রহস্যের দ্বীপ: ২৪. মার্সি নদীর মুখে এসে

রহস্যের দ্বীপ: ২৪. মার্সি নদীর মুখে এসে

২৪. মার্সি নদীর মুখে এসে

বিশে অক্টোবর সকাল সাতটায় মার্সি নদীর মুখে এসে নোঙর ফেলল বন অ্যাডভেঞ্চার। ওদের ফিরতে দেরি হওয়ায় দারুণ দুর্ভাবনায় পড়েছিলেন ক্যাপ্টেন। নেবসহ প্রসপেক্ট হাইটের চূড়ায় উঠে তখন সাগরের দিকে তীক্ষ্ণ নজর রাখছিলেন তিনি। বন-অ্যাডভেঞ্চারকে আসতে দেখেই নদীর দিকে ছুটে গেলেন দুজনে।

কিন্তু ডেকের ওপর তো নতুন কেউ নেই। নির্বাসিত লোকটাকে পাওয়া যায়নি তাহলে! নাকি ট্যাবর দ্বীপ ছেড়ে আসতে রাজি হয়নি লোকটা? সঙ্গীরা নৌকো থেকে নামার আগেই জিজ্ঞেস করলেন ক্যাপ্টেন, এত দেরি করলে কেন তোমরা?

সে অনেক কথা, গ্রানাইট হাউসে ফিরেই বলব, উত্তর দিলেন স্পিলেট।

লোকটাকে পাওয়া যায়নি তাহলে?

গেছে। কিন্তু ওকে আর এখন ঠিক লোক বলা যায় না। অবস্থা দেখে মনে হয় অনেকদিন ধরেই এরকম।

কিন্তু একটা কথা বুঝতে পারছি না। এ অবস্থায় বোতলের কাগজটা ও লিখল কি করে? বলল হার্বার্ট।

কথাটার উত্তর দিতে পারল না কেউ। এক মুহুর্ত চুপ থেকে ক্যাপ্টেন লোকটাকে বের করে আনতে বললেন। মাথা নিচু করে নৌকো থেকে নেমে এল লোকটা। এগিয়ে গিয়ে ওর কাঁধে হাত রাখলেন ক্যাপ্টেন চমকে মুখ তুলে চাইল লোকটা। নৌকো থেকে নামার পর একটু অস্থির হয়ে উঠেছিল সে, কিন্তু ক্যাপ্টেনের ব্যক্তিপূর্ণ চোখের দিকে চেয়ে একেবারে শান্ত হয়ে গেল।

অল্পক্ষণেই অনেক কিছু বুঝে নিলেন ক্যাপ্টেন। ওই নরপশুটার ভেতরের মনুষ্যত্ব এখনও একেবারে শেষ হয়ে যায়নি। ছিটেফোটা এখনও আছে। সেবা যত্নে ভাল হয়ে উঠবে বলে মনে হয়।

লোকটাকে নিয়ে গ্রানাইট হাউসে ফিরে এল অভিযাত্রীরা। খিদে পেয়েছিল সবারই। তাড়াতাড়ি রান্নাটা সেরে নিল নেব। খেতে বসে তর্কের ঝড় উঠল লোকটাকে নিয়ে। যদি ব্রিটানিয়া জাহাজের নাবিক হয় ও, তাহলে নিশ্চয় ইংরেজ বা আমেরিকান।

লোকটার সাথে তোমার দেখা হলো কি করে, হার্বার্ট? জিজ্ঞেস করলেন ক্যাপ্টেন।

বাঁধাকপি তুলছিলাম আমি। এতই মগ্ন ছিলাম কাজে, আমার ওপর ও ঝাঁপিয়ে না পড়া পর্যন্ত টেরই পাইনি।

একদিক দিয়ে অবশ্য ভালই হয়েছে। তোমাকে আক্রমণ না করলে ওর দেখাই পাওয়া যেত না।

এভাবে আলোচনার মধ্যে দিয়েই শেষ হলো খাওয়ার পালা। মার্সি নদীর দিকে আবার রওনা দিল সবাই। নৌকোর জিনিসপত্র এখনও নামানো হয়নি।

শুয়োর দুটো আর ট্যাবর আইল্যান্ডে পাওয়া জিনিসগুলো একে একে নৌকো থেকে নামানো হলে খালি নৌকো নিয়ে, পোর্ট বেলুনের দিকে রওনা হয়ে গেল পেন্যাফট। বন-অ্যাডভেঞ্চারকে ওখানে রেখে ফিরে আসবে সে।

শুয়োর দুটো খোঁয়াড়ে রেখে অন্যান্য মালপত্র সহ গ্রানাইট হাউসে ফিরে চলল আর সবাই। ফেরার পথে জিজ্ঞেস করলেন স্পিলেট, একটা ইলেকট্রিক টর্চও তাহলে বানিয়ে ফেলেছেন, ক্যাপ্টেন?

ইলেকট্রিক টর্চ! একটু অবাক হলেন ক্যাপ্টেন

কেন, কাল রাতে এটা জেলেই তো সঙ্কেত দিলেন আমাদের। ওই আলোর সঙ্কেত না পেলে লিঙ্কন আইল্যান্ডকে খুঁজে পেতাম কিনা সন্দেহ।

পাই করে স্পিলেটের দিকে ঘুরলেন ক্যাপ্টেন, কি হয়েছে খুলে বলুন তো আমাকে?

এবার আশ্চর্য হলেন স্পিলেটও। ক্যাপ্টেনকে সব কথা বলতেই আস্তে আস্তে মাথা ঝাকালেন ক্যাপ্টেন, হু। এতসব রহস্যের সমাধান কবে হবে কে জানে!

অল্প কদিনের ভেতরই অনেক পরিবর্তন হলো লোকটার। রান্না করা মাংস দিলে এখন আর ঠেলে সরিয়ে দেয় না। ঘুমন্ত অবস্থায় ওর চুল দাড়ি কেটে ফেলল হার্বার্ট চেহারার জংলী ভাবটা দূর হয়ে গেল। ভাল জামাকাপড় পরিয়ে দেবার পর পুরোপুরি ভদ্র দেখা গেল। সারাক্ষণ গম্ভীর হয়ে বসে থাকে লোকটা, কারও সাথে কোন কথা বলে না।

রোজই ওর অবস্থার উন্নতির জন্যে কিছু না কিছু করেন ক্যাপ্টেন! ওর সামনেই আর সবার সাথে নানা ব্যাপারে বিশেষ করে নৌবিদ্যার কথা আলোচনা করেন তিনি। নাবিক হলে এসব কথায় চঞ্চল হয়ে ওঠার সম্ভাবনা আছে।

কান খাড়া করে সব কথা শোনে আগন্তুক। মুখ দেখে মনে হয় কথাগুলোর মানেও বুঝতে পারছে সে। কিন্তু কথা বলে না। দিনরাত বিষণ্ণ হয়ে কি যেন ভাবে ও। তবে একটা ব্যাপার পরিষ্কার হয়ে গেল সবার কাছে-ক্যাপ্টেনের প্রতি অনুরক্ত হয়ে পড়ছে সে।

সুযোগটা কাজে লাগালেন ক্যাপ্টেন। একদিন আগন্তুককে জঙ্গলের ধারে নিয়ে যাবার পরিকল্পনা করলেন তিনি। বাঁধা দেবার চেষ্টা করলেন স্পিলেট আর পেনক্র্যাফট।

স্পিলেট বললেন, ও কাজই করবেন না, ক্যাপ্টেন! জঙ্গলের কাছে গেলেই পালাবে ও।

পেনক্র্যাফটও সে কথায় সায় দিল।

আমার তা মনে হয় না। বলেই লোকটার ঘরে গিয়ে ঢুকলেন ক্যাপ্টেন। ওঁর সাড়া পেয়ে মুখ তুলে চাইল আগন্তুক। মৃদু হেসে বললেন ক্যাপ্টেন, এসো আমার। সাথে।

বিন্দুমাত্র দ্বিধা না করে উঠে দাঁড়াল আগন্তুক। রওনা দিল ক্যাপ্টেনের পেছন পেছন। একটু দূর থেকে ওদেরকে অনুসরণ করে চলল পেনক্র্যাফট আর স্পিলেট।

প্রসপেক্ট হাইটের কাছ থেকে শুরু হয়েছে জঙ্গল। সেখানেই নিয়ে যাওয়া হলো আগন্তুককে। সামনে অগভীর খাল, একপাশে গভীর জঙ্গল। একটু অস্থির হয়ে উঠল আগন্তুক। কাঁপছে পা দুটো। মনে হলো লাফিয়ে পড়বে খালের পানিতে। কিন্তু না, পিছিয়ে এসে ধপ করে ঘাসের ওপর বসে পড়ল সে। দুচোখে অশ্রুর ঢল।

এগিয়ে গিয়ে আগন্তুকের পাশে বসলেন ক্যাপ্টেন। আলতো করে একটা হাত রাখলেন ওর কাঁধে।

এরপর থেকে আরও বদলে গেল আগন্তুক। অভিযাত্রীদের সাথে কাজ করতে আগ্রহ দেখাতে শুরু করেছে এখন। ওরা না বললেও মাঝে মাঝেই এটা ওটা ধরে ওদের সাহায্য করার চেষ্টা করে সে।

একদিন লোকটার ঘরের সামনে থমকে দাঁড়াল পেনক্র্যাফট। ঘরের ভেতর একা একা বিড় বিড় করছে লোকটা, এখানে থাকার যোগ্য না আমি, কিছুতেই না।

মনে হয় কোন সাংঘাতিক পাপ করেছে লোকটা। অনুতাপে এখন তাই জ্বলে পুড়ে মরছে। একদিন মাটি কোপাতে কোপাতে হঠাৎ কোদাল ছুঁড়ে ফেলে উঠে দাঁড়াল আগন্তুক। আড়াল থেকে ওর ওপর নজর রাখছিলেন ক্যাপ্টেন। দেখলেন, দূর সাগরের দিকে একদৃষ্টে চেয়ে ঝর ঝর করে কাঁদছে লোকটা।

কাছে গিয়ে আগন্তুকের পিঠে হাত রাখলেন তিনি। দৃঢ় কণ্ঠে বললেন, এদিকে তাকাও। আমার চোখের দিকে।

আস্তে করে ঘুরে দাঁড়িয়ে ক্যাপ্টেনের চোখে চোখ রাখল আগন্তুক। ভাবের পর ভাব খেলে গেল ওর চেহারায়, একবার যেন পালাতে গিয়েও সামলে নিল নিজেকে। তারপর বুকের ওপর দুহাত ভাঁজ করে ভাঙা ভাঙা গলায় প্রশ্ন করল, কে আপনারা?

তোমার মতই নির্বাসিত, মৃদু হাসলেন ক্যাপ্টেন, এখন থেকে আমরা এক সাথেই থাকব।

কিন্তু আমি তো, আমি তো আপনাদের সাথে থাকার যোগ্য নই। চলে যান, আমার কাছ থেকে চলে যান, ক্যাপ্টেন। ক্যাপ্টেনের সামনে থেকে সরে গেল সে। নিস্পলক তাকিয়ে থাকল দূর সাগরের দিকে।

ক্যাপ্টেনের মুখে খবরটা শুনে স্পিলেট বললেন, আমি হলপ করে বলতে পারি, ক্যাপ্টেন, নিশ্চয়ই কোন সাঘাতিক পাপ করেছে ও।

করেছে যেমন, শাস্তিও পেয়েছে।

অনেকক্ষণ সাগরের কূলে উদভ্রান্তের মত ঘুরে ঘুরে ফিরে এল আগন্তুক। ক্যাপ্টেনের সামনে এসে মাথা হেঁট করে দাঁড়াল। একটু দ্বিধা করে জিজ্ঞেস করল, আপনারা ইংরেজ, স্যার?

আমেরিকান। জবাব দিলেন ক্যাপ্টেন ।

তাহলে ভালই।

তোমার দেশ কোথায়?

ইংল্যান্ড। বলে আবার চলে গেল আগন্তুক। আরও কিছুক্ষণ ঘুরে ফিরে এসে হার্বার্টকে জিজ্ঞেস করল, কোন মাস চলছে এখন?

নভেম্বর।

সাল?

আঠারোশো ছেষট্টি।

বারো বছর, ঠিক বারো বছর পেরিয়ে গেল, বলেই আবার ছুটে চলে গেল আগন্তুক।

বারোটি বছর একা কাটিয়েছে ও ট্যাবর আইল্যান্ডে। হার্বার্টের কাছে সব কথা শুনে বললেন ক্যাপ্টেন, বদ্ধ পাগল হয়ে যায়নি তাই তো আশ্চর্য!

নিশ্চয়ই কোন গুরতর কুকাজের জন্যে ওকে নির্বাসিত করা হয়েছিল, পেনক্র্যাফট বলল।

ঠিক যাবজ্জীবন দ্বীপান্তর। তবু মুক্তির আশায় বোতলে কাগজ ভরে সাগরে ভাসিয়েছিল সে।

তাহলে অমানুষ হয়ে যাবার আগেই কাগজটা লিখে বোতলে ভরে পানিতে ফেলেছিল সে, স্পিলেট বললেন।

উহ। অতদিন পানিতে থাকলে বোতলের কাগজ নষ্ট হয়ে যেত। একেবারে শুকনো অবস্থায় কাগজটা পেয়েছি আমরা ক্যাপ্টেন, কি বলেন? পেনক্র্যাফট জিজ্ঞেস করল।

চুপ করে থাকলেন ক্যাপ্টেন। জবাব দিতে পারলেন না। তিনি নিজেও বুঝতে পারলেন না বোতলে ভরা কাগজটা এমন শুকনো অবস্থায় নৌকোর গায়ে এসে ভিড়ল কি করে! রহস্যের পর রহস্য ঘটে চলেছে এই আজব দ্বীপে, কিন্তু কোনটারই সমাধান হচ্ছে না।

আবার বোবা হয়ে গেছে আগন্তুক, খানিকটা অ-প্রকৃতিস্থও। চুপচাপ কোথাও বসে থাকে অথবা একা একাই ঘুরে বেড়ায় সাগর তীরে, ঝোপ, জঙ্গলে, পাহাড়ে। শাকসব্জি, ফলমূল খেয়েই কাটায়। রাতের বেলা পাহাড়ের গুহায় শুয়ে থাকে। গ্রানাইট হাউসের ধারে কাছেও আসে না। ক্যাপ্টেনের নির্দেশে ওকে কোনরকম বাধা দিল না অভিযাত্রীরা। একদিন না একদিন ঠিক হয়ে যাবেই ও।

নভেম্বরের দশ তারিখে, সন্ধ্যা আটটায় হঠাৎ প্রসপেক্ট হাইটের বারান্দায় ঝড়ের মত উদয় হলো আগন্তুক। অভিযাত্রীরা তখন বিশ্রাম করছে ওখানে। এসেই চেঁচাতে শুরু করল, জানেন আমি কে? কি অপরাধে নির্বাসিত হয়েছিলাম ট্যাবর আইল্যান্ডে? জানেন আমি চোর-ডাকাত-খুনে কিনা?

আস্তে করে ওর কাছে উঠে এলেন ক্যাপ্টেন। দ্রুত পিছু হটে গেল আগন্তুক, ছোঁবেন না আমাকে। শুধু একটা কথা শুনতে চাই। আমি এখানে স্বাধীন, না বন্দী?

স্বাধীন।

বেশ তাহলে স্বাধীন ভাবেই চলব আমি। এক ছুটে গিয়ে সামনের জঙ্গলে ঢুকে হারিয়ে গেল আগন্তুক।

পেনক্র্যাফট, হার্বার্ট আর নেব ওর পেছন পেছন যেতে চাইল, কিন্তু বাধা দিলেন ক্যাপ্টেন, ওকে যেতে দাও। নিজে নিজেই ফিরে আসবে আবার।

আর ফিরছে না ও, ক্যাপ্টেন, পেনক্র্যাফট বলল।

নিশ্চয়ই ফিরবে, জোর গলায় বললেন ক্যাপ্টেন।

দিন কেটে যাচ্ছে। নিজেদের কাজে ব্যস্ত অভিযাত্রীরা। প্রসপেক্ট হাইটের ওপর একটা উইন্ড মিল তৈরি হলো ক্যাপ্টেনের নির্দেশ মত। হাওয়ার জোরটা এখানে অনেক। ভালই চলবে উইন্ড মিলের পাখা।

মিলটার দরকার ছিল। গমের চাষ শুরু করে দিয়েছিল অভিযাত্রীরা। শীঘ্রিই গম উঠবে। ওই গম ভেঙে আটা করতে হবে। রুটির অভাবও আর থাকছে না ওদের।

সেদিন তেসরা ডিসেম্বর। হ্রদের দক্ষিণ পাড়ে বসে বড়শি দিয়ে মাছ ধরছে হার্বার্ট। পোলট্রি হাউসে কাজ করছে নেব আর পেনক্র্যাফট চিমনিতে বসে স্পিলেটকে নিয়ে সাবানের জন্যে সোডা বানাচ্ছেন ক্যাপ্টেন। হঠাৎ শোনা গেল হার্বার্টের আতঙ্কিত চিৎকার, পেনক্র্যাফট, নেব, জলদি এসো। মেরে ফেলল, মেরে ফেলল আমাকে।

লাফিয়ে উঠে হ্রদের তীরে ছুটল অভিযাত্রীরা। দেখল মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে হার্বার্ট। ওর ওপর ঝাপিয়ে পড়েছে একটা জাগুয়ার! বন্দুক আনতে গ্রানাইট হাউসে ছুটলেন স্পিলেট। বাকি সবাই কি করবে বুঝে উঠতে পারল না। ঠিক এমনি সময় ছুরি হাতে বন থেকে বেরিয়ে এল আগন্তুক। বিদ্যুৎ বেগে ঝাপিয়ে পড়ল জাগুয়ারের ওপর। লোকটার দুঃসাহস দেখে স্তম্ভিত হয়ে গেল সবাই।

বাধা পেয়ে খেপে গেল জাগুয়ার। হার্বার্টকে ছেড়ে ঝাপিয়ে পড়ল এবার আগন্তুকের ওপর। কিন্তু হার্বার্টের মত অসহায় নয় আগন্তুক। ওর হাতের তীক্ষ্ণ ধার ছুরিটা সাপের মত ছোবল মারছে জায়ারের গায়ে। রক্তে মাখামাখি হয়ে গেল মানুষ আর জানোয়ার। শেষ পর্যন্ত ছুরিটা হৃৎপিন্ডে ঢুকে যেতেই মারা পড়ল জাগুয়ারটা।

টলতে টলতে উঠে দাঁড়াল আগন্তুক। অভিযাত্রীদের দিকে কয়েক মুহুর্ত চেয়ে থেকে ঘুরে দাঁড়াল। আবার জঙ্গলে ঢুকতে যাচ্ছে সে। মাটি থেকে উঠে ওর দিকে ছুটে গেল হার্বার্ট। চেঁচিয়ে বলল, যেও না, দোস্ত, আজ তোমাকে আমি কিছুতেই যেতে দেব না।

জাওয়ারের থাবার আঘাতে লোকটার কাধের কাছটায় দারুণ ভাবে চিরে গেছে, দরদর করে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে সেখান থেকে। কিন্তু কেয়ারই করছে না দুর্দান্ত লোকটা। হার্বার্টের ডাকেও থেমে দাঁড়াচ্ছে না। ছুটে গিয়ে ওর পথ আগলে দাঁড়ালেন ক্যাপ্টেন, নিজের জীবন তুচ্ছ করে ছেলেটার জীবন বাঁচিয়েছ তুমি, বন্ধু চিরকৃতজ্ঞ হয়ে রইলাম আমরা তোমার কাছে।

নিজের জীবন তুচ্ছ করেছি? কি দাম আছে আমার জীবনের? ক্যাপ্টেনকে পাল্টা প্রশ্ন করে বসল আগন্তুক।

নিশ্চয়ই আছে। যে মহত্ত তুমি আজ দেখালে তার তুলনা নেই।

কিন্তু কে আপনারা? আমাকে বার বার এমন বন্ধুরূপে গ্রহণ করতে চাইছেন কেন?

সবচেয়ে বড় কথা আমরা মানুষ, তুমিও তাই। আর পরিচয় যদি জানতে চাও তাহলে শোনো—। সবাইকে একে একে পরিচয় করিয়ে দিলেন ক্যাপ্টেন তারপর নিজের পরিচয়ও দিলেন, আমি ক্যাপ্টেন সাইরাস হার্ডিং।

কোন সাইরাস হার্ডিং? বিখ্যাত সেই এঞ্জিনিয়ার-যার নাম শোনেনি এমন লোক খুব কমই আছে? বিস্মিত কণ্ঠে জানতে চাইল আগন্তুক।

হ্যাঁ, উনিই সেই এঞ্জিনিয়ার। ক্যাপ্টেনের হয়ে উত্তর দিলেন স্পিলেট। এবার বলো তো, কে তুমি? প্রশ্ন করলেন ক্যাপ্টেন।

আমাকে মাফ করুন, ক্যাপ্টেন। কোথায় আপনারা, আর কোথায় আমি! শুধু এটুকু জেনে রাখুন আমি একজন পাপী, মহাপাপী।

আগের পর্ব :
০১. ওপরে কি উঠছি আমরা
০২. গৃহযুদ্ধের তান্ডবলীলা চলছে
০৩. কোথায় গেলেন ক্যাপ্টেন
০৪. বিকেল নাগাদ নদীর জল কমে গিয়ে
০৫. চেঁচিয়ে বললেন স্পিলেট
০৬. বেলুন থেকে নামার পর
০৭. সকাল থেকে কোথাও পাওয়া গেল না নেবকে
০৮. ওরা ঢুকলেও ফিরে চাইল না নেব
০৯. হতবুদ্ধি হয়ে দাঁড়িয়ে রইল পেনক্র্যাফট
১০. ধোঁয়া, মানে আগুন
১১. ভোর হলো
১২. পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই
১৩. পরদিন সকালে খাওয়া-দাওয়ার পর
১৪. মাপজোকের কাজ শুরু করলেন ক্যাপ্টেন
১৫. গহ্বরের মুখ
১৬. জুনের শুরুতেই শীত নামল
১৭. যেন ভূত দেখছে এমন ভাবে
১৮. জাহাজডুবি হয়ে সত্যিই কেউ দ্বীপে উঠেছে কিনা
১৯. দ্বীপের দক্ষিণ তীর ঘেঁষে চলা শুরু হলো
২০. একটু দূরে জঙ্গলের ধারে
২১. মার্চের আরম্ভেই শুরু হলো ঝড় বৃষ্টি
২২. আবার এল শীত
২৩. এখনও কি বাধা দেবেন
পরের পর্ব :
২৫. জঙ্গলে আর ফিরে গেল না আগন্তুক
২৬. ভোর হতেই খোঁয়াড়ের দিকে রওনা দিল
২৭. এখনও প্রায় বিশ মাইল দূরে জাহাজটা
২৮. চোখের সামনে ভোজবাজীর মত
২৯. আস্তে আস্তে সেরে উঠতে লাগল হার্বার্ট
৩০. ফ্রাঙ্কলিন হিলের কোন গুহায়
৩১. জাহাজের খোল তৈরির কাজ
৩২. ধীরে ধীরে চোখ মেলে তাকালেন ক্যাপ্টেন নিমো
৩৩. সুড়ঙ্গ মুখে পৌঁছতে পৌঁছতে

গল্পের বিষয়:
অনুবাদ
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত