রহস্যের দ্বীপ: ১১. ভোর হলো

রহস্যের দ্বীপ: ১১. ভোর হলো

১১. ভোর হলো

ভোর হলো। তিরিশে মার্চ সেদিন। এটা দ্বীপ কিনা দিনের আলোয় ভালমত যাচাই করার জন্যে লাভার সিঁড়ি বেয়ে উঠতে শুরু করল অভিযাত্রীরা। যদিও তারা জানে, ভুল হতে পারে না ক্যাপ্টেন সাইরাস হার্ডিং-এর।

দিনের আলোয় পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে পঞ্চাশ মাইল পর্যন্ত পরিষ্কার দেখা গেল। ওদিকের কোথাও মাটির চিহ্নমাত্র নেই। দিগন্তের যদ্দূর চোখ যায় শুধু পানি আর পানি। অতিকায় তিমির মত পানির মাঝখানে গা ভাসিয়ে পড়ে আছে দ্বীপটা।

দমে গেল সবাই।

একশো মাইলের মত পরিধি দ্বীপটার। খুঁটিয়ে দেখে একটা ব্যাপার পরিষ্কার হলো সবার কাছে, দ্বীপটা মনুষ্যবসতিহীন। তবে আশপাশের কোন দ্বীপ থেকে নৌকোয় চেপে হানা দিয়ে বসতে পারে জংলীরা। পঞ্চাশ মাইলের ভেতর আর কোন দ্বীপের চিহ্ন দেখা না গেলেও আশঙ্কাটা থেকেই যাচ্ছে। দৃষ্টিসীমার বাইরে দ্বীপ নেই একথা হলপ করে বলা যায় না।

সময় নষ্ট করতে রাজি নন গিডিয়ন স্পিলেট নোট বই বের করে দ্বীপটার একটা ম্যাপ একে ফেললেন।

একটা প্রস্তাব আছে আমার, বললেন ক্যাপ্টেন। জাহাজ রুটের বাইরে দ্বীপটা। সভ্যজগতে কোনদিন ফিরে যেতে পারব কিনা কে জানে! সুতরাং দ্বীপের পাহাড়-জঙ্গল, নদী, উপসাগর, আর অন্তরীপগুলোর নামকরণ করে ফেলতে চাই।

রাজি হয়ে গেল সবাই। পেনক্র্যাফটই বলল প্রথমে, এ দ্বীপে প্রথম নামকরণ হয়েছে চিমনি গুহার। এ নামটাই বহাল থাকুক। আপত্তি আছে কারও?

কেউই আপত্তি করল না। এর পরের নামকরণগুলোর বেশির ভাগই আমেরিকার বিখ্যাত জায়গার নামানুসারে করা হলো। কারণ অভিযাত্রীরা সবাই আমেরিকান। নেবের বাড়ি আফ্রিকায় হলেও এখন সে আমেরিকার অধিবাসী।

উপসাগর দুটোর একটার নাম রাখা হলো ইউনিয়ন বে অন্যটা ওয়াশিংটন বে। পাহাড়টার নাম ফ্র্যাঙ্কলিন হিল। দ্বীপের দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তে কুমীরের লেজের মত বেরিয়ে থাকা উপদ্বীপটার নাম সার্পেন্টাইন পেনিনসুলা। দ্বীপের আরেক প্রান্তের উপসাগরটা দেখলেই মনে হয় দুঠোঁট ফাক করে হাঁ হয়ে আছে একটা হাঙর। কাজেই ওটার নাম রাখা হলো শার্ক গালফ। শার্ক গালফের দুটি অন্তরীপ। একটির নাম নর্থ ম্যান্ডিবল কেপ অন্যটি সাউথ ম্যান্ডিবল কেপ। বিশাল হ্রদটার নাম রাখা হলো লেক গ্র্যান্ট। সমুদ্রসমতল থেকে লেকটা শতিনেক ফুট উঁচুতে।

চিমনি গুহাটা গ্রানাইট পাহাড়ের গোড়ায়। পাহাড়টার চূড়ায় সমতল জায়গা আছে খানিকটা। সেখানে দাঁড়িয়ে পরিষ্কার দেখা যায় সবকটা উপসাগর; কাজেই জায়গাটার নাম হলো প্রসপেক্ট হাইট অর্থাৎ খুঁটিয়ে দেখার বেদী। বেলুন যে নদীটার কাছে নেমে এসেছিল তার নাম রাখা হলো মার্সী রিভার অর্থাৎ করুণা নদী। দক্ষিণ-পূবের দ্বীপের প্রান্তটার নাম ক্ল কেপ। ওদিকে তাকালে মনে হয় সাগরের কিনারে থাবা মেলে বসে আছে পাহাড়ী অঞ্চলটা, এজন্যেই জায়গাটাকে এ নামে ভূষিত করা হলো। প্রথম যে ছোট্ট দ্বীপটায় বেলুন থেকে লাফিয়ে নেমেছিল অভিযাত্রীরা তার নাম সেফটি আইল্যান্ড। আর পুরো দ্বীপটার নাম রাখা হলো আমেরিকার ততকালীন প্রেসিডেন্টের নামে।

সেদিন ছিল আঠারোশো পঁয়ষট্টি সালের তিরিশে মার্চ। এর মাত্র ষোলো দিন পরে গুড ফ্রাইডের দিন গুপ্তঘাতকের গুলিতে মারা গেলেন আব্রাহাম লিঙ্কন।

কিন্তু সেটা জানার কথা নয় লিঙ্কন আইল্যান্ডের অভিযাত্রীদের।

আগের পর্ব :
০১. ওপরে কি উঠছি আমরা
০২. গৃহযুদ্ধের তান্ডবলীলা চলছে
০৩. কোথায় গেলেন ক্যাপ্টেন
০৪. বিকেল নাগাদ নদীর জল কমে গিয়ে
০৫. চেঁচিয়ে বললেন স্পিলেট
০৬. বেলুন থেকে নামার পর
০৭. সকাল থেকে কোথাও পাওয়া গেল না নেবকে
০৮. ওরা ঢুকলেও ফিরে চাইল না নেব
০৯. হতবুদ্ধি হয়ে দাঁড়িয়ে রইল পেনক্র্যাফট
১০. ধোঁয়া, মানে আগুন
পরের পর্ব :
১২. পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই
১৩. পরদিন সকালে খাওয়া-দাওয়ার পর
১৪. মাপজোকের কাজ শুরু করলেন ক্যাপ্টেন
১৫. গহ্বরের মুখ
১৬. জুনের শুরুতেই শীত নামল
১৭. যেন ভূত দেখছে এমন ভাবে
১৮. জাহাজডুবি হয়ে সত্যিই কেউ দ্বীপে উঠেছে কিনা
১৯. দ্বীপের দক্ষিণ তীর ঘেঁষে চলা শুরু হলো
২০. একটু দূরে জঙ্গলের ধারে
২১. মার্চের আরম্ভেই শুরু হলো ঝড় বৃষ্টি
২২. আবার এল শীত
২৩. এখনও কি বাধা দেবেন
২৪. মার্সি নদীর মুখে এসে
২৫. জঙ্গলে আর ফিরে গেল না আগন্তুক
২৬. ভোর হতেই খোঁয়াড়ের দিকে রওনা দিল
২৭. এখনও প্রায় বিশ মাইল দূরে জাহাজটা
২৮. চোখের সামনে ভোজবাজীর মত
২৯. আস্তে আস্তে সেরে উঠতে লাগল হার্বার্ট
৩০. ফ্রাঙ্কলিন হিলের কোন গুহায়
৩১. জাহাজের খোল তৈরির কাজ
৩২. ধীরে ধীরে চোখ মেলে তাকালেন ক্যাপ্টেন নিমো
৩৩. সুড়ঙ্গ মুখে পৌঁছতে পৌঁছতে

গল্পের বিষয়:
অনুবাদ
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত