০১. ভূপৃষ্ঠের তিনলক্ষ বর্গমাইল জায়গা জুড়ে
ভূপৃষ্ঠের তিনলক্ষ বর্গমাইল জায়গা জুড়ে রয়েছে বিশাল সাহারা মরুভূমি। উনবিংশ শতাব্দীর শুরুতে তখনকার যে কোন নিঁখুত এবং আধুনিক ম্যাপেও বিরাট এই ভূখন্ডকে ফাঁকা জায়গা হিসেবে দেখানো হত। অজ্ঞাত এই অঞ্চলে কি আছে, জানত না এমনকি বড় বড় ভূগোল বিশারদেরাও। এই সময়টাতেই সাহারার দিকে চলেছিল বারজাক মিশন।
কাহিনীটা শোনা যাক। সাহারার কাছাকাছি অঞ্চলে যারা বাস করে, সেই দুর্ধর্ষ কাফ্রীদের মধ্যে একটা কিংবদন্তী কিছুদিন (বারজাক মিশন নাইজার বাঁকের দিকে রওনা দেবার সময়) ধরেই শোনা যাচ্ছে। প্রায়ই নাকি অতিকায় ডানাওয়ালা কালো পাখি মুখ দিয়ে আগুন ঝরাতে ঝরাতে সাহারার দিকে উড়ে যায়। চিররহস্যে ঘেরা সেই আদিম এলাকা হতে টগবগিয়ে বেরিয়ে আসে আগুনের ঘোড়া। এর মালিক খোদ শয়তান। হাতে তার ভয়ঙ্কর আগুনের লাঠি। ঘোড়ার জ্বলন্ত শ্বাসে জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে যায় গ্রাম, গাছপালা, ঘরবাড়ি। গরীব নিগ্রোদের সর্বস্ব লুট করে ঘোড়ার মালিক। ধরে নিয়ে যায় নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবাইকে। বাঁধা দিলেই নির্মম মৃত্যু। শিশুদের পর্যন্ত নির্বিচারে খুন করে রেখে যায়, এমনি নিষ্ঠুর শয়তান।
কেউ জানে না ওরা কারা। কেন গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ধ্বংস করে, মানুষ খুন করে যায় নির্বিচারে। সাহারার মত আরেক মরুভূমি সৃষ্টি করার চেষ্টা চালাচ্ছে যেন লোকালয়গুলোতে। সত্যিই কি নরক থেকে উঠে এসেছে সাক্ষাৎ কোন শয়তান?
নাইজারের দুই তীরের একশো মাইল দূর পর্যন্ত বসবাসকারী মানুষ ভয়ে কাটা হয়ে থাকে সারাক্ষণ, কখন এসে আবার দলবল নিয়ে হানা দিয়ে বসে শয়তান। অত যে অত্যাচার করছে, তবু শয়তানের আস্তানায় হানা দেবার সাহস হয় না কারও। আর হানা দেবেই বা কি? কোথায় সে আস্তানা কেউ জানলে তো।
শয়তানের আস্তানা কিন্তু একটা আছে। মানুষ শয়তান। বিচিত্র এক শহরের মালিক সে। আর এই শহরের অবস্থানও বিচিত্র জায়গায়। একেবারে সাহারার ধূ-ধূ মরুর বুকে। অমন আজব কথা শোনেনি কখনও কেউ। আর শুনলেও হয়তো বিশ্বাস করবে না। কিন্তু সত্যিই এক অত্যাশ্চর্য শহর গড়ে উঠেছে মরুভূমির বুকে।
জমজমাট শহর। বাচ্চাকাচ্চা বাদ দিয়ে লোকসংখ্যা ৬,৮০৮। নামটাও অদ্ভুত! ব্ল্যাকল্যান্ড।
ব্ল্যাকল্যান্ডের অধিবাসীরা কিন্তু বিশেষ একটা জাত নয়। পৃথিবীর সমস্ত দেশের, সমস্ত অঞ্চলের মানুষ এসে ঠাই নিয়েছে এখানে। এখানকার নাগরিক হতে চাইলে একটাই যোগ্যতা দরকার। দাগী আসামী হতে হবে। যে যত বেশি নিষ্ঠুর, যে যত অন্যায় করতে পারে, ব্ল্যাকল্যান্ডের সমাজে সে তত উঁচু পদের অধিকারী। কোন একটা বিশেষ ভাষাও নেই এই শহরের। থাকবে কি করে, নাগরিকরা যে সব এসেছে বিভিন্ন জায়গা থেকে। তবে বিভিন্ন ভাষী লোক থাকলেও জাতীয় ভাষা কিন্তু ইংরেজি। গভর্নমেন্টের ভাষাও এটাই। ছোট্ট যে খবরের কাগজটা বেরোয়, ইংরেজিতে। শহরের সঙ্গে কাগজটার নামও মিলিয়ে রাখা হয়েছে,ব্ল্যাকল্যান্ড থান্ডারবোল্ট।
অদ্ভুত শহরের অদ্ভুত কাগজে কি খবর বেরোত জানেন? দুএকটা উদ্ধৃতি দিয়ে শোনাচ্ছিঃ
লাঞ্চ খাবার পর মালিককে তামাকের পাইপ দিতে ভুলে গিয়েছিল নিগ্রো ভূত্য কোরোমোকো। তাই আজ তাকে ফাঁসি দিচ্ছে মালিক জন অ্যানড্রু।
দশজন মেরি ফেলোকে নিয়ে হেলিপ্লেনে করে কৌরকৌসৌ আর বিডি গ্রামে যাবেন কর্নেল হিরাম হার্বার্ট, আগামীকাল সন্ধে ছটায় গত তিন বছরে এ দুটো গ্রামে হানা দেয়া হয়নি। লুটপাট আর প্রচুর পরিমাণে খুন জখম করে রাতের বেলাই ফিরে আসবেন কর্নেল।
নির্ভরযোগ্য সূত্রে খবর পাওয়া গেছে, বারজাক নামের এক ডেপুটির নেতৃত্বে কোনাক্রি থেকে শিগগিরই একটা ফরাসী অভিযাত্রীদল রওনা হবে। সিকাসো আর ঔঘাদোগৌ হয়ে মিশন পৌঁছবে নাইজারে। তবে আমরাও তৈরি। লোক রওনা হয়ে গেছে আমাদের। কুড়িজন ব্ল্যাক গার্ড আর দুজন মেরি ফেলোকে নেতৃত্ব দিয়ে নিয়ে গেছেন ক্যাপ্টেন এডওয়ার্ড রুফুজ। তিনি ব্রিটিশ সেনাবাহিনী থেকে পলাতক সৈনিক! লেফটেন্যান্ট ল্যাকোর ছদ্মনামে বারজাক হারামজাদার দলে ঢুকে পড়বেন রুফুজ। মিশন ব্যর্থ করে দেয়ার চেষ্টা করবেন।
ভয়ানক খেপে গিয়েছিলেন আজ কাউন্সিলর এহল উইলিস। মেরি ফেলো কন্সটানটিন বার্নার্ডকে এই সময় সামনে পেয়ে তাকেই মৃত্যুদন্ড দিয়ে বসলেন। পাঁচ মিনিটের মধ্যেই আদেশ পালিত হয়ে গেল। এমনিতেই বার্নার্ডের খুলিটা বেয়াড়া রকম বড়। তার ওপর ভেতরে এক ডজন সীসের বুলেট নিয়ে রেড রিভারে ফেলার সঙ্গে সঙ্গে টুপ করে তলিয়ে গেল লাশ। দেখে মহাখুশি কাউন্সিলর। সঙ্গে সঙ্গেই অবশ্য বার্নার্ডের জায়গায় নতুন মেরি ফেলো নেয়া হয়ে গেছে। নাম গিলম্যান ইলি। সারা বিশ্বের নাগরিক। আসলে সারা বিশ্বেই পালিয়ে পালিয়ে বেড়িয়েছেন তো, নাগরিক না হয়ে কি করবেন। অবশ্যই সরকারীভাবে নাগরিকত্ব দেয়নি তাকে পৃথিবীর লোক। বরং উনত্রিশ বছর জেলে আর পঁয়ত্রিশ বছর জাহাজের খোলে থাকার দন্ড দিয়েছে ফ্রান্স, ইংল্যান্ড আর জার্মানীর আদালত; এহেন লোককে মেরি ফেলো হিসেবে পেয়ে ব্ল্যাকল্যান্ড ধন্য। সিভিল বডি থেকে বার্নার্ডের কোয়ার্টারে এসে গেছেন ইলি। শুভেচ্ছা রইল, যেন শিগগিরই তাকে বার্নার্ডের চাইতে বেশি কষ্ট দিয়ে হত্যা করা হয়।
এই তে গেল কালোদেশের বজ্র পত্রিকার খবরাখবরের ধারা। এবারে দেশের অন্য খোঁজখবরও কিছু নেয়া যাক।
শহরের রীতি চীফ আর মুষ্টিমেয় কয়েকজনকে ছাড়া, পদবী ধরে ডাকা হবে না। ডাক নামটাই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ব্যবহার হবে।
সবারই ডাক নাম আছে। যাদের জন্মগতভাবে ছিল না, ব্ল্যাকল্যান্ডের নাগরিক হবার পর দেয়া হয়েছে। আর সবার মত চীফেরও ডাক নাম আছে একটা। ভয়ঙ্কর নাম। কিলার। পুরো নাম হ্যারি কিলার।
বারজাক মিশন যেদিন রওনা দেয়, তার ঠিক দশ বছর আগে এসে হাজির হয়েছিল সাহারার এই অঞ্চলে, কিলার। কোথা থেকে তার আগমন, কোন দেশের নাগরিক কেউ জানে না। এসেই আজকের শহরের ঠিক মাঝখানে একটা খুঁটি পুঁতে বলেছে, তাঁবু ফেল। এই তাঁবুকে ঘিরেই সৃষ্টি হবে শহর। এরপর থেকে ম্যাজিকের মতই মরুভূমির মাঝে গজিয়ে উঠেছে অত্যাশ্চর্য শহর।
হ্যারি কিলারের হুকুমে খটখটে শুকনো খাদ তাফাসেট আউদ ভরে উঠল পানিতে, রাতারাতি নদী বয়ে গেল। নদীর নাম রাখল কিলার, রেড রিভার। নদীর বাঁ দিকে সমতল ভূমিতে আধখানা চাঁদের আকৃতিতে গড়ে উঠল শহর। অর্ধচন্দ্র শহরের বাঁকা পিঠের বেড় বারোশো গজ, আর চাঁদের এক কোণ থেকে অন্য কোণ পর্যন্ত সোজাসুজি লম্বা ছশো গজ। মোট জমি তিনশো বিঘার বেশি। চাঁদের মত পিঠের বেড়কে তিরিশ ফুট উচু আর তিরিশ ফুট পুরু জমাট কাঁদার প্রাচীর দিয়ে ঘিরে দেয়া হয়েছে। এটাকে আবার তিনভাগে ভাগ করা হয়েছে ভেতর থেকে।
শহরের প্রথম অংশে থাকে ব্ল্যাকল্যান্ডের খানদানী ব্যক্তিরা। তারাই মেরি ফেলো। এদের মধ্যে কয়েকজন আবার স্বয়ং হ্যারি কিলারের আদিবন্ধু। বর্তমান পদের চাইতে আরও উচ্চাসনে আসীন হবার আশা আছে এদের ভবিষ্যতে। শহরের আদিমতম পুরুষও কিন্তু এরাই। দেখতে দেখতে এই খানদানী মেরি ফেলোদের সঙ্গে এসে যোগ দিয়েছে জেল পালানো, জাহাজ পালানো শত শত খুনে আসামীর দল। সবাইকে আশ্বাস দিয়েছে কিলার, এখানে মনের সুখে নিজেদের নারকীয় প্রবৃত্তি চরিতার্থ করার সুযোগ দেয়া হবে। দিয়েছেও। মেরি ফেলোদের বর্তমান সংখ্যা সীমিত-পাঁচশো ছেষট্টি।
অনেক ধরনের কাজ করতে হয় মেরি ফেলোদের। ব্ল্যাকল্যান্ডের সৈন্যবাহিনীও এরাই। সামরিক পদ্ধতিতে গঠিত মেরি ফেলোদের মধ্যে আছে একজন কর্নেল, পাঁচজন ক্যাপ্টেন, দশজন লেফটেন্যান্ট, পঞ্চাশজন সার্জেন্ট। অন্যেরা সবাই সৈনিক। লুটপাট, খুনজখম, গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে পুড়িয়ে নারীধর্ষণ আর শিশুহত্যা করে কার্যক্ষম নিগ্রোদের ধরে এনে গোলাম বানিয়ে রাখাই হলো এদের যুদ্ধ। পুলিসের কাজও করে এই মেরি ফেলোরাই। মুগুর হাঁকিয়ে শায়েস্তা করে রাখে শহরের নাগরিকদের। এক চুল এদিক ওদিক হলেই রিভলভার চালায়, নইলে ধরে জবাই করে। শহরের যাবতীয় কাজ আর মাঠের চাষাবাদ গোলামদের দিয়ে করানোও এদেরই দায়িত্ব। চীফের বডিগার্ডের কাজও এদের মধ্যে থেকেই লোক বেছে নিয়ে করানো হয়। তাই অত্যন্ত ব্যস্ত থাকতে হয় মেরি ফেলোদের।
প্রথম আর তৃতীয় অংশের মাঝখানে পাঁচিল ঘেরা দ্বিতীয় অংশে রাখা হয় গোলামদের। এলাকাটা প্রায় সত্তর একরের মত। গোলামের সংখ্যা পাঁচ হাজার সাতশো আটাত্তর। এর মধ্যে চার হাজার একশো ছিয়ানব্বই জন পুরুষ, বাকি স্ত্রীলোক। দুঃখ দুর্দশার অন্ত নেই এদের।
রোজ সকালে ঘেরা পাঁচিলের চারটে দরজা খুলে যায়। মুগুর আর চাবুকের নির্মম আঘাত সয়ে তাড়া খাওয়া কুকুরের মত হুড় হুড় করে চারটে দরজা দিয়ে বেরিয়ে আসে গোলামরা। মাঠে কাজ করতে যায়। সাঁঝের বেলা আবার ক্লান্ত পশুর মত ফিরে আসে ডেরায়। পালানোর কোন উপায় নেই এদের, এমনি কঠোর বিধিব্যবস্থা। দুদিকে তো আছেই দুনিয়ার সবচেয়ে নরপিশাচ কতগুলো লোক, মেরি ফেলো আর সিভিল বডি।
গরু-ছাগলের মত থাকতে না পেরে আর কষ্ট সইতে না পেরে গোলামদের অনেকেই মরে যায়। তারও বেশি মরে মেরি ফেলোদের মুগুর খেয়ে আর বন্দুকের গুলিতে। কিন্তু গোলামের সংখ্যা কমে যাওয়ার ভয় নেই। মরার পরদিনই নাইজারের দুই তীরের গ্রামগুলো থেকে নতুন গোলাম এসে যায়। ধরে নিয়ে আসা হয়।
শহরের তৃতীয় অংশে থাকে সিভিল বডি। এরা সাদা চামড়া ঠিকই কিন্তু প্রথম অংশে থাকার অধিকার নেই। তবে প্রমোশন পেয়ে মেরি ফেলো হয়ে গেলে চলে যায় প্রথম অংশে। বেশি দেরিও হয় না অবশ্য। কালোদেশের কালো আইনের বলে যখন তখন জবাই হয়ে যায় মেরি ফেলোরাও। শূন্যস্থান পূর্ণ করে এসে তখন সিভিল বডির কেউ।
মেরি ফেলোদের খাওয়া পরার ভার নিয়েছে চীফ স্বয়ং। কিন্তু সিভিল বডির লোকদের নিজের ব্যাপার নিজেকেই দেখতে হয়। ব্যবসা বাণিজ্য করে তারা রেড রিভারের তীরের বাণিজ্য কেন্দ্রে। নবাবী হাতে থাকার জিনিসপত্র চুরিডাকাতি ও লুটপাট করে বাইরের দুনিয়া থেকে নিয়ে আসে সিভিল বডির সওদাগররা। এদের কাছ থেকে কিনে নিয়ে যায় মেরি ফেলোর লোক আর সিভিল বডির অব্যবসাদাররা। ইউরোপীয় দেশে তৈরি অনেক মূল্যবান সামগ্রী চীফের কাছ থেকেও কেনে ব্যবসায়ীরা, ওগুলোই আবার বিক্রি করে মেরি ফেলোদের কাছে। এই সব জিনিস চীফ কোথায় পায়, কেবল তার অতিবিশ্বস্ত সাগরেদরা ছাড়া আর কেউ জানে না।
এই গেল রেড রিভারের ডান পাড়ের অবস্থা। কিন্তু এই শেষ নয়। বাঁ পাড়েও আছে শহর। নদীর তীর থেকে জমি আচমকা খাড়া হতে হতে দেড়শো ফুটে গিয়ে ঠেকেছে। নদী বরাবর বারোশো গজ আর নদী থেকে তিনশো গজ দূর পর্যন্ত উঁচু পঁচিল দিয়ে ঘেরা আয়তাকার এই দ্বিতীয় নগরীটা আয়তনের দিক দিয়ে প্রথম নগরীর চেয়ে খুব একটা ছোট নয়। লম্বালম্বি পাঁচিল দিয়ে দুই ভাগে বিভক্ত।
উত্তর-পূর্ব দিকে পাহাড়ের ঢালের ওপর পড়েছে একটা ভাগ। এখানে রয়েছে পাবলিক পার্ক। নাম ফোট্রেস গার্ডেন। মেরি ফেলো আর সিভিল বডির এলাকায় যাওয়া যায় এই পার্ক থেকে, গার্ডেন ব্রিজ দিয়ে।
পাহাড়ের চূঁড়োয় রয়েছে দ্বিতীয় ভাগটা। ব্ল্যাকল্যান্ডের হৎপিন্ড এই অংশটাই।
ফোর্নেস গার্ডেনের লাগোয়া, উত্তর কোণে পাহাড়ের নব্বই ফুট উপরে অবস্থিত একটা বিশাল চতুষ্কোণী প্রাসাদ, চারদিকে পাঁচিল ঘেরা। এর দক্ষিণ-পুবে রেড রিভার। প্রাসাদের নাম কিলার প্যালেস। এখানেই তার নবরত্ন নিয়ে বাস করে স্বয়ং হ্যারি কিলার। নবরত্ন সত্যিই নয়জন অতি গুণধর রত্ন নিয়ে গঠিত। প্রমোশন দিয়ে দিয়ে কাউন্সিলর পদে তোলা হয়েছে এদেরকে। চীফের প্রতিটি কুকর্মের সঙ্গে জড়িত থাকে এই নবরত্ন! হুকুম আসে চীফের কাছ থেকে, বিনা প্রতিবাদে পালন করে তারা।
প্রাসাদ থেকে প্রথম শহরে যাওয়ার আরেকটা লোহার ব্রিজ আছে। রাতে এই ব্রিজের মুখ লোহার গ্রিল নামিয়ে বন্ধ করে রাখা হয়।
দুটো ব্যারাক আছে প্রাসাদের লাগোয়া। একটায় থাকে পঞ্চাশজন বাছাই করা নিগ্রো। বুদ্ধিমান কিন্তু অকল্পনীয় নিষ্ঠুর এই ব্ল্যাকগার্ডরা। দ্বিতীয় ব্যারাকে থাকে চল্লিশজন শ্বেতাঙ্গ। এরাও বাছাই করা। ব্ল্যাকগার্ডদের চেয়ে কম তো নয়ই বরং বেশি পিশাচ এরা। উড়ুক্কু মেশিন বা হেলিপ্লেন চালানোর ভার এদের ওপর। এছাড়াও অন্যান্য আরও কাজ করে এরা।
এক অদ্ভুত আবিষ্কার এই হেলিপ্লেন। (জুল ভার্ন এই কাহিনী লেখার সময় হেলিপ্লেন, অর্থাৎ আজকের হেলিকপ্টার আর প্লেনের মিশ্রণ শুধু অদ্ভুত নয়, অবিশ্বাস্য ছিল। এই কাহিনী পড়ার সময় পাঠকের নিজেকে অন্তত একশো বছর আগের মানুষ কল্পনা করে নিতে হবে নইলে কাহিনী পড়ার মজা কমে যাবে অনেকখানিই।) একটা বিস্ময়। অসাধারণ প্রতিভাবান মস্তিষ্কের এক অসামান্য সৃষ্টি। একবার মাত্র জ্বালানি নিয়ে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ আড়াইশো মাইল গতিতে একটানা তিন হাজার মাইল পর্যন্ত উড়ে যেতে পারে এই আকাশযান। এই হেলিপ্লেনের দৌলতেই এত কুকর্ম করেও ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে গেছে ব্ল্যাকল্যান্ডবাসী! এরই জন্যে অসামান্য ক্ষমতার অধিকারী হ্যারি কিলার।
নাইজারের আশপাশে শত শত মাইল পর্যন্ত ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে রেখেছে হ্যারি কিলার সেফ এই হেলিপ্লেনের সহায়তায়। নিগ্রোরা প্লেনের চালকদের ভাবে খোদ শয়তান, আর যানটাকে বিচিত্র আগুনের পাখি। এর আওয়াজ শুনলেই থরহরিকম্প শুরু হয়ে যায় ওদের। আতঙ্কে তটস্থ হয়ে থেকে ভাবতে থাকে, কার ওপর আবার কুনজর পড়ল শয়তানের।
ব্ল্যাকল্যান্ডে নিজের লোকদের মধ্যেও পুরোপুরিসন্ত্রাস সৃষ্টি করে রেখেছে হ্যারি কিলার। তার নাম শুনলেই এই শহরের অতি বড় বড় ক্রিমিনালরাও শামুকের মত গুটিয়ে যায়। কাঁপুনি শুরু হয় হৃৎপিন্ডের। কিন্তু তবু বিদ্রোহের সম্ভাবনা মন থেকে উড়িয়ে দেয়নি অসাধারণ দূরদর্শী হ্যারি। তাই লোকের ধরাছোয়ার বাইরে উঁচু জায়গায় প্রাসাদ বানিয়েছে। গার্ডেন, ব্যারাক আর শহরের দিকে ফেরানো রয়েছে অত্যাধুনিক কামানের বড় বড় নল। সোজা কথা, নবরত্নরা একবার এসে মিছেমিছিও যদি বলে, বিদ্রোহ শুরু হতে যাচ্ছে, খোঁজ নিয়ে সত্যিমিথ্যে যাচাইয়ের ধারে কাছেও যাবে না হ্যারি কিলার, রক্ত নদী বইয়ে ছাড়বে সমস্ত ব্ল্যাকল্যান্ডে।
লোকগুলোকে বাদ দিলে অতি উন্নতমানের শহর ব্ল্যাকল্যান্ড। ঝকঝকে পরিষ্কার। মেরি ফেলোদের ঘরে ঘরে সুখ স্বাচ্ছন্দ্যের অঢেল আয়োজন। মেরি ফেলো আর সিভিল বডির সবাইয়ের ঘরে একাধিক টেলিফোন। আর আলো-পানির তো কোন অভাবই নেই। এমন কি গোলামদের এলাকায়ও অকৃপণ হাতে বিদ্যুৎ আর পানির পাইপ লাইনের ব্যবস্থা করেছে খুনে হ্যারি।
শুধু শহরের ভেতরেই নয়, বাইরেও বিস্ময়কর সব জিনিসের ব্যবস্থা করেছে হ্যারি। যেন যাদুর কাঠি বুলিয়ে শহরের প্রান্ত থেকে অনেক অনেক দূরে মরুভূমির বালির সমুদ্রকে বিদেয় করেছে সে। শহরের সীমানায় দাঁড়িয়ে দিগন্তের যতদূর চোখ যায়, দেখা যাবে শুধু ফসলের খেত। তাক লাগানো বিচিত্র উপায়ে চাষাবাদের ব্যবস্থা করেছে নিষ্ঠুর লোকটা।
কুকর্ম না করলে ইতিহাস বিখ্যাত হয়ে থাকত হ্যারি কিলার কোন সন্দেহ নেই। সাহারার বুকে যেখানে পানি কিংবা সবুজের নামগন্ধও নেই, এমন এলাকায় মাইলের পর মাইল বিস্তৃত সব্জী খেত, সত্যিই বিস্ময়কর নয় কি? এতসব কান্ড যিনি ঘটালেন, সেই অকল্পনীয় লোকটির কথায়ই আসছি এবার।
পাহাড়ের উপরের হ্যারি কিলারের প্রাসাদই শহরের একমাত্র প্রাণকেন্দ্র নয়, সত্যিকার প্রাণ অন্য জায়গায়। নদীর বাঁ-পাড়ের শহরের প্রথম ভাগের মধ্যে আরেকটা শহর আছে। কিন্তু ধরন-ধারণ আর গড়ন একেবারে আলাদা। এটা ফ্যাক্টরি। এই ফ্যাক্টরির পেছনে অকৃপণ হাতে টাকা ঢালে হ্যারি কিলার। কারণ এরই জন্যে সৃষ্টি হয়েছে ব্ল্যাকল্যান্ডের, রাজা হয়ে বসেছে হ্যারি। মনে মনে কিন্তু এই ফ্যাক্টরি আর তার পরিচালককে দারুণ ভয় পায় হ্যারি কিলারও সমীহ করে। বাইরের বিশ্বের কল্পনারও অতীত অদ্ভুত সব কলকব্জা আছে এই ফ্যাক্টরিতে।
সমস্ত দুনিয়ার সেরা সেরা শখানেক ব্রেন তুলে আনা হয়েছে এই ফ্যাক্টরির জন্যে। বিজ্ঞানের সাধনায় কিংবা টাকার লোভে হ্যারি কিলারের বশ্যতা স্বীকার করেছে এরা।
বিজ্ঞানীদের মধ্যে বিবাহিতও আছে। মেয়েলোকের সংখ্যা এখানে সাতাশ। বাচ্চাকাচ্চারাও রয়েছে।
ব্ল্যাকল্যান্ডের অন্যান্য অধিবাসীদের মত ক্রিমিনাল এরা নয়, বরং উল্টো। ফ্যাক্টরির ভেতরে যথেচ্ছ স্বাধীনতা আছে এদের, কিন্তু চৌহদ্দির বাইরে এক পা বাড়ানোর আদেশ নেই। চাকরিতে ঢোকার সময়েই এই নিয়মের কথা জানিয়ে দেয়া হয়েছে, সুতরাং প্রতিবাদ করার কোন উপায় নেই। বাইরের দুনিয়ায় চিঠি লেখার অধিকারও নেই এদের। সোজা কথা মোটা টাকার বিনিময়ে অনেককেই কিনে নিয়েছে হ্যারি কিলার।
চাকরি নিয়ে ফ্যাক্টরিতে ঢোকার পর যদি কারও ছেড়ে দেবার ইচ্ছে হয়, বাঁধা দেয় না হ্যারি। হেলিপ্লেনে করে স্বদেশে ফিরিয়ে দেবার জন্যে নিয়ে যাওয়া হয় তাদের। আসলে ফ্যাক্টরির অন্য বিজ্ঞানীদের দেখানো হয়, যেন বিদ্রোহ করে না বসে। কারণ বিজ্ঞানীরা বিদ্রোহ করে বসলেই হ্যারি কিলার গেছে। ধ্বংস হয়ে যাবে তার অত সাধের ব্ল্যাকল্যান্ড। তাই দেশে ফিরিয়ে নেবার নাম করে নিয়ে গিয়ে মরুভূমির মাঝে মেরে রেখে আসে হ্যারি কিলারের স্যাঙাতরা, স্বদেশে ফিরতে ইচ্ছুক বিজ্ঞানীকে। তার জমানো টাকার পাহাড় আবার ফিরে আসে হ্যারি কিলারেরই হাতে। সোজা কথা, ভাওতা দিয়ে বিজ্ঞানীদের কাছ থেকে কাজ আদায় করে নিচ্ছে ব্ল্যাকল্যান্ডের অধীশ্বর।
এই ফ্যাক্টরির পরিচালকের নাম মারসেল ক্যামারেট। জাতে ফরাসী। ফ্যাক্টরির শ্রমিক-কর্মচারী, বিজ্ঞানীদের চোখে সাক্ষাৎ দেবতা। ব্ল্যাকল্যান্ডের সর্বত্র যাবার অধিকার হ্যারি কিলারের মত একমাত্র এঁরই আছে। কিন্তু সারা শহর ঘুরে বেড়ালেও এই আপনভোলা লোকটাকে নিয়ে কোন চিন্তা নেই হ্যারির! কারণ পথে হাঁটার সময়ও আপন চিন্তায় বিভোর থাকেন বিজ্ঞানী। আশপাশে কি ঘটছে, চেয়েও দেখেন না। ব্ল্যাকল্যান্ড নিয়েও মাথা ঘামান না ক্যামারেট। তার একমাত্র ধ্যানধারণা ফ্যাক্টরি আর এর যন্ত্রপাতি।
ক্যামারেটের বয়েস চল্লিশের কাছাকাছি। মাঝারি উচ্চতা। সুন্দর স্বাস্থ্য। ঠেলে বেরিয়ে আছে ব্যায়ামপুষ্ট বুক। মাথায় হালকা চুলের রঙ সোনালী। কথা বলেন আস্তে, শান্ত স্বরে। কোনদিন রেগে গিয়ে তিনি গলা চড়িয়েছেন, বলতে পারবে না কেউ। অসহিষ্ণু হন না কখনও। যতই সহজ সরল হোন, ভীতু নন তিনি মোটেই। সমস্ত শরীরের মধ্যে সব চেয়ে সুন্দর তার চোখ জোড়া। গভীর নীল চোখ দুটো দেখলেই ভেতরের অসামান্য প্রতিভা আঁচ করা যায়।
ক্যামারেটের সুন্দর চোখ জোড়ার দিকে তাকিয়ে কিন্তু আরেকটা ব্যাপার আঁচ করা যায়। আয়নার ওপর দিয়ে হালকা কুয়াশা ভেসে গেলে যেমন হয়, মাঝে-মাঝে ঘোলাটে হয়ে ওঠে তার চোখ। নিষ্প্রভ দেখায়। তারপরেই ক্ষণিকের জন্যে শূন্য হয়ে যায় চাহনি। অভিজ্ঞ লোক দেখলেই বুঝতে পারবে, সামান্য ছিট আছে ক্যামারেটের মাথায়।
কল্পনার বিচিত্র জগতে বাস মারসেল ক্যামারেটের। আর সেই কল্পনাকেই একে একে বাস্তবায়িত করে চলেছেন বিজ্ঞানী। দশ বছর আগে কৃত্রিম বৃষ্টি ঝরানোর চিন্তা তাঁরই মাথায় উদয় হয়েছিল। সরল মনে যাকে ইচ্ছে, কথাটা শোনাতেন তিনি। লোকে হাসত। অবজ্ঞার হাসি। পাগল দেখে যেমন হাসে লোকে। কিন্তু হ্যারি কিলার হাসেনি। বরং ব্যাপারটাকে সে ভাল মত ভেবে দেখে। হোক ক্রিমিনাল, কিন্তু তার জগতে সে ক্যামারেটের চেয়ে কম নয়। তাই ঠিকই ক্যামারেটকে চিনেছিল সে।
বিরাট পরিকল্পনাকে নিয়ে সাহারার এই অংশে এসে হাজির হলো হ্যারি কিলার। সঙ্গে কয়েকজন অতিবিশ্বাসী অনুচর। আর অবশ্যই মারসেল ক্যামারেট। সব রকমে বিজ্ঞানীকে সাহায্য করে গেল হ্যারি। আর সত্যিই, নিজের কল্পনাকে বাস্তবায়িত করে সাহারার বুকে কৃত্রিম বৃষ্টি ঝরালেন ক্যামারেট। আর একের পর এক আশ্চর্য সব জিনিস আবিষ্কার করে গেলেন। এর জন্যে প্রচুর টাকা লাগে। কিন্তু অতসব বোঝেন না ক্যামারেট। তার প্রয়োজন মত একেকটা জিনিসের ফরমাশ করেন হ্যারি কিলারের কাছে, বিনাবাক্যব্যয়ে জুগিয়ে যায় হ্যারি। একবার ভেবেও দেখেন না ক্যামারেট, হ্যারি কি করে কোথা থেকে অতসব বহু মূল্যবান জিনিস কেনার টাকা জোগাড় করে। তার প্রয়োজনমত জিনিস পেলেই তিনি খুশি।
তার আবিষ্কারকে কোন কাজে লাগাল হ্যারি কিলার তাও দেখার প্রয়োজন বোধ করেন না ক্যামারেট। তাঁর আবিষ্কৃত জিনিস কাজ করলেই তিনি সন্তুষ্ট। হ্যারি কিলার বৃষ্টি চেয়েছে, ঝরিয়েছেন ক্যামারেট দিয়েছেন একটি মাত্র মোটরচালিত অদ্ভুত কৃষিযন্ত্র, যা দিয়ে একাধারে জমিতে লাঙল দেয়া যায়, আগাছা সাফ করা যায়, বীজ বোনা যায়, শস্য কাটা যায়, যায় শস্যকে খাওয়ার উপযোগী করে তোলা। উড়ুক্কু যন্ত্র বানিয়েছেন ক্যামারেট। বানিয়েছেন আরও কত কি।
মোটামুটি এই হলো ব্ল্যাকল্যাভ আর এর অধিবাসীদের সংক্ষিপ্ত পরিচয়।
ঘটনার দিন, বেলা এগারোটা। নিজের প্রাইভেট রূমে একাকী বসে হ্যারি কিলার গভীর চিন্তায় মগ্ন।
হঠাৎ বেজে উঠল টেলিফোন।
ছোঁ মেরে রিসিভারটা তুলে নিল হ্যারি, শুনছি।
পশ্চিমে সতেরো ডিগ্রি দক্ষিণে দশটা হেলিপ্লেন আসতে দেখা যাচ্ছে।
আসছি। রিসিভার নামিয়ে রাখল হ্যারি।
প্যালেসের ছাদে যেতে কয়েক সেকেন্ড লাগল। তারপর লিফটে চড়ে তিরিশ ফুট উঁচু একটা টাওয়ারের চূড়ায় উঠে গেল হ্যারি। প্ল্যাটফর্মে একজন মেরি ফেলো দাঁড়িয়ে। টেলিস্কোপে চোখ রেখে কি যেন দেখছে। এইমাত্র হ্যারিকে টেলিফোন করেছে সে-ই।
ধাক্কা দিয়ে লোকটাকে সরিয়ে দিয়ে টেলিস্কোপে চোখ ঠেকাল হ্যারি। দেখতে দেখতেই বলল, কাউন্সিলরদের খবর দাও। নিচে থাকব আমি।
প্যালেস আর ফ্যাক্টরির মাঝখানে এসপ্ল্যানেড। লিফটে চড়ে, সিঁড়ি বেয়ে সেখানে নেমে গেল হ্যারি। মিনিট খানেকও যায়নি, কিন্তু এরই মধ্যে জায়গা মত হাজির হয়ে গেছে নবরত্ন! হ্যারির ইঙ্গিতে আকাশের এক বিশেষ দিকে চাইল সবাই।
আস্তে আস্তে বড় হচ্ছে হেলিপ্লেনগুলো, বড় হচ্ছে। আর কয়েক মিনিট পরে এসে একে একে আলতো করে নেমে পড়ল এসপ্ল্যানেডে।
দশটার মধ্যে চারটে প্লেনে শুধু পাইলট। অন্য ছটায় পাইলট ছাড়াও আছে দুজন করে আরোহী। একজন করে ব্ল্যাকগার্ড আর একজন বন্দী। বন্দীদের চোখ কাপড়ে ঢাকা, হাত-পা বাঁধা। হ্যারির ইঙ্গিতে বাঁধন খুলে দেয়া হলো বন্দীদের, চোখের সামনের কাপড়ও সরিয়ে নেয়া হলো। বিমৃঢ় বিস্ময়ে সামনের বিশাল প্রাসাদের দিকে তাকিয়ে রইল তারা। দেখছে অতি উঁচু টাওয়ার, চারপাশের দুর্ভেদ্য প্রাচীর, আর দশটা উড়ুক্কু যন্ত্র।
বন্দীদের ঘিরে আছে তিরিশজন ব্ল্যাকগার্ড। পাথরের স্ট্যাচুর মত স্থির। ওদের দিকেও অবাক বিস্ময়ে তাকাল বন্দীরা।
একশো গজ পেছনে আড়াইশো গজ লম্বা নিরেট পাঁচিলের ওপারে আকাশছোঁয়া ফ্যাক্টরির চিমনি দেখে অবাক হলো বন্দীরা। বিশাল উঁচু উঁচু পাইলনের কি প্রয়োজন, তাও অনুমান করতে পারল না তারা। আর কোথায় কোন দেশে দাঁড়িয়ে আছে তাও বোধগম্য হলো না। আফ্রিকার ম্যাপ তাদের খুঁটিয়ে দেখা আছে, অভিযানে রওনা দেবার আগেই। কিন্তু এই ধরনের শহরের অস্তিত্ব কোথাও আছে বলে জানে না তারা।
আবার ইঙ্গিত করল হ্যারি কিলার। ঘাড় ধরে দুজন বন্দীকে প্রবেশ করানো হলো প্যালেসে। পেছনে বন্ধ হয়ে গেল দরজা। ব্ল্যাকল্যান্ডের একচ্ছত্র অধিপতির খপ্পরে এসে পড়ল বারজাক মিশনের ছয়জন অভিযাত্রী।
পরের পর্ব :
০২. বন্দী হওয়ার পর চব্বিশ ঘণ্টা কেটে গেছে
০৩. কয়েদখানায় বসে লিখছি
০৪. হ্যারি কিলারের নৃশংসতায়
০৫. সত্যিই বেঁচে আছে টোনগানে
০৬. অতি তুচ্ছ সৌজন্য
০৭. চওড়ায় আড়াইশো গজ কারখানা এলাকা
০৮. বারজাক মিশন ছেড়ে আসার পর
০৯. বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দিয়ে
১০. নিঃসীম হতাশায় ভেঙে পড়ল অভিযাত্রীরা
১১. ভেতর থেকে সদর দরজা খোলার পদ্ধতি
১২. হঠাৎ শ্ৰীমতীর আগমন
১৩. কিসের এত শব্দ
১৪. পরিষ্কার বুঝল জেন