১২. শুরুতেই হাড়-কাঁপানো ঠাণ্ডা
শুরুতেই হাড়-কাঁপানো ঠাণ্ডা পড়তে বোঝা গেল শীতটা কেমন ভোগাবে। উইল-ট্রির ভেতর ফায়ারপ্লেস তৈরি করায় ওদের অবশ্য আরামেই থাকার কথা। একে তো প্রচন্ড ঠান্ডা, তার ওপর প্রায় দেড় মাস ধরে রোজই ঝড়-বৃষ্টি লেগে থাকল-এমনও হলো যে পরপর কয়েকদিন আস্তানা ছেড়ে ওরা কেউ বেরুতেই পারল না।
সিন্দুক থেকে গরম কাপড়চোপড় বের করা হলো। সারাক্ষণ তুষার পড়ছে, কাজেই শিকারে বেরুনো বন্ধ। মাঝে দিন পনেরো জ্বরে ভুগল গডফ্রে। ওষুধের ছোট একটা বাক্স পাওয়া গেছে সিন্দুকে, এতদিনে সেটা কাজে লেগে গেল। পেটে ওষুধ না পড়লে জ্বরটা আরও বেশ কিছু দিন ভোগাত তাকে। জ্বর খুব বেশি উঠলে প্রলাপ বকেছে সে, ফিনার নাম ধরে ডাকাডাকি করেছে। দুএকবার মামার কথাও শোনা গেল। ইতিমধ্যে বিশ্বভ্রমণের শখ, রবিনসন ক্রুসো হবার সাধ মিটে গেছে তার। বয়েস হলেও, সে আসলে ছেলেমানুষই ছিল, ছিল রোমাঞ্চপ্রিয় ও অনভিজ্ঞ। বাস্তব জগৎকে বোঝার বা উপলব্ধি করার কোন চেষ্টাই কখনও করেনি। কিন্তু গত কয়েক মাসে গডফ্রে সম্পূর্ণ বদলে গেছে। এখন তাকে একজন নতুন মানুষই বলতে হবে।
ডিসেম্বর বিদায় নিল। প্রফেসর টাৰ্টলেট কোন অসুখে পড়েননি, কিন্তু তবু তাকে সব সময় বিষণ্ণ দেখায়। দেশে ফেরার তাঁর সেই ব্যাকুলতা আগের মতই আছে। আজকাল তিনি আর পকেট-বেহালায় কোন সুর তোলেন না।
হিংস্র জন্তুদের ভয়টা গডফ্রের মন থেকে এখনও দূর হয়নি। তার সন্দেহ, জংলীরাও যে-কোন দিন হামলা করতে পারে। বেড়াটা হয়তো জন্তুগুলোকে ঠেকাতে পারবে, কিন্তু জংলীদের পারবে না। সে ঠিক করল, আস্তানার ভেতর একটা সিঁড়ি তৈরি করবে। সিড়ি থাকলে খুব তাড়াতাড়ি দেবদারু গাছের মগডালে উঠে যাওয়া যাবে। টার্টলেটের মন খারাপ, কাজেই তার কাছ থেকে কোন সাহায্য পাওয়া গেল না। কারেফিনোতুর সাহায্যে সিঁড়িটা একাই বানাল গডফ্রে।
তারপর বড়দিন এল। উইল-ট্রিতে ওরা খানাপিনার আয়োজন করল দুএকবার অনুরোধ করায় একটু নাচলেন টার্টলেট, একবার বেহালাও বাজালেন। কিন্তু কেউ তেমন খুশি হতে পারছে না। নতুন বছর ওদেরকে কোন আশার আলো দেখাতে পারল না। জাহাজটার নাম ছিল স্বপ্ন। সেই স্বপ্ন ডুবে গেছে। ডোবা জাহাজের দুজন যাত্রী এই দ্বীপে আশ্রয় নিয়েছে। গত ছমাস ধরে সভ্যজগতের সঙ্গে তাদের কোন যোগাযোগ নেই। কেউ ওদের খোঁজ নিতে আসেনি, ওরাও কাউকে কোন খবর পাঠাতে পারেনি। কে জানে, সারা জীবনই হয়তো এই অভিশপ্ত দ্বীপে থেকে যেতে হবে ওদেরকে।
জানুয়ারি মাসের আঠারো তারিখ পর্যন্ত একটানা তুষারপাত হলো! কুয়াশায় চারদিক ঢাকা, এক হাত দূরের জিনিসও দেখা যায় না। সেদিন রাতে বিছানায় শুয়ে ছটফট করছে গডফ্রে আর কারেফিনোতু, দুজনের কারুরই ঘুম আসছে না। মশাল জ্বেলে এক ধারে বসে বাইবেলের পাতা ওল্টাচ্ছেন প্রফেসর টার্টলেট। হঠাৎ সবাইকে সচকিত করে দিয়ে দূর থেকে একটা শব্দ ভেসে এল।
স্বাভাবিক কোন আওয়াজ নয়। একটা গর্জন। সেই রোমহর্ষক গর্জন ক্রমশ কাছে সরে আসছে। আর কোন সন্দেহ নেই, এবার সত্যি সত্যি বুনো জন্তুগুলো হামলা করতে আসছে। ওই তো বাঘ ডাকছে! ওই তো হায়েনা হাসছে! তারপর একে একে শোনা গেল চিতার ডাক, সিংহের হুংকার। ভয়ে একেবারে কুঁকড়ে গেল ওরা।
এভাবে দুঘণ্টা পার হলো। হিংস্র জানোয়ারগুলো একেবারে কাছে চলে এসেছে। এখনও তারা গর্জন করছে। তারপর হঠাৎ তাদের চিৎকার-চেঁচামেচি দূরে সরে গেল। কিন্তু মাঝরাতের খানিক পর আবার সব কটা ফিরে এল উইল-ট্রির কাছে। গডফ্রে চাপা গলায় বলল, আস্তে আস্তে ওগুলোর সাহস বাড়ছে। এই দ্বীপে থাকতে হলে এক এক করে সব কটাকে মারতে হবে।
প্রফেসর টার্টলেট সাড়া দিলেন না। এক কোণে বসে ঠকঠক করে কাঁপছেন তিনি। কারেফিনোতু কাপছে না, তবে চেহারায় রাজ্যের বিস্ময়, ফ্যাল ফ্যাল করে দরজার দিকে তাকিয়ে আছে।
ওদের পোষা প্রাণীগুলো ভয়ে আর্তনাদ করছে, ওগুলো সম্ভবত উইল-ট্রির তলায় আসতে চাইছে।
গডফ্রে বলল, বেড়ার দরজাটা খোলা দরকার।
ঘাড় ঝাঁকিয়ে সায় দিল কারেফিনোতু। আস্তানা থেকে বেরিয়ে বেড়ার গেট খুলতেই লাফ-ঝাঁপ দিয়ে ভেতরে ঢুকল ছাগল ও ভেড়াগুলো। আর সেই গেটের ওপাশে দেখা গেল একজোড়া জ্বলন্ত চোখ! মনে হলো গডফ্রে গেটটা বন্ধ করারও সময় পাবে , তার আগেই হিংস্র জন্তুটা ওর ঘাড়ে লাফিয়ে পড়বে। ঠিক এই সময় হ্যাঁচকা একটা টান অনুভব করল গডফ্রে। কারেফিনোতু তাকে টান দিয়ে ঢুকিয়ে নিল উইল-ট্রির ভেতর, পরমুহূর্তে দড়াম করে বন্ধ করে দিল দরজাটা। কিন্তু বেড়ার গেট বন্ধ করা সম্ভব হয়নি। কানের পাশে গর্জন শুনে বোঝা গেল, গেট দিয়ে ভেতরে তিন-চারটে জন্তু ঢুকে পড়েছে। জন্তুদের গর্জন, ছাগল-ভেড়ার আর্তনাদ, কারেফিনোতুর চিৎকার, সব মিলিয়ে ভৌতিক ও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠল পরিবেশ। পোষা প্রাণীগুলো কঠিন ফাঁদে আটকা পড়েছে। ভেতরে ঢোকার পর বেড়ার বাইরে বেরিয়ে যেতে পারছে না ওগুলো। না বুঝে ওগুলোকে যেন বলি দেয়া হলো।
গডফ্রে আর কারেফিনোতু জানালা খুলে বাইরে তাকিয়ে আছে। অন্ধকারে কিছুই পরিস্কার দেখা যাচ্ছে না। শুধু জন্তুজানোয়ারদের ছুটোছুটি আর গর্জন শোনা যাচ্ছে। ওগুলো বাঘ না সিংহ বোঝা যাচ্ছে না। শুধু বোঝা যাচ্ছে ছাগল-ভেড়াগুলোকে মেরে ফেলছে। গর্জন আর ছুটোছুটির আওয়াজ শুনে মনে হলো আরও অনেক হিংস্র জন্তু ঢুকে পড়েছে বেড়ার ভেতর।
আতঙ্কিত প্রফেসর কাঁপা হাতে নিজের বন্দুকটা ধরলেন। জানালা দিয়ে ব্যারেল বের করে গুলি করতে যাচ্ছিলেন তিনি, গডফ্রে বাধা দিল। অন্ধকারে আপনি কাকে গুলি করবেন? শুধু শুধু বুলেট নষ্ট করার কোন মানে হয় না। ভোর হোক, তখন লক্ষ্যস্থির করে গুলি করবেন। প্রফেসরকে বিশ্বাস নেই, গডফ্রে তার হাত থেকে বন্দুকটা কেড়ে নিল।
তাছাড়া, গডফ্রে যুক্তি দেখাল, প্রফেসরের গুলিতে ওদের পোষা প্রাণীগুলোও মারা যেতে পারে।
অকস্মাৎ গুলির শব্দে চমকে উঠল গডফ্রে। কে গুলি করল? তাকিয়ে দেখে, টার্টলেট! তার হাতে একটা রিভলভার! গডফ্রে জানালা আড়াল করে দাঁড়িয়ে ছিল, তাই বন্ধ দরজার গায়ে গুলি করেছেন তিনি। দরজা ফুটো করে বাইরে বেরিয়ে গেছে বুলেটটা।
আপনার কি মাথা খারাপ হলো! এমন বোকামি কেউ করে! শিক্ষককে তিরস্কার করল গডফ্রে। প্রফেসরের হাত থেকে রিভলভারটা কেড়ে নিল কারেফিনোতু।
গুলির আওয়াজ শুনে বুনো জন্তুগুলো আরও যেন খেপে উঠল। উইল-ট্রির গায়ে থাবা মারছে তারা। ওদের এই আস্তানা এবার না ভেঙে গুড়িয়ে যায়!
আর অপেক্ষা করা যায় না, বলল গডফ্রে। একটা বন্দুক নিয়ে জানালার সামনে চলে এল সে। দেখাদেখি কারেফিনোতুও একটা বন্দুক তুলে নিল, দাঁড়াল দ্বিতীয় জানালার সামনে। গডফ্রের মনে পড়ল, কারেফিনোতু বন্দুক চালাতে জানে না। কিন্তু এই মুহূর্তে তাকে মানা করার বা বাধা দেয়ার সময় নেই।
দুটো বন্দুক একসঙ্গে গর্জে উঠল। একবার নয়, বারবার। গুলির শব্দের সঙ্গে শোনা যাচ্ছে আহত জন্তুদের আর্তনাদ। ওরা কিন্তু আন্দাজে গুলি ছুঁড়ে বুলেট অপচয় করছে না। বন্দুকের সামনে ঠিক যখন কুচকুচে কালো কাঠামো আর জ্বলন্ত চোখ দেখা যায়, তখনই বন্দুকের ট্রিগার টানছে। সিংহ, বাঘ, হায়েনা আর চিতার অস্তিত্ব টের পাচ্ছে ওরা। তাদের কাতর আওয়াজ শুনে বোঝা যাচ্ছে গুলি লাগছে।
দম ফেলার অবসর পাওয়া গেল বিশ মিনিট পর। উইল-ট্রির বাইরে বুনো জন্তুরা এখন চুপ করে আছে। ওগুলো কি আপাতত ফিরে গেছে? দিনের আলো ফুটলে ফিরে আসবে আবার? সাবধানের মার নেই, তাই জানালার সামনে থেকে নড়ল না ওরা। একটা কথা ভেবে গডফ্রের বিস্ময় বাঁধ মানছে না। জীবনে এই প্রথম বন্দুক চালাচ্ছে কারেফিনোতু, অথচ তার একটা গুলিও সম্ভবত ফস্কায়নি। ব্যাপারটা সত্যি অবিশ্বাস্য!
রাত দুটোর দিকে আবার শুরু হলো হামলা। এবারের আক্ৰমণ আগের চেয়েও প্রচন্ড। বাইরে যেন কেয়ামত শুরু হয়ে গেছে। এমন কি উইল-ট্রি ভেতরটা নিরাপদ বলে মনে হচ্ছে না। চারপাশ থেকে গর্জন করছে জন্তুরা, অথচ জানালা দিয়ে একটাকেও দেখা যাচ্ছে না। দেখা না গেলে ওরা গুলি করবে কাকে?
এরপর জন্তুগুলো দরজার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। কবাট থরথর করে কাঁপতে শুরু করল, যে-কোন মুহূর্তে ভেঙে পড়বে। একবার যদি ওগুলো ভেতরে ঢুকতে পারে, তিনজনকেই ছিড়ে খেয়ে ফেলবে।
সিঁড়ি বেয়ে ওপরে ওঠো! নির্দেশ দিল গডফ্রে। সোজা উঠে যাও মগডালে! ভাগ্যিস সিড়িটা বানিয়েছিল ওরা! বন্দুক, রিভলভার, গুলি, কার্তুজ ইত্যাদি নিয়ে তৈরি হয়ে গেল গডফ্রে আর কারেফিনোতু। প্রফেসর টার্টলেটকেও তাগাদা দিল গডফ্রে, দেরি করবেন না, স্যার! উঠুন!
তাঁকে তাগাদা না দিলেও চলত। কথাটা বলে টাৰ্টলের খোঁজে এদিক ওদিক তাকাল গডফ্রে, কিন্তু কোথাও তাকে দেখতে পেল না। কারেফিনোতু ইঙ্গিত করায় ছাদের দিকে তাকাল সে। প্রফেসর টাৰ্টলেট ঠকঠক করে কাঁপছেন ঠিকই, কিন্তু এরইমধ্যে সিঁড়ি বেয়ে একেবারে মগডালে পৌছে গেছেন।
কারেফিনোতুকে নিয়ে ত্রিশ ফুটও ওঠেনি গডফ্রে, উইল-ট্রির দরজা ভেঙে গেল। কোটরের ভেতর হুড়মুড় করে ঢুকে পড়ল বুনো জন্তুগুলো। ভেতরে ওদেরকে না পেয়ে আক্রোশে গজরাচ্ছে তারা।
ওরা উঠছে, মগডাল থেকে আর্তনাদ ছাড়লেন প্রফেসর। গডফ্রে আর কারেফিনোতুকে বাঘ মনে করছেন তিনি। চোখ বুজে চিৎকার করছেন, ফলে ভুলটা তাঁর ভাঙছেও না। এক হাতে একটা ডাল ধরে ঝুলে আছেন, যে-কোন মুহূর্তে নিচে খসে পড়বেন। তাড়াতাড়ি পাশে এসে তাকে ধরে ফেলল কারেফিনোতু। বাঘ ওঠেনি, বুঝতে পেরে চওড়া একটা ডালে বসে নিজেকে সেই ডালের সঙ্গে রশি দিয়ে বাঁধলেন টার্টলেট। গডফ্রে আর কারেফিনোতু বেশি ওপরে উঠল না, ফোকরটার মুখে বসার ব্যবস্থা করল। জন্তুগুলো ওপরে উঠছে দেখলে সঙ্গে সঙ্গে গুলি করবে।
নিচে থেকে তর্জন-গর্জন ভেসে আসছে, কিন্তু অন্ধকারে কিছুই দেখা যাচ্ছে না। এভাবেই সময়টা কাটতে লাগল ওদের। হঠাৎ ভোর চারটের দিকে নতুন আরেকটা বিপদ দেখে আঁতকে উঠল গডফ্রে। গাছে আগুন লেগে গেছে। সে কি যা তা আগুন! একেবারে দাউ দাউ করে জ্বলছে। ছাদের ফোকর দিয়ে ধোঁয়া উঠতে শুরু করল। গডফ্রের মাথায় ব্যাপারটা ঢুকছে না। এ আবার কি রহস্য!
রহস্য কিছুই নয়-জন্তুগুলো লাফালাফি করার সময় ফায়ারপ্লেসের আগুন চারদিকে ছড়িয়েছে, আর তাতেই প্রকান্ড এই দেবদারু গাছে আগুন ধরে গেছে। পাথরের ওপর পাথর বসিয়ে ফায়ারপ্লেসটা তৈরি করেছিল গডফ্রে, এতদিন কোন অগ্নিকান্ড না ঘটার সেটাই কারণ। বুনো জন্তুগুলো ওদেরকে না পেয়ে ঘরের সমস্ত জিনিস-পত্র তছনছ করেছে, ফলে শুকনো গাছের গায়ে আগুন লাগতে সময় লাগেনি। হঠাৎ চারদিকের মাটি ও আকাশ কাঁপিয়ে প্রচন্ড একটা বিস্ফোরণ ঘটল। সেই বিস্ফোরণের ধাক্কায় গাছ থেকে ছিটকে একটু হলে পড়েই যাচ্ছিল ওরা। কি ব্যাপার? কি ঘটল? উইল-ট্রির ভেতর বাক্স ভর্তি গোলাবারুদ ছিল, সেটাই বিস্ফোরিত হয়েছে।
বাক্সটা থেকে কামানের গোলার মত বেরিয়ে আসছে গোলাবারুদ। কিছু জন্তু আহত হলো, কিছু ভয়ে পালিয়ে গেল। কিন্তু আগুনটা ক্রমশ বাড়ছে। গোটা দেবদারু গাছটাই বোধহয় পুড়ে যাবে। বেশ দ্রুতই ওপরে, অর্থাৎ ছাদের ফোকরের দিকে উঠে আসছে শিখাগুলো। ধোঁয়ায় দম বন্ধ হয়ে এল ওদের। এই গাছে থাকলে ওদেরকে পুড়ে মরতে হবে। এত উঁচু গাছ থেকে নিচে লাফিয়ে পড়াও সম্ভব নয়।
এই সময় মড় মড় করে একটা আওয়াজ শোনা গেল। উইলট্রির শিকড়ও পুড়ে গেছে, গোটা গাছটাই পড়ে যাচ্ছে কাত হয়ে।
কিন্তু উইল-ট্রি মাটিতে পড়ল না। আশপাশে আরও কয়েকটা প্রকান্ড গাছ রয়েছে, কাত হয়ে সেটার গায়ে হেলান দিল উইল-ট্রি। মাটি থেকে অনেক ওপরে, পঁয়তাল্লিশ ডিগ্রী বাঁকানো একটা দোলনার মত, গাছটার মগডাল শূন্যে ঝুলে রয়েছে।
গাছটা মাটিতে পড়বে না, বুঝতে পেরে স্বস্তির একটা নিঃশ্বাস ফেলল গডফ্রে। আর ঠিক তখনই কে যেন তার কানের কাছে বিড় বিড় করে বলল, উনিশে জানুয়ারি!
চমকে উঠল গডফ্রে। কথাটা কে বলল?
বলল কারেফিনোতু! কিন্তু তা কিভাবে সম্ভব? সে তো ইংরেজি জানে না! ইংরেজি ভাষার একটা শব্দও তো তাকে দিয়ে উচ্চারণ করানো যায়নি। তাহলে?
কি বললে তুমি? গডফ্রে হতভম্ব। আবার বলো তো!
বলছিলাম যে আজই এখানে আপনার মামা মি. কোল্ডেরুপের পৌঁছানোর কথা, মি. গডফ্রে। তা যদি না পৌঁছান, তাহলে আর সর্বনাশের কিছু বাকি থাকবে না-আমাদের সবকটাকে মরতে হবে।