ডেভিড কপারফিল্ড : ১৩. উরিয়া হীপের শয়তানী

ডেভিড কপারফিল্ড : ১৩. উরিয়া হীপের শয়তানী

১৩. উরিয়া হীপের শয়তানী

অ্যাগনেস আর মি. উইকফিল্ড কয়েকদিনের জন্য বেড়াতে এসেছেন ড. স্ট্রিংএর বাড়িতে। স্বাভাবিকভাবে হীপও এসেছে সঙ্গে। এক রাতে আমি আমার কাজকর্ম শেষ করছি, এমন সময় ডক্টর স্ট্রং-এর স্টাডিতে আলো জ্বলতে দেখলাম। আমি ওখানে গেলাম তাকে শুভরাত্রি বলতে এবং অত রাত জেগে আমাকে ছাড়া অভিধানের কাজ নিয়ে খাটাখাটি করায় একটু বকুনি দিতে। দেখলাম ওখানে উরিয়া হীপ আছে ডক্টর ও মি. উইকফিল্ডের সঙ্গে। ডক্টর বসে আছেন দুহাতে মুখ ঢেকে। মি. উইকফিল্ডের মুখে উদ্বেগ ও বেদনার ছাপ। কি ঘটল ভাবতে লাগলাম।

আমি ডক্টরকে মিসেস স্ট্রং-এর ব্যাপার-স্যাপার, তাঁর প্রিয় অ্যানি যে অন্য পুরুষের প্রতি অনুরক্ত সেকথা বলে দিয়েছি, হীপ বলল আমাকে লক্ষ্য করে।

হীপের নিষ্ঠুরতা স্তম্ভিত করে দিল আমাকে। তার গল্প মোটেও সত্য নয়। কিন্তু ডক্টর স্ট্রং তা বিশ্বাস করেছেন, যেহেতু তার সুন্দরী স্ত্রীর বয়স তার চাইতে অনেক কম। ডক্টর ভেবে নিয়েছেন মিসেস স্ট্রং সম্ভবত তাকে বিয়ে করেছেন। তিনি ধনী বলেই। আমার কাছে অসহ্য লাগল ব্যাপারটা। হপ একটা মিথ্যক এবং প্রতারক। সবার জীবনে দুঃখ আর বিপর্যয় ডেকে আনাই যেন তার কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এর পরে হীপ মি. উইকফিল্ডকে বলল, আর, মিসেস স্টং-এর সাথেই কিনা আপনার আদরের মেয়ে অ্যাগনেসের অমন গলায় গলায় ভাব! ভেবে দেখুন একবার। এই যে কপারফিল্ড, ডক্টরের সঙ্গে এখানে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছেন, তিনিও নিশ্চয়ই লক্ষ করেছেন মিসেস স্ট্রং-এর এসব কাজ কারবার।

ওরে শয়তান! ক্রোধে গর্জে উঠলাম আমি। তোর ঘৃণ্য চক্রান্তে কোন্ সাহসে তুই আমাকে জড়াচ্ছিস! বলে আর সহ্য করতে না পেরে প্রচণ্ড চড় মারলাম হীপের গালে। সে পিছিয়ে গেল চড় খেয়ে। আমার হাতের আঙুল জ্বালা করে উঠল। জাহান্নামে যা তুই! বলে ছুটে বেরিয়ে গেলাম ওই বাড়ি থেকে।

পরবর্তী কয়েক সপ্তাহ ধরে লক্ষ করলাম যে স্ট্রংদের একদা-সুখী পরিবারে একটা পরিবর্তন ঘটে গেছে। ডক্টর স্ট্রং দৃশ্যত বুড়িয়ে গেছেন। অ্যানির মুখে সারাক্ষণ একটা আহত ভাব, চোখে অশ্রুর আভাস। নীরব হয়ে গেছে বাড়িটা।

একমাত্র মি. ডিক এলেই অবস্থাটা একটু সহজ হয়ে ওঠে। তিনি ডক্টরের সঙ্গে বাগানে পায়চারি করেন। মিসেস স্ট্রং-এর সঙ্গে আলাপ করেন। দুজনের মধ্যে তিনি যোগসূত্র হয়ে দাঁড়ালেন। এমন হওয়া অন্য কারও পক্ষে সম্ভব ছিল না।

উইকফিল্ডদের এখানে থাকা কালে উরিয়া হীপ তার খাস কেরানী মি. মিকবারের কাছ থেকে ব্যবসা-সংক্রান্ত অনেকগুলো চিঠি পায়। এ সময় হঠাৎ মিসেস মিকবারের একটা চিঠি পেয়ে আমি আশ্চর্য হয়ে গেলাম। তাঁর স্বামী ইদানীং তাদের সাথে মন খুলে কথা বলছেন না। কিছু যেন লুকোতে চাচ্ছেন। তার এবং বাচ্চাদের কাছ থেকে দূরে সরে যাচ্ছেন। এক সময় তিনি ছিলেন প্রেমময় স্বামী, স্নেহময় পিতা। অথচ এখন হয়ে পড়েছেন নিরুত্তাপ এবং কঠোর। এতে খুব চিন্তিত হয়ে পড়েছেন মিসেস মিকবার। উপদেশ চেয়েছেন আমার কাছে। কিন্তু আমি কি উপদেশ দেব? একমাত্র সংযত থাকতে এবং ধৈর্যশীল হতে বলা ছাড়া?

তাঁর চিঠি ভাবিয়ে তুলল আমাকে।

গল্পের বিষয়:
অনুবাদ
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত