৩০. স্বামীকে জনপ্রিয় করার কৌশল
স্বামীকে জনপ্রিয় করার ব্যাপারে তিনটি কৌশল মনে রাখতে হবে। একটু চেষ্টা করলেই মহিলারা তাদের স্বামীদের জনপ্রিয় করে তুলতে পারেন। এখন আমরা সেই তিনটি পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করবো :
১। স্বামীকে প্রিয় করে তুলুন : প্রথমেই প্রশ্ন রাখবো, যেসব পুরুষ আকর্ষণীয় নন তাদের স্ত্রীদের কিছু করণীয় আছে কিনা। আমার মত হল, অবশ্যই আছে। আমি একজন মহিলাকে জানি যার স্বামী সামাজিকভাবে ব্যর্থ। ভদ্রলোক ছিলেন অসম্ভব জেদী, বিতর্ক প্রিয় আর অসহিষ্ণু। কিন্তু ভদ্রলোকের স্ত্রীর কাছ থেকে তার ছোটবেলার দুঃখ-কষ্টপূর্ণ জীবন কথা শোনার পরেই কিন্তু তার প্রতি আমাদের সমস্ত বিদ্বেষ, বিতৃষ্ণার ভাব দূর হয়ে মন সহানুভূতিতে ভরে যায়। ভদ্রলোকের স্ত্রীর কাছ থেকে জানা যায় যে, শৈশবে ভদ্রলোককে আশ্রয় আর অন্ন সংস্থানের জন্য আত্মীয় থেকে আত্মীয়ের কাছে আশ্রয় নিতে হয়। সমস্ত শৈশবের দিনগুলোতে তিনি কারও কাছেই কণামাত্র স্নেহ মমতার স্পর্শ পান নি, তার ভাগ্যে শুধু অপমান আর নিগ্রহ জোটে। এসব কথা শোনার পর ভদ্রলোকের ওই ধরনের আচরণে একটা কারণ বুঝতে কোনো অসুবিধা হল না যে তার স্ত্রী হয়তো তাঁকে জনপ্রিয় করে তুলতে পারেন নি। কিন্তু স্বামীর ভুল ত্রুটির কারণ সকলের কাছে ব্যাখ্যা করে তার প্রতি সবাইকে সহানুভূতিশীল করে তুলতে পেরেছেন। বিতৃষ্ণা থেকে সহানুভূতি-দুটি সম্পূর্ণ বিপরীত মেরু। কৃতকার্যময়ী স্ত্রীই পারবেন তার স্বামীকে সুন্দর ও মার্জিত রুচির মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে। এই ধরনের স্ত্রী ইতিহাসে বহু সমাজ বিদ্বেষী স্বামীকে যে কীভাবে রক্ষা করেছেন তার প্রচুর নিদর্শন রয়েছে।
২। স্বামীর গুণের বিষয় প্রকাশ করুন : স্ত্রী হিসেবে আপনার উচিত স্বামীর গুণ আর ব্যক্তিত্বের কথা বন্ধু-বান্ধবদের কাছে প্রকাশ করা। এর জন্য পারিবারিক আচার অনুষ্ঠান এমন ভাবে করা চাই যার মধ্যে দিয়ে স্বামীর গুণ আর ব্যক্তিত্ব প্রকাশিত হয়। যাতে স্বামীর গুণের প্রতিফলন ঘটে, তিনি আকর্ষণীয় হয়ে ওঠেন এমন পথই নেওয়া প্রয়োজন।
৩। বুদ্ধিমতী স্ত্রী হয়ে উঠুন : প্রায় সময়ই লক্ষ্য করা যায় যে, যাদের কোনো কাজের গুরুদায়িত্ব পালন করতে হয় আর দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে যারা নিজেরদের ওপর আস্থা রাখেন, তারাই আবার সামাজিক দায়িত্ব পালন করার ক্ষেত্রে কেমন যেন শঙ্কুচিত হয়ে পড়েন। একজন বুদ্ধিমতী স্ত্রী নিঃসন্দেহে এই ধরনের মানুষের শ্রেষ্ঠতম বন্ধু। বুদ্ধিমতী স্ত্রী ঘরোয়া আলাপের ক্ষেত্রে স্বামীকে অনেক কথার খেই ধরিয়ে দিতে পারেন। স্বামীর যদি বাকপটুতা নাও থাকে তিনি একে একে সে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে পারবেন।
একবার এক মেট্রন আমাকে বলেছিলেন, কীভাবে তিনি তার ঘরকুনো স্বামীকে নানারকম সামাজিক কাজকর্মে জড়িত করতে পেরেছিলেন। তার উদ্দেশ্য ছিল স্বামীকে সমাজচেতনাহীন অবস্থা থেকে সমাজ সম্বন্ধে উৎসাহী করে তোলা। মহিলা জানতেন, তার স্বামীর ফটো তোলার ঝোঁক আছে আর বিভিন্ন। ধরনের ফটোগ্রাফীতে তিনি বেশ আগ্রহ দেখিয়ে থাকেন। মহিলা ইতোমধ্যে তার স্বামীকে কিছুই জানতে দিলেন না। তার স্বামী যখন বাড়ির বাইরে যেতেন তখন ফটোগ্রাফী সম্পর্কে জ্ঞান আছে এমন কাউকে তিনি খুঁজে আনতেন আর স্বামী ফিরলে তার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতেন। একই বিষয়ে আগ্রহ দেখে ওয়াল্টার তার সঙ্গে আলাপ জুড়ে দিতেন। এর ফলে কথা বলতে বলতে তার স্বামী ওয়াল্টার আত্মবিস্মৃত হয়ে পড়তেন আর তার নিজের স্বরূপও প্রকাশ হয়ে পড়তো।
এই রকম একজন চামড়ার ব্যবসায়ীর কথা আমি জানি। ভদ্রলোকের চমৎকার জ্ঞান ছিল নানাধরনের আগ্নেয়াস্ত্র উৎপাদন সম্বন্ধে। আগ্নেয়াস্ত্র সম্পর্কে পড়াশোনাতেও তার প্রচুর উৎসাহ ছিল। অথচ তার স্ত্রীর কথাটা জানা থাকলেও এ বিষয়ে কাউকেই কিছু জানান নি। আমার মনে হয়, মহিলা যদি কথাটা সকলকে জানাতেন তাহলে তার স্বামীর সুনামের ভাগ তিনিও পেতে পারতেন। তার অবশ্যই উচিত ছিল স্বামীকে সকলের কাছে প্রিয় করে তোলা। স্ত্রীর উচিত সর্বক্ষেত্রে স্বামীর বাড়তি শ্রেষ্ঠ গুণের কথা বাইরের মানুষকে জানানো।