রহস্যের দ্বীপ: ২৩. এখনও কি বাধা দেবেন

রহস্যের দ্বীপ: ২৩. এখনও কি বাধা দেবেন

২৩. এখনও কি বাধা দেবেন

এখনও কি বাধা দেবেন, ক্যাপ্টেন? মাত্র দেড়শো মাইল দূরে আটকে আছে একজন হতভাগ্য লোক। সুযোগ পেয়ে বলল পেনক্র্যাফট।

কালকেই যাচ্ছ তুমি, পেনক্র্যাফট। কাগজের টুকরোটা উল্টেপাল্টে দেখলেন ক্যাপ্টেন, মনে হচ্ছে নির্বাসিত লোকটা নৌবিদ্যায় পারদর্শী। ট্যাবর দ্বীপের অবস্থান সম্পর্কে আমাদের সাথে ওর হিসেব মিলে যাচ্ছে। যদ্দর মনে হয় ইংরেজ বা আমেরিকান লোকটা, নইলে ইংরেজিতে চিঠি লিখত না।

সিন্দুকের ব্যাপারটা এবার পরিষ্কার হলো। ট্যাবর দ্বীপের ধারে কাছেই ডুবেছিল তাহলে সিন্দুকবাহী জাহাজটা! বললেন স্পিলেট।

লোকটার কপাল ভাল বলতে হবে, নাহলে একেবারে বন অ্যাডভেঞ্চারের যাত্রাপথেই বোতলটা পৌঁছল কেন? বলল হার্বাট।

তাই তো, ঠিক এখানেই এল কেন বোতলটা? প্রশ্নটা খপ করে বিধল ক্যাপ্টেনের মনে। এও এ দ্বীপের আরেক রহস্য নয়তো?

যাবার কথা ছিল দুজনের-পেনক্র্যাফট আর হার্বার্ট। কিন্তু প্রতিবাদ করে বসলেন স্পিলেট। তার কথা হলো, সাংবাদিক হয়ে জাহাজডুবির ব্যাপারটা নিজের চোখে দেখবেন না, তা কি হতে পারে? কাজেই রাজি হতে হলো ক্যাপ্টেনকে।

এগারোই অক্টোবর সকালে লিঙ্কন দ্বীপের পতাকা উড়িয়ে রওনা দিল বন অ্যাডভেঞ্চার। প্রচুর পরিমাণে খাবার আর পানীয় সাথে নেয়া হয়েছে। চিন্তার কিছু নেই। গ্রানাইট হাউসের চূড়োয় দাঁড়িয়ে ওদেরকে বিদায় জানালেন ক্যাপ্টেন আর নেব।

দেখতে দেখতে অদৃশ্য হয়ে গেল গ্রানাইট হাউস। দূর থেকে লিঙ্কন দ্বীপকে একটা সবুজে ছাওয়া ঝুড়ির মত লাগল। ঝুড়িটার ওপর থেকে বেরিয়ে আছে ফ্র্যাঙ্কলিন হিল। বিকেল নাগাদ দিগন্তের ওপারে হারিয়ে গেল দ্বীপটা।

সবচেয়ে খুশি পেনক্র্যাফট। বহুদিন পর সে আবার নৌকো ভাসিয়ে দূর সাগরে এসেছে। ঝিরঝিরে বাতাসে ঢেউয়ের মাথায় নাচতে নাচতে এগিয়ে চলেছে বন অ্যাডভেঞ্চার। মাঝে মাঝে পেনক্র্যাফটকে সরিয়ে হাল ধরছে হার্বার্ট। ক্রমে রাতের আঁধার ঘনিয়ে এল সাগরের বুকে। নক্ষত্র আর কম্পাস দেখে দিক নির্ণয় করে নৌকা চালাচ্ছে পেনক্র্যাফট। খুবই আনন্দে কাটল ওদের সারাটা রাত। ভোর হলো এক সময়। দিনটাও ভালভাবেই কাটল। বিকেলে হিসেব করে দেখা গেল লিঙ্কন দ্বীপ থেকে একশো বিশ মাইল পথ পেরিয়ে এসেছে ওরা। এভাবে চললে আগামী কাল ভোরেই পৌঁছে যাবে ট্যাবর আইল্যান্ডে। প্রচন্ড উত্তেজনায় কারও চোখেই ঘুম এল সে রাতে। ভোর ছটায় দিগন্তে ভেসে উঠল একটা দ্বীপ।

ওটাই ট্যাবর আইল্যান্ড! বলল পেনক্র্যাফট।

বেলা এগারোটায় ট্যাবর আইল্যান্ড থেকে মাইল ছয়েক দৃরে এসে পৌঁছল বন অ্যাডভেঞ্চার। এবার খুব সাবধানে নৌকো চালাতে লাগল পেনক্র্যাফট। সাগর এখানে অজানা, পানির নিচে ডুবো পাহাড় থাকলে আর তাতে ধাক্কা লাগলেই হয়েছে। ভেঙে গুঁড়িয়ে যাবে নৌকোর তলা।

দুপুর বারোটায় ট্যাবর আইল্যান্ডের তীরে নোঙর ফেলল বন-অ্যাডভেঞ্চার। ডাঙায় লাফিয়ে নামল তিন অভিযাত্রী। প্রথমেই দ্বীপের গঠন প্রকৃতি সম্বন্ধে একটা মোটামুটি ধারণা দরকার। প্রায় আধ মাইল দূরে একটা শতিনেক ফুট উঁচু ছোট্ট পাহাড়। সেদিকেই রওনা হলো তিনজনে। অল্পক্ষণেই পৌঁছে গেল পাহাড়টার কাছে এদিক ওদিক একনজর দেখে নিয়ে উঠে পড়ল চূড়ায়। এখান থেকে পরিষ্কার দেখা গেল দ্বীপটা। বড় জোর মাইল ছয়েক হবে দ্বীপটার পরিধি আকারটা ডিমের মত। মাঝে মাঝে ঘন জঙ্গলে ছাওয়া দ্বীপটায় লিঙ্কন দ্বীপের মত চড়াই উৎরাই নেই।

পাহাড় থেকে নেমে দ্বীপটা ঘুরে দেখতে লাগল অভিযাত্রীরা। সমুদ্রের ধার ধরে পুরো দ্বীপটা একপাক ঘুরে আসতে চার ঘণ্টা লেগে গেল। ওদের দেখে ডানা ঝাপটে উড়ে পালাল পাখির দল, সাগরে ঝাঁপিয়ে পড়ে পানিতে ডুব দিল সীলেরা। পরিষ্কার বোঝা গেল, আগেই মানুষের সাথে সাক্ষাৎ ঘটেছে ওদের। কিন্তু মানুষ কই? তবে কি অন্য কোথাও চলে গেছে আটকা পড়া লোকটা? নাকি মরে গেছে? বোতলের কাগজে কোন তারিখ লেখা ছিল না। কতদিন বোতলটা পানিতে ভেসেছে কে জানে।

বন-অ্যাডভেঞ্চারে ফিরে দুপুরের খাওয়া সারল অভিযাত্রীরা। বিকেল পাঁচটা নাগাদ আবার বেরিয়ে পড়ল। এক জায়গায় চরে বেড়াচ্ছিল কতগুলো ছাগল আর শুয়োর, অভিযাত্রীদের দেখেই দৌড়ে পালিয়ে গেল। জঙ্গলের ভেতর পায়ে-চলা পথের সন্ধানও পাওয়া গেল। রাস্তার পাশেই এক জায়গায় একটা কাটা গাছ পড়ে আছে। দেখেই বোঝা যায় কুড়ালে কাটা। জঙ্গলের বুক চিরে কোণাকোণি ভাবে। দ্বীপের ভেতর ঢুকে গেছে রাস্তাটা। এ রাস্তা ধরেই হাঁটতে লাগল অভিযাত্রীরা। মাঝে মাঝে দুএক জায়গায় বাঁধা কপি আর টার্নিপের চাষ করেছিল কেউ, কিন্তু এখন তা অযত্নে পড়ে আছে।

খেতের যা অবস্থা, দেখে মনে হচ্ছে এখন আর দ্বীপে কেউ থাকে না, চলতে চলতে বললেন স্পিলেট।

ঠিক, বলল পেনক্র্যাফট, বহু আগেই দ্বীপ ছেড়ে চলে গেছে লোকটা। বোতলটা সাগরের পানিতে ভাসতে ভাসতে আমাদের হাতে পৌঁছেছে অনেক পরে।

সাঁঝ ঘনিয়ে এসেছে। আর জঙ্গলে থাকা উচিত নয় ভেবে ফেরার কথা ভাবছে সবাই, হঠাৎ হার্বার্ট বলল, আরে! দেখুন, দেখুন, একটা কুঁড়েঘর দেখা যাচ্ছে না?

তাই তো! বলল পেনক্র্যাফট। সাথে সাথেই সেদিকে ছুটল সবাই। কাঠের তক্তা দিয়ে ঘেরা কুঁড়েটা, তেরপলের ছাউনি দিয়ে চাল বানানো হয়েছে। আধ ভেজানো দরজায় ঠেলা মেরে ভেতরে ঢুকল পেনক্র্যাফট। খা খা করছে কুঁড়ের ভেতর। শূন্য কুটির।

অন্ধকারে ভূতের মত চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল পেনক্র্যাফট, হার্বার্ট আর স্পিলেট চেঁচিয়ে ডেকেও কারও সাড়া না পেয়ে আগুন জ্বালল পেনক্র্যাফট। ঘরে মানুষ থাকার সমস্ত চিহ্ন বর্তমান। এক পাশে আগুন পোহানোর চুল্লী। হলদেটে চাঁদর পাতা স্যাঁতসেতে বিছানা, দেখেই বোঝা যায় বহুদিন কেউ শোয়নি এখানে। দুটো মরচে ধরা কেটলি পড়ে আছে চুন্নীর একপাশে, অন্য পাশে কিছু কয়লা আর কাঠ। ময়লা, ছেড়া একটা নাবিকের পোশাক পড়ে আছে তাকের ওপর। টেবিলের ওপর টিনের প্লেট আর বাইবেল। এক কোণে কিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, দুটো বন্দুক-একটা ভাঙা, এক পিপা বারুদ, কার্তুজ আর ছররাও পড়ে আছে সবই পুরু ধুলোর স্তরে ঢাকা।

বহুদিন ধরেই ঘরটা খালি, পেনক্র্যাফট বলল, রাতটা এ ঘরেই কাটিয়ে দেয়া যাক, কি বলেন, মিস্টার স্পিলেট?

সেই ভাল। ফিরে এলে আমাদের দেখা পেয়ে যাবে লোকটা।

থাকলে তো ফিরবে।

লোকটা দ্বীপে নেই বলতে চাও? জাহাজডুবি হওয়া অসহায় নাবিকের কাছে ওই সব যন্ত্রপাতি, বন্দুক আর কার্তুজের দাম অনেক, ফেলে যেত না সে ওগুলো জীবিত হোক, মৃত হোক এখনও এ-দ্বীপেই আছে সে।

কিন্তু সে রাতে ফিরল না লোকটা। ভোর হতেই ওর মৃতদেহ খুঁজতে বেরোল অভিযাত্রীরা, কঙ্কালটা পেলেও কবর দিয়ে যাবে। সুন্দর জায়গায় তৈরি করা হয়েছে কুঁড়েঘরটা। সামনে মাঠ, দূরে সাগর, বাঁ দিকে নদীর মুখ, ডানপাশে জঙ্গল আর পেছনে ছবির মত দাঁড়িয়ে আছে ছোট্ট পাহাড়। বাড়ির সামনের খানিকটা জায়গা বেড়া দিয়ে ঘেরা ছিল এককালে, এখন তা জীর্ণ। রাতের বেলা অত খেয়াল করেনি ওরা, কিন্তু এখন দেখল কোন জাহাজের তক্তা দিয়ে তৈরি হয়েছে কুঁড়েটা। হঠাৎ কাঠের একজায়গায় একটা অস্পষ্ট ইংরেজি শব্দ দেখলেন স্পিলেট। শব্দটার মাঝখানে কয়েকটা অক্ষর মুছে গেছে। যেটুকু পড়া যায় তা হলো Br-tan-a. কি হতে পারে শব্দটার মানে? নানাভাবে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ভাবতে লাগলেন স্পিলেট। আচ্ছা BT এর পরে যদি i আর tan এর পরে in হয় তাহলে দাঁড়ায়? Britannia! হ্যাঁ, তাই হবে শব্দটা। জাহাজটার নাম।

দুপুর নাগাদ দ্বীপের অর্ধেকটা খোঁজা হয়ে গেল। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন মরা মানুষের চিহ্ন পাওয়া গেল না। ক্লান্ত হয়ে একটা গাছ তলায় বিশ্রাম করতে বসল অভিযাত্রীরা।

চলো, কালই ফিরে যাই আমরা, বললেন স্পিলেট! খেত থেকে কিছু বাঁধা কপি আর মুলার বিচি তুলে নাও, লিঙ্কন দ্বীপে জন্মানো যাবে।

প্রায় ঘণ্টাখানেক পর ঝোপের ভেতর তাড়া করে দুটো শুয়োরকে প্রায় কায়দা করে এনেছেন স্পিলেট আর পেন্যাফট, এমন সময় উত্তর দিক থেকে ভেসে এল হার্বার্টের চিৎকার, সেই সাথে কলজে কাপানো অমানুষিক হুঙ্কার। ঝোপঝাড় টপকে ঝড়ের বেগে সেদিকে ছুটলেন স্পিলেট আর পেনক্র্যাফট। খোলা মাঠে পৌঁছে দেখা গেল মাটিতে চিৎ হয়ে পড়ে আছে হার্বার্ট। বুকের ওপর চেপে বসেছে একটা ভয়ঙ্কর দর্শন জংলী সর্বনাশ! জংলী আছে নাকি দ্বীপে?

লাফ দিয়ে গিয়ে জংলীটার দুহাত চেপে ধরল পেনক্র্যাফট আর স্পিলেট বেশ কিছুক্ষণ ধস্তাধস্তির পর কাবু হলো জংলীটা। শক্ত করে ওর হাত-পা পিছমোড়া করে বাঁধা হলো। হাঁপাতে হাঁপাতে উঠে দাঁড়াল হার্বার্ট ।

এ লোকটাকেই খুঁজছি বোধহয় আমরা! পেনক্র্যাফট বলল।

হ্যাঁ, কিন্তু ও আর এখন লোক নেই। চেহারা আর স্বভাবে একেবারে পশু হয়ে গেছে, বললেন স্পিলেট।

লম্বা লম্বা চুল-দাড়িতে ঢেকে গেছে লোকটার চেহারা। হাত-পায়ে বহুদিনের না কাটা নখ। ময়লা দাঁত বের করে মাঝে মাঝেই রুদ্ধ আক্রোশে গজরাচ্ছে লোকটা। এককালে যে ও মানুষ ছিল তাও বোধ হয় ভুলে গেছে। কিছু কথা জিজ্ঞেস করলেন ওকে স্পিলেট। কিন্তু শুধু ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে থাকল লোকটা, কথা বলল না। স্মৃতিভ্রষ্ট হয়েছে কিনা কে জানে!

লিঙ্কন দ্বীপে নিয়ে যেতে হবে ওকে, বললেন স্পিলেট।

সেবাযত্ন করলে ভাল হয়ে উঠতে পারে, সায় দিল হার্বার্ট।

পায়ের বাঁধন খুলে দিতেই উঠে দাঁড়াল লোকটা। পালাবার চেষ্টা করল না। হাঁটতে বলতেই অভিযাত্রীদের সাথে চলতে শুরু করল সে। মাঝে মাঝে চকিত দৃষ্টিতে চাইছে ওদের দিকে। প্রথমেই কুঁড়েয় নিয়ে যাওয়া হলো ওকে। কুঁড়েটা আর ভেতরের জিনিসপত্র দেখেও ভাবান্তর হলো না ওর। এর পর বন অ্যাডভেঞ্চারে নিয়ে যাওয়া হলো ওকে। লোকটাকে পেনক্র্যাফটের পাহারায় রেখে নৌকো থেকে নেমে এল হার্বার্ট আর স্পিলেট। কপি আর মুলোর বীজ সংগ্রহ করতে হবে

শেষ পর্যন্ত ফাঁদে ফেলে দুটো শুয়োরকে ধরতে পারল হার্বার্ট আর স্পিলেট।ব ীজ জোগাড় করে শুয়োর দুটোকে নিয়ে নৌকোয় ফিরে এল ওরা। কুঁড়ে থেকে বন্দুক আর গোলাবারুদগুলো নিতেও ভুলল না।

চুপচাপ আগের জায়গাতেই বসে আছে নির্বাসিত লোকটা। ওদেরকে দেখেও দেখল না। রান্না করা খাবার সাধা হলো, হাত দিয়ে ঠেলে সরিয়ে দিল বাসন। কি মনে হতে একটা হাঁস জবাই করে কাঁচাই ওর সামনে বাড়িয়ে ধরলেন স্পিলেট। থাবা মেরে হাঁসটা ছিনিয়ে নিল লোকটা। পালকগুলো ছাড়িয়ে নিয়ে কামড় বসাল কাচা মাংসে।

ব্যাটা গেছে! ওটাকে আর মানুষ করা যাবে না। আফসোস করল পেনক্র্যাফট।

রাতটা নিরাপদেই কাটল। ভোরবেলাও একই জায়গায় বসে চুপচাপ সাগরের দিকে চেয়ে আছে লোকটা। রাতে ঘুমিয়েছে কিনা কে জানে।

সেদিন পনেরোই অক্টোবর। সকাল হতেই লিঙ্কন দ্বীপের উদ্দেশে রওনা দিল বন-অ্যাডভেঞ্চার। একটু যেন ঘাবড়ে গেল লোকটা। উঠে দাঁড়িয়ে একটু হাঁটতে গিয়েও আবার বসে পড়ল আগের জায়গায়।

ষোলোই অক্টোবর বাতাসের বেগ বেড়ে গেল। চিন্তিত হলো পেনক্র্যাফট।

সতেরোই অক্টোবর। ওরা রওনা দেবার পর আটচল্লিশ ঘটা পেরিয়ে গেছে কিন্তু লিঙ্কন দ্বীপের দেখা মিলল না।

আঠারোই অক্টোবরেও দ্বীপের দেখা নেই! আরও বেড়েছে হাওয়ার জোর ফুঁসে উঠছে সাগর মাঝে মাঝেই নৌকোর ওপর আছড়ে পড়ছে বিশাল ঢেউ। সতর্ক হলো অভিযাত্রীরা। কোমরে দড়ি বেঁধে দড়ির আরেক মাথা ডেকের সাথে বেঁধে রাখল। নাহলে যে কোন সময় ঢেউয়ের ঝাপটায় ছিটকে সাগরে পড়ার আশঙ্কা আছে। ক্রমেই ভেঙে পড়া ঢেউয়ের পানি জমা হচ্ছে কার্নিস ঘেরা ডেকে। হঠাৎ একটা অদ্ভুত কান্ড করে বসল লোকটা। উঠে গিয়ে কুড়াল দিয়ে কার্নিসের একজায়গায় ভেঙে দিল। সাথেসাথে বেরিয়ে গেল পানি। এবার আর পানি জমা হতে পারছে না ডেকে। ওর কান্ড দেখে অভিযাত্রীরা অবাক।

তার পরদিনও লিঙ্কন দ্বীপের দেখা মিলল না। পরিষ্কার বুঝল ওরা—পথ হারিয়েছে। রাত নামতেই ভাবনা বেড়ে গেল। এগারোটা নাগাদ আস্তে আস্তে কমে এল হাওয়ার গতি, শান্ত হলো সাগর। কিন্তু ঘুম এল না কারও চোখে লিঙ্কন দ্বীপে আর ফিরতে পারবে কিনা কে জানে!

এগিয়েই চলেছে বন-অ্যাডভেঞ্চার। ছল-ছল-ছলাৎ করে নৌকোর গায়ে চাপড় পড়ছে ঢেউয়ের। হঠাৎ নিশাচর পাখির দূরাগত আওয়াজে চমকে মুখ তুলে চাইল পেনক্র্যাফট। হাল ধরে বসে ছিল সে। রাতের বেলা তো দূর সাগরে উড়ে বেড়ায় নিশাচর পাখি! ভাল করে এদিক ওদিক চেয়েই চেঁচিয়ে উঠল সে, আলো, আলো দেখা যাচ্ছে!

কোথায়! কোথায় আলো? সমস্বরে জানতে চাইল হার্বার্ট আর স্পিলেট।

হাত তুলে দেখাল পেনক্র্যাফট। উত্তর-পূবে মাইল বিশেক দূরে একটা উজ্জ্বল নীলচে সাদা আলো থেকে থেকেই ঝিকিয়ে উঠছে। এ কিসের আলো? দেখেতো মনে হয় ইলেকট্রিক টর্চ জ্বালাচ্ছে কেউ। আশ্চর্য! তবু ওদিকেই নৌকো চালাল পেনক্র্যাফট। ভোর হতেই দিগন্তে দ্বীপের সীমারেখা দেখা গেল। লিঙ্কন দ্বীপ।

আগের পর্ব :
০১. ওপরে কি উঠছি আমরা
০২. গৃহযুদ্ধের তান্ডবলীলা চলছে
০৩. কোথায় গেলেন ক্যাপ্টেন
০৪. বিকেল নাগাদ নদীর জল কমে গিয়ে
০৫. চেঁচিয়ে বললেন স্পিলেট
০৬. বেলুন থেকে নামার পর
০৭. সকাল থেকে কোথাও পাওয়া গেল না নেবকে
০৮. ওরা ঢুকলেও ফিরে চাইল না নেব
০৯. হতবুদ্ধি হয়ে দাঁড়িয়ে রইল পেনক্র্যাফট
১০. ধোঁয়া, মানে আগুন
১১. ভোর হলো
১২. পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই
১৩. পরদিন সকালে খাওয়া-দাওয়ার পর
১৪. মাপজোকের কাজ শুরু করলেন ক্যাপ্টেন
১৫. গহ্বরের মুখ
১৬. জুনের শুরুতেই শীত নামল
১৭. যেন ভূত দেখছে এমন ভাবে
১৮. জাহাজডুবি হয়ে সত্যিই কেউ দ্বীপে উঠেছে কিনা
১৯. দ্বীপের দক্ষিণ তীর ঘেঁষে চলা শুরু হলো
২০. একটু দূরে জঙ্গলের ধারে
২১. মার্চের আরম্ভেই শুরু হলো ঝড় বৃষ্টি
২২. আবার এল শীত
পরের পর্ব :
২৪. মার্সি নদীর মুখে এসে
২৫. জঙ্গলে আর ফিরে গেল না আগন্তুক
২৬. ভোর হতেই খোঁয়াড়ের দিকে রওনা দিল
২৭. এখনও প্রায় বিশ মাইল দূরে জাহাজটা
২৮. চোখের সামনে ভোজবাজীর মত
২৯. আস্তে আস্তে সেরে উঠতে লাগল হার্বার্ট
৩০. ফ্রাঙ্কলিন হিলের কোন গুহায়
৩১. জাহাজের খোল তৈরির কাজ
৩২. ধীরে ধীরে চোখ মেলে তাকালেন ক্যাপ্টেন নিমো
৩৩. সুড়ঙ্গ মুখে পৌঁছতে পৌঁছতে

গল্পের বিষয়:
অনুবাদ
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত