স্কুল ফর রবিনসন্স: ০৮. ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল ভেবে প্রফেসর টাৰ্টলেট

স্কুল ফর রবিনসন্স: ০৮. ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল ভেবে প্রফেসর টাৰ্টলেট

০৮. ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল ভেবে প্রফেসর টাৰ্টলেট

ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল ভেবে প্রফেসর টাৰ্টলেট যতই আত্মতৃপ্তি বোধ করুন, গডফ্রের মনে কিন্তু শান্তি নেই। ফিনা আইল্যান্ডে চিরকাল তাদেরকে থেকে যেতে হবে, এটা ভাবলেই তার মন বিদ্রোহী হয়ে উঠছে। সাগরের বুকে এই দ্বীপ একটা ফাঁদ, সেই ফাঁদ থেকে যেভাবেই হোক পালাতে হবে তাকে।

সিন্দুকটা পাওয়ায় ওদের কাজ অনেক কমে গেছে। টার্টলেটের কাজ অবশ্য বেড়েছে, কারণ প্রায় সারাদিনই নানারকম রান্নার কাজে ব্যস্ত থাকেন তিনি। বন্দুক পাওয়ায় পোষা প্রাণীগুলোকে আর মারতে হয় না, হরিণ আর পাখি শিকার করে আনে গডফ্রে। উইল-ট্রির দেয়ালে গজাল ও পেরেক দিয়ে বেশ কয়েকটা তাক বানিয়েছে সে, তৈজসপত্র সব ওই তাকের ওপরই রেখেছে ওরা। অন্যান্য জিনিস-পত্রও রাখা হয়েছে দেয়ালের গায়ে খোপ তৈরি করে। যন্ত্রপাতি আর অস্ত্রগুলো! রাখা হয় আঙটার সঙ্গে দেয়ালের গায়ে।

কোটরের মুখে কাঠের একটা দরজা লাগিয়েছে গডফ্রে গাছের দেয়াল কেটে একজোড়া জানালাও তৈরি করা হয়ে গেছে। এবার টাৰ্টলেটের দাবি অনুসারে একটা চিমনিও বানাতে হবে। রান্নার কাজ এখন আস্তানার বাইরে সারছে ওরা, কিন্তু বৃষ্টি- বাদলার দিনে তো ভেতরেই কাজটা করতে হবে, চিমনি না থাকলে তখন ধোঁয়া বেরুবে কিভাবে?

আরও একটা জরুরী কাজ সেরে ফেলেছে গডফ্রে। ডালপালা এক করে বেঁধে ছোট নদীটার ওপর সরু একটা সাঁকো তৈরি করেছে সে। নদীর দুই পারে আসা-যাওয়া করতে এখন আর পানিতে নামতে হয় না ওদেরকে।

সব কাজই করছে গডফ্রে, কিন্তু বাড়ির কথা মনে পড়লেই মনটা তার খুব খারাপ হয়ে যায়। চিন্তা-ভাবনা করে দ্বীপের উত্তর অন্তরীপের মাথায় একটা পতাকা ওড়াবার ব্যবস্থা করল সে। আশপাশ দিয়ে কোন জাহাজ গেলে পতাকাটা অবশ্যই দেখতে পাবে। সাদা পতাকা নাবিকদের চোখে না-ও ধরা পড়তে পারে, তাই উদ্ভিদের রস দিয়ে কাপড়টা লাল রঙে রাঙিয়ে দিয়েছে সে।

পনেরো আগস্ট পার হয়ে গেল। দুদুবার ধোঁয়া দেখেছে গডফ্রে, অথচ ধোঁয়ার উৎস সম্পর্কে আজও কিছু জানতে পারেনি। দ্বীপে ওরা দুজন ছাড়া অন্য কোন মানুষ আছে, এ-ও বিশ্বাস করা যায় না। থাকলে বন্দুকের আওয়াজ শুনে তারা আসত।

ধোঁয়ার রহস্য গডফ্রেকে বিমূঢ় করে রেখেছে। ফিনা আইল্যান্ডে উষ্ণপ্রস্রবণ থাকার কথা নয়, কারণ এই দ্বীপ আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণে তৈরি হয়নি। অগত্যা বাধ্য হয়েই গডফ্রেকে মেনে নিতে হলো, দেখতেই ভুল হয়েছে তার, আসলে সে কোন ধোঁয়া দেখেনি।

দিনগুলো ভালই কেটে যাচ্ছে ওদের। ইদানীং নিয়মিত গডফ্রেকে নাচ শেখাচ্ছেন প্রফেসর টাৰ্টলেট। গডফ্রেও নিয়মিত শিকারে বেরুচ্ছে, দৈনন্দিন কাজগুলো সময় ধরে সারছে।

তারপর হঠাৎ তেরো সেপ্টেম্বরের বেলা তিনটের দিকে ধোঁয়ার লম্বা একটা রেখা দেখতে পেল গডফ্রে। সেদিন ফ্ল্যাগ-পয়েন্ট পর্যন্ত গিয়েছিল সে। ওখানে পতাকা উড়িয়েছে, তাই জায়গাটার নাম রেখেছে ফ্ল্যাগ-পয়েন্ট। চোখে দূরবীন তুলে দিগন্তের দিকে তাকিয়ে ছিল, হঠাৎ সাগর থেকে ধোঁয়া উঠতে দেখল। বুকটা সঙ্গে সঙ্গে ধক করে উঠল তার। জাহাজ! একটা জাহাজ!

ধোঁয়ার রেখাটা ক্রমশ বড় হচ্ছে। বেলা চারটের দিকে জাহাজটার চিমনি দেখা গেল, কালো একটা বিন্দুর মত। এখনও জাহাজটা অনেক দূরে, দিগন্তের একেবারে কিনারায়।

বেলা পাঁচটার দিকে পুরো জাহাজটা দেখতে পেল গডফ্রে। এখনও অনেক দূরে, তবু জাহাজের গায়ের রঙ চিনতে পারছে সে। এমন কি পতাকার রঙও। পতাকা দেখেই বুঝতে পারল, জাহাজটা যুক্তরাষ্ট্রের।

গডফ্রে ভাবল, আমি ওদের পতাকা দেখতে পাচ্ছি, তাহলে ওরাও নিশ্চয় আমার পতাকাটা দেখতে পাচ্ছে। সেক্ষেত্রে জাহাজটার তো এদিকেই আসার কথা। কিন্তু তা কি আসছে? হঠাৎ ব্যস্ত হয়ে উঠল গডফ্রে, পতাকাটা নামিয়ে দ্রুত এদিক ওদিক দোলাতে লাগল বাতাসে।

ইতিমধ্যে জাহাজ অনেকটা কাছে চলে এসেছে। সৈকত থেকে এখন ওটার দূরত্ব খুব বেশি হলে তিন মাইল। তাহলে কি নাবিকরা গডফ্রেকে দেখতে পেয়েছে? দেখতে পেলে অবশ্যই সাড়া দেয়ার কথা, কিন্তু তা দিচ্ছে না কেন? নিয়ম হলো, ওরাও পতাকাটা খানিক নিচু করে দোলাবে। কিন্তু কই!

ধীরে ধীরে সন্ধে হয়ে এল। সাড়ে ছটা বাজে। ফিনা আইল্যান্ড থেকে জাহাজটা যখন মাত্র দুমাইল দূরে, ঝপ করে অস্ত গেল সূর্য। এখনও পতাকাটা দোলাচ্ছে গডফ্রে। কিন্তু বৃথাই!

একটু পর পতাকা রেখে বন্দুকটা তুলে কয়েকটা ফাকা আওয়াজ করল গডফ্রে। কিন্তু গুলির আওয়াজ সম্ভবত জাহাজ পর্যন্ত পৌছাল না-ইতিমধ্যে সেটা অনেক দূরে সরে গেছে, বাতাসও বইছে উল্টোদিকে। রাত ক্রমশ বাড়ল, অন্ধকার ঢেকে দিল সাগরকে। জাহাজটাকে এখন আর দেখাই যাচ্ছে না। কোন সাড়া না দিয়ে ফিনা আইল্যান্ডকে পাশ কাটিয়ে চলে গেল নাবিকরা। এখন আর গডফ্রের কিছু করার নেই। হাল ছেড়ে না দিয়ে কিছু কাঠ আর শুকনো পাতা জড়ো করে আগুন জ্বালল সে। মনে আশা, দেখতে পেলে নাবিকরাও আগুন জ্বেলে সাড়া দেবে।

কিন্তু জাহাজে কোন আগুন জ্বলল না।

বিষণ্ণ মনে নিজেদের আস্তানায় ফিরে এল গডফ্রে। দুঃখে প্রফেসর টার্টলেটকে জাহাজটার কথা বললই না সে।

পরদিন বিকেলে রোজকার মত ফ্ল্যাগ-পয়েন্টে ঝিনুক আর পাখির ডিম আনতে গেলেন প্রফেসর টাৰ্টলেট। বেশ কিছুক্ষণ পর গডফ্রে দেখল, ভূতে পাওয়া মানুষের মত ছুটে ফিরে আসছেন তিনি। প্রাণপণে ছুটছেন, ছোটার ভঙ্গিতে কোন ছন্দ নেই, অথচ সিন্দুকটা পাবার পর থেকে টার্টলেটের প্রতিটি নড়াচড়াতে নৃত্যের নিত্যনতুন ভঙ্গি ফুটে ওঠে। কাছাকাছি আসতে দেখা গেল আতঙ্কে তার চোখ দুটো বিস্ফারিত হয়ে আছে। গডফ্রে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠল। গলা চড়িয়ে জিজ্ঞেস করল সে, স্যার, কি হয়েছে?

ওদিকে! ওদিকে! উত্তরের গাছপালার দিকে হাত তুলে দেখালেন টার্টলেট। ঘন ঘন হাঁপাচ্ছেন তিনি।

ওদিকে কি?

ক্যানু! একটা ক্যানু!

ক্যানু?

শুধু ক্যানু?

সবেগে মাথা নাড়লেন প্রফেসর। শুধু ক্যানু নয়! গডফ্রে, আমরা খুন হয়ে যাব!

সে কি! কি বলছেন! গডফ্রে হতভম্ব।

ক্যানু ভর্তি জংলী, গডফ্রে! স্রেফ কচুকাটা করবে আমাদের। নিশ্চয়ই ওরা মানুষ খায়।

টার্টলেটের লম্বা করা হাত অনুসরণ করে তাকাল গডফ্রে। তীর থেকে আধমাইলটাক দূরে ছোট একটা ডিঙি দেখা যাচ্ছে। ফ্ল্যাগ-পয়েন্ট পার হয়ে দ্বীপেই ভিড়বে বলে মনে হচ্ছে। কেন বলছেন জংলীরা নরখাদক? টার্টলেটকে জিজ্ঞেস করল সে।

সেটার আশঙ্কাই বেশি, তাই।

ওটা জংলীদের ডিঙি না-ও হতে পারে, বলল গডফ্রে। হয়তো কোন সওদাগরি জাহাজের নৌকা।

সওদাগরি জাহাজের নৌকা?

অসম্ভব নয়। কাল বিকেলে ফিনা আইল্যান্ডের পাশ দিয়ে একটা জাহাজ চলে গেছে।

জাহাজ চলে গেছে? প্রফেসর অবাক। অথচ আমাকে তুমি কিছুই বললানি!

বলে কি লাভ হত? চলুন, নৌকাটা কোথায় ভেড়ে দেখি।

আস্তানা থেকে দূরবীনটা নিয়ে এল গডফ্রে। একটু ভাল করে নৌকাটার দিকে তাকাতে আঁতকে উঠল সে। আপনার কথাই ঠিক, স্যার! সত্যি জংলীরা আসছে! গডফ্রে এত ভয় পেয়েছে যে তার হাত থেকে দূরবীনটা পড়ে গেল।

টার্টলেট থরথর করে কাঁপতে শুরু করলেন।

নৌকায় সত্যি জংলীরা আছে। দ্বীপের দিকেই আসছে তারা। নৌকাটা পলিনেশিয়ান ক্যানুর মতই দেখতে, বাঁশ খাড়া করে তাতে বেশ বড় একটা পাল টাঙানো হয়েছে। নৌকার আকারআকৃতি দেখে গডফ্রে বুঝতে পারছে, মালয়েশিয়া থেকে ওদের ফিনা আইল্যান্ড খুব বেশি দূরে হবে না। কিন্তু ক্যানুতে মালয়ীরা নেই, রয়েছে প্রায় উলঙ্গ দশ-বারোজন তোক। সবাই তারা কালো কুচকুচে। প্রত্যেকের হাতে বৈঠা দেখা যাচ্ছে।

জংলীরা এখন যদি ওদেরকে দেখে ফেলে তাহলেই সর্বনাশ। এখন আর পতাকাটা নামিয়ে ফেলাও সম্ভব নয়। নামাতে গেলেই ওদেরকে তারা দেখে ফেলবে। আবার না নামালেও, এই পতাকা দেখেই অসভ্য লোকগুলো টের পেয়ে যাবে যে দ্বীপে লোকজন আছে।

ঝুঁকে দূরবীনটা আবার তুলে চোখে ঠেকাল গডফ্রে। অন্তরীপকে পাশ কাটিয়ে দ্বীপের ভেতর দিকে ঢুকে পড়ল ক্যানু, যাচ্ছে ছোট নদীটার দিকে। শংকিত হয়ে উঠল গডফ্রে। জংলীরা উইল-ট্রির দিকেই যাচ্ছে।

প্রফেসর টাৰ্টলেটকে নিয়ে উইল-ট্রির দিকে ছুটল গডফ্রে। জংলীরা ওদের আস্তানায় হামলা চালালে যেভাবে হোক ঠেকাতে হবে।

প্রফেসর টাৰ্টলেট কিন্তু অন্য কথা ভাবছেন। কপালে চাপড় মেরে তিনি বললেন, হায়, একেই বলে দুর্ভাগ্য! আসলে কপালের লিখন কে খন্ডায়! আমাদের শখ হয়েছিল রবিনসন ক্রুসো হব! তো দ্বীপে জংলীদের ক্যানু এসে ভিড়বে না, অথচ রবিনসন ক্রুসো হব, এ তো আর সম্ভব নয়। একদিন না একদিন নরখাদকরা তো আসবেই। মাত্র তিন মাস হলো এই দ্বীপে এসেছি আমরা। মাত্র তিন মাস! এরইমধ্যে জংলীরা এসে হাজির! এখন তো স্বীকার না করে উপায় নেই যে ড্যানিয়েল ডিফো বা জোহান ওয়েস, কেউই তাদের বর্ণনায় খুব একটা রঙ চড়াননি।

দেবদারুর নিচে আগুন জ্বলছে, ফিরে এসে প্রথমেই সেটা নিভিয়ে দিল গডফ্রে। আগুন তো নেভালই, কয়লা আর ছাইও সব ঝেটিয়ে সাফ করে ফেলল। জংলীরা এদিক দিয়ে হেঁটে গেলেও টের পাবে না যে এখানে আগুন জ্বালা হয়েছিল। মোরগ-মুরগিরা আগেই নিজেদের আস্তানায় ঢুকেছে, সেটার মুখ ডালপালা দিয়ে আড়াল করে রাখা হলো। ছাগল আর ভেড়াগুলোকে তাড়িয়ে দেয়া হলো বেশ খানিকটা দূরে। যে-সব জিনিস বাইরে ছিল সেগুলো তুলে আনা হলো উইল-ট্রির ভেতরে। আস্তানায় ঢুকে ভেতর থেকে দরজাটা বন্ধ করে দিল ওরা। এমন কি জানালা দুটোও খোলা রাখল না।

কান পেতে চুপচাপ বসে আছে ওরা। রাতটা যেন কোনমতে শেষ হচ্ছে না। বাইরে নানারকম আওয়াজ হচ্ছে, প্রতিটি শব্দ চমকে দিচ্ছে ওদেরকে। একবার মনে হলো দেবদারু গাছের আশপাশে কারা যেন হাঁটাহাঁটি করছে। জানালার একটা কবাট সামান্য ফাক করে বাইরে তাকাল গডফ্রে। কেউ নেই। অন্তত কাউকে দেখা যাচ্ছে না।

আবার শুরু হলো অপেক্ষার পালা। তারপর এক সময় সত্যি সত্যি পায়ের আওয়াজ শুনতে পেল ওরা। জানালার কবাট আবার ফাঁক করে বাইরে তাকাল গডফ্রে। এত উদ্বেগ-আশঙ্কার মধ্যেও হাসি পেল তার। ঘাসজমি থেকে একটা ছাগল একা ফিরে এসেছে। গাছতলায় বসে বিশ্রাম নিচ্ছে।

গডফ্রে মনে মনে ঠিক করে ফেলেছে জংলীরা তাদের আস্তানা দেখে ফেললে কি করবে সে। উইল-ট্রির ভেতর দিকের দেয়ালের খাঁজে পা দিয়ে তরতর করে উঠে যাবে তারা মগডালে। জংলীদের সঙ্গে লড়াই করার জন্যে ওই জায়গাটাই আদর্শ। সঙ্গে বন্দুক আর রিভলভার আছে, গুলিরও কোন অভাব নেই, কাজেই যুদ্ধ বাধলে তারাই জিতবে। জংলীদের সঙ্গে খুব বেশি হলে তীর-ধনুক আছে। তাদের তীর গাছের শাখা-প্রশাখায় গিয়ে লাগবে, মগডাল পর্যন্ত পৌছাবে না। তাছাড়া, বন্দুক-রিভলভারের সঙ্গে তীরধনুকের কি কোন তুলনা চলে?

রাতটা ভয়ে ভয়ে কাটছে। তবে জংলীরা এদিকে এখনও আসেনি। রাতে হয়তো আসবেও না। দিনের আলোয় চারদিক ভাল করে দেখে নিয়ে তারপর হয়তো দ্বীপে নামবে।

টাৰ্টলেট বললেন, ওরা বোধহয় টের পায়নি যে দ্বীপে মানুষ আছে।

গডফ্রে মাথা নাড়ল। পতাকাটা তো না দেখতে পাবার কথা নয়। কাজেই জানে যে এখানে মানুষ আছে। তবে আমরা কজন তা জানে না। সেজন্যেই হয়তো হামলা চালাতে ভয় পাচ্ছে। সকালে কি ঘটবে বলা যায় না।

সকালে তারা চলেও যেতে পারে।

চলে যাবে বলে মনে হয় না। এত কষ্ট করে ফিনা আইল্যান্ডে তারা এক রাতের জন্যে নিশ্চয়ই আসেনি। একটু পর গডফ্রে আবার বলল, সকালে ওরা যদি না আসে, আমরাই ওদের খোঁজে বেরুব।

কী! আঁতকে উঠলেন টার্টলেট। আমরা খুঁজতে বেরুব? কেন?

আড়াল থেকে দেখতে হবে সংখ্যায় ওরা কজন, ওদের উদ্দেশ্যটাই বা কি, বলল গডফ্রে। আমরা দুজন কিন্তু সারাক্ষণ একসঙ্গে থাকব, বিচ্ছিন্ন হব না। যদি মনে হয় ওদের মতলব ভাল নয়, সেক্ষেত্রে এই আস্তানা ছেড়ে জঙ্গলে গা ঢাকা দেব আমরা…

শশশ…চুপ! ফিসফিস করলেন প্রফেসর টাৰ্টলেট। বাইরে শব্দ হলো না?

জানালার কবাট একটু ফাঁক করে বাইরে তাকাল গডফ্রে। না, ভয় পাবার কোন কারণ নেই। ছাগল-ভেড়াগুলো ফিরে আসছে। মি. টার্টলেট, সকাল হতে আর বেশি দেরি নেই। বাইরে বেরুবার জন্যে তৈরি হন। বেশি না, একটা বন্দুক নিন। মনে রাখবেন, যেদিকে বলব শুধু সেদিকেই গুলি করবেন। পারবেন তো?

আমাকে বন্দুক ছুঁড়তে হবে? ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলেন প্রফেসর টাৰ্টলেট। আমি বন্দুক ছুঁড়তে গেলে বন্দুকই যদি আমাকে ছুঁড়ে ফেলে দেয়? আগে কখনও ছুঁড়িনি কিনা।

গডফ্রে অভয় দিয়ে বলল, চেষ্টা করলে পারবেন। আমি দেখিয়ে দেব।

কিন্তু আমার গুলি কি জংলীদের গায়ে লাগবে?

লাগানোর হয়তো দরকারই হবে না, বলল গডফ্রে। গুলির আওয়াজ শুনেই জংলীরা হয়তো পালাবে।

ভোরের আলো ফোটার পর জানালা খুলে চারপাশে চোখ বোলাল গডফ্রে। কিন্তু কোন ক্যানু বা জংলী, কিছুই দেখতে পেল। ওরা খুব অবাক হলো। জংলীরা গেল কোথায়?

চোখে দূরবীন, জানালা দিয়ে ফ্ল্যাগ-পয়েন্টের দিকে একদৃষ্টে। তাকিয়ে আছে গডফ্রে। ওদিকটা একেবারে ফাঁকা, কিছুই নেই। গডফ্রের মন খুত খুঁত করছে। কি যেন একটা অবশ্যই থাকার কথা ওদিকে, অথচ নেই। কি সেটা? তারপর হঠাৎ মনে পড়তে আঁতকে উঠল সে। সর্বনাশ!

কি হলো? জানতে চাইলেন প্রফেসর টার্টলেট।

পরিস্থিতিটা দ্রুত ব্যাখ্যা করল গডফ্রে। দ্বীপে যে লোক আছে, জংলীরা তা জেনে ফেলেছে।

কিভাবে?

ফ্ল্যাগ-পয়েন্টে ওদের পতাকাটা নেই।

আস্তানা ছেড়ে বেরিয়ে পড়ার জন্যে তখুনি তৈরি হলো গডফ্রে। টার্টলেট দ্বিধায় ভুগছেন দেখে বলল, তাহলে একা আপনি এখানে থাকুন।

একা থাকতে হলে আমি ভয়েই মরে যাব।

তাহলে তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নিন, তাগাদা দিল গডফ্রে। তারপর আশ্বাস দিয়ে জানাল, বন্দুক আর রিভলভারে গুলি ভরাই আছে, ট্রিগার টিপলেই-গুড়ম! প্রফেসরের হাতে একটা বন্দুক ধরিয়ে দিল সে, নিজেও একটা নিল।

টাৰ্টলেট কোমরে একটা ভোজালি গুঁজলেন। কার্ট্রিজ ভরা একটা পাউচও তাঁর কাছে থাকল। গডফ্রেকে জিজ্ঞেস করলেন, বেহালাটাও সঙ্গে রাখব কিনা? সুর শুনে জংলীরা হয়তা শত্রুতা ভুলে বন্ধুত্ব করার জন্যে হাত বাড়িয়ে দেবে…

গডফ্রে গম্ভীর সুরে বলল, না।

সাবধানে দরজা খুলে বাইরে বেরুল ওরা। ইতিমধ্যে ছটা বেজে গেছে। দেবদারু গাছের মাথায় ঝিলিক দিচ্ছে উজ্জ্বল রোদ। চারপাশের পরিবেশ শান্ত, চুপচাপ। ছাগল-ভেড়াগুলো আবার ফিরে গেছে ঘাসজমিতে।

বাইরে থেকে আস্তানার দরজাটা বন্ধ করে দিল গডফ্রে। সেটা এমনভাবেই বানানো হয়েছে যে বন্ধ করার পর দেখে মনেই হয় না, যে ওখানে একটা দরজা আছে। আস্তানার সামনে ওদের পায়ের ছাপ মুছে ফেলল ওরা, তারপর জায়গাটায় ছড়িয়ে দিল শুকনো পাতা। নদীর দিকে যাচ্ছে ওরা। সামনে রয়েছে গডফ্রে, পিছনে টার্টলেট। প্রফেসর আজ আবার নাচ ভুলে গেছেন। বন্দুক কাঁধে থাকায়, হোঁচট খেতে খেতে হাঁটছেন তিনি। আর যাই হোক, হোঁচট খাওয়াকে নাচ বলা যায় না।

নদীর কাছে এসে গাছতলায় দাঁড়াল গডফ্রে। চোখে দূরবীন তুলে ফ্ল্যাগ-পয়েন্টের দিকে তাকাল। নাহ্, দেখার মত কিছুই নেই। কোন মানুষ না, একটু ধোঁয়া না।

পশ্চিম তীরটাও তাই, একদম ফাঁকা।

গডফ্রে সিদ্ধান্ত নিল, কাল রাতে জংলীরা যেখানে নৌকা ভিড়িয়েছিল সেই জায়গাটা এবার দেখে আসতে হয়। অর্থাৎ এখন ওদেরকে নদীর মোহনায় যেতে হবে। নদীর ধারে প্রচুর গাছপালা আর ঝোপ-ঝাড় আছে, গা ঢাকা দিয়ে যেতে কোন অসুবিধে হবে না। তার সন্দেহ হলো, ক্যানুতেই আছে জংলীরা, বিশ্রাম নিচ্ছে। তা যদি হয়, ভেবে দেখতে হবে ওরাই জংলীদের ওপর হামলা করবে কিনা।

সাবধানে, কোন আওয়াজ না করে, ধীরে ধীরে এগোচ্ছে গডফ্রে। টার্টলেট অবশ্য নিঃশব্দে হাঁটতে পারছেন না। হোঁচট কখনও শব্দহীন হয় না। মনে মনে বিরক্ত বোধ করলেও, হাজার হোক শিক্ষক, গডফ্রে তাই কিছু বলছে না। তবে বিপদের সময় উনি যে কতটুকু সাহায্যে আসবেন, তা সে আন্দাজ করতে পারছে।

এক ঘণ্টায় মাত্র এক মাইল এগোল ওরা। এখন পর্যন্ত বেমানান কিছুই চোখে পড়েনি। এতক্ষণ ঝোপের আড়ালে গা ঢাকা দিয়ে এগিয়েছে ওরা, কিন্তু সামনের পথ বেশ অনেকটা ফাঁকা, কোন গাছপালা নেই। আড়াল থেকে না বেরিয়ে নদীর দুই পারের ওপর চোখ বোলাচ্ছে গডফ্রে।

আশ্চর্য, জংলীরা যেন বাতাসে মিলিয়ে গেছে! এমন কি হতে পারে যে ওদের মত জংলীরাও লুকিয়ে আছে? আড়াল থেকে লক্ষ্য রাখছে ওদের ওপর?

কথাটা শুনে হেসে উঠলেন টার্টলেট। তিনি যে ভয়-ডর কাটিয়ে উঠেছেন, গডফ্রের তা জানা ছিল না, তাই একটু অবাক হলো সে। তবে কিছু বলল না। তার ধারণা, বিপদ এখনও কাটেনি।

ফাঁকা জায়গাটা সাবধানে পার হয়ে এল ওরা। আরও প্রায় ঘণ্টাখানেক হাঁটার পর সাগরের কিনারায় পৌঁছাল। এদিকে, নদীর পারে, বড় কোন গাছ নেই। আড়াল পেতে চাইলে হামাগুড়ি দিয়ে ছোট কয়েকটা ঝোপের দিকে যেতে হবে ওদেরকে। গডফ্রের দেখাদেখি প্রফেসর টার্টলেটও হামাগুড়ি দিয়ে এগোলেন।

শুধু শুধু লোক হাসাচ্ছি আমরা, প্রতিবাদের সুরে বললেন তিনি। জংলীরাই যেখানে নেই, সেখানে তাদেরকে ভয় পাবার কি দরকার, শুনি?

জংলীরা আছে! ফিসফিস করল গডফ্রে। না থেকে পারে। আপনি তৈরি থাকুন, আমি বললেই গুলি করবেন।

সামান্য একটু এগোতেই কয়েকটা বড় পাথরের আড়াল থেকে ধোঁয়া উঠতে দেখল ওরা। ঘাসের ওপর শুয়ে বন্দুকটা বাগিয়ে ধরল গডফ্রে। আমার একটা সন্দেহ হচ্ছে, স্যার, বলল সে। এর আগে আরও দুবার ধোঁয়া দেখেছি আমি। তারমানে কি আগেও দুবার জংলীরা দ্বীপে নেমেছিল? নিজের প্রশ্নের উত্তর নিজেই দিল সে। কিন্তু না, তাই বা কিভাবে সম্ভব! অনেক খুঁজেও আমি তো কোথাও কোন ছাই বা কয়লা দেখিনি। তবে, আশা করি, এই ধাঁধার এবার একটা সমাধান পাওয়া যাবে।

হামাগুড়ি দিয়েই নদীর বাঁকে পৌঁছাল ওরা। এখান থেকে নদীর দুদিকেই অনেক দূর পর্যন্ত দেখা যাবে। চোখ বুলাতে শুরু করেই চমকে উঠল গডফ্রে। তবে সঙ্গে সঙ্গে কিছু বলল না। ইঙ্গিতে প্রফেসর টাৰ্টলেটকে সামনে এগোতে নিষেধ করল সে।

আগুনটা জ্বালা হয়েছে তীরের বড় একটা পাথরের ওপর। বেশ বড় আগুন, প্রচুর কাঠ জড়ো করে ধরানো হয়েছে। শুধু আগুন নয়, ওটাকে ঘিরে জংলীরাও বসে আছে। নদীর তীরে আরেকটা বড় পাথর দেখা যাচ্ছে, নৌকাটাকে সেটার সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়েছে।

খালি চোখেই সব পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছে গডফ্রে। ওদের কাছ থেকে জংলীদের দূরত্ব দুশো গজও হবে না। আগুনে কাঠ পুড়ছে, তার শব্দও শুনতে পাচ্ছে ওরা। মাথাগুলো গুনল গডফ্রে। নিশ্চিত হলো, আপাতত কোন ভয় নেই, জংলীরা সবাই আগুনের কাছেই রয়েছে। দশজন বসে আছে আগুনটাকে ঘিরে, তারা মাঝে মধ্যে কাঠ গুজে দিচ্ছে আগুনে। একজন, সেই বোধহয় সর্দার, পায়চারি করছে আর মাঝে মধ্যে ঘাড় ফিরিয়ে দ্বীপের ভেতর দিকটায় তাকাচ্ছে। লোকটাকে গডফ্রের সর্দার মনে হলো কাঁধে লাল কাপড় দেখে। জংলীরা সব মিলিয়ে বারোজন। শেষ লোকটাকে আগুনের কাছেই একটা খুঁটির সঙ্গে রশি দিয়ে শক্ত করে বেঁধে রাখা হয়েছে।

লোকটাকে বেঁধে রাখার মানে কি? সে কি কোন অপরাধ করেছে? গডফ্রে হঠাৎ খুব বিচলিত বোধ করল। আরও একটা অগ্নিকুন্ড তৈরি করছে জংলীরা। কারণটা স্পষ্ট। বারো নম্বর লোকটাকে আগুনে পুড়িয়ে মারা হবে। গডফ্রের মনে পড়ল, প্রফেসর টাৰ্টলেট কাল জংলীগুলোকে মানুষখেকো বলে সন্দেহ করেছিলেন। দেখা যাচ্ছে তার ধারণাই ঠিক।

রবিনসন ক্রুসোরা সবাই দেখা যাচ্ছে একই রকম–একটা যেন অারেকটার নকল। ঠিক এরকম একটা পরিস্থিতিতে পড়েছিল ড্যানিয়েল ডিফোর নায়কও। যে খেলার যে নিয়ম, গডফ্রে উপলব্ধি করল তাদেরও এই লোকটাকে উদ্ধার করতে হবে। ঠিক যেভাবে ক্রুসো জংলীদের হাত থেকে ফ্রাইডেকে উদ্ধার করেছিল।

এ সম্ভব নয়, চোখের সামনে কাউকে পুড়ে মরতে দেয়া যায় না। ওদের সঙ্গে দুটো দোনলা বন্দুক রয়েছে। দুটোতে চারটে বুলেট। একজোড়া রিভলভারে রয়েছে বারোটা বুলেট। এগারোজন অসভ্যকে ঘায়েল করতে যথেষ্ট। খুন করতে হবে না, ফাঁকা আওয়াজ করলেই জংলীগুলো যে যেদিকে পারে ছুটে পালাবে।

একটু পরই পায়চারি থামিয়ে আগুনের পাশে দাঁড়িয়ে পড়ল সর্দার। বন্দীর হাত দুটো পিছমোড়া করে খুঁটির সঙ্গে বাঁধা, তার দিকে একটা হাত তুলে ইঙ্গিত করল সে। তার এই ইঙ্গিতের অপেক্ষাতেই ছিল জংলীরা।

গডফ্রেও সর্দারের এই ইঙ্গিতের জন্যে অপেক্ষা করছিল। দেরি করে সিধে হলো সে। গডফ্রে কি করতে চায় তা বুঝতে না পারলেও, দেখাদেখি প্রফেসর টার্টলেটও দাঁড়িয়ে পড়লেন।

গডফ্রের ধারণা ছিল, তাকে দেখামাত্র ঘাবড়ে যাবে জংলীরা। হয় তারা অস্ত্র উঁচিয়ে ধেয়ে আসবে, তা না হলে ছুটে গিয়ে উঠবে নিজেদের ক্যানুতে। কিন্তু সেরকম কিছু ঘটল না। জংলীরা ওদেরকে গ্রাহ্যই করছে না। ভাবটা যেন, ওদেরকে দেখতেই পায়নি। আবার একটা ইঙ্গিত করল সর্দার। এবার তিনজন জংলী এগিয়ে এসে বন্দীর বাঁধন খুলে ফেলল, তাকে শক্ত করে ধরে আগুনের কাছে নিয়ে যাচ্ছে। বন্দী অবশ্য পুড়ে মরতে রাজি নয়। নিজেকে ছাড়াবার জন্যে ধস্তাধস্তি শুরু করেছে সে। তার ধাক্কা খেয়ে জংলী তিনজন ছিটকে দূরে সরে গেল। কিন্তু আবার তারা ছুটে এসে জাপটে ধরল বন্দীকে। বেচারা একা, ওদের সঙ্গে পারল না। আরও কয়েকজন জংলী ছুটে এসে কাবু করে ফেলল তাকে। সর্দারের হাতে একটা পাথরের কুড়ল ধরিয়ে দিল এক জংলী। সেটা মাথার ওপর তুলে বন্দীর দিকে এগোল সর্দার। ব্যাপারটা ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। সর্দার কি প্রথমে লোকটার মাথা ফাটাবে, তারপর আগুনে পোড়াবে?।

গডফ্রে চেঁচিয়ে উঠল। পরমুহুর্তে গর্জে উঠল তার হাতের বন্দুক। গুলি সম্ভবত মোক্ষম জায়গাতেই লেগেছে, গুডুম করে শব্দ হতেই মাটিতে ছিটকে পড়ল সর্দার।

বাকি জংলীরা গুলির আওয়াজ শুনে হতভম্ব হয়ে পড়েছে। জীবনে বোধহয় এই প্রথম গুলির শব্দ শুনল তারা। ঘাড় ফিরিয়ে তাকাল সবাই। এবার গডফ্রেকে গ্রাহ্য না করে তাদের উপায় নেই। গডফ্রে ইঙ্গিত করতেই বন্দীকে ছেড়ে দিল তারা।

মুক্তি পেয়ে আর কি দাঁড়ায় বন্দী! গডফ্রেকে লক্ষ্য করে তীরবেগে ছুটছে সে।

আর ঠিক তখনই আরেকটা গুলি হলো-গুড়ুম!

প্রফেসর টাৰ্টলেট চোখ বুজে ট্রিগার টেনে দিয়েছেন। বন্দুকের কুঁদো ধাক্কা মারল তাঁর কাঁধে, পাক খেয়ে চিৎ হলেন তিনি মাটিতে। ব্যথায় গোঙাচ্ছেন।

কিন্তু কী অব্যর্থ লক্ষ্যভেদ! চোখ বুজে গুলি করলে কি হবে, জংলীদের একজন ছিটকে পড়ল সর্দারের পাশে। সেই সঙ্গে শুরু হলো জংলীদের আতঙ্কিত ছুটোছুটি। নিজেদের দুজন আহত লোককে নিয়ে ক্যানুতে উঠে পড়ল তারা। ক্যানু ভেসে গেল মাঝ নদীতে।

উল্লাসে ধেই ধেই করে নাচছেন প্রফেসর টাৰ্টলেট। বিজয়ের আনন্দ গডফ্রের চেয়ে তাঁরই বেশি। জীবনের প্রথম গুলিটা শতকরা একশো ভাগ সফল। কাঁধের ব্যথা ভুলে নৃত্য করছেন তিনি।

বন্দী তার উদ্ধারকর্তার সামনে এসে দাঁড়াল। তারপর ধীরে ধীরে নিচু হলো সে, লম্বা হয়ে শুয়ে মাটিতে একটা চুমো খেলো, তারপর মাথাটা রাখল গডফ্রের পায়ের ওপর। কিভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে হয় তা যেন ড্যানিয়েল ডিফোর রবিনসন ক্রুসো পড়ে জেনে নিয়েছে পলিনেশিয়ান এই জংলীটিও।

গল্পের বিষয়:
অনুবাদ
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত