ডেভিড কপারফিল্ড : ২০. অ্যাগনেসের কাছে প্রত্যাবর্তন

ডেভিড কপারফিল্ড : ২০. অ্যাগনেসের কাছে প্রত্যাবর্তন

২০. অ্যাগনেসের কাছে প্রত্যাবর্তন

পেগোটি আর আমি বন্ধুদেরকে বিদায় দিতে গেলাম। মি. পেগোটি মার্থাকেও অস্ট্রেলিয়ায় নিয়ে যাচ্ছেন দেখে দারুণ খুশি হলাম আমি। দুই দুটি মৃত্যুর বিষয়ে কিছুই জানালাম না ওদেরকে। কারণ ওদের বিদায়ের আনন্দকে আমরা মাটি করে দিতে চাইনি।

কয়েক দিন পরে আমিও ইংল্যাণ্ডের বাইরে চলে গেলাম। তিন বছর ধরে ঘুরে বেড়ালাম দেশে দেশে। আর লিখলাম। গল্পগুলো প্রকাশের ব্যবস্থা করার জন্য ট্র্যাডস-এর কাছে পাঠিয়ে দিলাম। আমার স্বাস্থ্যের উন্নতি হলো। সিদ্ধান্ত নিলাম এবার দেশে ফিরব।

তিনটি বছর বিদেশে থাকার পর স্বদেশের টান প্রবল হয়ে উঠল আমার মনে। অ্যাগনেসের টানও বটে। এ তিন বছর ধরে ও আমাকে চিঠি লিখেছে। আমাকে উৎসাহ দিয়েছে। সান্ত্বনা দিয়েছে। ছোট মেয়েদের জন্য ও যে স্কুলটি খুলেছে তার কথা জানিয়েছে। এ তিন বছরে ওর কথা যতই ভেবেছি ততই উপলব্ধি করেছি ওকে আমি কত বেশি ভালবাসি এবং আমার প্রতি ও কত সদয়। আমার আশা, খুব বেশি দেরি করে ফেলিনি, হয়তো ও বিয়ে করে ফেলেনি। কাউকে।

হেমন্তের এক হিমেল রাতে লণ্ডনে এসে নামলাম। পরদিন কোচে চড়ে ডোভারে গেলাম আমার দাদীকে দেখতে। তিনি সেখানে তার পুরানো কটেজে ফিরে গেছেন। তিনি, মি. ডিক আর পেগাটি চোখে আনন্দের অশ্রু নিয়ে অভ্যর্থনা করলেন আমাকে।

সন্ধ্যার পরে আমরা যখন একা হলাম তখন দাদী জিজ্ঞেস করলেন, এখন বলো তো, টুট, উইকফিল্ডদের দেখতে আমরা কখন যাব?

আশা করি আগামীকাল, জবাব দিলাম কিন্তু ওমানে অ্যাগনেস বিয়ে করেনি তো?

তুমি যতদিন বাইরে ছিলে ততদিনে ইচ্ছে হলে ও বিশবার বিয়ে করতে পারত। কিন্তু তা করেনি। তবে আমার সনেই এই যে, এমন একজন কেউ আছে যাকে ও বিয়ে করবে, বলে ধূর্ত হাসি হাসলেন তিনি।

সেক্ষেত্রে আমি জিজ্ঞেস করলে নিশ্চয়ই অ্যাণনেস আমাকে বলবে লোকটা কে?

পরদিন সকালে আমি চলে গেলাম! অ্যাগনেসকে দেখে দারুণ খুশি হলাম। কিন্তু ও কি বলবে তা ভেবে ভয় হলো আমার মনে। আমরা আমার ভ্রমণ এবং পেগোটিদের বিষয়ে আলোচনা করলাম! শেষমেশ জিজ্ঞেস করলাম, তোমার খবর কি? তুমি কেমন ছিলে এতদিন?

একটুখানি হেসে অ্যাগনেস বলল, বাবা ভাল আছেন। আমাদের বাড়ির পরিবেশ শান্ত ও আনন্দময়। এর বেশি আর কিছু বলার নেই।

কেবল এটুকু? আর কিছুই নেই বলার মত?

মাথা ঝাঁকিয়ে ও জানাল যে সত্যি বলার মত আর কোন ঘটনাই ঘটেনি ওর জীবনে।

আমি তোমাকে জানাতে চাই অ্যাগনেস, সারা জীবন আমি তোমার দিকে তাকাব। সারা জীবন তোমাকে ভালবাসব বরাবরই ভালবেসে এসেছি তোমাকে। কিন্তু এখন তোমাকে মুখ খুলতেই হবে। অন্যের কাছে শুনেছি, তুমি নাকি কাউকে

ভালবাস এবং বিয়ে করবে। কথাটা কি সত্যি?

অ্যাগনেস কেঁদে ফেলল। আমার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে বসল। আমার যদি কোন গোপন কথা থাকে তবে তা এত বছর যেমন ছিল তেমনি গোপনই। থাকুক আমার মনে। আমি তা প্রকাশ করতে পারব না, বলল সে।

এত বছর ধরে! বলো কি! চেঁচিয়ে উঠে টেনে নিলাম ওকে বুকের মধ্যে। হঠাৎ বুঝতে পারলাম যে বহু বছর ধরে আমাকে ভালবেসে এসেছে অ্যাগনেস! প্রিয় অ্যাগনেস! আমি কি তাহলে বিশ্বাস করব যে…।

প্রিয় ট্রটউড, একটা কথা আমাকে বলতেই হচ্ছে—যা কখনও মুখ ফুটে বলতে পারিনি। আজীবন আমি তোমাকেই ভালবেসেছি।

এখন আমাদের চাইতে সুখী আর কে আছে? দুজনে গেলাম দাদীর কাছে। তাকে বললাম আমাদের পরস্পরের ভালবাসার কথা। দাদী এত খুশি হলেন যে আনন্দ চেপে রাখতে না পেরে কেঁদে ফেললেন। পেগোটি আর মি. ডিক ছুটে এলেন বারান্দায়, দাদী আলিঙ্গন করলেন দুজনকে।

অ্যাগনেস আরেকজনকে বিয়ে করতে যাচ্ছে বলে তিনি কি মজা করেছিলেন আমার সঙ্গে?

পনেরো দিনের মধ্যেই বিয়ে হয়ে গেল আমার এবং অ্যাগনেসের। বিয়ের পরে অ্যাগনেস আমাকে বলল যে মৃত্যুর আগে ডোরা ওকে ডেকে পাঠিয়েছিল শুধু। একটি কারণে-অ্যাগনেসকে আমার স্ত্রী হতে অনুরোধ করেছিল, এটাই ছিল তার অন্তিম ইচ্ছে।

কথাটা বলতে বলতে কেঁদে উঠল অ্যাগনেস। আমিও কাঁদলাম, যদিও দুজনেই তখন আমরা সুখের সাগরে ভাসছি।

গল্পের বিষয়:
অনুবাদ
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত