০২. এক কাজে সফল হলে আরেক কাজে নজর দিন
একজনের কাহিনী দিয়েই শুরু করা যাক। তার নাম নিক আলেকজান্ডার। আলেকজান্ডারের একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল কলেজের শিক্ষায় সাফল্য লাভ করা। ছেলেটার কপাল মন্দ যে ছোটবেলায় সে এক ছোট অনাথ আশ্রমেই বেড়ে উঠেছিল। সেই অনাথ আশ্রমে ছিল সকাল থেকে সন্ধে পর্যন্ত হাড়ভাঙা পরিশ্রম। দু’বেলা ভালো খাওয়াও জুটতো না। আলেকজান্ডারের লেখাপড়ায় খুব আগ্রহ ছিল। তাঁর ধীশক্তিও ছিল প্রখর। কিন্তু ভাগ্যদোষে দরিদ্র ঘরে জন্মগ্রহণ করায় বেশি দূর পড়াশুনা করতে পারে নি। মাত্র চৌদ্দ বছর, বয়সে হাই স্কুলের শিক্ষা শেষ হতেই তাঁকে জীবিকার জন্য চাকরি করা শুরু করতে হয়। বাধ্য হয়েই তাঁকে এক দর্জির দোকানে সেলাই করার চাকরি নিতে হয়। দীর্ঘ চৌদ্দ বছর তাঁকে সামান্য পারিশ্রমিকের বদলে ঐ সেলাইয়ের চাকরি করে যেতে হয়। এরপর একসময়ে তার ভাগ্য সুপ্রসন্ন হওয়ায় কাজের সময় কিছুটা কমে আসে এবং মাইনেও কিছুটা বাড়ে।
নিক আলেকজান্ডার এক কিশোরীকে বিয়ে করে সংসারী হয়। তাঁর মনে একটা দুঃখবোধ থেকে গিয়েছিল যে, সে কলেজে পড়াশুনা করার সুযোগ পেল না। নিকের স্ত্রী স্বামীর মনের খবর জানতে পেরে ঠিক করলো যে, যেমন করেই হোক স্বামীর জন্য সে কলেজ শিক্ষার ব্যবস্থা করবে।
১৯৩২ সালে হঠাৎ করে একটা সুযোগ এসে গেল তরুণ দম্পতির জীবনে। একটা নিজস্ব ব্যবসা গড়ে তোলার সুযোগ। নিজেদের সঞ্চিত সামান্য টাকা মূলধন করে তারা কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ল। দু’জনে গড়ে তোলে আলেকজান্ডার রিয়েল এস্টেট কোম্পানী, ১০০ নম্বর ওয়েস্ট প্রভিন্স স্ট্রীটে।
বছর দুয়েকের মধ্যেই তাদের ভাগ্যের চাকা ঘুরে গেল। তারা লাভের মুখ দেখতে শুরু করলো। আলেকজান্ডারের স্ত্রী তাঁর ইচ্ছার কথা ভুলে যায় নি। তাই স্ত্রীর ইচ্ছায় আলেকজান্ডার আবার কলেজি শিক্ষা শুরু করেন। একদিকে পড়াশুনা, অন্যদিকে ব্যবসা। থেরেশার তো সুখের কোনো পরিসীমা ছিল না।
নতুন পরিকল্পনা নিতেও ওরা দেরি করল না। সমুদ্রের কাছে ওরা নতুন বাড়ি গড়ে তুলল। ওদের স্বপ্ন কিন্তু থেমে থাকে নি, ইতোমধ্যে ওদের একটা ছোট্ট মেয়ে হয়েছিল। দু’জনে মনস্থ করল মেয়ের শিক্ষার সমস্ত ব্যবস্থা করবে। কিছু অর্থের সমস্যা দেখা দিলেও নিজেদের বাড়ির মধ্যে ভাড়াটে বসিয়ে সে সমস্যা তারা মিটিয়ে ফেললো।
আলেকজান্ডার দম্পতি সত্যিই পরিশ্রমী আদর্শ সুখী পরিবার। উভয়েই ওরা সুখী। ওদের সাফল্যের মূল কথা হল একটাই-নির্দিষ্ট লক্ষ্যকে সামনে রেখে এগিয়ে চলা। কোনো কিছুতেই ভেঙে না পড়া।
পৃথিবীতে এমন অনেক লোক আছে যাদের জীবনে কোনো রকম নির্দিষ্ট লক্ষ্য নেই। তারা গতানুগতিক জীবনযাপন করে। এসব মানুষের কোনো পরিবর্তন ঘটে না। কিন্তু যারা সবসময় সুযোগকে আঁকড়ে ধরতে পারে তাদের পক্ষেই সম্ভব জীবনকে সঞ্জীবিত করা।
নির্দিষ্ট পরিকল্পনা ছাড়া মানুষের জীবনে সাফল্য আসা সম্ভব নয়। তাই যে কোনো মানুষ পরিকল্পনা নিতে পারে। যেমন প্রথম পাঁচ বছরে লাভ করতে হবে কলেজের শিক্ষা আর চাকরিতে উন্নতির চেষ্টা। পরের দশ বছরে কাজ হবে কোনো প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার হওয়ার চেষ্টা। অর্থাৎ প্রত্যেক মানুষের সামনে থাকা চাই ধ্রুবতারার মতো উজ্জ্বল কোনো নির্দিষ্ট লক্ষ্য, আর তা সফল করার নিদিষ্ট পরিকল্পনা।
বাইবেলে লেখা আছে এই ধরনের এক উপদেশ–যে কাজেই হাত দাও সেই কাজেরই পরিণতির কথা স্মরণ রাখতে ভুলো না। তাহলে অকৃতকার্য হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না। যে সত্যিকারের সফল মানুষ তারও ধর্ম এটাই হওয়া উচিত যে, কোনো কাজে সফল হলেই অন্য একটি কাজে মন দেওয়া। সুতরাং যে কোনো স্ত্রীরই মনে রাখা উচিত যে, তার স্বামী কোনো কাজে সফল হওয়ার সাথে সাথেই অন্য কোনো কাজে তাকে উদ্বুদ্ধ করে তোলা।