০৭. সকাল থেকে কোথাও পাওয়া গেল না নেবকে
সকাল থেকে কোথাও পাওয়া গেল না নেবকে। খুঁজে খুঁজে হয়রান হয়ে গেল তাঁরা তিনজনে, কিন্তু কোন হদিস করতে পারল না। শেষ পর্যন্ত ভাবল ওরা কোথাও গেছে নেব, সময় হলেই ফিরবে। কিন্তু ফিরল না নেব সারাদিন অপেক্ষা করেও যখন নেবকে ফিরতে দেখল না ওরা, ধরেই নিল মনিবের খোঁজে গেছে নেব। ক্যাপ্টেনকে না পেলে আর ফিরবে কিনা তাই বা কে জানে!
বিকেলের দিকে উঠল তুমুল ঝড়। একে দারুণ শীত, তার ওপর তুফান। গুহা থেকে আর বেরোতে পারল না কেউ। শীতে কাঁপতে কাঁপতে কুঁজো হয়ে আগুনের পাশে বসে রইল অভিযাত্রীরা। ঝড়ের দাপটে খেপে গেছে তীব্র খরস্রোতা পাহাড়ী নদী। কানে আসছে বাইরে পাহাড়ের গায়ে পাথর গড়িয়ে পড়ার শব্দ। রাতটা কি করে কাটবে কে জানে! একটানা ঝড়ের গর্জন শুনতে শুনতে একটু তন্দ্রা মত এসেছিল অভিযাত্রীদের।
হঠাৎ তন্দ্রা ছুটে গেল স্পিলেটের। মাঝরাত পেরিয়ে গেছে তখন। কান পেতে কিছু শোনার চেষ্টা করলেন তিনি। ঝড়ের প্রলয়ঙ্করী আওয়াজের মাঝে একটা অদ্ভুত শব্দ শোনা যাচ্ছে। কনুই দিয়ে গুতো মারলেন তিনি পেনক্র্যাফটের পাঁজরে। ধড়মড় করে উঠে বসল পেনক্র্যাফট।
কিছু শুনেছ, পেনক্র্যাফট?
হঠাৎ ঘুম ভেঙে উঠে বসায় প্রথমে কিছুই শুনতে পেল না পেনক্র্যাফট।
একটু পর সামলে নিয়ে কান খাড়া করে শোনার চেষ্টা করল। তারপর হেসে বলল, স্বপ্ন দেখছেন নাকি? তুফানের আওয়াজ ছাড়া কিছুই তো শোনা যাচ্ছে না।
ভাল করে শোনো, পেনক্র্যাফট।
আর একটু শুনেই লাফিয়ে উঠল সে, আরে তাইতো! কুত্তা ডাকছে না?
কুত্তাই, সায় দিল হার্বার্ট। ওদের কথাবার্তায় ঘুম ভেঙে গেছে ওরও।
এবার স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে কুকুরের ঘেউ ঘেউ। এখানে কুকুর! তবে কি জঙ্গলে অসভ্যদের বাস আছে? কুকুর নিয়ে শিকারে বেরিয়েছে ওরা? কিন্তু এ দুর্যোগের রাতে কেন? গুড়ি মেরে গুহার মুখে এগিয়ে গেল ওরা। ডাকটা থেমে থেমে একবার এদিক একবার এদিক থেকে আসছে। তাহলে কি দুদিক থেকেই আসছে শিকারীর দল? ক্রমশ গুহার দিকেই এগিয়ে আসছে কুকুরের ডাক। আরও কাছে আসতেই বললেন স্পিলেট, টপের ডাক না তো?
সাথে সাথেই এক লাফে গিয়ে একটা জ্বলন্ত কাঠের টুকরো নিয়ে এল হার্বার্ট। স্পিলেট বাধা দেবার আগেই একছুটে গুহা থেকে বেরিয়ে গেল সে। কাঠটা মশালের মত ধরে নাড়াতে নাড়াতে চেঁচিয়ে ডাকল, টপ টপ, এদিকে, এদিকে এসো।
এই ডাকের জন্যেই যেন তৈরি হয়ে ছিল কুকুরটা। একছুটে হার্বার্টের কাছে এসে দাঁড়াল। টপই।
কিন্তু দুদিক থেকে যে কুত্তা ডাকছিল! বলল পেনক্র্যাফট।
টপই এদিকে ওদিকে ছুটোছুটি করে আমাদের খুঁজছিল। মন্তব্য করলেন স্পিলেট।
ঘেউ ঘেউ করে একটানা ডেকে চলেছে আর লেজ নাড়ছে টপ। যেন বলতে চাইছে কিছু। এসময়ে একটা অদ্ভুত জিনিস নজরে পড়ল সবার। ভীষণ ঝড় তুফানের ভেতর দিয়ে এসেছে টপ, কিন্তু গায়ে কাদামাটি লাগেনি একটুও! তেমন একটা পরিশ্রান্ত হয়নি সে। আশ্চর্য!
এ কোন রহস্যের শুরু! কিন্তু এ নিয়ে বেশিক্ষণ মাথা ঘামাল না কেউ। স্পিলেট বললেন, মনে হচ্ছে, টপ কিছু বলতে চাইছে আমাদের।
আমাদের কোথাও নিয়ে যেতে চায় ও। দেখছেন না কেমন ছটফট করছে? বলল হার্বার্ট।
হয়তো ওর মনিবের কাছেই নিয়ে যেতে চাইছে আমাদের, বললেন স্পিলেট।
সাথে সাথেই তৈরি হয়ে নিল সবাই। আগুনে কয়েকটা শুকনো কাঠ ছুঁড়ে দিল পেনক্র্যাফট। তারপর সাথে কিছু খাবার নিয়ে টপের পিছু পিছু রওনা দিল তিনজন। অন্ধকারে পরস্পরের হাত ধরে টপের ডাক অনুসরণ করে এগিয়ে চলেছে ওরা। পেছনে একনাগাড়ে ঝাপটা মেরে চলেছে শীতল ঝোড়ো হাওয়া।
কতক্ষণ এভাবে হেঁটেছে বলতে পারবে না ওরা। অনেক, অনেকক্ষণ পর অন্ধকার ফিকে হতে শুরু করল। পুব দিগন্তে আলোর আভাস টপকে দেখা যাচ্ছে এখন! একটা পাহাড়ে চড়ছে টপ। আরও অনেক চড়াই উৎরাই, বালি আর কাঁকরে ভরা পাহাড়ী পথ পেরিয়ে গেল টপ। সাথে সাথে অভিযাত্রীরাও। শেষ পর্যন্ত একটা গুহার কাছে এসে দাঁড়াল টপ। ঘুরে দাঁড়িয়ে একবার চাইল ওদের দিকে, তারপর ঢুকে গেল গুহার ভেতর। দেখাদেখি ঢুকে পড়ল তিন অভিযাত্রীও।
একটা ঘাসের বিছানার পাশে চুপচাপ বসে আছে নেব! বিছানায় পড়ে রয়েছে একটা অনড় দেই। ক্যাপ্টেন সাইরাস হার্ডিং।
আগের পর্ব :
০১. ওপরে কি উঠছি আমরা
০২. গৃহযুদ্ধের তান্ডবলীলা চলছে
০৩. কোথায় গেলেন ক্যাপ্টেন
০৪. বিকেল নাগাদ নদীর জল কমে গিয়ে
০৫. চেঁচিয়ে বললেন স্পিলেট
০৬. বেলুন থেকে নামার পর
পরের পর্ব :
০৮. ওরা ঢুকলেও ফিরে চাইল না নেব
০৯. হতবুদ্ধি হয়ে দাঁড়িয়ে রইল পেনক্র্যাফট
১০. ধোঁয়া, মানে আগুন
১১. ভোর হলো
১২. পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই
১৩. পরদিন সকালে খাওয়া-দাওয়ার পর
১৪. মাপজোকের কাজ শুরু করলেন ক্যাপ্টেন
১৫. গহ্বরের মুখ
১৬. জুনের শুরুতেই শীত নামল
১৭. যেন ভূত দেখছে এমন ভাবে
১৮. জাহাজডুবি হয়ে সত্যিই কেউ দ্বীপে উঠেছে কিনা
১৯. দ্বীপের দক্ষিণ তীর ঘেঁষে চলা শুরু হলো
২০. একটু দূরে জঙ্গলের ধারে
২১. মার্চের আরম্ভেই শুরু হলো ঝড় বৃষ্টি
২২. আবার এল শীত
২৩. এখনও কি বাধা দেবেন
২৪. মার্সি নদীর মুখে এসে
২৫. জঙ্গলে আর ফিরে গেল না আগন্তুক
২৬. ভোর হতেই খোঁয়াড়ের দিকে রওনা দিল
২৭. এখনও প্রায় বিশ মাইল দূরে জাহাজটা
২৮. চোখের সামনে ভোজবাজীর মত
২৯. আস্তে আস্তে সেরে উঠতে লাগল হার্বার্ট
৩০. ফ্রাঙ্কলিন হিলের কোন গুহায়
৩১. জাহাজের খোল তৈরির কাজ
৩২. ধীরে ধীরে চোখ মেলে তাকালেন ক্যাপ্টেন নিমো
৩৩. সুড়ঙ্গ মুখে পৌঁছতে পৌঁছতে