১৫. ধন্যবাদ, মি. ডিক
ডক্টর স্ট্রং-এর কাজ ছেড়ে দিয়েছি অনেক দিন হলো। কিন্তু কাছাকাছি থাকি বলে প্রায়ই দেখা হয় তার সঙ্গে। উরিয়া হীপের নির্মম কথাগুলো তার হৃদয়ে আসন গেড়ে বসেছে এবং তাঁকে পীড়া দিচ্ছে অবিরাম। ক্রমেই তিনি মনমরা ও নীরব হয়ে যাচ্ছেন।
এক রাতে মি, ডিক এসে আমাকে বললেন, ট্রটউড, আমার সঙ্গে একটু কথা বলার সময় হবে তোমার?
নিশ্চয়ই, মি. ডিক।
শোনো বাবা, শুরু করলেন তিনি, তোমাকে একটা প্রশ্ন করব। আমার এদিকটা সম্পর্কে তোমার ধারণা কি? বলে তিনি তাঁর কপালটা ছুঁয়ে দেখালেন।
আমি হতভম্ব! কি জবাব দেব বুঝতে পারলাম না। তবে তিনি আমাকে সাহায্য করলেন। বললেন, আমি সহজ-সরল দুর্বল-মনা লোক। আমি যে বোকা তা আমার জানা আছে, যদিও তোমার দাদী দেখাতে চান যে আমি বোকা নই। আমি এত বেশি সহজ-সরল যে তিনি অতগুলো বছর আমার বন্ধু না হলে এবং আমার দেখাশোনা না করলে আমাকে পাগলা-গারদে আটকে রাখা হত। কিন্তু, স্যার, সহজ-সরল বোকা মানুষও আকাশে মেঘ জমলে দেখতে পায়।
কোন্ মেঘের কথা বলছেন? জিজ্ঞেস করলাম তাকে।
অ্যানি আর ডক্টর স্ট্রং-এর মাঝখানে যে মেঘ জমেছে, জবাব দিলেন তিনি। কেন এ মেঘ জমল?
যথাসম্ভব সহজভাবে ব্যাখ্যা করে তাকে বুঝিয়ে দিলাম উরিয়া হীপ কি করেছে।
কিন্তু মিস বেটসি, দুনিয়ার সবচেয়ে চমক্কার মহিলাটি এ ব্যাপারে কিছু করছেন না কেন? তুমি তো একজন বিদ্বান। তুমি কিছু করছ না কেন?
বিষয়টা খুবই নাজুক, বললাম তাকে। আমরা এতে নাক গলাতে পারি না।
ঠিক আছে, স্যার। তাহলে যে কাজটি চমৎকার ও বিদ্বান লোকেরা করতে পারে না তা আমার মত গরীব সহজ-সরল লোকই করুক। আমিই ওদেরকে মিলিয়ে দেব। নাক গলাচ্ছি বলে আমাকে ওরা দোষ দেবে না। আমি তো শুধু মি. ডিক। মি. ডিককে কেই বা পাত্তা দেয়? আমি কিছুদিন ধরে ভাবছি ব্যাপারটা নিয়ে। আমার মাথায় একটা বুদ্ধি এসেছে, বললেন তিনি।
সপ্তা দুয়েক এ বিষয়ে আর কিছুই শোনা গেল না। নিশ্চিত হলাম যে অস্থিরচিত্ত মি. ডিক গোটা ব্যাপারটাই ভুলে গেছেন। তারপর একদিন সন্ধ্যায় আমাদের উপস্থিতিতে মি. ডিক বিবর্ণ কম্পমান অ্যানিকে নিয়ে ডক্টরের স্টাডিতে গিয়ে ঢুকলেন।
ডক্টরের পায়ের কাছে হাঁটু গেড়ে বসে কাঁদতে কাঁদতে অ্যানি বললেন, তুমি আমার স্বামী। দয়া করে মুখ খোল। চুপ করে থেকো না আর। বলো কি হয়েছে আমাদের মধ্যে।
প্রিয় অ্যানি, বললেন ডক্টর স্ত্রীর হাত ধরে, আমাদের জীবনে যে পরিবর্তন দেখা দিয়েছে তার জন্য আমিই দায়ী। কিন্তু তোমার প্রতি আমার ভালবাসা আর শ্রদ্ধার কোন পরিবর্তন হয়নি।
কিন্তু কিছু একটা গোলমাল হয়েছে। আমার মন বলছে। তুমি যদি তা না বললা, তবে আমার উপস্থিত বন্ধুরা বলুক কি হয়েছে, বলে অ্যানি ফিরে তাকাল মি. ডিক এবং আমাদের দিকে।
দীর্ঘ নীরবতার পর আমি দুঃখিত ও দ্বিধান্বিত ভাবে তাকে বললাম উরিয়া হীপ কি জঘন্য কথা বলেছে। আমার কথা শেষ হবার পর অ্যানি ডক্টরের হাতে চুমু দিয়ে কোমলস্বরে বললেন:
আমি যখন ছোট ছিলাম তখন তোমাকে বাপের মতই ভালবাসতাম। অত্যন্ত। ন্যাওটা ছিলাম তোমার। পরে তুমি যখন আমাকে বিয়ে করতে চাইলে তখন। বিস্মিত হলেও গর্ববোধ করছিলাম এই কারণে যে তুমি আমাকে নিজের জন্য যোগ্য মনে করেছ। পরে স্বামী হিসেবে তুমি আমার সাথে এত ভাল ও সদয় ব্যবহার করলে যে আমি তোমাকে ভিন্নভাবে ভালবেসে ফেললাম। আমাদের মাঝখানে আর কোন পুরুষ আসেনি কখনও। কোনদিন আমি তোমার অপমান করিনি।
অ্যানি, আমার অ্যানি, বলে কেঁদে উঠে ডক্টর জড়িয়ে ধরলেন স্ত্রীকে।
এর পর আমার দাদী মি. ডিকের দিকে ঝুঁকে তাকে চুমু দিয়ে বললেন, ডিক, অত্যন্ত অসাধারণ মানুষ আপনি। আর বোকা সাজতে চেষ্টা করবেন না, কারণ আমি জানি আপনি বোকা নন।
মি. ডিক, দাদী আর আমি স্ট্রংদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলাম।