মরুশহর: ০৭. চওড়ায় আড়াইশো গজ কারখানা এলাকা

মরুশহর: ০৭. চওড়ায় আড়াইশো গজ কারখানা এলাকা

০৭. চওড়ায় আড়াইশো গজ কারখানা এলাকা

চওড়ায় আড়াইশো গজ কারখানা এলাকা, বললেন ক্যামারেট, লম্বায় তিনশো ষাট, রেড রিভারের তীর বরাবর আয়তক্ষেত্রাকার মোট জমি ষাট বিঘে। এই আয়তক্ষেত্রের পশ্চিমে প্রায় ছত্রিশ বিঘে জুড়ে শুধু সব্জীখেত, বাগান ইত্যাদি।

কিন্তু খেত, বাগান কেন? প্রশ্ন করল ফ্লোরেন্স।

বাহ! সব্জী খায় না লোকে?

ও।

ফ্যাক্টরির লোকের খাবার জন্যে কিছুটা জন্মানো হয় এখানেই, বাকিটুকু আসে বাইরে থেকে। জেটির গা ঘেঁষে প্রায় একশো গজ চওড়া আর আড়াইশো গজ লম্বা ওয়ার্কশপ টাওয়ারের ঠিক তলায়ই আমার কোয়ার্টার। দুই প্রান্তে ষাট গজ করে চাওড় দুই টুকরো জমিতে ওয়ার্কার আর টেকনিশিয়ান এঞ্জিনীয়ারদের কলোনি। সর্বমোট একশো বিশটা ফ্ল্যাট।

লোকের সংখ্যা কত? জানতে চাইলেন বারাক!

শ্রমিক আর কর্মচারী একশো। কয়েকজন আবার বিবাহিত। বাচ্চাকাচ্চাও আছে। একটু থেমে নকশার দিকে দেখিয়ে বললেন, ওয়ার্কশপটা একতলা। দেয়ালে কায়দা করে পুরু মাটির প্রলেপ দিয়ে তাতে জন্মানো হয়েছে বিশেষ ধরনের ঘাস! রাইফেল-বন্দুক তো দূরের কথা, কামানের গোলাও বিশেষ সুবিধে করতে পারবে না এই দেয়ালের ওপর। নকশাটা তো দেখলেন। চলুন যাই এবার। নিচের তলায় অন্য সব জিনিস দেখাব।

নিচে নামার আগে ফ্যাক্টরির বাইরের পরিস্থিতিটা একবার উঁকি মেরে দেখে নিল ফ্লোরেন্স। এখনও সার বেঁধে উড়ছে বোলতা বাহিনী। আক্কেল হয়ে গেছে হানাদারদের। তল্লাট ছেড়ে ভেগেছে। দেখে, আশ্বস্ত হলো সে।

প্রথমেই বোলতা-কলোনিতে নিয়ে গেলেন অভিযাত্রীদের ক্যামারেট। টাওয়ারের একেবারে গোড়ায় জায়গাটা। বোলতাদের রাখার জন্যে সারি সারি খুদে ঘর নির্মিত হয়েছে। প্রতিটি ঘরে প্রচুর গোলাবারুদ মজুত আছে। এসব দেখে একে একে পেরিয়ে এল তারা অসংখ্য ছোট ছোট ওয়ার্কশপ। যেমন, ফিটিংশপ, প্রেসমেশিন, কামারশালা, ফাউন্ড্রি এবং এমনি সব আরও নানা ঘর। তারপর বেরিয়ে এল বাগানে। বাগানের পরেই পাঁচিল এবং তারপরে হ্যারি কিলারের প্যালেস, টাওয়ার।

সবে বাগানে নেমেছে, হঠাৎ প্রচন্ড বিস্ফোরণের শব্দ কানে তালা লেগে যাবার জোগাড় হলো অভিযাত্রীদের। কামান দাগ হয়েছে প্যালেস টাওয়ার থেকে। অভিযাত্রীদের কাছে থেকে নিরাপদ দূরত্বে বাগানেই পড়ল গোলাটা! পড়িমরি করে ফ্যাক্টরির ভেতরে এসে ঢুকল আবার সবাই।

খেপে গেলেন ক্যামারেট। দেয়ালে বসানে টেলিফোন রিসিভার তুলে নিয়ে কি আদেশ দিলেন। সঙ্গে সঙ্গে মাথার ওপরে তীক্ষ্ণ একটা হিসহিস শব্দ উঠল। আধ মিনিট অপেক্ষা করলেন বিজ্ঞানী, তারপর আবার অভিযাত্রীদের নিয়ে বাইরে এলেন। আঙুল তুলে দেখালেন প্যালেসের দিকে। সবাই চাইল সেদিকে। কিন্তু আশ্চর্য! মাত্র মিনিটখানেক আগেও যেখানে ছিল টাওয়ারটা, এখন আর নেই। ভোঁজবাজির মত হাওয়া হয়ে গেছে।

মুচকে হেসে বললেন বিজ্ঞানী, আকাশ টর্পেডোর কাজ। হ্যারি হারামজাদার খানিকটা শিক্ষা হবে। পরে অবশ্য আরেকটা সাইক্লোস্কোপ বানিয়ে দেব ওখানে। অবশ্যই আমার কথা শুনলে।

আপাতত আরও গোটাকয়েক টর্পেডো ছুঁড়ুন না ওদিকে। বলল আমিদী ফ্লোরেন্স।

সাংবাদিকের দিকে চাইলেন ক্যামারেট। চোখে অনিশ্চয়তার ছায়া।

নিজের সৃষ্টি..নষ্ট করে ফেলব!

বুঝল ফ্লোরেন্স নিতান্ত বাধ্য না হলে ব্ল্যাকল্যান্ডের কিছুই নষ্ট করবেন না ক্যামারেট। তাই আর কথা বাড়াল না সে।

হঠাই অস্বাভাবিক নীরব হয়ে গেছে চারদিক। শিক্ষা হয়ে গেছে হ্যারি কিলারের। প্যালেসের হৃৎপিন্ড টাওয়ারটাই গেছে।

বাগান পেরিয়ে একটা বাড়ির সামনে এসে দাঁড়াল অভিযাত্রীরা। দরজা খুলে ঢুকলেন ক্যামারেট, পেছনে পেছনে অন্যেরা।

সবাই ঢুকতে ক্যামারেট বললেন,একটা মজার জিনিস দেখাব এবার আপনাদের। এটা আগে পাওয়ার হাউস ছিল আমার। মোটর, স্টীম ইঞ্জিন আর বয়লার চালু থাকত সারাক্ষণ। অন্য কোনরকম জ্বালানি পাওয়া যেত না তো, কাঠ পুড়িয়েই বয়লারের খাদ্য জোগান দেয়া হত। এক মহা ঝামেলার ব্যাপার ছিল। মরুভূমি পেরিয়ে অনেক দূরের জঙ্গল থেকে কাঠ আনতে হত। আর তাও দুএক মণ হলে এক কথা ছিল। লাগত হাজার হাজার মণ। আকাশ থেকে কৃত্রিম বৃষ্টি ঝরানোর পরই শুধু এ সমস্যার সমাধান হলো। বৃষ্টির পানিতে বইল রেড রিভার, হাইড্রোইলেকট্রিসিটি সৃষ্টি করলাম আমি। স্টেশনটা বসিয়েছি এখান থেকে মাইল ছয়েক দূরে, নদীর পাড়েই। এখন আর সেকেলে বয়লার হাউসের দরকার নেই আমার। চিমনি দিয়ে ধোঁয়া বেরিয়ে আকাশও কালো হয় না।

অভিযাত্রীদের আরও একটা ঘরে নিয়ে গেলেন ক্যামরেট।

এই যে, এই মেশিনগুলো ডায়নামো, অলটারনেটর, ট্রান্সফর্মার আর কয়েল। এই ধরনের মেশিন পরের ঘরটায়ও আছে। এটা হলো আমার থান্ডার সেন্টার। স্টেশন থেকে বিদ্যুৎ আসে, আর আমি এখানে বসে বজ্র সৃষ্টি করি।

ওরে বাপরে! চোখ কপালে তুলল ফ্লোরেন্স,এত মেশিন আনিয়েছেন?

সব না। বেশির ভাগই বানিয়ে নিয়েছি।

কিন্তু কাঁচামাল তো লাগে। এত দূরে এই মরুভূমিতে আনালেন কি করে অত সব?

তাই তো! চিন্তায় পড়ে গেলেন ক্যামারেট। ব্যাপারটা এর আগে কখনও ভাবেননি, অত কিছু তো ভাবিনি! যখন যা দরকার চেয়েছি, এসে গেছে। হ্যারি কিলারই আনিয়েছে। কিন্তু কি করে আনল।

জিনিসগুলো নিশ্চয় এসেছিল হেলিপ্লেন বানানোর আগে, তাই না? জিজ্ঞেস করল ফ্লোরেন্স! ঘাড় নেড়ে সায় দিলেন ক্যামারেট। আবার বলল সাংবাদিক, তাহলেই ভাবুন, মরুভূমি পেরিয়ে অত সব জিনিস আনতে কি সাংঘাতিক পরিশ্রম গেছে। কত লোকের জীবন গেছে, কে জানে!

হু, রক্ত সরে গেছে ক্যামারেটের মুখ থেকে।

টাকার কথাটাও ভুলবেন না। ভাবনাটা আরও চাপিয়ে দিল ক্যামারেটের ওপর ফ্লোরেন্স।

টাকা?

টাকা। আপনি সাহেব কোটি কোটি টাকার মালিক?

দূর দূর! একটা কানাকড়িও নেই আমার পকেটে।

তাহলে অত টাকা কার?

আর কার। হ্যারি কিলারের। মিন মিন করে বললেন ক্যামারেট।

তাহলেই ভাবুন। অত টাকা কোথায় পেল হ্যারি কিলার? নিশ্চয় কোন কুবেরের বাচ্চা নয় ডাকাতটা।

তা তো জানি! অসহায়ভাবে বাতাসে হাত নাড়ালেন ক্যামারেট। চোখে ঘোলাটে চাউনি। সত্যিই জানেন না কিছু বিজ্ঞানী।

আরও কি বলতে যাচ্ছিল ফ্লোরেন্স। কিন্তু সরল লোকটাকে খোঁচানো আর ভাল মনে করলেন না ডক্টর চাতোন্নে। বাধা দিয়ে বলে উঠলেন, হয়েছে, হয়েছে, ওসব নিয়ে এখন মাথা ঘামিয়ে লাভ নেই। তারচেয়ে যা দেখাতে এসেছেন, দেখান।

মন থেকে জোর করেই যেন ভাবনাগুলো তাড়ালেন ক্যামারেট। হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে কপাল মুছে বললেন, আসুন।

পাশের একটা ঘরে গিয়ে ঢুকল সবাই। এই আমার কমপ্রেশার্স। গলায় আবেগ ঢেলে বললেন ক্যামারেট, বাতাস আর বিভিন্ন গ্যাসকে তরল করি এখানে! জানেনই তো প্রায় সব গ্যাসকেই তরলিত করা যায়। তাপমাত্রা কমিয়ে চেপে রেখে দিলেই তরল অবস্থায় থাকে। চাপ তুলে নিলেই গরম হয়ে ওঠে আবার যদি কোন বদ্ধ আঁধারে রেখে দেয়া হয় তরল গ্যাস, আর সহসা গ্যাসকে আবার তার আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নেয়া যায়, তো ফেটে টুকরো টুকরো হয়ে যাবে আঁধারটি!

এই সহসা নিজের আসল অবস্থায় ফিরে যাওয়া রোধ করেছি আমি পুরোপুরি। পুরো অ্যান্টি ডায়াথারমিক, অর্থাৎ যার মধ্যে উত্তাপ একেবারেই ঢুকতে পারে না এমনি পদার্থের আঁধার তৈরি করেছি। এই আধারে তরল বাতাস বা গ্যাস রেখে দিলে তাপমাত্রা একেবারেই পাল্টায় না। এক থেকে যায়। আঁধার ফেটে যাবার কোন আশঙ্কাই নেই। এই একটি মাত্র আবিষ্কার চমকপ্রদ কিছু আবিষ্কারের সহায়ক হয়েছে। দূরপাল্লার হেলিপ্লেন এই আবিষ্কারের ফলেই সম্ভব হয়েছে।

ওই হেলিপ্লেন আপনার সৃষ্টি? নিতান্ত বোকার মতই প্রশ্নটা করল ফ্লোরেন্স।

তবে কার? অহংকারে ঘা পড়ায় উত্তেজিত হয়ে উঠেছেন ক্যামারেট। কিন্তু সামলে নিলেন কয়েক সেকেন্ডেই।

আমার হেলিপ্লেনের তিনটে বৈশিষ্ট্য আছে। বলে চলেন আবার বিজ্ঞানী, বাতাসে স্থির হয়ে ভেসে থাকার ক্ষমতা, জমি থেকে সোজা আকাশে উঠে পড়ার ক্ষমতা আর একনাগাড়ে তিন হাজার মাইল উড়ে চলার ক্ষমতা।

এখন প্রথমেই দেখা যাক, স্থির থাকার ক্ষমতাটা পাচ্ছে কি করে। হঠাৎ হাওয়ার ঝাপটায় ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে অঙ্ক কষতে হয় না পাখিকে, দরকারই হয় না হিসেব করার। আপনা থেকেই ব্যালান্স ফিরিয়ে আনে স্নায়ুমন্ডলী। এর নাম দিয়েছেন দেহ বিজ্ঞানীরা, রিফ্লেক্স অ্যাকশন। পাখির মতই একটা রিফ্লেক্স অ্যাকশনের ব্যবস্থা করেছি আমি হেলিপ্লেনে। পাসেঞ্জার, পাইলট বসার জায়গা আর মোটর বসানো প্ল্যাটফর্মের ওপরে পনেরো ফুট উঁচু পাইলনের মাথায় দুটো বিশাল ব্লেড নিশ্চয় দেখেছেন? ভারকেন্দ্র রক্ষার জন্যই বসানো হয়েছে ও দুটো।

ব্লেডের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে কিন্তু পাইলন বসানো হয়নি। দিকনির্দেশী বা উচ্চতানির্দেশী হালের সঙ্গে বাঁধা না থাকলে শীর্ষবিন্দুর চারপাশে যেদিকে খুশি অল্প অল্প দুলতে পারে এই পাইলন। ব্লেড জোড়া সামনে বা পেছনে ঝুঁকলে, ঠিকই সামাল দেয় হাল, নিজের ওজনে পাইলনও তৎক্ষণাৎ এর সঙ্গে নতুন অ্যাঙ্গেলে হেলে পড়ে! আপনা থেকেই ঠিক হয়ে যায় হেলিপ্লেনের দুলুনি! ঝাঁকুনির চোটে ডিগবাজি খাবার ভয় নেই আকাশযানের!

ক্লাসে যেন লেকচার দিচ্ছেন, এমনিভাবে বলে যাচ্ছেন ক্যামারেট; আমতা আমতা করলেন না, শব্দ হাতড়াতে হলো না, যেন সেজে বসে আছে কথাগুলো জিভের ডগায়, এমনি স্বচ্ছন্দে বলে গেলেন। দ্বিতীয় পয়েন্টে আসা যাক এবার। টেকঅফ করার সময় ডানা বা ব্লেড দুটো নিচের দিকে নামানো থাকে। পেটে সিধে হয়ে থাকে পাইলনের গায়ে। অনুভূমিক অবস্থায় ঘুরতে থাকে প্রপেলার। ফলে হেলিকপটার পরিণত হয় হেলিপ্লেনে। পুরো যন্ত্রটাকে শুন্যে ভাসিয়ে রাখে প্রপেলার। নিরাপদ উচ্চতায় উঠে যাবার পর খুলে যায় ডানা দুটো, এর সঙ্গে তাল রেখে সামনে হেলে পড়ে প্রপেলার! ব্যস, হেলিপ্লেন হয়ে গেল এরোপ্লেন। প্রপেলারের শক্তিতেই দ্রুতগতিতে ছুটতে শুরু করে সামনে।

চালকশক্তির কথায় আসহি এবার! হেলিপ্লেনের ইঞ্জিনের শক্তির প্রধান উৎস তরল বাতাস। অ্যান্টি ডায়াথরমিক পদার্থ দিয়ে তৈরি ফুয়েল ট্যাঙ্কে থাকে এই তরল বাতাস। অনেকগুলো ভালভের মধ্যে দিয়ে উত্তপ্ত একটা সরু নলের মুখে পৌঁছলেই তরল থাকে না আর বাতাস। প্রচন্ড চাপ সৃষ্টি করে ফিরে আনে বায়বীয় অবস্থায়। চলতে শুরু করে মোটর।

আপনার হেলিপ্লেনের স্পীড কত? জানতে চাইল ফ্লোরেন্স।

আড়াইশো মাইল। ঘণ্টায়। তরল বাতাসে ফুয়েল ট্যাঙ্ক একবার ভরে নিলে একনাগাড়ে উড়ে যেতে পারে তিন হাজার মাইল।

অসাধারণ প্রতিভাবান এই বিজ্ঞানীর আবিষ্কারের কথা শুনে বিস্ময়ে থ মেরে গেল অভিযাত্রীরা। তাদের নিয়ে আবার টাওয়ারে ফিরে এলেন ক্যামারেট।

হ্যাঁ, ফ্যাক্টরির প্রাণকেন্দ্র এই টাওয়ার, আবার কথা শুরু করলেন ক্যামারেট, এই যে, যে তলায় আছি, এর ওপরে আছে একই রকম আরও পাঁচটা তলা। একই রকম যন্ত্রপাতি দিয়ে সাজানো প্রতিটা কক্ষ। টাওয়ারের ওপরে চারদিক ঘিরে বিশাল উঁচু উঁচু পাইলনগুলো নিশ্চয় দেখেছেন। ওগুলো ওয়েভ প্রজেক্টর। পাইলনের গায়ে অসংখ্য ছোট ছোট কাটা আছে। ওগুলোও প্রজেক্টর। কিন্তু ক্ষমতা কম।

ওয়েভ প্রজেক্টর? ভুরু কুঁচকে তাকালেন ডক্টর চাতোন্নে !

পদার্থ বিজ্ঞানে আর জ্ঞান দিতে ভাল লাগছে না। হয়তো বিরক্ত হয়ে পড়েছেন ইতিমধ্যেই, হাসলেন ক্যামারেট। কিন্তু তবু ওয়েভ-প্রজেক্টরের মূল তত্ত্বটা একটু বুঝিয়ে দিতে চাই। এই তো, কয়েক বছর আগে হার্জ নামে একজন জার্মান বিজ্ঞানী লক্ষ্য করেছেন, একটা কনডেনসারের দুটো টার্মিনাল পয়েন্টের মাঝের ছোট ফাঁকে ইনডাকশন কয়েল থেকে একটা ইলেকট্রিক স্পার্ক চালিয়ে দেয়া গেলে, যন্ত্রটার দুই মেরুর মধ্যে একটা দোলায়মান ক্ষরণ বা তড়িৎ-প্রবাহ সৃষ্টি হয়।

কেশে গলা পরিষ্কার করে নিলেন ক্যামারেট। এখন, এই যে দোলন সৃষ্টি হলো দুটো পয়েন্টের মধ্যে, এখানেই কিন্তু সীমাবদ্ধ থাকবে না এটা। আশপাশের বাতাসে, আরও সঠিকভাবে বলতে গেলে ইথারেও আলোড়ন সৃষ্টি করে। ইথার বলতে ওজন অনুভব শুন্য, অতি লঘু সেই গ্যাসীয় পদার্থকেই বোঝাচ্ছি আমি, সমস্ত মহাশূন্য থেকে শুরু করে বস্তুদেহের এক কোষ থেকে আরেক কোষের মাঝখানের শূন্যস্থান যা পূরণ করে রেখেছে।

ইথারে অনুকম্পন সৃষ্টি করে নিয়মিত মাত্রায় একটু-একটু করে সরে সরে যায় এই দোলন। এই অনুকম্পন বা ভাইব্রেশনকেই বলে হার্জিয়ান ওয়েভস। বোঝাতে পেরেছি।

চমৎকারভাবে, বললেন পলিটিশিয়ান বারজাক।

কথার জের টেনে নিলেন আবার ক্যামারেট, আশ্চর্য এই ওয়েভ এতদিন শুধু বিস্মিতই করেছে ল্যাবরেটরিতে বিজ্ঞানীদের। একে কাজে লাগানোর কথা কেউ ভাবেনি। আমিই প্রথম ভেবেছি, কাজেও লাগিয়েছি; ওয়েভ বেরোন পয়েন্ট থেকে দূরে সংস্পর্শশূন্য অবস্থায় বিভিন্ন দূরত্বে রাখা ধাতব দেহে তড়িৎ সঞ্চার করার জন্যে এই ওয়েভকে প্রয়োগ করা হত আগে। কিন্তু একটা অসুবিধে ছিল। পুকুরে ঢিল ফেললে যেমন একই কেন্দ্র থেকে বৃত্তাকারে দূরে ছড়িয়ে পড়ে ঢেউগুলো, তেমনি পয়েন্ট থেকে বেরিয়ে ছড়িয়ে যেত ওয়েভগুলো। ফলে শুরুর এনার্জি আর থাকত না দূরে গেলে কমতে কমতে একেবারে শেষ হয়ে যেত। মাত্র কয়েক গজের বেশি যেতে পারত না! সহজ করে বলতে পারছি?

বলে যান, বলল ফ্লোরেন্স।

আয়নায় আলো প্রতিফলিত করার মত এই ওয়েভকেও প্রতিফলিত করা যায়। অনেকেই লক্ষ্য করেছেন ব্যাপারটা, কিন্তু কোন সিদ্ধান্তে আসতে পারেননি। কারণ প্রমাণ করতে পারেননি তারা। আমি কিন্তু পেরেছি। দেখেছেনই , ধাতু দিয়ে পাঁচিলের মাথা মুড়ে দিয়েছি? সাধারণ কোন ধাতু নয়। বিশেষ প্রক্রিয়ায় তৈরি সুপারকনডাকটিভ মেটাল। এই ধাতু দিয়ে এমন রিফ্লেক্টর বানিয়ে নিয়েছি, যে কোন দিকে যে কোন পয়েন্টে ওয়েভসের পুরো শক্তি ধরে রাখতে, পাঠাতে কিংবা নিয়ন্ত্রিত করতে পারি আমি।

শূন্যপথে চলার সময় এই শক্তির বিন্দুমাত্র নষ্ট হতে দিই না আমি। ফলে চলার শুরুতে যা থাকে, শেষেও তাই-ই। দোলনটাকে কত সময়ের ব্যবধানে ব্যবহার করতে হবে, এই পদ্ধতি সবাই জানে। এটা বিবেচনা করে রিসিভার বানিয়ে নেয়ার কথা ভাবলাম। বুঝলাম যে ফ্রিকোয়েন্সিতে ওয়েভ সৃষ্টি হচ্ছে, সেই একই ফ্রিকোয়েন্সিতে রিসিভার তৈরি করা দরকার। ফ্রিকোয়েন্সির সংখ্যা অসীম, সুতরাং অসংখ্য মোটর বানাতে সক্ষম হব ধরে নিলাম। হয়েছিও কিন্তু। বুঝতে পারছেন কিছু?

শুনতে ভালই লাগছে, বললেন বারজার্ক। পলিটিক্স হলে আরও কঠিন ব্যাপার হলেও বুঝতাম, কিন্তু বিজ্ঞান তো…। হাসলেন পলিটিশিয়ান। ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিলেন কথার শেষাংশ।

ঠিক আছে, ঠিক আছে, অভয় দিলেন ক্যামারেট, আপনাদের মজা লাগলেই হলো। সবার সব জিনিস বুঝতেই হবে এমন কোন কথা নেই। বিশেষ এই তত্ত্বটা আবিষ্কার করতে পেরেছি বলেই অসংখ্য ভারি ভারি চাষের যন্ত্র চালাতে সক্ষম হয়েছি। টাওয়ারের উপরে অত যে কাটা রয়েছে, একেকটা একেক মেশিনের শক্তির উৎস। সোজা কথায় কাটাগুলো প্রজেক্টর, মেশিনগুলো রিসিভার। বোলতা বাহিনীকেও চালু করি একই পদ্ধতিতে। প্রতিটি বোলতার চারটে প্রপেলারের গোড়ায় রয়েছে ছোট সাইজের চারটে মোটর। প্রতিটি মোটরের সিনটোনাইজেশন আলাদা। তাই টাওয়ারে বসেই যে কোনটাকে কিংবা সবকটাকে একসাথে চালানো যায়। ইচ্ছে করলে এই উপায়ে পুরো ব্ল্যাকল্যান্ড শহরটাকে চোখের পলকে ধ্বংস করে দিতে পারি আমি।

বলেন কি, আঁ!প্রায় আঁতকে উঠলেন, বারজাক, পুরো শহরটাকে ধ্বংস করে দিতে পারেন?

অতি সহজে। আত্মপ্রসাদের হাসি হাসলেন বিজ্ঞানী। একটা অজেয় শহর তৈরি হ০ক, চেয়েছিল হ্যারি কিলার। বানিয়ে দিয়েছি। কিন্তু বাইরের কোন শক্তির কাছে অজেয়। আমার কাছে একেবারে ছেলেখেলা এই শহর ধ্বংস করে দেয়া। প্রতিটি বাড়ি, প্রধান রাস্তা আর ফ্যাক্টরির তলায় কায়দা করে রেখে দিয়েছি ভয়ঙ্কর শক্তিশালী বিস্ফোরক। সঙ্গে রয়েছে বিশেষ ওয়েভের সিনটোনাইজেশন। এখানে বসে শুধু ওয়েভগুলো পাঠাব, একটার পর একটা ফাটবে বোমা। ধূলিসাৎ হয়ে যাবে হ্যারি কিলারের অত সাধের ব্ল্যাকল্যান্ড।

ঝড়ের গতিতে নোট বইয়ে ক্যামারেটের বক্তব্য লিখে যাচ্ছে ফ্লোরেন্স। একবার ইচ্ছে হলো বলে, দিন না এখুনি নষ্ট করে। কিন্তু কি ভেবে আবার চুপ করে রইল।

টাওয়ারের মাথার বড় পাইলনটার কাজ কি, বলুন তো? জিজ্ঞেস করলেন। ডক্টর চাতোন্নে।

হার্জিয়ান ওয়েভসের একটা অদ্ভুত ধর্ম লক্ষ্য করা গেছে, জানেন না নিশ্চয়। মাধ্যাকর্ষণের টানে আস্তে আস্তে নিচে নেমে যায় ওয়েভ। কাজেই বেশি দূরে ওয়েভ পাঠাতে হলে উঁচু জায়গা থেকে পাঠাতে হয়। কিন্তু কত উপর থেকে আর পাঠাবেন বলুন? আর কত উপরেই বা পাঠাতে পারবেন? তাই অন্য একটা কাজ করেছি আমি। উঁচু পাইলনের মাথায় আমার নিজের তৈরি রিফ্লেক্টর বসিয়েছি।

বেশি উপরে ওয়েভ পাঠাতে চান কেন? লিখতে লিখতেই জিজ্ঞেস করল ফ্লোরেন্স।

বৃষ্টি ঝরানোর জন্যে। হ্যারি কিলারের সঙ্গে দেখা হবার সময় এই তত্ত্বটাই মাথায় ঘুরছিল আমার। শুনে সেও লাফিয়ে উঠল। পাইলন আর রিফ্লেক্টরের দৌলতে মেঘ লক্ষ্য করে ওয়েভ পাঠাই আমি। তড়িৎ প্রবাহ দিয়ে মেঘের পানিকে সম্পৃক্তির পয়েন্টে নিয়ে যাই। স্যাচিউরেশন পয়েন্ট। অল্প সময়ের মধ্যেই পাশাপাশি দুটো মেঘ কিংবা মেঘ আর মাটির মধ্যেকার প্রচ্ছন্ন শক্তি প্রচন্ড হয়ে ওঠে। দেখতে দেখতে নেমে আসে অঝোর বৃষ্টি। মরুভূমি শ্যামলিমায় ছেয়ে দিতে কতক্ষণ? সবার দিকেই গর্বিতভাবে চাইলেন ক্যামারেট।

কিন্তু মরুভূমির আকাশে মেঘ কোথায়? জিজ্ঞেস করলেন ডক্টর চাতোন্নে।

ঠিকই বলেছেন। প্রথম প্রথম একটু অসুবিধেই হত। সারাক্ষণ হাঁ করে আকাশের দিকে চেয়ে থাকতাম কখন মেঘ উড়ে যায়। এখন আর তার দরকার নেই। নিচে শ্যামলিমা। সারাক্ষণই মেঘ থাকে উপরের আকাশে।

দারুণ আপনার প্রতিভা! আন্তরিক প্রশংসা করলেন ডাক্তার।

এক একটা আবিষ্কারের কথা শোনাচ্ছেন, আর একটু একটু করে উত্তেজিত হচ্ছেন মারসেল ক্যামারেই। ডাক্তারের প্রশংসায় উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠলেন আরও, আপনারা টের পাচ্ছেন না, কিন্তু এই মুহুর্তে ঠিকই দিকে দিকে ওয়েভ ছুটে যাচ্ছে। পাইলনের চুড়ো থেকে। এই আবিষ্কারের ফলে আরও কত কি যে করা যায় কল্পনা করতে পারবেন না। যেমন, পৃথিবীর সমস্ত জায়গায় বেতার টেলিফোনের ব্যবস্থা করা যায়।

বেতার টেলিফোন! অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন বারাজাক

বেতার টেলিফোন। শুধু একটা বিশেষ রিসিভার দরকার। গবেষণা করছি এনিয়ে। প্রায় সফল হয়ে এসেছে পরীক্ষা।

বাড়াবাড়ি…। অনেকটা স্বগতোক্তির মত বললেন বারজাক।

মোটেই না। উত্তেজনা বাড়ছে ক্যামারেটের, মামুলী টেলিগ্রাফ যন্ত্রে বিশেষ সার্কিট লাগিয়ে নিয়েছি। গোটা কয়েক সুইচ টিপলেই ওয়েভ সৃষ্টিকারী কারেন্ট ঢুকবে সার্কিটে। তারের পথ বেয়ে পৌছে যাবে পাইলনের চূড়ায়। ছড়িয়ে পড়বে দিকে দিকে।

থেমে সবার মুখের দিকে চাইলেন একবার মারসেল ক্যামারেট। তারপর আবার বলে চললেন, ওয়েভ প্রজেক্টরের মুখ কিন্তু আকাশের দিকে ফেরানো নেই এখন; তবে রিফ্লেক্টরের মুখ ফিরিয়ে দিলেই ওয়েভগুলো গিয়ে সংহত হবে বিশেষ রিসিভারে, অর্থাৎ যে রিসিভারের উদ্দেশে সংবাদ পাঠানো হবে আর কি!

আপনার কথার মাথামুন্ডু কিছুই ঢুকছে না আমার মাথায়, বললেন বারজাক। কেউ যদি রিসিভার নিয়ে বসে থাকত এখন, আপনাকে হাতে কলমে ব্যাপারটা দেখাতে পারতাম। কিন্তু দুঃখের বিষয়, অমন রিসিভার নেই কারও কাছে। আসলে বানাতেই পারেনি। কিন্তু তবু চাবিগুলো টিপেটুপে দেখাই আপনাদের। বলেই একটা ছোট টেবিলে বসানে কতগুলো সুইচের দিকে এগিয়ে গেলেন ক্যামারেট। সুইচবোর্ডে হাত রেখে জিজ্ঞেস করলেন, কাকে খবর পাঠাবেন?

আপনি তো বললেন, আর কারও কাছে অমন কোন রিসিভার নেই। কিন্তু যদি বাইরের দুনিয়ায় থাকত, তো এ মুহূর্তে ক্যাপ্টেন মারসিনেকেই খবর পাঠাতে বলতাম আমি, বললেন বারজাক।

ধরুন অমন একটা রিসিভার আছে ক্যাপ্টেনের কাছে, বলেই খটাখট কতগুলো সুইচ টিপলেন ক্যামারেট। ফিরে জানতে চাইলেন, কোথায় আছেন তিনি এখন?

সম্ভবত টিম্বাকটুতে, এটুকু বলতেই লাল হয়ে গেল জেনের গাল।

হু। টিম্বাকটু। আরও গোটা দুই সুইচ টিপলেন ক্যামারেট, তা কি বলতে চান ক্যাপ্টেন মারসিনেকে?

বলুন, আমি তার সাহায্য চাই।

চাইতে পারেন, কিন্তু কাজ হবে না। কারণ এখবর তো আর তাঁর কাছে পৌঁছুচ্ছে না। কিন্তু তবু শুধু আপনাদের দেখানোর জন্যেই পাঠাচ্ছি ব্ল্যাকল্যান্ডে বন্দিনী মিস জেন ব্লেজন। তাঁকে উদ্ধার করে নিয়ে যাবার অনুরোধ জানানো হচ্ছে ক্যাপ্টেন মারসিনেকে। ” আরে আসল কথাই তো বলিনি।ব্ল্যাকল্যান্ড কোথায়, তাই তো জানে না বাইরের দুনিয়া। ব্ল্যাকল্যান্ডের অবস্থান, অক্ষাংশ পনেরো ডিগ্রী পঞ্চাশ মিনিট উত্তরে। দ্রাঘিমা…। তড়াক করে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন ক্যামারেট, আরে কারেন্ট চলে গেল যে! বুঝেছি, হ্যারি কিলারের কাজ।

সবাই ভিড় করে এল ক্যামারেটের চারপাশে। সপ্রশ্ন দৃষ্টিতে চাইল।

আপনাদের বলেছিলাম না, একটুও হতাশ মনে হলো না ক্যামারেটকে, ছ মাইল দূরের হাইড্রোলিক ইলেকট্রিসিটি সেন্টার? নাকি বলিনি? না বললেও কিছু আসে যায় না। হ্যাঁ, সেখান থেকেই আসে কারেন্ট। এবং এইমাত্র ফ্যাক্টরির ইলেকট্রিক সাপ্লাই বন্ধ করে দিল হ্যারি কিলার।

সর্বনাশ! যন্ত্রপাতি তো কিছুই কাজ করবে না তাহলে। থেমে যাবে! ডক্টর চাতোন্নের কন্ঠে উৎকণ্ঠা।

যাবে কি, গেছেই ইতিমধ্যে। বোলতা বাহিনী?

অকর্মণ্য।

তাহলে এবারে আমাদের বারোটা বাজাবে হ্যারি কিলার।

না, তা পারবে না। জোর গলায় বললেন ক্যামারেট। কারেন্ট বন্ধ করেও আমাদের গায়ে আঁচড় পর্যন্ত দিতে পারবে না কিলার। আসুন আমার সঙ্গে। দেখে যান, এখনও আগের মতই দুর্লভ হয়ে আছি আমরা, হ্যারি কিলারের কাছে।

ওপরতলায় চললেন ক্যামারেট। তার পিছু পিছু এসে পৌঁছুল অভিযাত্রীরা। সাইক্লোস্কোপের দিকে তাকাল। পাঁচিলের বাইরেটা দেখা যাচ্ছে পরিষ্কার। এমন কি পরিখাটা পর্যন্ত। নিথর হয়ে পরিখার পানিতে ভাসছে কয়েকটা বোলতা। কারেন্ট বন্ধ হবার আগের মুহূর্তেও পরিখার ওপরের আকাশে ঘোরাফেরা করছিল ওগুলো।

এসপ্ল্যানেডে হৈ হৈ করে লাফাচ্ছে মেরি ফেলোরা। আনন্দে নাচতে নাচতে ছুটে আসছে কয়েকজন নতুন উদ্যমে, ফ্যাক্টরি আক্রমণ করবে। ঝপাঝপ পরিখার পানিতে লাফিয়ে পড়ল কয়েকজন। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই মুখের ভাব বদলে গেল ওদের। আতঙ্কে ঠেলে বেরিয়ে আসতে চাইছে চোখ। ব্যাপার কি?

দেখতে দেখতে পরিখার মধ্যেই ঢলে পড়ে গেল ওরা।

হাঁ হাঁ করে হাসলেন ক্যামারেট, নিশ্চয় ভাবছেন, আমি নিষ্ঠুর? কিন্তু এর দরকার ছিল। কারেন্ট বন্ধ হয়ে যাবার সঙ্গে সঙ্গে খুলে গেছে তরল কার্বনডাই অক্সাইডের আধারের মুখ। ব্যবস্থাটা অটোমেটিক। ফ্যাক্টরিটা তৈরির পর পরই এটাকে বাইরের শত্রুর হাত থেকে বাঁচানোর সব রকম ব্যবস্থা করে রেখেছি আমি। যদিও ভেবেছিলাম, এর প্রয়োজন কোন দিনই পড়বে না।

হ্যাঁ, যা বলছিলাম। গ্যাসে ভরে উঠেছে এখন পরিখা। বাতাসের চেয়ে ভারি কার্বনডাই-অক্সাইড পরিখায়ই থাকবে আপাতত। যে-ই পেরোতে চেষ্টা করবে দম বন্ধ হয়ে মরবে।

উফ! মেরি ফেলোদের ছটফটিয়ে ঢলে পড়ার দৃশ্য আর সইতে পারল না জেন। মুখ ফেরাল সেদিক থেকে।

ওদেরই দোষ। নিজের স্বপক্ষে বললেন ক্যামারেট, আমি তো আর ওদের আক্রমণ করিনি। আরে একি! হঠাৎ অবাক কণ্ঠে চেঁচিয়ে উঠল ফ্লোরেন্স।

অভিযাত্রীরা সবাই অবাক হলো! দ্রুত পানি থেকে উঠে পড়ছে বোলতাগুলো। আবার কারেন্ট চালু করে দিল নাকি হ্যারি কিলার?

উত্তরটা দিলেন ক্যামারেট, না, হ্যারি কিলার চালু করেনি। বিপদের সময়ে কারেন্টের বদলে তরল বাতাস দিয়ে যন্ত্রপাতি চালানোর ব্যবস্থা করে রেখেছি আমি। সুতরাং, আবার আগের মতই কাজ করতে শুরু করেছে যন্ত্রপাতিগুলো। কিন্তু বেশিক্ষণ চলবে না। বাতাস ফুরিয়ে গেলেই থেমে যাবে। কারেন্ট ছাড়া নতুন করে তরল বাতাসও তৈরি করা যাবে না আর।

পাঁচিল ঘেঁষে আবার উড়তে শুরু করেছে বোলতাগুলো। হাঁ করে সেদিকে কয়েক মুহূর্ত চেয়ে রইল পরিখার ওপারে দাঁড়ানো জ্যান্ত মেরি ফেলোরা। তারপর মৃত সঙ্গীদের লাশগুলো পানিতে ফেলে রেখেই যে যেদিকে পারল ছুটে পালাল।

ঘর কঁপিয়ে হাসতে হাসতে ঘুরে দাঁড়ালেন মারসেল ক্যামারেট! চোখের তারা আবার ঘোলাটে হয়ে উঠেছে তাঁর। লাগতে আসবি আর মারসেল ক্যামারেটের সঙ্গে? অহংকারে ফেটে পড়ছেন বিজ্ঞানী।

আগের পর্ব :
০১. ভূপৃষ্ঠের তিনলক্ষ বর্গমাইল জায়গা জুড়ে
০২. বন্দী হওয়ার পর চব্বিশ ঘণ্টা কেটে গেছে
০৩. কয়েদখানায় বসে লিখছি
০৪. হ্যারি কিলারের নৃশংসতায়
০৫. সত্যিই বেঁচে আছে টোনগানে
০৬. অতি তুচ্ছ সৌজন্য
পরের পর্ব :
০৮. বারজাক মিশন ছেড়ে আসার পর
০৯. বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দিয়ে
১০. নিঃসীম হতাশায় ভেঙে পড়ল অভিযাত্রীরা
১১. ভেতর থেকে সদর দরজা খোলার পদ্ধতি
১২. হঠাৎ শ্ৰীমতীর আগমন
১৩. কিসের এত শব্দ
১৪. পরিষ্কার বুঝল জেন

গল্পের বিষয়:
অনুবাদ
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত