রহস্যের দ্বীপ: ০৯. হতবুদ্ধি হয়ে দাঁড়িয়ে রইল পেনক্র্যাফট

রহস্যের দ্বীপ: ০৯. হতবুদ্ধি হয়ে দাঁড়িয়ে রইল পেনক্র্যাফট

০৯. হতবুদ্ধি হয়ে দাঁড়িয়ে রইল পেনক্র্যাফট

হতবুদ্ধি হয়ে দাঁড়িয়ে রইল পেনক্র্যাফট। কিন্তু আগুন নিভে যাওয়ায় আর কেউ ততটা মাথা ঘামাল না। হার্বার্ট অবশ্য একটু ঘাবড়ে গেল। সান্ত্বনার সুরে স্পিলেট বললেন, অত ভাবনার কি আছে, পেনক্র্যাফট ? ক্যাপ্টেন যখন বেঁচে আছেন আগুনের অভাব হবে না।

হবে না? তা, আগুনটা আসবে কোত্থেকে?

জানি না, তবে আগুন জ্বলবে।

চুপ করে গেল পেনক্র্যাফট। ভাবল, আর সবাই যখন এ নিয়ে ভাবছে না তখন ও একা ভেবে আর কি লাভ?

গুহার ভেতর একটা অপেক্ষাকৃত শুকনো জায়গায় সামুদ্রিক গুল্ম আর ঘাস পাতা বিছিয়ে বিছানা তৈরি করে তাতে শোয়ানো হলো ঘুমন্ত ক্যাপ্টেনকে। ঘুম এখন তার দরকার।

রাত নামতেই শীতের প্রকোপও বাড়ল। নিজেদের কোট, ওভারকোট গা থেকে খুলে নিয়ে ক্যাপ্টেনকে ঢেকে দিল অভিযাত্রীরা। ঝড়ের ধাক্কায় চিমনি গুহার গা থেকে অনেকগুলো পাথর খুলে পড়ে গিয়ে ফোকরের মত হয়ে গেছে। হু হু করে কনকনে ঠান্ডা হাওয়া ঢুকছে সে সব ফোকর দিয়ে। শুকনো শ্যাওলা জড়ো করে পাথর ঠুকে আগুন জ্বালাতে চেষ্টা করল পেনক্র্যাফট। কাজ হলো না। কাঠে কাঠ ঘষে নাকি আগুন জ্বালায় কোন কোন দেশের অসভ্য লোকেরা। কাজেই নেব আর পেনক্র্যাফট দুটো করে কাঠ নিয়ে ঘষতে শুরু করল এই প্রচন্ড ঠান্ডায়ও দর দর করে ঘামতে লাগল দুজন কিন্তু আগুন জ্বলল না। খানিক চেষ্টার পর বিরক্ত হয়ে দুজনেই ছুঁড়ে ফেলে দিল কাঠের টুকরো।

জংলীরা কাঠে কাঠ ঘষে আগুন জ্বালে ঠিকই, কিন্তু তারা জানে কোন কাঠে ঘষতে হয় কোন কাঠ। সব কাঠ ঘষলেই আগুন জ্বলে না। ফেলে দেয়া দুটো কাঠের টুকরো নিয়ে এবার ঘষতে শুরু করল হার্বার্ট। শব্দ করে হেসে ফেললো পেনক্র্যাফট। হার্বার্ট ও হাসল। বলল, আগুন জ্বালাবার জন্যে ঘষছি না আমি, পেনক্র্যাফট। এভাবে পরিশ্রম করলে আর কিছু না হোক গা তো গরম হবে।

আরও গভীর হলো রাত। চুপচাপ ওদের কান্ডকারখানা দেখছিলেন স্পিলেট। এবার লম্বা করে হাই তুলে চিৎ হয়ে শুয়ে পড়লেন বালির ওপর। একটু পর বাকি তিনজনও শুয়ে পড়ল। গুহার মুখের কাছে শুয়ে পাহারা দিতে থাকল টপ।

পরদিন সকাল আটটায় ঘুম ভাঙল ক্যাপ্টেনের। সঙ্গীরা তাঁকে ঘিরে বসে আছে চোখ খুলে আগের দিনের মতই জানতে চাইলেন তিনি, দ্বীপ, না মহাদেশ?

এখনও জানি না, ক্যাপ্টেন। উত্তর দিল পেনক্র্যাফট।

জানো না?

আপনি সেরে উঠলেই জানা যাবে।

তাহলে সেরে গেছি আমি। একটু চেষ্টায়ই সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে পড়লেন ক্যাপ্টেন। বেশ কাহিল লাগছে। খাবার-টাবার আছে কিছু?

খাবার আছে, তবে আগুনের কোন ব্যবস্থা নেই। বলল পেনক্র্যাফট।

সব শুনে বললেন ক্যাপ্টেন, চিন্তার কিছু নেই, দেশলাই বানিয়ে নেব।

দেশলাই বানাবেন?

হ্যাঁ, দেশলাই।

কি, বলেছিলাম না? নাবিকের পিঠ চাপড়ে আশ্বাস দিলেন সাংবাদিক

কিছু সামুদ্রিক গুল্ম আর ঝিনুকের শাঁস খেতে দেয়া হলো ক্যাপ্টেনকে। কয়েকমুহুর্ত খাবারের দিকে চেয়ে থেকে পানি দিয়ে ওগুলোকে গিলে ফেললেন ক্যাপ্টেন। তারপর সবাইকে নিয়ে গুহার বাইরে বেরিয়ে এলেন! একটা পাথরের ওপর আয়েশ করে বসে সবার উদ্দেশে বললেন, তাহলে আমরা এখন কোথায় আছি তাই জানা নেই। কোন দ্বীপে না মহাদেশে তাও না?

না, বলল হার্বার্ট।

সেটা কালই জেনে নেব। তার আগে আমাদের করবার কিছু নেই?

আছে, বলল পেনক্র্যাফট।

কি?

আগুন।

তা হবে, পেনক্র্যাফট! কাল আসার সময় পশ্চিমে একটা মস্ত পাহাড় দেখেছি। ওই পাহাড়ে চড়েই দেখতে হবে এটা দ্বীপ না মহাদেশ তার আগে দেখছি হাত গুটিয়ে বসে থাকতে হবে।

বসে থাকবেন কেন? আগুন জ্বলবেন না?

সে ভাবনা তোমাকে ভাবতে হবে না, পেনক্র্যাফট, আগুন তুমি পাবে, বললেন ক্যাপ্টেন। বন্ধুরা,আমাদের অবস্থা কিন্তু খুব ভাল ঠেকছে না। যদি এটা মহাদেশ হয়, তাহলে চিন্তা নেই। লোকালয় পাবই। কিন্তু যদি দ্বীপ হয়, আর জাহাজ চলাচলের বাইরে থাকে এ দ্বীপ, তাহলেই হয়েছে। বাকি জীবনটা এখানে কাটানো ছাড়া উপায় নেই। কাজেই সে জন্যে আমাদের তৈরি হওয়া দরকার। পেনক্র্যাফট, কিছু শিকারের প্রয়োজন। পাহাড়ে চড়তে হলে আগে গোশত খেয়ে চাঙ্গা হয়ে নিতে হবে।

কিন্তু আগুন? কাঁচা গোশত খাই কি করে?

আমার ওপর ভরসা করতে পারছ না, পেনক্র্যাফট? বললাম তো, শিকার নিয়ে এসে দেখবে আগুন জ্বলে গেছে।

পেনক্র্যাফট, এবার কথা বললেন স্পিলেট, বিজ্ঞানের অসাধ্য কিছুই নেই। আর ক্যাপ্টেন সাইরাস হার্ডিং বলতে গেলে একটা চলন্ত বিজ্ঞান।

কিন্তু তবুও সন্দেহ গেল না পেনক্র্যাফটের। নেবও ওর কানে কানে বলল, খামোক সময় নষ্ট করছ, নাবিক। ক্যাপ্টেন যখন বলেছেন, ধরে নাও আগুন জ্বলে গেছে।

আমতা আমতা করে শেষ পর্যন্ত বেরিয়েই পড়ল পেনক্র্যাফট। নেব আর হার্বার্টও সঙ্গ নিল। পেছন পেছন এল টপ। অনেক কায়দা কৌশল আর পরিশ্রম করে একটা ক্যাপিবারার (এক জাতের শুয়োর) সন্ধান মিলল। কান কামড়ে ধরে ঝোপের ভেতর থেকে শুয়োরটাকে টেনে হিচড়ে বের করে আনল টপ। জোরাজুরি করতে গিয়ে একটা কানই ছিড়ে গেল ওটার। লাফ দিয়ে গিয়ে কর্দমাক্ত পুকুরে পড়ল আড়াই ফুট লম্বা বাদামী জানোয়ারটা। ব্যস! গাছের ডালের তৈরি গদা দিয়ে ওটাকে দমাদম পেটাতে শুরু করল তিন অভিযাত্রী। অল্পক্ষণেই মারা গেল শুয়োরটা। শিকার কাঁধে ফিরে চলল ওরা চিমনি গুহায়। বনের মাঝ দিয়ে চলার সময় এক জাতের বাদামের দেখা পেল হার্বার্ট। চমৎকার চাটনী হয় বাদামগুলোর। কিন্তু শুষ্ককণ্ঠে বলল পেনক্র্যাফট, কি হবে চাটনী দিয়ে? কাঁচা গোশতের সাথে চাটনী থাকা না থাকা সমান কথা।

আমি বলছি তোমাকে, নাবিক, জোর দিয়ে বলল নেব, কাবাবের সাথেই চাটনী খাব আমরা।

চিমনি গুহা তখনও বেশ দূরে। ওদিকে চেয়েই হঠাৎ থমকে দাঁড়াল পেনক্র্যাফট। নিজের চোখকেও বিশ্বাস করতে পারল না সে। চিমনি গুহার ভেতর থেকে ভলকে ভলকে আকাশে উঠে যাচ্ছে কালো ধোঁয়া।

আগের পর্ব :
০১. ওপরে কি উঠছি আমরা
০২. গৃহযুদ্ধের তান্ডবলীলা চলছে
০৩. কোথায় গেলেন ক্যাপ্টেন
০৪. বিকেল নাগাদ নদীর জল কমে গিয়ে
০৫. চেঁচিয়ে বললেন স্পিলেট
০৬. বেলুন থেকে নামার পর
০৭. সকাল থেকে কোথাও পাওয়া গেল না নেবকে
০৮. ওরা ঢুকলেও ফিরে চাইল না নেব
পরের পর্ব :
১০. ধোঁয়া, মানে আগুন
১১. ভোর হলো
১২. পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই
১৩. পরদিন সকালে খাওয়া-দাওয়ার পর
১৪. মাপজোকের কাজ শুরু করলেন ক্যাপ্টেন
১৫. গহ্বরের মুখ
১৬. জুনের শুরুতেই শীত নামল
১৭. যেন ভূত দেখছে এমন ভাবে
১৮. জাহাজডুবি হয়ে সত্যিই কেউ দ্বীপে উঠেছে কিনা
১৯. দ্বীপের দক্ষিণ তীর ঘেঁষে চলা শুরু হলো
২০. একটু দূরে জঙ্গলের ধারে
২১. মার্চের আরম্ভেই শুরু হলো ঝড় বৃষ্টি
২২. আবার এল শীত
২৩. এখনও কি বাধা দেবেন
২৪. মার্সি নদীর মুখে এসে
২৫. জঙ্গলে আর ফিরে গেল না আগন্তুক
২৬. ভোর হতেই খোঁয়াড়ের দিকে রওনা দিল
২৭. এখনও প্রায় বিশ মাইল দূরে জাহাজটা
২৮. চোখের সামনে ভোজবাজীর মত
২৯. আস্তে আস্তে সেরে উঠতে লাগল হার্বার্ট
৩০. ফ্রাঙ্কলিন হিলের কোন গুহায়
৩১. জাহাজের খোল তৈরির কাজ
৩২. ধীরে ধীরে চোখ মেলে তাকালেন ক্যাপ্টেন নিমো
৩৩. সুড়ঙ্গ মুখে পৌঁছতে পৌঁছতে

গল্পের বিষয়:
অনুবাদ
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত