রহস্যের দ্বীপ: ৩২. ধীরে ধীরে চোখ মেলে তাকালেন ক্যাপ্টেন নিমো

রহস্যের দ্বীপ: ৩২. ধীরে ধীরে চোখ মেলে তাকালেন ক্যাপ্টেন নিমো

৩২. ধীরে ধীরে চোখ মেলে তাকালেন ক্যাপ্টেন নিমো

ধীরে ধীরে চোখ মেলে তাকালেন ক্যাপ্টেন নিমো। ব্যক্তিত্বপূর্ণ চাহনি দেখলেই বোঝা যায় শুধু হুকুম করতেই জন্মেছে ওই লোক, ঘাড়ের ওপর লুটাচ্ছে ধবধবে সাদা চুল, মুখভর্তি দাড়ি মলিন মুখ, রোগে কাহিল হয়ে পড়েছেন বোধহয় ক্যাপ্টেন নিমো, শান্ত কণ্ঠে ইংরেজিতে কথা বললেন তিনি, আমার নাম জানলেন কি করে, ক্যাপ্টেন হার্ডিং?

শুধু আপনার নামই নয়, আশ্চর্য এই ডুবোজাহাজের কাহিনীও জানি।

নটিলাস?

নটিলাস।

কিন্তু আমার কথা তো পৃথিবীর কারও জানার কথা নয়।

আপনার নাম জানে পৃথিবীর লোক।

বুঝেছি। কয়েক বছর আগে ঘটনাচক্রে আমার জাহাজে এসে পড়া প্রফেসারই রটিয়েছে আমার নাম।

প্রফেসার অ্যারোনাক্সের কথা বলছেন তো?

হ্যাঁ, আমি ভেবেছিলাম নরওয়ের ঘূর্ণিপাকে পড়ে দুই সঙ্গীসহ মারা গেছেন ভদ্রলোক।

মরতে মরতেও বেঁচে যান। দেশে ফিরে “টোয়েন্টি থাউজ্যান্ড লীগস আন্ডার দি সী” নামে একটা বই লেখেন। বিশ্ববিখ্যাত হয়ে গেছেন প্রফেসার আর তার বই।

কিন্তু ও বইয়ে তো আমার জীবনের মাত্র দশ মাসের ঘটনা লেখা থাকার কথা।

তাই আছে। আর তাতেই পৃথিবীর মানুষের কাছে স্মরণীয় হয়ে আছেন আপনি।

ক্রিমিনাল হিসেবে স্মরণীয়, তাই না, ক্যাপ্টেন?

ক্যাপ্টেন নিমো, আপনি ক্রিমিনাল কিনা সে বিচারের দায়িত্ব আমার নয়। তবে আমরা লিঙ্কন দ্বীপে আসার পর আপনি আমাদের জন্যে যা যা করেছেন তাতে আপনার প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ না করে পারছি না। আমাদের কাছে আপনি মহাপুরুষ।

হার্ডিংয়ের কথায় মৃদু হাসলেন ক্যাপ্টেন নিমো।

ক্যাপ্টেন নিমো, এবার সামনে এগিয়ে এলেন স্পিলেট, আমি সাংবাদিক। আর পৃথিবীর সব সাংবাদিকই কম বেশি কৌতূহলী। তাই আপনার আসল পরিচয় জানার ইচ্ছেটা দমন করতে পারছি না আমি। দয়া করে যদি তা জানান নিজেকে ধন্য মনে করব।

স্পিলেটের দিকে কয়েক মুহুর্ত স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন ক্যাপ্টেন নিমো তারপর সবাইকে বসতে বলে শুরু করলেন নিজের কাহিনী।

আমার আসল নাম ডাক্কার, প্রিন্স ডাক্কার। ভারতের বুন্দেলখন্ডে রাজপুত্র হয়ে জন্মেছিলাম আমি।

দশ বছর বয়সেই উচ্চশিক্ষার জন্যে বাবা আমাকে বিলেতে পাঠালেন তার ইচ্ছা, ফিরে এসে ইউরোপের দেশগুলোর ছাঁচে বুন্দেলখন্ডকে উন্নত করে তুলব আমি। দশ থেকে তিরিশ বছরের মধ্যে বিজ্ঞান, সাহিত্য আর এঞ্জিনীয়ারিং এ অনেক জ্ঞান লাভ করলাম, ঘুরে বেড়ালাম সাড়া ইউরোপে। রাজার ছেলে আমি। অর্থের অভাব নেই। কিন্তু আমোদ-আহলাদ-ভোগবিলাসের প্রতি কোন লালসাই ছিল না আমার। শুধু জ্ঞানের পিপাসা সারাক্ষণ অস্থির করে রাখত আমাকে।

১৮৪৮ সালে স্বদেশে ফিরে এলাম। যথাসময়ে বিয়ে করার পর দুটো বাচ্চাও হলো। কিন্তু সংসারে মন টিকল না আমার।

ভারত জুড়ে শুরু হলো সিপাহী বিদ্রোহ। বিদ্রোহে যোগ দিলাম আমি দশবার জখম হলাম বিশটা যুদ্ধে। কিন্তু ব্যর্থ হলো সিপাহী বিদ্রোহ, হেরে গেল বিদ্রোহীরা। প্রিন্স ডাক্কারের নাম জেনে ফেলেছে ইংরেজ সরকার আমাকে ধরিয়ে দেবার জন্যে মোটা টাকার পুরস্কার ঘোষণা করা হলো।

বুন্দেলখন্ডের দুর্গম পাহাড়ী এলাকায় পালিয়ে গেলাম আমি। সভ্য মানুষ বিশেষ করে সাদা চামড়ার মানুষ জাতটার প্রতি বিষিয়ে গেল মনটা। কুড়িজন একান্ত বিশ্বস্ত অনুচর আর আমার সমস্ত অর্থ সম্পদ নিয়ে একদিন অদৃশ্য হয়ে গেলাম আমি।

কিন্তু কোথায় গেলাম? সাগর তলায়। সাদা চামড়ারা আমার পিছু নিতে পারবে না যেখানে ।

সৈনিক থেকে রূপান্তরিত হলাম বৈজ্ঞানিকে। প্রশান্ত মহাসাগরের এক মরুদ্বীপে বসে বানালাম আমার ডুবো জাহাজ নটিলাসকে। তারপর ডুব দিলাম সাগরের অতল তলায়। বছরের পর বছর পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে, উত্তর মেরু থেকে দক্ষিণ মেরুতে ঘুরে বেড়াতে থাকলাম আমি।

অফুরন্ত ধনরত্নের কোষাগার এই সাগর। কোটি কোটি টাকা মূল্যের সোনা আর মণিমুক্তা তুলে গোপনে দান করে দিতে লাগলাম ভারতবর্ষ আর অন্যান্য দরিদ্র দুর্ভাগা দেশকে স্বাধীনতার জন্যে যারা মরণপণ লড়াই করে যাচ্ছে।

ভালই চলছিল। হঠাৎ নটিলাসে এসে আশ্রয় নিলেন প্রফেসার অ্যারোনাক্স আর তার দুই সঙ্গী। ওঁদেরকে মেরে ফেলতে পারতাম আমি। কিন্তু না মেরে নটিলাসেই রেখে দিলাম এক শর্তে—কোনদিন আর বাইরের পৃথিবীতে ফিরে যেতে পারবেন না ওঁরা।

কিন্তু দশ মাস পরে নরওয়ের কুখ্যাত মেলস্ট্রমে গিয়ে পড়ল জাহাজ। নটিলাসকে রক্ষা করতে আমরা সবাই ব্যস্ত, এই সুযোগে দুই সঙ্গীসহ পালিয়ে যান প্রফেসার অ্যারোনা।

তারপরও সাগরে সাগরে ঘুরে বেড়ালাম আমি। একে একে মারা গেল প্রত্যেকটি বিশ্বস্ত অনুচর। শেষ পর্যন্ত বেঁচে রইলাম শুধু আমি, একা। আমার বয়স তখন ষাট! এ বয়সেও একাই নটিলাসকে চালিয়ে গেলাম আমি। ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ একদিন আপনাদের দ্বীপের এই গহ্বর আবিষ্কার করে ফেললাম। ভাবলাম নটিলাসের জন্যে এ গহ্বর একটা বন্দরের কাজ দেবে। এ রকম গুপ্ত বন্দর নটিলাসের আরও আছে।

মাঝে মাঝে আসি, এখানে বিশ্রাম নিই। চলে যাই। হঠাৎ একদিন আটকা পড়ে গেলাম গহ্বরে ঢোকার পর বিশ্রাম করছিল নটিলাস, এমন সময় দ্বীপের আগ্নেয়গিরিটা অগ্ন্যুৎপাত শুরু করল। অগ্ন্যুৎপাতের ফলে নটিলাসের বাইরে বেরোবার সুড়ঙ্গ পথটা বন্ধ হয়ে গেল। চিরদিনের মত এখানে আটকা পড়ে গেল নটিলাস।

গত কয়েক বছর ধরে আছি আমি এখানে। আটকা পড়েই বুঝতে পেরেছিলাম, এই দ্বীপেই মৃত্যু হবে আমার। অপেক্ষা করছি মৃত্যুর।

হঠাৎ একদিন দেখলাম কয়েকজন লোককে নিয়ে ঘুরতে ঘুরতে আকাশ থেকে পড়ছে একটা বেলুন। ডুবুরীর পোশাক পরা অবস্থায় তখন সাগর তীরের অল্প পানিতে দাঁড়িয়েছিলাম। হঠাৎ দেখলাম বেলুন থেকে পানিতে পড়ে গেছেন ক্যাপ্টেন হার্ডিং। সাগরের তলা দিয়ে গিয়ে পানি থেকে ওকে তুলে একটা পাহাড়ের গুহায় রেখে আসি আমি।

আড়াল থেকে আপনাদের ওপর নজর রাখলাম। বুঝলাম, আপনারা পরিশ্রমী, সৎ এবং পরস্পরকে ভালবাসেন। ডুবুরীর পোশাক পরে হ্রদের পানি সাগরে পড়ার গোপন সুড়ঙ্গপথে গ্রানাইট হাউসের কুয়োর তলায় চলে যেতাম। কুয়োর দেয়াল বেয়ে উঠে আপনাদের সমস্ত কথাবার্তা শুনতাম। দাসপ্রথা উচ্ছেদ করার জন্যে লড়ে এসেছেন, আপনাদের আলোচনা শুনে তাও জানলাম। ব্যস, আর কিছু শোনার দরকার ছিল না আমার। আপনাদের মত লোকই আমার পছন্দ। আড়ালে থেকে যদ্দূর সম্ভব সাহায্য করে গেলাম আপনাদের। এই পর্যন্ত বলে থামলেন ক্যাপ্টেন। রোগাক্রান্ত শরীরে একটানা এতক্ষণ কথা বলার পরিশ্রমে অল্প অল্প হাঁপাঁচ্ছেন তিনি। প্রশস্ত কপালে জমেছে বিন্দু বিন্দু ঘাম।

এবার বুঝলেন ক্যাপ্টেন হার্ডিং, বেলুন থেকে পড়ে যাবার পর ওকে কে বাঁচিয়েছেন। ওঁকেই শুধু বাঁচাননি ক্যাপ্টেন নিমো, ঝড় বাদলার রাতে অয়েল পেপারে ঢেকে টপকে চিমনিতে পৌঁছে দিয়েছিলেন, হ্রদের পানিতে ডুগংটাকে হত্যা করে টপকে বাঁচিয়েছেন, দরকারী জিনিসপত্র সিন্দুকে ভরে সাগর তীরে রেখে এসেছেন, গভীর রাতে নৌকোর বাঁধন কেটে ওটাকে মার্সি নদী বেয়ে ওদের সামনে পৌঁছে দিয়েছেন, ওরাং ওটাংরা গ্রানাইট হাউস আক্রমণ করার সময় ওপর থেকে সিঁড়ি ফেলে দিয়েছেন, আয়ারটনের খবর লিখে বন-অ্যাডভেঞ্চারের কাছে বোতল ভাসিয়ে দিয়েছেন, প্রসপেক্ট হাইটের মাথায় চড়ে আলোর সংকেত দেখিয়ে পেনক্র্যাফটকে দ্বীপে ফিরে আসার পথ চিনিয়েছেন, স্পীডির নিচে টর্পেডো মেরে ধ্বংস করেছেন জাহাজটাকে, হার্বার্টের জন্যে কুইনিন সরবরাহ করেছেন, ইলেকট্রিক রাইফেলের সাহায্যে পাঁচটা ডাকাতকে মেরে ওদেরকে বিপদমুক্ত করেছেন। তাঁর উপকারের ঋণ অভিযাত্রীরা কোন দিন শোধ করতে পারবে না।

হার্ডিংকে চুপ করে থাকতে দেখে প্রশ্ন করলেন ক্যাপ্টেন নিমো, আমার কাহিনী শোনার পর আমার সম্পর্কে কি ধারণা হয় আপনার?

টোয়েন্টি থাউজ্যান্ড লীগস আন্ডার দি সী বইয়ে লেখা একটা ঘটনার কথা মনে পড়ে গেল হার্ডিংয়ের। একটা জাহাজডুবির ঘটনা। সেবার অসহায় শিশুসহ মায়েদের পর্যন্ত ডুবিয়ে দিয়েছিল নটিলাস। পৃথিবীর সব দেশে ব্যাপারটা নিয়ে দারুণ হৈ চৈ পড়ে গিয়েছিল। আর এরপর এত অস্থির হয়ে পড়েছিলেন ক্যাপ্টেন যে অনিয়ন্ত্রিত ভাবে ভাসতে ভাসতে ঘূর্ণিপাকে গিয়ে পড়েছিল নটিলাস।

হার্ডিংয়ের মনের কথাটা যেন বুঝতে পেরে বললেন ক্যাপ্টেন নিমো, সেই জাহাজটার কথা ভাবছেন তো? কিন্তু একটা কথা জেনে রাখুন আমি ওটাকে ধাওয়া করিনি, ওটাই তেড়ে আক্রমণ করেছিল আমাকে। শেষ পর্যন্ত সঙ্কীর্ণ, অগভীর একটা উপসাগরে আটকা পড়েছিলাম আমি। পালাবার পথ ছিল না। বাধ্য হয়ে আত্মরক্ষার জন্যে জাহাজটাকে ডোবাতে হয়েছিল আমাকে। কাজটা কি অন্যায় করেছিলাম?

আগেই বলেছি, আপনার কাজের বিচার বা সমালোচনা করার অধিকার আমার নেই, ক্যাপ্টেন নিমোর প্রশ্নের জবাবে বললেন হার্ডিং। মানুষ তো নিজ কিছু করছে না, করাচ্ছেন তিনি। আঙুল তুলে ওপর দিকে নির্দেশ করলেন তিনি। আমরা যন্ত্র, তিনি চালক। আমাদের বিচারের ভারটাও তাই তার। শুধু একটা কথাই বলছি আপনাকে, ক্যাপ্টেন নিমো, আপনার মত পরোপকারী, নিঃস্বার্থ বন্ধু পেলে যে কোন মানুষ নিজেকে ধন্য মনে করবে আমরাও তাই মনে করছি।

হাঁটু গেড়ে ক্যাপ্টেন নিমোর পাশে বসে তার হাতে চুমু খেলেন হার্ডিং : চোখে পানি এসে গেল নিমোর। হার্ডিং-এর মাথায় একটা হাত রেখে রুদ্ধকণ্ঠে বললেন ক্যাপ্টেন নিমো, ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুন।

ভোর হতেও দিনের আলো গহ্বরে প্রবেশ করল না। নটিলাসের সবকিছু ঘুরে ঘুরে অভিযাত্রীদের দেখালেন ক্যাপ্টেন নিমো। মিউজিয়ামের মাথায় বড় বড় অক্ষরে লেখা মহান বাণীটা (Mobjlis mobilc) দেখাবার পর আর পারলেন না। পরিশ্রান্ত ভাবে সোফায় এলিয়ে পড়লেন।

তাড়াতাড়ি ক্যাপ্টেন নিমোর নাড়ি পরীক্ষা করলেন স্পিলেট, হৃৎপিন্ডের গতি অত্যন্ত ক্ষীণ।

ওঁকে বাইরে নিয়ে গেলে ভাল হত না? জিজ্ঞেস করল পেনক্র্যাফট।

নটিলাস ছেড়ে এ সময়ে কোথাও যাবেন না উনি, উত্তর দিলেন হার্ডিং।

একটু পর চোখ মেলে চাইলেন ক্যাপ্টেন নিমো বললেন, ঠিক বলেছেন, এখানেই মরতে চাই আমি। খুব সম্ভব আগামী কালই মারা যাব আমি। মৃত্যুর পর আমার একটা শেষ ইচ্ছে পূরণ করবেন, ক্যাপ্টেন হার্ডিং?

নিশ্চয়ই করব, বিন্দুমাত্র দ্বিধা না করে বললেন হার্ডিং। বলুন, কি?

আমার ইচ্ছে, নটিলাসই হবে আমার কফিন। এখানটায় পানি খুব গভীর আমার মৃতদেহ নিয়ে চিরদিনের মত পানিতে ডুব দেবে নটিলাস।

আমার মৃত্যুর পর আপনারা চলে যাবেন এ গহ্বর ছেড়ে। এক বাক্স হীরা দিচ্ছি আপনাদেরকে। এই যে নিন। টেবিলের ড্রয়ার খুলে হীরার বাক্সটা এগিয়ে দিয়ে আবার বলতে লাগলেন ক্যাপ্টেন নিমো, সাগর থেকে সংগ্রহ করা মূল্যবান কিছু হীরা আছে এর মধ্যে। আমার ইচ্ছে কোন সৎ কাজে খরচ করবেন আপনারা এ সম্পদ। এছাড়া নটিলাসে আর যা কিছু আছে সব নটিলাসেই থাকবে।

আমার মৃত্যুর পর এ ঘর থেকে বেরিয়ে গিয়ে দরজাটা বন্ধ করে দেবেন। তারপর নটিলাসের বাইরে বেরিয়ে শক্ত করে ডালাটা আটকে দেবেন। যাতে একফোটা পানিও ভেতরে ঢুকতে না পারে। এরপর যে নৌকো করে এসেছেন সেটায় চড়ে নটিলাসের সামনের দিকে যাবেন। ভাল মত খেয়াল করলে দেখবেন ওখানে স্টপকক লাগানো দুটো ছিদ্র আছে। স্টপকক দুটো খুলে দিলেই আস্তে আস্তে পানিতে ভরে যাবে নটিলাসের ট্যাঙ্ক। গভীর পানির তলায় তলিয়ে যাবে আমার সাধের ডুবোজাহাজ। কথা দিন, যা বললাম অক্ষরে অক্ষরে পালন করবেন?

কথা দিচ্ছি, ক্যাপ্টেন নিমো। আবেগে প্রায় বুজে এল হার্ডিং এর গলার স্বর।

ক্যাপ্টেন হার্ডিং, এবার আপনার সাথে কিছুক্ষণ একা থাকতে চাই আমি।

ক্যাপ্টেন নিমোর কথা শুনে হার্ডিং ছাড়া বাকি সবাই ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। দুজনের মধ্যে কি কথাবার্তা হলো তার কিছুই জানতে পারল না কেউ।

সেদিন নটিলাসেই থেকে গেল অভিযাত্রীরা। আস্তে আস্তে ক্যাপ্টেন নিমোর অবস্থা খারাপের দিকে যেতে থাকল। রাত বারোটার পর বহু কষ্টে হাত দুটো বুকের ওপর আড়াআড়ি ভাবে রাখলেন ক্যাপ্টেন নিমো। সবাই বুঝল সময় ফুরিয়ে এসেছে ওঁর।

রাত একটার দিকে আবার চোখ দুটো মেললেন ক্যাপ্টেন মুহূর্তের জন্যে চক চক করে উঠল চোখ দুটো বিড় বিড় করে শুধু বললেন, জন্মভূমিকে রক্ষা করো। ঈশ্বর। বলেই চোখ বুজলেন ক্যাপ্টেন নিমো। পরম শান্তিতে ঘুমিয়ে পড়লেন যেন।

সবাই বুঝল শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন ক্যাপ্টেন নিমো। লাশের গায়ে একটা চাঁদর টেনে দিয়ে বললেন হার্ডিং, ওঁর আত্মার মঙ্গল করো তুমি, ঈশ্বর।

হু হু করে কেঁদে ফেলল হার্বার্ট আর পেনক্র্যাফট। শব্দ করে কাঁদল না আয়ারটন, কিন্তু অঝোরে অশ্রু ঝরে পড়ছে ওর দুগাল বেয়ে। পাথরের মূর্তির মত স্তব্ধ হয়ে বসে রইল নেব।

একটু পর শুধু হীরার বাক্সটা নিয়ে সে-ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এল অভিযাত্রীরা। ক্যাপ্টেন নিমোর ঘরের দরজা বন্ধ করে দেয়া হলো। নটিলাসের বাইরে এসে ডালাটা শক্ত করে এটে দিয়ে নৌকায় চেপে বসল অভিযাত্রীরা।

নটিলাসের সামনের ফুটো দুটো খুঁজে বের করলেন হার্ডিং। স্টপকক দুটো খুলে দিতেই হু হু করে পানি ঢুকতে লাগল নটিলাসের ট্যাঙ্কে। চোখের সামনে, ধীরে ধীরে তলিয়ে গেল প্রিন্স ডাক্কারের ডুবোজাহাজ কফিন—নটিলাস।

আগের পর্ব :
০১. ওপরে কি উঠছি আমরা
০২. গৃহযুদ্ধের তান্ডবলীলা চলছে
০৩. কোথায় গেলেন ক্যাপ্টেন
০৪. বিকেল নাগাদ নদীর জল কমে গিয়ে
০৫. চেঁচিয়ে বললেন স্পিলেট
০৬. বেলুন থেকে নামার পর
০৭. সকাল থেকে কোথাও পাওয়া গেল না নেবকে
০৮. ওরা ঢুকলেও ফিরে চাইল না নেব
০৯. হতবুদ্ধি হয়ে দাঁড়িয়ে রইল পেনক্র্যাফট
১০. ধোঁয়া, মানে আগুন
১১. ভোর হলো
১২. পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই
১৩. পরদিন সকালে খাওয়া-দাওয়ার পর
১৪. মাপজোকের কাজ শুরু করলেন ক্যাপ্টেন
১৫. গহ্বরের মুখ
১৬. জুনের শুরুতেই শীত নামল
১৭. যেন ভূত দেখছে এমন ভাবে
১৮. জাহাজডুবি হয়ে সত্যিই কেউ দ্বীপে উঠেছে কিনা
১৯. দ্বীপের দক্ষিণ তীর ঘেঁষে চলা শুরু হলো
২০. একটু দূরে জঙ্গলের ধারে
২১. মার্চের আরম্ভেই শুরু হলো ঝড় বৃষ্টি
২২. আবার এল শীত
২৩. এখনও কি বাধা দেবেন
২৪. মার্সি নদীর মুখে এসে
২৫. জঙ্গলে আর ফিরে গেল না আগন্তুক
২৬. ভোর হতেই খোঁয়াড়ের দিকে রওনা দিল
২৭. এখনও প্রায় বিশ মাইল দূরে জাহাজটা
২৮. চোখের সামনে ভোজবাজীর মত
২৯. আস্তে আস্তে সেরে উঠতে লাগল হার্বার্ট
৩০. ফ্রাঙ্কলিন হিলের কোন গুহায়
৩১. জাহাজের খোল তৈরির কাজ
পরের পর্ব :
৩৩. সুড়ঙ্গ মুখে পৌঁছতে পৌঁছতে

গল্পের বিষয়:
অনুবাদ
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত