স্ত্রী যখন বান্ধবী: ২৭. ঘরের টান একান্তই মধুর

স্ত্রী যখন বান্ধবী: ২৭. ঘরের টান একান্তই মধুর

২৭. ঘরের টান একান্তই মধুর

সারাদিন পরিশ্রমের পর আপনার স্বামী কী ধরনের পরিবেশে ফিরে আসেন বলুন তো? কোন্ ধরনের পারিবারিক পরিবেশ আপনার স্বামীকে সাংসারিক কাজে প্রেরণা যোগায় আর প্রত্যেকদিন সকালে নতুন উদ্যোগে কাজকর্ম সুন্দরভাবে করতে সহায়তা করে? এই প্রশ্নের জবাব দেওয়ার সময় আপনি যা ভাবছেন তা কিন্তু ঠিক নয়-বরং তার নিজের সাফল্য আর ব্যর্থতার উপরেই সেটা বেশির ভাগ নির্ভর করে।

অবশ্য স্বামীর অবদান অনেকটা নির্ভর করলেও গৃহিণী হিসাবে আপনার অবদান ও ভূমিকাই প্রধান। হয়ে ওঠে। মনে রাখতে হবে, সবার উপরে আপনি যে উদাহরণ স্থাপন করবেন তার উপরেই প্রধানভাবে নির্ভর করবে আপনার গৃহের সুন্দর পরিবেশের সামগ্রীক রূপটি। একজন গৃহস্বামীকে উল্লেখযোগ্য দক্ষতার সঙ্গে সংসারের দায়িত্ব পালন করার জন্য পরিবারের কাছ থেকে তার কিছু মৌলিক চাহিদা পূরণ হওয়া চাই।

মনে রাখা দরকার যে, একজন সুগৃহিণী ও স্ত্রী হিসাবে এগুলো হচ্ছে স্বামী সংরক্ষণ ও উত্তরোত্তর বৃদ্ধির পূর্ব শর্ত। এই শর্তগুলি কী এবারে আমরা আলোচনা করবো:

১। বিনোদন : আমরা যদি একজন মানুষকে লক্ষ্য করি তবে দেখতে পাবো যে, সে কাউকে যতই পছন্দ করুক না কেন, কর্মব্যস্ততার মুখে তার মধ্যে কিছু না কিছু স্নায়ুবিক উত্তেজনা দেখা দেবেই। স্নায়ুর উপরে যে চাপ পড়তে চায়, তা দূর করা সম্ভবপর হলে দেখা যাবে তার দেহ আর মন ও অনুভূতির সূক্ষ্মতন্ত্রতে নতুন নতুন প্রাণের শক্তি জন্ম নেয়। পরের দিন অদ্ভুতভাবেই তার দেহ হয়ে ওঠে সজীব, সতেজ আর কর্মক্ষেত্রে তা আনবে নতুন প্রেরণা।

সব মহিলারই কম বেশি বাসনা থাকে যে, তিনি হয়ে উঠবেন একজন অতি নিপুণ গৃহিণী। মনে রাখতে হবে, একজন পুরুষের জন্য এটা তখনই প্রতিকূল অবস্থা সৃষ্টি করতে পারে যখন কোনো স্ত্রী ভেবে বসেন তিনি একজন আদর্শ গৃহিণী হয়ে উঠবেন।

জর্জ কেলি নামের একজন নাট্যকার ‘ক্রেগস ওয়াইফ’ নামে একটি নাটকের জন্য পুরস্কার পেয়েছিলেন। এই নাটকটির আশ্চর্য জনপ্রিয়তার প্রধান আর অন্যতম কারণ হল এই যে, হ্যারিয়েট ক্রেগের মতো বহু মহিলাই পৃথিবীতে আছেন। হ্যারিয়েট ক্রেগ খুবই ঝকঝকে তকতকে ভাবের পরিবার পছন্দ করতেন। যেসব মানুষ তাদের জিনিসপত্র ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রাখতেন তাদের তার পছন্দ হত না বলে অভ্যর্থনা জানাতেন না। এমন কী নিজের স্বামীকেও যেন অনধিকারীর মতো ভয় করতেন। কারণ স্বামী সাজানো জিনিস ওলোট-পালোট করে ফেলতেন।

একটা কথা কী কারোর ওপর বিরক্ত হওয়ার আগে নিজের লঘু কোমল মনটাকে উন্মুক্ত করা উচিত। অবসাদ ও উত্তেজনা দমন করার প্রকৃষ্ট উপায় হল ব্যাপারটা সহজভাবে মেনে নেওয়া।

২। আরাম আর আয়েস : সাধারণত গৃহিণীরাই ঘর সাজানের কাজটি করে থাকেন। সুতরাং ঘর সাজানোর সময় তাদের মনে রাখতে হবে যে, সবরকম সাজসজ্জার ভিতরের কথাটি হল অনেক বেশি রকম স্বাচ্ছন্দ্য আর স্বাভাবিক বোধ করা। তাছাড়া স্বাচ্ছন্দ্য আর আরাম হচ্ছে পুরুষের কর্মক্ষম থাকার জন্য অন্যতম প্রধান প্রয়োজন।

যে কোনো স্ত্রীর উচিত কোনো পুরুষের সাজানো-গোছানো ব্যাপারটা কোন ধরনের হলে ভালো লাগে সেটা একবার যাচাই করে দেখা। কোনো অবিবাহিত পুরুষকে একবার ভালো করে লক্ষ্য করলেই বোঝা যাবে।

একজন অবিবাহিত লোকের কথা আমার মনে পড়ছে। ভদ্রলোকের নাম ওয়াল্টার লিঙ্ক। তিনি আমেরিকার নিউ জার্সির স্ট্যান্ডার্ড অয়েল কোম্পানীর প্রধান ভূতাত্ত্বিক। চাকরির জন্য তাকে দেশের নানা দূর-দূরান্তে ভ্রমণ করতে হয়। তার বাড়ির ঘরটিকে অত্যাধুনিক বলা যায়। চাকরি উপলক্ষে নানা দেশের ভ্রমণ করার সময় তিনি যেখান থেকে যা পেয়েছেন তাই সগ্রহ করে এনে ঘর সাজিয়েছেন। মি. লিঙ্কের ঘরখানায় ঢুকলেই মন প্রসন্ন হয়ে যায়-যেন আরাম আর আয়েসেরই আলোয় তা ঝলমল করে। আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই যে, এই মানুষটি এখনও অবিবাহিতই রয়ে গেছেন। মজার ব্যাপারটা হল এই, তারা নিজেদের যেরকম আরামে রেখে দিতে পারেন পৃথিবীতে তেমন কম মহিলাই আছেন যারা তাদের এই আরাম আর আয়েস দিতে পারবেন।

আমরা স্ত্রীরা যখন ঘর সাজানো আর সৌন্দর্যের কাজটি করি, আমরা কখনোই মনে করি না যে ঘরের পুরুষটির আরামের জন্য কী কী প্রয়োজন হতে পারে। স্ত্রী হিসাবে আপনার দরকার স্বামীর হাতের কাছে সেইসব প্রয়োজনীয় জিনিসগুলি তুলে ধরা। স্বামী যদি বিরক্তি বোধ করেন তাহলে বুঝতে হবে কোথাও আপনার ত্রুটি রয়েছে।

ঘরের মানুষটাকে সুখী করে তুলতে পারাই হচ্ছে তাকে ঘরে আটকে রাখার শ্রেষ্ঠতম কৌশল।

৩। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ব্যবস্থা : অধিকাংশ পুরুষই সুব্যবস্থায় ভরা সুন্দর পরিবেশে থাকতে পছন্দ করেন। সময়মতো খাওয়া-দাওয়ায় অসুবিধা, সকালের নাশতা পরিবেশনে দেরি, অগোচালো বিছানা ইত্যাদি পুরুষকে ঘরের প্রতি ক্রমশই অসুখী করে তোলে। আর এর পরিণতিও হয় ভয়ঙ্কর-তাদের বাইরের রমণীর প্রতি টান দেখা দেওয়ার আশঙ্কা থাকে।

৪। আনন্দময় পরিবেশ : ঘরের পরিবেশ ভালো কি খারাপ যাই হোক না কেন, তার জন্য কিন্তু গৃহিণীরাই দায়ী থাকেন। একজন স্ত্রী হিসাবে আপনি ঘরে যে পরিবেশ সৃষ্টি করে রেখেছেন তা আপনার স্বামীর সাংসারিক কাজকর্মকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করবেই। আমরা স্ত্রীরা কামনা করি যে নিজের এলাকায় তারা উন্নতি করুক আর পারদর্শিতা অর্জন করুক আমাদের কামনা পূর্ণ করা সম্ভব হবে যদি আমরা ঘরের পরিবেশেকে শান্তিপূর্ণ আর মধুময় করে তুলতে পারি। স্ত্রী হিসাবে আমাদের কাজ হবে পরম নিষ্ঠায় স্বামীর দৈহিক আর মানসিক শক্তি বাড়িয়ে তোলা এবং তাকে রক্ষা করার গুরুদায়িত্ব পরম স্নেহে পালন করা। যে স্ত্রী তার সংসারে এমন মধুর পরিবেশ সৃষ্টি করতে জানেন ড. পাসিনোর মতে, তিনিই তার স্বামীর জীবনের শূন্যতা পূরণ করতে পারেন, আর গৃহিণী হিসাবে নিজের দায়িত্ব আর ভূমিকাটির কথাটিও উপলব্ধি করতে পারেন।

৫। একটি অনুভূতি ও নিজের সংসার : নিজস্ব পারিবারিক গৃহ হল এক সুখের আকর। এখানে এক অপূর্ব অনুভূতি বিরাজ করে। আর সেই চমৎকার অনভূতি গৃহকর্তাকে দেয় সুখানুভূতির পরশ। কিন্তু কোনো সময় যদি নিজের বাড়িতে পরিবারের কর্তাব্যক্তি তার স্ত্রীর কুশাসনের স্বীকার হন তখন তাঁর মন থেকে সমস্ত শান্তি বিদায় নেয়। আর এর পরিণতিতে এমন ঘটনাও বিচিত্র নয় যে তিনি সব কিছু থেকে অব্যাহতি পেতে চাইবেন। সংসারের কাজে অথবা পরিবারের কারো জন্য কিছু প্রয়োজন হলে সবসময় স্বামীর মতামত নেওয়াই ভালো। নিজের দায়িত্বে সবকিছু কেনাকাটা করে পরে বিলের টাকা মেটানোর সময় স্বামীকে বলবেন না।

মনে রাখবেন, আপনার হাসিমুখে যতই ভালবাসার ঝিলিক থাকুক, কোনো স্বামীই মনে মনে তার তারিফ করেন না।

আশ্চর্য রকম আকর্ষণীয় সোফা না কেনা হলে আপনি হয়তো পছন্দ করবেন না, তবুও স্বামীর কেনা দোলনা চেয়ারটি আপনাকে ভালো মনেই গ্রহণ করতে হবে। একে একে দেখতে পাবেন আপনার স্বামীর রুচিজ্ঞান আপনারই মতো প্রখর, প্রশংসনীয় হয়ে উঠেছে।

ঘর-সংসার সম্বন্ধে বেশি আলোচনা না করে আমাদের মনে রাখা দরকার যে, সমস্ত পদক্ষেপের মূল উদ্দেশ্য হল গৃহকে সুন্দর আর নিরাপদ করে তোলা।

স্বামীকে সুখী করতে হলে কিছু জিনিস আমাদের মনে রাখতে হবে তা হলো:

১। গৃহ বা সংসারকে চিত্তবিনোদনের ক্ষেত্রে পরিণত করুন।

২। সুখ ও শান্তির ব্যবস্থা করুন।

৩। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা আর নিয়ম মেনে চলুন।

৪। সংসারকে ঝগড়া-বিবাদহীন শান্তির নীড় করে তুলুন।

৫। দুজনের মিলিত প্রচেষ্টায় সংসারকে আনন্দময় করে তুলুন।

গল্পের বিষয়:
অনুবাদ
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত