১.৪ লুসি ওয়েস্টেনরা ও মিনা মুর
লুসি ওয়েস্টেনরা ও মিনা মুর, অনেক দিন থেকে ঘনিষ্ঠ বান্ধবী। একসাথেই লেখাপড়া করেছে, একসাথেই বড় হয়েছে ওরা দুজনে। লেখাপড়া শেষ করে মিনা চলে গেল দূরের ছোট্ট এক শহরে, স্কুল মাস্টারির চাকরি নিয়ে। লুসি থেকে গেল হুইটবির সতেরো নং চ্যাথাম স্ট্রীটে, বাবা-মার সঙ্গে। চাকরি করার সময়ই মিনার পরিচয় ঘটে জোনাথন হারকারের সাথে। ক্রমে পরিচয় ঘনিষ্ঠ হল, হল প্রেম। দুজনেই ঠিক করল বিয়ে করবে একে অন্যকে। যথারীতি আংটি বিনিময় করে বাগদানও হয়ে গেল একদিন। এমন সময় মি. হকিন্সের কাছ থেকে ডাক এল জোনাথনের, এক বিশেষ জরুরী কাজ নিয়ে ট্রানসিলভেনিয়ার এক অখ্যাত দুর্গম এলাকায় যেতে হবে তাকে। এই কাজ করতে গিয়েই কাউন্ট ড্রাকুলার পাল্লায় পড়ে জোনাথন। তবে তা মিনার জানার কথা নয়। সেদিন বিকেলের ডাকে জোনাথনের কাছ থেকে ছোট্ট একটা চিঠি পেল মিনা। দিন সাতেকের মধ্যেই ফিরে আসছে জোনাথন। মনের আনন্দে লুসির কাছে জোনাথনের আসার খবর জানিয়ে চিঠি লিখে ফেলল সে। কিন্তু জোনাথনের ফিরে আসার খবরটা যে কত বড় মিথ্যে তা ঘুণাক্ষরেও যদি জানত মিনা!
মিনার চিঠি পেয়ে লুসিও খুশি। এদিকে তার জীবনেও আমূল পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে। বিয়ে হতে যাচ্ছে তারও। একদিনেই তিন তিনটে বিয়ের প্রস্তাব এসেছে সেদিন লুসির কাছে।
প্রথমটা এল দুপুর। খাওয়া-দাওয়ার একটু আগে। ভদ্রলোক পেশায় ডাক্তার, নাম জন সেওয়ার্ড। অত্যন্ত সম্রাত্ত ঘরে জন্ম জন সেওয়ার্ডের। বয়স ঊনত্রিশ। অথচ এই বয়সেই বিশাল এক পাগলা গারদের ভার দেয়া হয়েছে তার ওপর। সুন্দর চেহাবা, তী বুদ্ধি, দৃঢ়চেতা, অথচ এত শান্ত স্থির মেজাজের মানুষ খুব কমই চোখে পড়ে। বেশ কিছুদিন ধরেই লুসির সাথে ঘনিষ্ঠতা হয়েছে তার। বলি বলি করেও কথাটা এতদিন বলতে পারেনি জন লুসিকে। কিন্তু সেদিন মনস্থির করে নিয়ে সোজা গিয়ে লুসির ঘরে ঢুকল জন। লুসিকে সামনে পেয়েই ওর হাত দুটো নিজের দুহাতে তুলে নিয়ে চোখে চোখে তাকিয়ে বলে ফেলল সে, লুসি, তোমাকে ভালবাসি আমি। তোমাকে জীবনসঙ্গিনী হিসেবে পেলে নিজেকে ধন্য মনে করব।
লুসি ওকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করেছে সত্য কিন্তু স্বামী হিসেবে কল্পনা করেনি কখনও। তাই মনে মনে জুন দারুণ ব্যথা পাবে জেনেও তাকে ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হল সে।
দ্বিতীয় প্রস্তাবটা এল সেদিনই বিকেলে। আমেরিকার টেকসাসে বাড়ি ভদ্রলোকের, নাম কুইনসে মরিস। অভিযানপ্রিয়, হাসিখুশি, উচ্ছল এক দুর্ধর্ষ তরুণ
বিরাট বড়লোকের একমাত্র সন্তান। বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চশিক্ষা শেষ করে অ্যাডভেঞ্চারের নেশায় পাগল হয়ে ঘুরে বেড়িয়েছে পৃথিবীর দুর্গম সব অঞ্চলে। লুসিকে দেখার পর থেকে একটা পরিবর্তন এসেছে তার মধ্যে। বিয়ে করে সংসারী হতে চাইছে সে এখন। বিকেলে বাগানের এক কোণে ঘুরে বেড়াচ্ছিল লুসি। সেই সময় এল মরিস। লুসিকে একলা পেয়ে সোজা বিয়ের প্রস্তাব করে বসল সে। শান্ত এবং ভদ্রভাবে তার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করল লুলি।
লুসির প্রত্যাখ্যানের পরও কিন্তু মরিসের মুখের হাসি একবিন্দু মলিন হল না। বহুদিনের পরিচিত বন্ধুর মত হেসে লুসির কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেল সে।
তৃতীয় প্রস্তাব, এল সন্ধ্যার পর, আর্থার হোমউডের কাছ থেকে। আর্থারের দীর্ঘকায় সুপুরুষ চেহারা, আর মাথা ভর্তি কোঁকড়ানো কালো চুল দেখলে যে-কোন মেয়েরই মন না টলে পারবে না। স্থানীয় এক কলেজের অধ্যাপক সে, লুসিদের বাড়িতে প্রায়ই বেড়াতে আসে। মনে মনে লুসিও ভালবেসে ফেলেছে তাকে। সেদিন কি যে হল আর্থারের কে জানে। ঝড়ের মত ঘরে ঢুকেই লুসিকে জড়িয়ে ধরে চুমোয় চুমোয় ভরিয়ে দিল। আর্থারের আলিঙ্গনাবদ্ধ হয়ে ভীরু কপোতীর মত থরথর করে কাঁপতে লাগল লুসি। কয়েক মুহূর্ত পর আর্থারের আবেগের মাত্রা কিছুটা প্রশমিত হলে তার বিশাল বক্ষে মুখ লুকালো লুসি। অস্ফুটে বলল সে, আর্থার, আমার আর্থার।
জন সেওয়ার্ড, কুইনসে মরিস আর আর্থার হোমউত, তিনজনেই কিন্তু ঘনিষ্ঠ বন্ধু। লুসির কাছ থেকে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার কথাটা কিন্তু আর্থারকে জানাল না জন এবং মরিস। বরং লুসিকে বিয়ে করতে যাচ্ছে শুনে হৈ-হৈ করে স্বাগত জানাল এরা আর্থারকে।
লুসির কাছ থেকে প্রত্যাখ্যাত হবার পর পাগলা গারদে ফিরে গিয়ে রোগীর সেবায় মন দিল জন সেওয়ার্ড, আর আবার পৃথিবীর ভ্রমনে বেরিয়ে পড়ল কুইনসে মরিস। অবশ্য চিঠিপত্রের মাধ্যমে তিন বন্ধুই যোগাযোগ রাখল তিন বন্ধুর সাথে। বিন্দুমাত্র ফাটল ধরল না ওদের বন্ধুত্বে।