স্ত্রী যখন বান্ধবী: ০৬. স্বামীর কাজে সহায়তা করুন

স্ত্রী যখন বান্ধবী: ০৬. স্বামীর কাজে সহায়তা করুন

০৬. স্বামীর কাজে সহায়তা করুন

বিখ্যাত লর্ড চেষ্টারফিল্ড সুন্দর একটি মন্তব্য করেছিলেন। যেমন–প্রত্যেক মানুষই বাস্তবিক পক্ষে দুজনে মানুষ-বর্তমানে সে যে রকম রয়েছে অর ভবিষ্যতে সে যেরকম মানুষ হতে চায়।

আমরা প্রায়ই দেখি মানুষ যা নয় তাই হতে চায়। যে নিজের শক্তিতে কোনো রকম বিশ্বাস রাখতে পারে না সেও আত্মবিশ্বাসী হতে চায়। এই আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠা মোটেই কিন্তু অসম্ভব কাজ নয়। কোনো দোষত্রুটিযুক্ত মানুষের মধ্যে পরিবর্তন আনতে গেলে সহানুভূতির সঙ্গে তার বিচার করা প্রয়োজন। এই কাজটি সহজ ভাবে করতে পারেন একমাত্র তারই আদর্শ স্ত্রী। স্বামীকে সুপরামর্শ দিয়ে তার সুপ্ত মনোভাব জাগিয়ে তুলবেন তার স্ত্রী। এ বিষয়ে মার্জোরি হোমস বলেন, এমন কোনো পুরুষ বা স্বামী নেই যিনি স্ত্রীর প্রশংসা শোনার পর আনন্দে উচ্ছ্বসিত না হন।

একমাত্র স্ত্রীই পারেন সকলের চেয়ে বেশি স্বামীর পরিবর্তনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে। বেশির ভাগ স্বামীই তাদের পরিবর্তনের ক্ষেত্রে স্ত্রীর কাছ থেকে চমৎকার সহায়তা আর পরামর্শ লাভ করতে পারে স্ত্রী যদি সহানুভূতিসম্পন্ন হন।

মি. পার্কস বলেন, স্বামীর জীবনযাত্রার ওপর স্ত্রীর দৃষ্টিভঙ্গি ও স্ত্রী যতদূর পর্যন্ত স্বামীর মনোবলের পরিচয় পান তার সাহায্যেই স্বামীর ক্ষমতা পরিমাপ বা সীমা নির্দেশ করা যায়।

মি. পার্কস আরও বলেন যে, আমার নিজের জীবনেই এর উজ্জ্বল উদাহরণ আছে। আমার স্ত্রী অনবরত উৎসাহ দান আর প্রেরণা যোগানোর মধ্যে দিয়েই আমার জীবনে সফলতা আসে। আমার কোনো অর্থ, শিক্ষা-সম্পদ কিছুই ছিল না। একমাত্র যে সম্পদ আমার ছিল তা হল বড় হওয়ান অদম্য স্পৃহা, সফল হওয়ার বাসনা। আমার কর্মশক্তির ওপর আমার স্ত্রীর ছিল অগাধ বিশ্বাস। স্ত্রীর প্রেরণায়, তার অকুণ্ঠ পৃষ্ঠপোষকতায় আমি ধীরে ধীরে সাফল্য লাভ করতে থাকি। আমার সৌভাগ্য আমার স্ত্রী, এ কথা আমি অকপটে স্বীকার করছি।’

এমন বহু স্বামী-স্ত্রীর কথা শোনা যায় যাদের পারিবারিক জীবন অশান্তিতে ভরা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় স্ত্রীর ভূমিকাই সমালোচনার যোগ্য। এইসব স্ত্রীর জানা একান্তই প্রয়োজন যে স্বামীকে অনুযোগ জানালে সব সমস্যার সমাধান হয় না, বরং তাকে অনুপ্রেরণা যোগালেই সমস্যার সমাধান সম্ভব হয়ে ওঠে।

স্বামীকে অনুপ্রাণিত করার কৌশল :

বিভিন্নভাবে যে কোনো স্ত্রী তার স্বামীর ভবিষ্যৎ জীবনধারাকে অনুপ্রাণিত করতে পারে। প্রথমে যেটি করতে হবে সেটি হল-স্বামীর দোষত্রুটি যদি থেকেও থাকে তবুও সে কথা না তুলে তার প্রশংসার দিকটাকে তুলে ধরা, আর আত্মশক্তিতে বিশ্বাস জন্মানো। স্বামীর গুণের কথা উল্লেখ করে তাকে উন্নতির পথ দেখানো। এর ফলে স্বামীর আত্মবিশ্বাস অনেক গুণে বেড়ে যায়। স্বামী যদি কখনও অকর্মণ্য হন তাহলেও স্বামীকে কোনো সময়ের জন্য অকর্মণ্যতার অপবাদ দেওয়া উচিত নয়। স্ত্রীর কর্তব্য স্বামীর প্রশংসা করা।

মানুষের জীবনের এমন ঘটনাও দেখা গেছে, যে স্ত্রীর প্রশংসা তাকে নিজের প্রতি বিশ্বাসী ও সাহসী করে তুলেছে। এই ধরনের একটা উদাহরণ আমরা লক্ষ্য করি টম জনস্টন নামে একজনের জীবনের ঘটনায়। টম জনস্টন খুব দক্ষ সাঁতারু ছিলেন। তাঁর জীবনে এক দুর্ঘটনা ঘটায় তিনি কিছুটা পিছিয়ে পড়লেও সাঁতার কাটা ছাড়তে পারেন নি। সাঁতারে তিনি অপরিসীম আনন্দ পেতেন।

কোনো-এক ছুটির দিনে টন জনস্টন লক্ষ্য করলেন, যে স্ত্রীর সঙ্গে হেম্পটন সমুদ্র সৈকতে রোদ উপভোগ করার সময় গোসল করতে আসা বহু মানুষ তার দিকে তাকিয়ে তার পায়ের ক্ষত চিহ্নগুলো লক্ষ্য করছে। টম জনস্টনের শারীরিক ত্রুটির কথা বারে বারে মনে হতে লাগলো। এরপর তিনি সমুদ্রতীরে যাওয়া বন্ধ করলেন। তাঁর স্ত্রী সমস্ত ব্যাপারটি ভালোভাবে বুঝতে পেরে এমন সহানুভূতিপূর্ণ কথা বলতে শুরু করলেন যে টম আবার সমুদ্র তীরে যাওয়ার প্রেরণা পান। তাঁর স্ত্রী বলেছিলেন যে, ‘টম, তোমার পায়ের ক্ষত চিহ্ন যে তোমার সাহসেরই প্রতীক। তোমার গৌরবের অংশ ওই ক্ষত চিহ্ন মানুষের কাছ থেকে লুকিয়ে না রাখাই ভালো। তোমার সৌভাগ্য যে এগুলো তুমি একদিন পেয়েছিলে, আজ ওগুলো গৌরবের সঙ্গে ধারণ করো। চল আমরা আবার সমুদ্রের তীরে যাই।

এরপর টম জনস্টন যেন অন্য মানুষ হয়ে যান, তার মনে হতে থাকে সমস্ত ক্ষত চিহ্নই যেন অদৃশ্য হয়ে গেছে।

ডঃ পাওয়ার্স প্রতিটি গৃহিণীকে অনুরোধ করেন যে, তাঁরা যেন প্রত্যেকদিন সকালে এমন কাজ করেন যে, তাঁদের স্বামীরা যেন সারাদিন আবেগমণ্ডিত আর আনন্দপূর্ণ অবস্থায় থাকেন। অনেক বেশি সুখী আর অনুরক্ত স্বামী লাভের ক্ষেত্রে ক্ষেত্রে এই ফর্মুলা ভীষণভাবে কার্যকরী হবে এতে কোনো সন্দেহ নেই। মানুষের ইতিহাসের পাতায় অনেক কাহিনী আছে, যেখানে চেষ্টার ফলে বহু অকৃতকার্য অনায়াসভাবেই সফলতায় মণ্ডিত হয়ে ম্যাজিকের মতোই কাজ দিয়েছে।

সুতরাং আদর্শ স্ত্রীর কর্তব্য হবে অপরের বা স্বামীর ত্রুটির কথা না বলে তার যোগ্যতার স্ফুরণ ঘটানো।

গল্পের বিষয়:
অনুবাদ
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত