২৬. কীভাবে স্বপ্নের নীড় গড়বেন
আজকাল সুখী গৃহ, স্বপ্নের নীড় রচনার জন্য মহিলারা শ্রদ্ধাভাজন হন না একথা বা অভিমত বহু বিখ্যাত সমাজতত্ত্ববিদৃই প্রকাশ করে থাকেন। স্ত্রী হিসাবে নারী জীবনের এই প্রাথমিক দায়িত্ব সম্পাদন করার প্রতি আমরা যতই উদ্যোগ গ্রহণ করি না কেন, তার প্রতি সামাজিক ভাবে একেবারেই কোনো রকম গুরুত্ব দেওয়া হয় না। এর ফলে মহিলারা যেন অসহায় আর আহত বোধ করেন। কোনো মহিলা যখন নিজেকে গৃহবধু বলে পরিচয় দিতে যান তার গলায় যেন ক্ষমা প্রার্থনার সুর বেজে ওঠে। কিন্তু মনে হয় যে মহিলা স্ত্রীর ভূমিকা পালন করার মধ্যে দিয়ে গৃহস্থালির কাজ সম্পন্ন আর পরিবারের লোকজনের পরিচর্যার জন্য তার সমস্ত সময় আর কর্মশক্তি ব্যয় করেন তার গর্বই বোধ করা উচিত। কোন সংসারে কত্রীকে বিভিন্ন ধরনেরই না কাজ করতে হয়। প্রতিনিয়ত তাকে যে ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হয় তার জন্য কোনো পেশাদার অভিযানের থেকে প্রয়োজন হয় অনেক বেশি মেধা আর বহুমুখী নজর। কোনো গৃহকর্ত্রীর জীবনকে যদি আমরা ঠিকভাবে লক্ষ্য করে যাই তবে অবাক না হয়ে পারা যায় না।
লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, কোনো গৃহবধূর কাজ অফিসের কর্তাব্যক্তির চেয়ে অনেক অনেক বেশি। ব্যাপারটা ভাবতে খুব অবাক লাগে যে বেচারী গৃহবধূকে কেবল চালাক, চটপটে, কর্মদক্ষ হলে হবে না তাকে আবার সুন্দরী আর মোহময়ী হতে হবে স্বামীর মনোরঞ্জনের জন্য। তাই বলছি, স্ত্রী হিসাবে আমরা যে কখন কোন কাজে অনভ্যস্ত হয়ে পড়ি তাতে আশ্চর্য হওয়ার কিছুই নেই। আমার মনে হয়, আমরা খুবই আনন্দ পেতে পারতাম যদি বছর বছর গৃহকর্ত্রীদের বিশেষত তরুণী গৃহবধূদের বাৎসরিক পুরস্কার দেওয়ার ব্যবস্থা থাকতো। কেননা, একজন গৃহবধূ অনেক বেশি বিচক্ষণ, আর তার দক্ষতাও প্রতিভার অধিকারী।
এবারে আমরা যে প্রশ্নটি রাখবো তা হল সংসার গড়ে তোলার ব্যাপারে আপনার ভূমিকা আপনার স্বামীর সাফল্যের উপর কতটা প্রভাব বিস্তার করে থাকে? এই প্রশ্নের উত্তরে আমি উওম্যান দি লষ্ট সেক্স গ্রন্থের রচয়িতা বিখ্যাত ডা. ফানহ্যাম-এর বক্তব্য উদ্ধৃত করছি। তাঁর বক্তব্য হল, একজন পুরুষ যা আয় করেন তার স্ত্রী বিবেচনা আর কাজের মধ্যে দিয়ে এর কার্যকারিতা শতকরা ত্রিশ থেকে প্রায় ষাট ভাগ বেড়ে যায়। সাংসারিক অভিজ্ঞতা থেকে স্পষ্টভাবেই উপলব্ধি করা যায় যে, উপার্জিত অর্থ স্ত্রীর মাধ্যমে খরচ হলে সপ্তাহ বা মাস ধরে সংসারে অর্থের কোনো অভাবই বোঝা যায় না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, সঞ্চয়ের পরিমাণ বেড়ে গেছে।
আমেরিকার বিখ্যাত লাইফ পত্রিকায় ‘উওম্যানস্ ডিলেমা’ শীর্ষক কোনো একটি প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয় যে, একজন পুরুষ তার ঘরে স্ত্রীর কাছ থেকে যে সেবা যত্ন আর সহযোগিতা পেয়ে থাকেন তার জন্য তিনি যদি নগদ অর্থ ব্যয় করতেন, তাহলে তাকে খরচ করতে হতো বছরে কম করেও প্রায় ৬০ হাজার মার্কিন ডলার। এই তথ্যটি প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৪৭ সালে ১৬ই জুন তারিখে।
অনেক বিখ্যাত মানুষের জীবন অগ্রগতি আর খ্যাতি মুলে রয়েছেন তাঁদের স্ত্রীরা। এসব মহিলারা অবলা গৃহবধূদের জীবনধারাকে নতুন অর্থ আর গৌরবে সমৃদ্ধ করে তুলেছেন। উদাহরণ হিসাবে একজন অবলা গৃহহ বলবো। প্রে
তিনি হলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোয়াইস্ট ডি, আইজেন হাওয়ারের স্ত্রী। টুডেজ উইমেন’ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রবন্ধে মিসেস আইজেন হাওয়ার গৃহবধু হিসাবে তার দৃষ্টিভঙ্গি আর অনুভূতির এক চমৎকার বর্ণনা করেছেন। তাঁর অভিমত হল এই যে, একজন মহিলা জীবনে যা কিছু দেয় তার মধ্যে সবেচেয়ে সেরা বস্তু হল কোনো গৃহবধূর জীবনের গৌরবময় ভূমিকা। কেননা, এটা অত্যন্ত বিবেচনা-প্রসূত আর মহত্ত্বের পরিচয় যে বাড়তি লোভ ত্যাগ করে একজন গৃহবধূ স্ত্রী হিসাবে সংসারের কাজ করাকেই অনেক বেশি প্রয়োজন বলেই ভাবেন। আর এটাই সংসারকে আনন্দময় করে তোলে তাতে সন্দেহ নেই। এর মধ্যে দিয়ে একজন স্ত্রী অনায়াসেই পেতে পারেন নিবিড় এক প্রশান্তি আর রামধনুর স্পর্শ।
একজন অবলা গৃহবধূ হিসাবে মিসেস আইজেন হাওয়ার চেষ্টা করেছেন। এক সুখী আর সমৃদ্ধ কর্মময় চমৎকার গৃহাঙ্গন রচনা করতে। তিনি তাঁর স্বামীকে আমেরিকার সর্ব বৃহত্তম রাষ্ট্রীয় প্রাসাদ হোয়াইট হাউসে প্রবেশ করতে সাহায্য করেছেন। স্ত্রীর সহায়তায় মি. আইজেন হাওয়ার হন আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট।