স্ত্রী যখন বান্ধবী: ২৪. স্বামীকে উৎসাহ দিন

স্ত্রী যখন বান্ধবী: ২৪. স্বামীকে উৎসাহ দিন

২৪. স্বামীকে উৎসাহ দিন

একজন মানুষকে যে কোনো ভাবে সহযোগিতা করার অর্থই হল তাকে সুখী করা। সেই জন্য স্ত্রী হিসেবে আপনার উচিত স্বামীর যে সমস্ত ব্যক্তিগত ইচ্ছা থাকে তাকে বাস্তবে রূপায়িত করা। আপনার কাজ হবে স্বামীকে অনুপ্রাণিত করা। অ্যান্ডে মাওরিচ তাঁর ‘দি আর্ট অফ ম্যারেজ’ বইতে বলেন, কোনো বিবাহিত মানুষ সুখী হতে পার না, যদি-না সেই আনন্দে দুজনেরই সমান ভাগ থাকে। এটা কখনোই সম্ভব নয় যে দুজন মানুষের ধ্যান-ধারণা মনোভাব সবই একই রকম হবে। সেই কারণে স্বামী যে ধরনের বাসনা মনে মনে পোষণ করেন তাকে তাই করতে দেওয়া উচিত। এক্ষেত্রে কোনোরকম হিংসা পোষণ করা ঠিক নয়।

এটা খুবই সত্য যে, কোনো লোককে শখ বশত তার দৈহিক ও মানসিক শান্তি পাওয়ার সুযোগ সব সময়ই দেওয়া চাই, সেই কাজটি থেকে লোকটিই যে কেবল উপকৃত হন তা মোটেই নয়। তার পরিবারের সকলে যেমন, স্ত্রী ছেলেমেয়েরাও সমানভাবে উপকৃত হয় ও অংশীদার হয়।

যে সমস্ত স্ত্রীরা স্বামীদের বিভিন্ন শখে বা ইচ্ছাতে উৎসাহ দেন-তাদের স্বামীরা নিঃসন্দেহে স্ত্রীর অনুরক্ত থাকেন।

মনস্তাত্ত্বিকদের মতে, কোনো মানুষ যদি তাতে বেশি রকম কাজের বদলে শখের দিকে আগ্রহী হয়ে ওঠে তাহলে বুঝতে হবে কোথাও কোনো গোলমাল রয়েছে। এই গোলমালের মূল খুঁজে বের করা প্রয়োজন। আর এটা করার পরেই তাকে কাজে আগ্রহী করে তোলা সম্ভব হবেই। কারণ শখ কোনো কাজ নয়, বরং শখের সাহায্যে মূল কাজের আনন্দের রসদ সগ্রহ করা হয়

মিসেস ক্লার্ক ছিলেন চীনা বয়ন বিভাগের একজন কর্মী। জাপানিদের হাতে তারা সকলেই বন্দি হন। বন্দি অবস্থায় তিনি অন্যান্য সব সহ-বন্দিদের কাছে সাহিত্য সম্বন্ধে বিভিন্ন রকম কথা শোনাতেন, বক্তৃতা করতেন-এতে বন্দিরা তাদের সাময়িক দুঃখ ভুলে আনন্দ লাভ করত। মিসেস ক্লার্ক জাপানি কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে বন্দিদের সামনে বন্দি শিবিরে একটা গানের ‘কোরাস্ সঙ্’ গড়ে তোলেন। ওই দলটি বড়দিনের সময় ব্যারল, নাচগান ইত্যাদিতে অংশ গ্রহণ করে বন্দিদের আনন্দ দান করত।

এর সবই সম্ভব হয়েছিল মাত্র একটা কারণে। প্রত্যেকটি মানুষের শখ থাকা একান্ত দরকার। কারণ এই শখ মানুষকে অবসর মুহূর্তগুলো আনন্দে পূর্ণ করে তোলে।

কিছু পুরুষ স্বামী হিসেবে বিচিত্র স্বভাবের মানুষ হয়ে থাকে। তাদের দেখা গেছে, রাতের বেলায় ছেলেদের সঙ্গে খেলে বা মাছ ধরে কাটাতে ভালবাসে। আবার কেউ কেউ আছেন যারা সময় পেলেই গোয়েন্দা কাহিনীতে ডুবে থেকে সময় কাটাতে চান।

স্বামীরা তাদের আনন্দময় অবসর সময় ধরা যায় একাকীই কাটান। স্ত্রীরা আর নিপুণ গৃহিণীরা ব্যাপারটা একটু লক্ষ্য করবেন।

আমি আমার বিশ বছরের অভিজ্ঞতায় দেখেছি যে, আমার স্বামী প্রত্যেক শুক্রবার তার বৃদ্ধ বন্ধু হোমারের সঙ্গেই কাটিয়েছেন। আমরা কেবল ছুটির অন্যান্য দিন একসঙ্গে কাটাতাম। শেষ পর্যন্ত ঠিক করলাম আমি শুক্রবার বিকেলটা একাকী কাটাব। আমার স্বামী যখন তার বন্ধুর সঙ্গে বাইরে সময় কাটান তখন তার চালচলন হয়ে ওঠে বাচ্চার মতো।

স্বামীরা আসলে আনুষ্ঠানিক কাজকর্মের বিরোধী হয়ে ওঠে। স্ত্রী হিসেবে যদি আমরা তাদের শখের জন্য কিছু সময় দিই প্রয়োজন মতো স্বাধীনতাও দিই তাহলে এ কথা নিঃসন্দেহে ঠিক যে, তাদের ঢের বেশি রকম আনন্দিত আর খুশি দেখতে পাব।

এ কথা মনে রাখা প্রয়োজন যে, একজন হতাশাগ্রস্ত মানুষের চেয়ে একজন সুখী মানুষ হাজার গুণ বেশি কর্মক্ষম।

গল্পের বিষয়:
অনুবাদ
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত