১১. হঠাৎ দুর্যোগে মন শক্ত রাখুন
নিউইয়র্ক শহরের জোসেফ আইজেনবার্গ এক কাপড় ধোলাইয়ের কারখানায় কাজ করত। হঠাৎ তাকে বরখাস্ত করা হয়। আইজেনবার্গ দম্পতি চিন্তায় ভেঙে পড়ে। শেষ পর্যন্ত জমা সামান্য পুঁজি দিয়ে তারা ছোট একটা রুটির কারখানা কিনে নিল। তারা আগ্রহ নিয়ে কাজ শুরু করল। মিসেস আইজেনবার্গ বাড়ির কাজকর্ম সামলে রুটির কারখানায় কাজ করে চললো। আট-দশ ঘন্টা কাজ করে মিসেস আইজেনবার্গ নিরুৎসাহ হয়ে পড়লো না। আনন্দের সঙ্গেই কাজ করে গেল। পাঁচ বছরের মধ্যে তাদের ব্যবসা উন্নতির মুখ দেখলো। দুর্যোগের মধ্যে কখনোই ভেঙে পড়া ঠিক নয়, তাতে জীবন ব্যর্থ হয়ে যেতে পারে।
আর একটি কাহিনী বলবো। মহিলার নাম মিসেস উইলিয়াম আর কোলম্যান তিনি থাকতেন টেনেসিতে। মিসেস কোলম্যান শুধু যে স্বামীর কাজেই সাহায্য করেন তাই নয়, নিজের অবলম্বিত ব্যবসার মধ্যে দিয়ে তার সমস্ত উপার্জনই তিনি পরিবারের স্বচ্ছলতার কাজে লাগিয়েছিলেন। মিসেস কোলম্যান ছিলেন একজন নার্স।
১৯৩৬ সালে মিসেস কোলম্যান যখন মি. কোলম্যানকে বিয়ে করেন তখন উইলিয়াম কোলম্যান দিনের বেলা চাকরি আর রাতের বেলা নৈশ স্কুলে শিক্ষালাভ করতেন। মি. কোলম্যান শত বিপদেও একদিনও অনুপস্থিত থাকেন নি। ছ’বছর পর তিনি মা স্ত্রী ও মেয়ের আনন্দের পরিপ্রেক্ষিতে ডিপ্লোমা গ্রহণ করেন। একদিন ছিল যখন বিল কোলম্যান রঙ না করা লোহার রান্নার আসবাবপত্র বিক্রি করেছিলেন আর সে কাজে তাকে সাহায্য করতেন তারই স্ত্রী। এরপর একসময় বিলের বাবা মারা যান। বিলের ভাইয়ের একটা ছাপাখানা ছিল, বিল ও তাঁর স্ত্রী ভাইয়ের অংশ কিনে নেন। হেলেন কোলম্যান আমাকে লিখেছিলেন: আমি এটা বুঝতে পেরে আনন্দিত যে আমাদের স্বাস্থ্য যদি ভালো থাকে তাহলে পাঁচ বছরের মধ্যেই আমাদের বাড়ি আর ব্যবসার ঋণ শোধ করতে পারবো। তারপর আমার চাকরি ছেড়ে দিয়ে বিল আর ছেলে-মেয়েদের জন্য সেবার কাজ করতে শুরু করব।
মিসেস কোলম্যান আর মিসেস আইজেনবার্গের জীবনের এই উদাহরণ আমাদের শিক্ষণীয়। একজন সতিকার বাস্তববাদী স্ত্রীর কাহিনী।
জীবনে এমন অনেক সময় আসে যখন স্ত্রীকে স্বামীর চাকরিহীন বা অসুস্থতার জীবনে সাময়িকভাবে কাজে লাগাতে হয়। স্বামীর কাজে সহায়তা করে তার অংশীদার হওয়া আনন্দের কাজ, এর ফলে জীবন সুখময় হয়ে ওঠে।
এক মহিলার কথা এখানে উল্লেখ করবো। বিপদের মধে পড়ে ভদ্রমহিলা চমৎকার মানসিক শক্তির পরিচয় দিয়ে কাজ করে যান আর পরিবারকে বাঁচানোর জন এক নতুন উপায় উদ্ভাবন করেন। মহিলার নাম মিসেস জিনা স্টার্ন। তিনি নিউইয়র্কের ৪২২ স্ট্যানলি অ্যাভিনিউয়ের, ওয়েস্টফিল্ডে স্বামী ও পাঁচটি সন্তান নিয়ে বাস করেন।
মিঃ স্টার্ন পেশায় একজন সেলসম্যান। কঠিন রোদে আক্রান্ত হয়ে তিনি কাজ করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছিলেন। স্ত্রী এবং সন্তানদের ভরণপোষণ তার পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়ে।
এই অবস্থায় মিসেস স্টার্ন খুবই চিন্তায় পড়ে যান। তিনি ভাবতে লাগলেন কী করা যায়। তার একটি বিশেষ গুণ ছিল। তিনি খুব ভালো রান্না করতে পারতেন। ব্যাপারটা তিনি কথায় কথায় কয়েকজন পরিচিত মানুষদের বলে ফেলেন। তারা তাদের দেওয়া পার্টির খাদ্য সরবরাহের দায়িত্ব এরপর মিসেস স্টার্নকেই দিতে শুরু করেন। মিসেস স্টার্নের রান্না করা চমৎকার সুস্বাদু খাবার সকলের দারুণ পছন্দ হল। অল্প দিনের মধ্যেই তার পরিচিতি আর সুনাম ছড়িয়ে পড়ল। এরপর অযাচিতভাবেই মিসেস স্টার্ন খাবারের বায়না পেতে লাগলেন। এক সময়ে মিসেস স্টার্ন একজন বিখ্যাত খাদ্য সরবরাহকারিণী হয়ে উঠলেন। বর্তমানে মিসেস স্টার্ন তাঁর প্রসিদ্ধ শীতল বিস্কুটের প্যাকেটেও পার্টি উপলক্ষ্যে খাবার সরবরাহ করে থাকেন প্রায় পঞ্চাশ মাইল এলাকা জুড়ে। মিসেস স্টানের ব্যবসা এতো জনপ্রিয় হয়ে ওঠে যে শেষ পর্যন্ত তাঁর স্বামী মি. স্টার্নকেও কাজে নামতে হল। তিনিই শেষ পর্যন্ত হয়ে উঠলেন স্ত্রীর প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার।
মানুষের জীবনে দুঃসময় যে কোনো মুহূর্তে আসতে পারে। আচমকা এমন দুর্যোগ এলে ভেঙে না পড়ে মন শক্ত রাখতে হবে। এই ধরনের কোনো অবস্থার জন্য সবাইকেই কিছু ভাবনা-চিন্তা করতে হবে অর্থ উপার্জনের একটা বিকল্প পথ অনুসন্ধান করতে হবে। যাতে বিপদের সময় সেই বাধা অতিক্রম করা যায়।
এই পরিচ্ছেদ শেষে এই কথাই আমরা বলবো যে, স্বামীকে অতিরিক্ত সাহায্য দানের চারটি নিয়ম আমাদের মনে রাখা প্রয়োজন :
১। স্বামীর কাজ সম্বন্ধে স্ত্রী হিসেবে অবহিত থেকে তাকে সাহাযের জন্য এগিয়ে দিতে হবে।
২। স্বামীর সেক্রেটারীর সঙ্গে ভালো ব্যবহার করতে হবে।
৩। শিক্ষার সুযোগ নিয়ে স্বামীকে তাতে লেগে থাকতে অনুপ্রেরণা আর উৎসাহ দিতে হবে। নৈশ স্কুল বা এমন কী বাড়িতে বসেও তিনি যাতে বাড়তি শিক্ষালাভ করতে পারেন তার ব্যবস্থা করতে হবে।
৪। আকস্মিক কোনো দুর্যোগ বা অসুবিধার জন্য মনকে তৈরি করে রাখতে হবে। প্রয়োজনে কাজে আত্মনিয়োগ করার উদ্দেশ্যেও নিজেকে তৈরি করতে হবে। এজন্য নিজের কর্মকুশলতা যাতে বাড়ে সে দিকে চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।