাচিতও হয়ে যায়। দু সপ্তাহের ট্রেনিং দেরার পর সোজা তুলে দেয়া হয় তাকে অ্যাপোলো-র কমান্ডার হিসেবে। ১৯৭৩ সালের ৭ই ডিসেম্বর সকাল ১২:৫৩ মিনিটে চাঁদের উদ্দেশ্যে যাত্রা করল মহাকাশযান। সাফল্যের সঙ্গে সমস্ত বৈজ্ঞানিক অভিযান শেষ করে ফিরে এল অ্যাপোলো-১৭।
এই অভিযানের ফলে অদ্ভুত অভিজ্ঞতা হল অস্টিনের চাঁদে দাঁড়িয়ে হাজার হাজার মাইল দূরের সাদাটে-নীল বলের আকৃতির পৃথিবীর রূপ দেখেছে সে। হঠাই সাংঘাতিক ভালবেসে ফেলেছে এই মাটির পৃথিবীটাকে। মনে মনে ঠিক করে নিয়েছে, আর ভিয়েতনামে যুদ্ধের নামে শুধু শুধু মানুষ খুন নয়, বরং এদের রক্ষা করার কাজে মনোনিবেশ করতে হবে। আর শুধু মানুষই নয়, পৃথিবীর প্রতিটি জীবন্ত প্রাণী, সে কুৎসিত কিলবিলে কেঁচোই হোক আর অপরূপ সুন্দর ব্লু বার্ডই হোক, রক্ষা করায় আত্মনিয়োগ করবে সে।
চাঁদ অভিযানের ফলে মহাকাশ ভ্রমণের নেশায় পেয়ে বসল অস্টিনকে। নাসায় যোগ দিয়ে মহাকাশ এবং মহাকাশযান সম্পর্কিত বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায় সক্রিয়ভাবে সাহায্য করল সে। ফাঁকে ফাঁকে সুযোগ পেলেই আকাশযান নিয়ে উড়াল দেয় আকাশে। সাধারণ যান নিয়ে উঠে যায় বিপদসীমার অনেক অনেক উপরে। তার মত দুঃসাহস এর আগে আর কোন পাইলটের মাঝে দেখা যায়নি।
এই সময়ই তৈরি হল H3 F5। এই আকাশযানটার বৈশিষ্ট্য হল, এর কোন ডানা নেই। অস্বাভাবিক দ্রুতগতি সম্পন্ন এই যানটির চেহারা দেখেই আঁতকে উঠল পাইলটেরা। এ কি জিনিস? এটা আকাশে উড়বে কি করে? এ তো বুলেটাকৃতির বিশালকায় কামানের গোলা। জুল ভার্নের কল্পনা (ফ্রম দি আর্থ টু দি মুন বইয়ে অনেকটা এই ধরনের মহাকাশযানেরই কল্পনা করেছেন জুল ভার্ন) কি বাস্তবে রূপ দিতে উঠে পড়ে লেগেছেন বিজ্ঞানীরা?
ফ্লাইট টেস্ট হবে অদ্ভুত যানটার। কিন্তু মহড়া দিতে এগিয়ে এল না কোন পাইলটই। আসলে সাহসই করল না কেউ। বিশেষ ধরনের একটা কামানের মতই জিনিস মহাকাশে ছুঁড়ে দেবে এই বিশেষ যানটাকে। নির্দিষ্ট পাল্লায় পৌঁছে আবার আপনাআপনি এসে ল্যান্ড করবে যানটা (এভাবেই তৈরি করা হয়েছে একে) আরোহীর বিন্দুমাত্র ক্ষতি হবে না। কিন্তু বিশ্বাস কি? কোন কিছুর বিনিময়েই ঝুঁকি নিতে এগিয়ে এল না কোন পাইলট।
তবে কি যানটা তৈরিই বৃথা গেল? বৃথা গেল বিজ্ঞানীদের অত পরিশ্রম, সাধনা? না। হাসিমুখে এগিয়ে এল স্টিভ অস্টিন। গভীর মনোযোগের সঙ্গে বাইরে ভেতরে পরীক্ষা করে দেখল যানটার। তারপর হাসিমুখেই ত্রিকোণ ককপিটে উঠে বসল। বিশেষ কামানের মুখ দিয়ে অতিকায় বুলেটের মত তীব্রবেগে বেরিয়ে গেল স্পেস ক্যাপসুল। উঠে গেল আরও, আরও উপরে। আরেকবার নিচের নীল সাদা পৃথিবী নামক বলটার দিকে আশ্চর্য হয়ে তাকিয়ে থাকল অস্টিন।
হঠাৎই চমকে উঠল অস্টিন। ধক করে উঠল হৃৎপিন্ড। ইঞ্জিনের আওয়াজ শুনেই বুঝতে পারল গোলমাল দেখা দিয়েছে। নতুন ধরনের ইঞ্জিন। খুব একটা ধারণা নেই জিনিসটা সম্পর্কে অস্টিনের। তবু গোলমালটা কোথায় খুঁজে বের করার চেষ্টা করল সে। কিন্তু পারল না। পৃথিবীর দিকে ফিরে চলেছে আবার যানটা। এয়ার ফোর্স বেসে ক্রমাগত রেডিও যোগাযোগ করে চলল অস্টিন। কিন্তু নিচে থেকেও নিয়ন্ত্রণ করা গেল না ক্যাপসুলটাকে, আসলে নিয়ন্ত্রণ করার তেমন কোন ব্যবস্থাই রাখা হয়নি। আঙ্গুল কামড়াতে লাগলেন বিজ্ঞানীরা। ইস, এতবড় ভুল করার কোন মানে হয়! কেন যে আগেই সম্ভাবনাটার কথা ভাবলেন না কেউ।
মাটির কাছে এসে যাচ্ছে ক্রমেই আকাশযান। টেলিভিশনের পর্দায় দেখল অস্টিন নিচে ব্যস্তভাবে ছুটোছুটি করছে অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ারবিগ্রেডের গাড়ি ইত্যাদি।
তীরবেগে নিচে নেমে যাচ্ছে ক্যাপসুল। মাটি থেকে মাত্র আর কয়েকশো গজ উপরে আছে। আর মাত্র কয়েকটা সেকেন্ড। নিজেকে ভাগ্যের হাতে ছেড়ে দিল অস্টিন।
নাক নিচের দিকে করে মাটিতে এসে পড়ল ক্যাপসুল। নাকটা ফুট দুয়েক গেঁথে গেল মাটিতে। সাংঘাতিক গতিবেগ সইতে না পেরে পেছন দিকটা বসে গেল। এতে ফুলে গেল বুলেটাকৃতি যানের মাঝখানটা। তারপরই ফেটে গেল। চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে আশেপাশে ছড়িয়ে পড়ল ধাতবদেহ আর যন্ত্রপাতিগুলো। পর পর ঘটনাগুলো ঘটতে বড়জোর আধসেকেন্ড সময় লাগল।
দ্রুত এগিয়ে এসেছে অ্যাম্বুলেন্স আর ফায়ারব্রিগেড ভ্যান। গাড়িগুলোর দরজা খুলে টপটপ নেমে এল কর্মীরা। প্রথমেই ধ্বংস কূপের ভেতর থেকে টেনে বার করল ওর স্টিভ অস্টিনকে।
দুটো পায়েরই উরু থেকে নিচের অংশ গুঁড়ো হয়ে গেছে অস্টিনের। বাঁ হাতটাও শেষ। একটা ধাতুর টুকরোর খোঁচায় বা চোখটা গলে বেরিয়ে গেছে। চাপ লেগে ভেঙে গেছে পাঁজরার কয়েকটা হাড়। ধাতুর চোখা একটা পাত ঢুকে গেছে বুকের ভেতরে, একেবারে হৃৎপিন্ড ঘেঁষে একটা হার্ট ভালভ কেটে দিয়েছে। নিচের চোয়াল গুড়ো হয়ে গেছে। দুই পাটির অধিকাংশ দাঁত নেই। কয়েকটা মারাত্মক ফাটল খুলিতে।
তালগোল পাকিয়ে পড়ে আছে স্টিভ অস্টিনের রক্তাক্ত দেহ নামক মাংসপিন্ডটা।
আশ্চর্যভাবে বেঁচে গেছে স্টিভ অস্টিন। সোজা তাকে নিয়ে আসা হয়েছে বায়োনিক রিসার্চ সেন্টারে। কলোরাডো স্প্রিংয়ের উত্তরে বুকি মাউনটেনে বিপুল টাকা খরচে প্রতিষ্ঠিত একটা টপসিক্রেট সরকারী গবেষণাগার এটা। যদি শেষ পর্যন্ত বেঁচে থাকে অস্টিন তো এই প্রতিষ্ঠানের দৌলতেই থাকবে। যেরকম মারাত্মকভাবে আহত হয়েছে সে, পৃথিবীর আর কোন হাসপাতাল কিংবা গবেষণাগারই বাঁচাতে পারবে না তাকে।
দ্রুত কিন্তু গভীর মনোযোগের সংগে অস্টিনকে পরীক্ষা করে দেখলেন বায়োনিক রিসার্চ সেন্টারের নেতৃস্থানীয় ডাক্তার বিজ্ঞানীরা। অদ্ভুত এক চিন্তা স্থান নিল তাদের অতি উন্নত মস্তিষ্ক। তাইতো, এতদিন যা ভাবছিলেন, এই বিশেষ লোকটাকে দিয়েই সেটা কার্যে পরিণত করে দেখার চেষ্টা করে দেখলে কেমন হয়? কিন্তু তার জন্যে বিপুল পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন। সরকার কি দেবেন? তবু তারা চাইলেন। টাকার অংকের কথা শুনে চমকে উঠলেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট। একটা লোকের পেছনে অত টাকা ব্যয় করবেন? অনেক ভেবে চিন্তে মন্ত্রীবর্গের সঙ্গে শলাপরামর্শ করে অবশ্য শেষ পর্যন্ত টাকা দেয়াই স্থির করলেন তিনি।
স্টিভ অস্টিনই হবে পৃথিবীর প্রথম সাইবর্গ-মানুষ আর যন্ত্রের সংমিশ্রণ। পৃথিবীর প্রথম বায়োনিক ম্যান। মানবিক ক্ষমতা আর যন্ত্রের সহাবস্থানে সৃষ্টি হবে এক অতি আশ্চর্য জীব, যে কাজ করবে আমেরিকান ইনটেলিজেন্সের হয়ে।
একটা বিশেষ ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চের স্পেশাল অপারেশন বিভাগের চিফ অসকার গোল্ডম্যান। বায়োনিক রিসার্চ স্টেশন প্রতিষ্ঠিত হবার পক্ষে যে কজন ভোট দিয়েছেন, তিনিও তাদের মধ্যে একজন। প্রতিষ্ঠানটা গড়ে ওঠার পর থেকেই একটা বিশেষ আশা মনে মনে পোষণ করে আসছেন তিনি। অভূতপূর্ব ক্ষমতাশালী এবং শক্তিধর একজন বায়োনিক ম্যান যদি তৈরি করা যেত।
গোল্ডম্যানের মনের আশা পূরণ করার জন্যেই যেন স্টিভ অস্টিন-সাইবর্গ তৈরিতে মন দিলেন রিসার্চ সেন্টারের বিজ্ঞানীরা। খবরটা চাপা থাকল না গোল্ডম্যানের কাছে। একেবারে লাফিয়ে উঠলেন তিনি। ছুটলেন রিসার্চ সেন্টারে। জ্যান্ত সাইবর্গ কেমন কেমন হলে ভাল হয়, একটা ধারণাও দিলেন বিজ্ঞানীদের।
বায়োনিক রিসার্চ সেন্টারের প্রধান ডঃ রুডি ওয়েলস। নামকরা বিজ্ঞানী। অস্টিনের বিশেষ বন্ধু। গভীর সহানুভূতি আর কৌতূহল নিয়ে কাজে মন দিলেন তিনি। ইলেকট্রোসীপ পদ্ধতিতে ঘুম পাড়ানো হল অস্টিনকে। একের পর এক অজস্র অপারেশন চলল তার দেহে।
প্রথমেই অস্টিনের নষ্ট হয়ে যাওয়া হার্ট ভালভটা বদলে কৃত্রিম হুফনাজেল ভালভ লাগান হল। ভাঙাচোরা খুলি খুলে ফেলে দেয়া হল। তার স্থান নিল সিজিয়ামের তৈরি কৃত্রিম খুলি। ভেতরে বাইরে দুই দিকেই স্পঞ্জ জাতীয় পদার্থের আস্তরণ, ব্রেন এবং চামড়া নষ্ট হবার ভয় রইল না এতে। আসলে একটা সার্বক্ষণিক হেলমেট বসান হয়ে গেল অস্টিনের মাথায়। ভয়ানক রকম আঘাতেও সহজে আর ব্রেনে চোট লাগবে না।
বুকের ভাঙাচোরা রিবগুলো কেটে বের করে নিয়ে আসা হল। তার জায়গায় বসিয়ে দেয়া হল ধাতব অ্যালয়-ভিটালিয়ালের তৈরি রিব। সিলিকন রাবারের তৈরি কৃত্রিম পেশী দিয়ে ঢেকে দেয়া হল বক্ষপঞ্জর। তার আগেই কৃত্রিম রিবের সঙ্গে সূক্ষ্ম তারের অ্যান্টেনা আর অন্যান্য রেডিও-সামগ্রী আটকে দেয়া হয়েছে। অ্যান্টেনার তারটা একটা রিব বেয়ে গিয়ে মেরুদন্ড ধরে নেমে গেছে একটা বায়োনিক পা পর্যন্ত।
সিজিয়ামের সাহায্যেই তৈরি হয়েছে কৃত্রিম চোয়াল, আসল চোয়ালের চাইতে অন্তত দশগুণ বেশি টেকসই। কঠিন নাইলনের তৈরি দাঁত বসান হল এই চোয়ালে। নষ্ট হয়ে যাওয়া বাঁ চোখের অবশিষ্ট বের করে নিয়ে অক্ষিকোটরে বসিয়ে দেয়া হল অতি ক্ষুদে কিন্তু অসাধারণ শক্তিশালী মিনিয়েচার ক্যামেরা লাগান চক্ষুগোলক। পুরোপুরি অন্ধকারেও এই চোখের সাহায্যে দেখতে পাবে অস্টিন। চাইলেই চোয়ালে বসান একটা ক্ষুদে বোতাম টিপে এই ক্যামেরার সাহায্যে যে কোন সময় যে কোন লাইটিং-এ যে কোন জিনিসের ছবি তুলতে পারবে সে। চোখের ভেতরের ক্যামেরাতেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রসেসিং হয়ে যাবে ছবি। ইচ্ছে করলে বের করে নিয়ে আসা যাবে ফিল্ম-এই ফিল্মও বিশেষ পদার্থে তৈরি, কোনসময়েই শেষ হবে না। ক্যামেরার ভেতরেই তৈরি হতে থাকবে। একটা ফিল্ম বের করে আনার সঙ্গে সঙ্গে তৈরি হয়ে জায়গামত বসে যাবে আরেকটা ফিল্ম। অদ্ভুত সৃষ্টি এই বাঁ চোখটা। অতগুলো সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম জটিল যন্ত্রপাতির সমাবেশ অথচ বাইরে থেকে দেখে আসল ডান চোখটা থেকে এটাকে আলাদা করে চেনার জো নেই। কেউ ধারণাই করতে পারবে না, এটা একটা বায়োনিক চোখ। শুধু ছবি তোলা আর দেখাই নয় অণুবীক্ষণেরও কাজ করবে এই চোখ। যে কোন জিনিসকে অন্তত বহুগুণ বড় দেখতে পারবে অস্টিন ইচ্ছে করলেই। কোন সুইচ টেপাটেপির দরকার নেই। অস্টিনের কৃত্রিম খুলির ভেতর দিকে বসান আছে কম্পিউটার, ব্রেনের সঙ্গে যোগ আছে এর। অর্থাৎ অস্টিনের ইচ্ছের সঙ্গেও যোগ আছে। সুতরাং সে চাইলেই বিশেষ বিশেষ কাজ করে দেবে কম্পিউটার, তার হয়ে।
অস্টিনের বায়োনিক হাত-পাগুলোও কম বিস্ময়কর নয়। ভেতরের হাড় বিশেষ ধরনের ধাতব অ্যালয় দিয়ে তৈরি, ভাঙা কঠিন। রাসায়নিক পদার্থে তৈরি কৃত্রিম পেশী দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়েছে এই হাড়। অদ্ভুত মিনি জেনারেটর বসান হয়েছে হাড়ের ভেতরে। সারাক্ষণই বিদ্যুৎ তৈরি করতে থাকবে জেনারেটর। ছড়িয়ে দেবে কৃত্রিম পেশীতে। অসাধারণ ক্ষমতা আর শক্তি এসে যাবে পেশীগুলোতে। অস্টিন চাইলেই কম্পিউটার আদেশ দেবে পেশীগুলোকে রেডিওর সাহায্যে। একটা নির্দিষ্ট সীমানার মধ্যে যে কোন গতিবেগে দৌড়াতে পারবে অস্টিন বায়োনিক পায়ের সহায়তায় কৃত্রিম বাহুটায় এসে যাবে বায়োনিক শক্তি। আসল হাতের মতই এই বায়োনিক হাতে ডিমের মত ভঙ্গুর জিনিসকেও তুলে নিতে পারবে অস্টিন আবার ইচ্ছে করলে ইস্পাতের ফাঁপা বলকেও চিপে থেতলে দিতে পারবে।
এমনি সব আরও আজব আজব জিনিস আর যন্ত্রপাতি ভরে ভরে অদ্ভুত এক রোবটে পরিণত করা হল স্টিভ অস্টিনকে। শত্রুর জন্যে এক ভয়াবহ ধ্বংসমেশিন। অতসব কাজ শেষ করতে পুরো একটি বছর লেগে গেল। এই একটি বছর হাসপাতালের বিছানায় আর অপারেশন টেবিলে কাটাতে হল অস্টিনকে এবং এই সময়ে প্রায় রোজই এসে অস্টিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে গেছেন গোল্ডম্যান। ঘণ্টার পর ঘণ্টা সাহচর্য দিয়েছেন।
স্টিভ অস্টিনের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হয়ে গেছেন স্পেশাল অপারেশন চিফ অসকার গোল্ডম্যান।