স্ত্রী যখন বান্ধবী: ১৬. আপনার কাজ কি স্বামী-স্বার্থ বা রুচি বিরোধী

স্ত্রী যখন বান্ধবী: ১৬. আপনার কাজ কি স্বামী-স্বার্থ বা রুচি বিরোধী

১৬. আপনার কাজ কি স্বামী-স্বার্থ বা রুচি বিরোধী

পারিবারিক জীবনে বহু স্ত্রীকেই একটা প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয় তা হল নিজের কাজ সম্পর্কে। অর্থাৎ স্ত্রীর যদি নিজের জীবিকা বা শখের জন্যেও কোনো চাকরি বা নিজস্ব কোনো কাজের ধারা থাকে সেই কাজ বা চাকরি তিনি ত্যাগ করতে রাজি কিনা।

মনে রাখবেন কোনো মানুষের সফলতার ক্ষেত্রে যে কোনো রকম আংশিক সহায়তা একটা পুরো কাজের সমান সাহায্য দিতে পারে। এ ব্যাপারে এক সুন্দরী তরুণীর জীবনের উদাহরণ তুলে ধরছি। তরুণীর মনের ধারণা ছিল যে, নিজের ব্যক্তিগত জীবনযাত্রার বিষয়কেই প্রথম স্থান দিতে হবে। অথচ অদ্ভুত ব্যাপার হল যে কোনো এক বিশেষ পরিস্থিতিতে তার এই ধ্যান-ধারণা একেবারে পরিবর্তন হয়ে যায়।

জেট্টা ওয়েলস ছিলেন বিখ্যাত আবিষ্কারক কার্বেথ ওয়েলসের স্ত্রী। অতি সুন্দরী জেট্টা ওয়েলসের নিজস্ব এক আকর্ষণীয় জীবন নির্বাহের উপায় ছিল। কাবেথ ওয়েলসের সঙ্গে বিয়ের আগে থেকেই এটা ছিল।

জীবনটাকে সুন্দরভাবে গড়ে তোলার জন্য জেট্টাওয়েলসের সত্যিই কৃতিত্ব ছিল। তিনি ছিলেন। কৃতকর্মা মহিলা। তাঁর কাজ ছিল বেতারে শিক্ষাদান করা। অনেক সফল বিখ্যাত মানুষের ব্যবসার কাজও তিনি তত্ত্বাবধান করেছিলেন। এভাবেই একদিন কার্বেথ ওয়েলসের সঙ্গে তার পরিচয় ঘটে।

কার্বেথ ওয়েলস তার কাছে উন্নতির পথ খুঁজতে এসেছিলেন। এভাবে দুজনের মধ্যে ভালবাসা জন্মায় এবং দুজনে বিয়ে করেন। বিয়েতে একটা শর্ত ছিল বিয়ের পর জেড়া ওয়েলসের উদ্দীপনাময় কাজের পূর্ণ স্বাধীনতা থাকবে।

এরপর কোনো এক বছর জুন মাসে কার্বেথ ওয়েলস রওনা হন রাশিয়া আর টোকিও শহরের উদ্দেশ্যে। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল মাউন্ট আরারাথ পর্বতের শৃঙ্গে ওঠা। স্ত্রী জেষ্ট্রার পরিকল্পনা ছিল বাড়িতে থেকে নিজের ব্যবসা আর কাজকর্ম চালানো। কিন্তু ওয়েলস যখন যাওয়ার ব্যাপার শেষ করে ফেললেন, জেট্টা ওয়েলস পিছিয়ে থাকতে পারলেন না। তিনি পাহাড়ের হাতছানি আর স্বামীর সাহচর্য এড়িয়ে যেতে না পেরে এক দুঃসাহসী অভিযানে রওনা হলেন। সে অভিযান ছিল ভয়ঙ্কর কঠিন।

অভিযান শেষে জেট্টা ওয়েলস নিজের জায়গায় ফিরে আসার পর বুঝলেন যে, এক অদ্ভুত আনন্দময় অভিজ্ঞতা তিনি সঙ্গে নিয়ে এসেছেন। এর তুলনায় তার নিজের কাজ অতি সামান্য। এই আশ্চর্য রকম অভিজ্ঞতার ফলে জেট্টা ওয়েলস এর পর স্বামীর সঙ্গে পুনরায় মেস্কিকোর এক দুর্গম পর্বতে আরোহণ করার জন্য অভিযানে অংশ নেন। এই অভিযানও ছিল অত্যন্ত বিপদসংকুল আর কঠিন। এই বিপদের মধ্যেও তিনি যে আনন্দ পেয়েছিলেন, যে শিহরণ অনুভব করেছিলেন তার তুলনা মেলে না।

একজন আধুনিকা স্ত্রী হয়েও জেটা ওয়েলস উপলব্ধি করেছিলেন, কার্বেথ ওয়েলসের মতো মানুষের স্ত্রী হওয়া কত ভাগ্যের আর গৌরবের-তার তুলনায় তার নিজের আগের জীবনবেদ কত তুচ্ছ। এরপর অভিযান শেষে ফেরার পর জেট্টা ওয়েলস তার ব্যক্তিগত কাজের অফিস বন্ধ করে দিয়েছিলেন। তখন তার মনে একটাই মাত্র আকাঙক্ষা জন্ম নেয় যে, পৃথিবীর যে কোনো জায়গায় যাওয়ার স্বাধীনতা পাওয়া। এরপর থেকে আফ্রিকার অরণ্যময় এলাকা, সেখানকার দুর্গম পাহাড়ী অঞ্চল, জাপান, আইসল্যান্ড, কাশ্মীর উপত্যকা প্রভৃতি জায়গা এই পরিব্রাজক দম্পতি ঘুরে বেড়িয়েছেন।

নিজের সম্বন্ধে বলতে গিয়ে জেট্টা ওয়েলস বলেন, আমার আগের জীবনের কথা ভাবলে আশ্চর্য হয়ে পড়ি। যখন ভাবতাম আমার নিজের কাজ কত আনন্দের ছিল। সেটা কতটা যে ভুল আজ ভাবলে খুব অবাক লাগে।

জেট্টা ওয়েলসের মত মেনে চলার ফলে আমি নিজে যে মহামূল্যবান অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি আজ মনে হয় আমার একাকী গড়ে তোলা জীবন যাত্রাকেই যদি আঁকড়ে ধরতাম, তাহলে কী আনন্দ আর সুখ থেকেই না বঞ্চিত হতাম। আমি আমার স্বামীর রুচির সঙ্গে আমার নিজস্ব রুচি মিলিয়ে তার জয়যাত্রায় অংশ নিয়ে তারই সাফল্যের ভাগি হয়েছি। তার সুখ দুঃখের অংশীদার হয়েছি। আবার যখন নৈরাশ্য এবং কঠিন মুহূর্তের মুখে পড়েছি তখন দুজনে একই সঙ্গে তার সামনে দাঁড়াতে সামথ্যও হয়েছি, যুদ্ধ করেছি।

জেট্টা ওয়েলস তাঁর লেখা বইখানি তার প্রিয়তমা স্ত্রী জেট্টা ওয়েলসের নামে উৎসর্গ করেছিলেন।

মিসেস জেট্টা ওয়েলস বলেছেন—’আমার স্বামীর কাছ থেকে পাওয়া এই ভালবাসার দান আমাকে কৃতজ্ঞতা আর সুখ যতখানি দিতে পেরেছে আর কোনো কিছুই আমাকে ততখানি আনন্দ দিতে পারে নি।‘ যারা স্বামীর সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য সম্পর্কে মনোযোগ দিতে পারেন, স্বামীর কাজকে যারা ভালবাসেন, তাদের জীবন এমনই আনন্দময় হয়ে ওঠে। এটাই শ্রেষ্ঠ পুরস্কার পাওয়া স্বামীর কাছ থেকে।

এ ব্যাপারে একটা কথা বলা আছে। যে সব স্ত্রী অবস্থার বা অন্য কোনো চাপে পড়ে বাইরের কাজের জীবন বেছে নিতে বাধ্য হন তাদের আমি কোনোভাবেই ছোট করতে চাই না।

আমার মতে, প্রত্যেক, স্ত্রীরই নিজের পায়ে দাঁড়ানোর ক্ষমতা থাকা উচিত। আমরা কিন্তু কেউ জানি কখন কাকে জীবিকার সন্ধানে নামতে হবে। সব অবস্থার জন্য তৈরি থাকা বুদ্ধিমতীর কাজ।

আমরা যারা স্ত্রীর ভূমিকা পালনে আগ্রহী,স্বামীর কৃতকার্যতাকে কীভাবে সাহায্য করতে পারি সে বিষয়ে যখন আমরা আলোচনার সূত্রপাত করেছি। একটা ব্যাপার আমাদের উপেক্ষা করার উপায় নেই, সেটি হল-স্ত্রীর মন আত্মকেন্দ্রিক হওয়া উচিত হবে না। এমন কোনো স্ত্রীলোক পাওয়ার উপায় নেই, যিনি শুধু নিজের স্বার্থে কোনো বড় কাজে হাত দিতে চান। তবে বহু ক্ষেত্রেই ব্যতিক্রম থাকে।

স্বামী স্ত্রী দুজনের উদ্দেশ্য ও স্বার্থ যদি এক থাকে তবে সুন্দরভাবে তাদের জীবন গড়ে উঠতে পারে। স্বামী স্ত্রী দুজনকে একই পথের পথিক হতে গেলে এই নিয়মটি মেনে চলতে হবে-যদি আপনার নিজের ব্যবসা বা কাজকর্ম আপনার স্বামীর সুখ ও স্বার্থের পরিপন্থী হয়, তাহলে আপনার নিজের কাজটি ত্যাগ করাই ভালো।

গল্পের বিষয়:
অনুবাদ
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত