ক্যাপ্টেন হ্যাটেরাস: ০৭. ফরওয়ার্ডের ক্যাপ্টেনকে পেয়ে সবারই খুশি

ক্যাপ্টেন হ্যাটেরাস: ০৭. ফরওয়ার্ডের ক্যাপ্টেনকে পেয়ে সবারই খুশি

০৭. ফরওয়ার্ডের ক্যাপ্টেনকে পেয়ে সবারই খুশি

ফরওয়ার্ডের ক্যাপ্টেনকে পেয়ে সবারই খুশি হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু তিনি যে ক্যাপ্টেন হ্যাটেরাস হবেন তা কেউ চায়নি বা ভাবতেও পারেনি। তাই তার নাটকীয় আবির্ভাবে নাবিকেরা কেউই খুব একটা খুশি হয়েছে বলে মনে হল না। সবাই তার একরোখা স্বভাবের কথা জানে। আর এটাও জানে যে, তার কথামত না চললে বিপদ অবশ্যম্ভাবী।

পরদিনই ডক্টর, শ্যানডন ও জনসনকে নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ কি হবে সেই আলোচনায় বসলেন হ্যাটেরাস। বরফ আর বরফ, চারদিক থেকে সামনে চলার পথ বন্ধ করে দিয়েছে। তবুও ক্যাপ্টেন কোন কথাই শুনতে রাজি নন। তাঁর একই কথা, এগিয়ে যেতেই হবে। আগে যে সব অভিযাত্রীরা এসেছে তারা উত্তর মেরুতে যেতে না পারলেও বরফ-শূন্য সমুদ্র দেখেছে। সুতরাং আর চিন্তা কি? শ্যানডন যদিও কিছুটা প্রতিবাদ করতে চেষ্টা করেছিল কিন্তু হ্যাটেরাসের পক্ষ নিয়ে ডক্টর যেভাবে সমর্থন করলেন তাতে ওর আর কিছুই বলার থাকল না। ক্যাপ্টেন নিজে নেমে বরফের অবরোধ ভাল করে পরীক্ষা করে এলেন। তারপর বরফের ওপর হাজার পাউন্ড বিস্ফোরক ক্ষমতার মাইন পুঁতে বরফের স্তুপ ভাঙার চেষ্টা করলেন। জনসন সলতেয় আগুন লাগিয়ে জাহাজে ফিরে এল। প্রচন্ড শব্দে বরফের ভিতর মাইন বিস্ফোরিত হল। কিন্তু পথ পরিষ্কার হল না। আলগা বরফ আটকে রইল যাবার পথে। হ্যাটেরাসের মাথায় নতুন বুদ্ধি খেলল। কামানে গোলার বদলে তিনগুণ বারুদ ভরে ফরওয়ার্ডকে সামনের দিকে চালানর নির্দেশ দিলেন তিনি।

হ্যাটেরাসের কান্ড দেখে সবাই অবাক। কি করতে চান ক্যাপ্টেন?

জাহাজ বরফ স্তুপের বেশ কাছাকাছি আসতেই ক্যাপ্টেন কামান দাগার আদেশ দিলেন। কামানের ফাকা আওয়াজে বাতাসে যে আলোড়ন সৃষ্টি হল তাতে ক্ষণিকের জন্যে পথটা খুলে গেল। ফরওয়ার্ডও দ্রুত সেই ফাঁক গলে বের হয়ে এল। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই আবার আর একটু সামনে আলগা বরফ জোড়া লেগে জাহাজের পথ রোধ করে দাঁড়াল। কিন্তু ক্যাপ্টেন পিছু হটার লোক নন। কখনও ডিনামাইট ফাটিয়ে, কখনও বা করাত দিয়ে কেটে, কিংবা জাহাজ দিয়ে ধাক্কা মেরে ঠেলে, অসম্ভবকে সম্ভব করে এগিয়ে চললেন তিনি। এভাবেই বরফের সঙ্গে মরণপণ যুদ্ধ করে ২৭ মে ফরওয়ার্ড নিয়ে লিওপোল্ড বন্দরে পৌঁছলেন ক্যাপ্টেন। বন্দরে নেমেই গত অভিযানের নাবিকদের কিছু চিহ্ন খুঁজে পেলেন। বরফে চাপা দেয়া দুটি কবর পেলেন। জেমস রসের উদ্বাস্তু শিবিরেরও সন্ধান পেলেন তিনি। সেখানে খাবারদাবার, জ্বালানী এবং প্রয়োজনীয় আরও অনেক কিছু মজুত আছে। রস এই শিবির করেছিলেন ভবিষ্যতের কথা ভেবে। কখনও কোন অভিযাত্রী বিপদে পড়লে, বা তাদের রসদ শেষ হয়ে গেলে তারা যেন এখান থেকে সাহায্য নিতে পারে। ফ্রাঙ্কলিন তাঁর দল নিয়ে এত দূর পর্যন্ত পৌঁছতে পারেননি। পারলে সবাই বেঁচে যেত।

শিবিরে যা কিছু পাওয়া গেল সব জাহাজে তোলার পর ডক্টর ক্লবোনি লিওপোন্ড বন্দরে তাদের পদার্পণের কোন নিশানা রেখে যেতে চাইছিলেন। কিন্তু পাছে তার প্রতিদ্বন্দ্বী অভিযাত্রীরা টের পেয়ে যায় এই ভয়ে ক্যাপ্টেন কিছুতেই তাতে রাজি হলেন না। আবার যাত্রা শুরু হল।

বিরামহীন বরফ ভাঙা যে কি কষ্টের আর বিরক্তিকর তা একমাত্র ভুক্তভোগীরাই জানে। নাবিকেরা ক্রমেই ক্লান্তি ও একঘেয়েমিতে উদ্দীপনা হারিয়ে ফেলছে। এরই মাঝে দুটো তিমি মাছ, সূর্যকে ঘিরে নকল সূর্যের মত জ্যোতির্বলয় সৃষ্টি করে নাবিকদের চলার পথে কিছুটা বৈচিত্র্যের আমেজ এনে দিল। অপূর্ব সুন্দর জ্যোতির্বলয়ের ব্যাখ্যা দিয়েছেন টমাস ইয়ং। বরফ প্রিজম মেঘের আকারে যখন শূন্যে ভাসে তখনই সূর্যালোকে এই মায়াবী ইন্দ্রজালের সৃষ্টি হয়।

শুরুতে নাবিকেরা বেঁকে বসেছিল। ক্যাপ্টেন তাদের বুঝিয়ে সুঝিয়ে শান্ত করে নিতে না নিতেই এবার অফিসারদের মাঝে অসন্তোষ দেখা দিল। এমন কি শ্যানডনও ক্যাপ্টেনের গোঁয়ার্তুমি আর পছন্দ করছে না। সামনে এগোনো প্রায় অসম্ভব, কিন্তু ক্যাপ্টেনের সেই একই কথা, জাহাজ সামনেই এগোবে। অফিসারদের অসন্তোষের মাঝেই জুন মাসের আট তারিখে ফরওয়ার্ড পৌঁছল ভুঠিয়াল্যান্ড। জেমস রস এই ভুঠিয়াল্যান্ডেই ম্যাগনেটিক পোলের সন্ধান পেয়েছিলেন। কম্পাসের কাঁটা এ জায়গায় মাটির সঙ্গে সমান্তরাল না থেকে খাড়া হয়ে থাকে। তারমানে চুম্বক পাহাড় বলে আসলে কিছুই নেই। লোহার জাহাজ গেলে আছড়ে পড়ে সেই পাহাড়ে, জাহাজের পেরেক ছিটকে বেরিয়ে যায়, সবই কল্প-কাহিনী! মিথ্যা।

আগের পর্ব:
০১. লিভারপুল হেরাল্ডের ছোট্ট এক খবর
০২. সমুদ্রে যাত্রার সব আয়োজনই প্রায় শেষ
০৩. জাহাজ সমুদ্রে ভাসতেই সবকিছু স্বাভাবিক
০৪. নানান ঝড় ঝাপটার মধ্যে দিয়ে
০৫. ডক্টর ক্লবোনি অনিশ্চিত অবস্থায়
০৬. ক্যাপ্টেনকে তার কেবিন থেকে বেরুতে দেখে
পরের পর্ব :
০৮. জাহাজ যতই এগিয়ে চলছে
০৯. জাহাজের পরিস্থিতি থমথমে
১০. প্রতিদিন শীতের প্রকোপ ক্রমেই বাড়ছে
১১. প্রথমদিনেই বিশ মাইল পথ
১২. অশান্তি, অসন্তোষ চারদিক থেকে ঘিরে ধরেছে
১৩. বিশাল বরফ প্রান্তর
১৪. আবার নতুন করে যাত্রা শুরু হল
১৫. ডক্টর আর জনসন ভালুকটার মাংস কেটে
১৬. ডক্টর ক্লবোনির বুদ্ধির জোরে
১৭. ডক্টর ক্লবোনির মাথায় নিত্য নতুন খেয়াল
১৮. সময় আর কাটতে চায় না
১৯. হঠাৎ করেই যেন প্রকৃতি বদলে গেল
২০. হরিণ ও খরগোসের নির্ভয় ছুটাছুটি দেখে
২১. মেরু অভিযাত্রীদের নৌকা
২২. এই সেই উত্তর মেরু-ক্যাপ্টেন হ্যাটেরাস
২৩. এত বড় বিজয়ের গৌরবে
২৪. ডক্টরের সেবা শুশ্রুষা

গল্পের বিষয়:
অনুবাদ
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত