২১. ভেসপার রোজই নার্সিংহোমে আসত
ভেসপার রোজই নার্সিংহোমে আসত ফুল নিয়ে, বন্ডকে দেখতে।
আশ্চর্য, বন্ড খুব একটা ফুল ভালোবাসে না। তার কাছে ফুল কেমন এক মেয়েলি জিনিস! তাছাড়া, ফুল মনকে নরম করে দেয়। বন্ড নরম মন চায় না।
তাছাড়া, কাজের দিক থেকে ভেসপার লিন্ড বেশ কয়েকটা ভুল করেছে। এম-এর কাছে রিপোর্টে এখুনি সে সব লেখার খুব প্রয়োজন নেই।
ডাক্তার আশ্বাস দিয়েছেন–শরীরে বড়ো কোনো ক্ষতি হবে না। ধীবে পুরো ফিট হয়ে যাবে। তবে দুর্দান্ত ধকল গেছে, সময় লাগবে।
তবে মনটা বেশি ধাক্কা দিয়েছে। ইস্, তার পৌরুষ কেড়ে নেওয়া–ভাবা যায় না!
ভেসপারকে আকর্ষণীয় মনে হয়েছিল। তাকে কাছে পাওয়ার অনেক সুযোগ এসেছিল–গাড়িতে, ভিলাতে। অবশ্য এখনও সে জানেনা, কেমন মেয়ে ভেসপার, কেমন তার মন।
রিপোর্টটা পাঠাতে হবে। দেরি হয়ে যাচ্ছে।
আটদিন কেটে গেছে। এখন সকাল। রাতে ভালো ঘুম হওয়াতে শরীর-মন দুই-ই সতেজ। ভেসপার লিন্ড এল। ক্রিম রঙের ফ্রক, কালো বেল্ট।
–বাঃ, ভেসপার, বিপদে পড়ে তুমি দেখছি আরও সুন্দর হয়ে উঠেছ। কী করছ তুমি এখন? ভেসপার একটু মনমরা।
–কী আর করব! এখন আমি একা। সমুদ্রের ধারে যাই, বই পড়ি। বেশ কিছু দিন রোদে পুড়েছি, চান করেছি। এখন শুধু বালিয়াড়ির ওপর দিয়ে বেড়াতে ভালো লাগে।
বন্ড চুপ করে শুনছে।
ভেসপার বলল–ডাক্তাব বলেছেন, তুমি শিগগিরই হাঁটা-চলা করতে পারবে। তখন তোমাকে সমুদ্র পারে নিয়ে যাব। সমুদ্রে স্নান করা তোমার পক্ষে ভালো।
–আমার গা এখন ক্ষতবিক্ষত। সমুদ্রস্নানের সময় যে কেউ আমার চেহারার দশা দেখলে আঁতকে উঠবে।
বন্ড ইঙ্গিতে দেখাল। তার নিম্নাঙ্গের অবস্থা, যা চাদরে ঢাকা আছে, আরও ভয়াবহ।
ভেসপার অনুতপ্ত। সে নিজেকে দোষী মনে করছে। দু-হাতে মুখ ঢাকল সে।
বন্ড পরিস্থিতিটা হালকা করার চেষ্টা করল।
–ঠিক আছে। সেরে উঠে আমরা সমুদ্রপারে বেড়াব, স্নান করব। বেশি দেরি নেই।
এরপর অন্য কথা। ল্য শিফ খতমে লন্ডনের প্রতিক্রিয়া ইত্যাদি।
বন্ড জিজ্ঞেস করল–আচ্ছা ভেসপার, তোমাকে নাইট ক্লাব থেকে ওরা কীভাবে ছিনতাই করল?
–মাথাটা ঠিক ছিল না। অন্যমনস্ক অবস্থায় বাইরে আসতেই পাশের গাড়ি থেকে দুটো লোক ঝাঁপিয়ে পড়ল। আমি ভাবছি, পত্রবাহক ওই গাড়ির মধ্যে আছে, তাই গাড়ির দিকে এগোচ্ছিলাম। আমার স্কার্টেই আমাকে মুড়ি দিয়ে বেঁধে তুলে নিয়ে গেল। ছিঃ, গাড়িতে সিটের ওপর ফেলে আমাকে আবার বাঁধতে চাইল। আমি ব্যাগটা জানলা দিয়ে ফেলে দিলাম .. যদি কারুর চোখে পড়ে! মাথা কাজ করছিল না, যা মনে এল, তাই করলাম।
–হ্যাঁ, ব্যাগটা ছুঁড়ে ফেলে তুমি বুদ্ধিমতীর কাজই করেছিলে! ল্য শিফের ভিলাটায় পৌঁছে দেখেছিলাম তুমি আমার কাছে আসার চেষ্টা করছ।
–তোমায় ওরা কী করল?
–আর্ম চেয়ারে ফেলে ওরা নিজেরা মদ আর তাস নিয়ে বসে গেল। স্মার্শের লোকটা একবার ঢুকেছিল। বাইরে থেকে নানা শব্দ কানে আসছিল। কেমন একটা ঘুমে আচ্ছন্ন ছিলাম, কিন্তু তোমার চিৎকার শুনেছিলাম একবার। স্বপ্ন কিনা জানি না।
— স্বপ্ন নয়, সত্যি।
–ইস্, সবই আমার জন্য!
ভেসপারকে সান্ত্বনা দিল বন্ড–থাক, ওসব কথা থাক।
–কাল আসছ তো?
–আসব।
চোখ মুছে চলে যায় ভেসপার।
আগের পর্ব :
০১. সারারাত ধরে জুয়া খেলা চলেছে
০২. দুসপ্তাহ কেটে গেল
০৩. রুশ বিরোধী বিষয়
০৪. হোটেল বিছানায় শুয়ে
০৫. বন্ড হোটেল থেকে বেরোল
০৬. ফুটপাত ধবে হাঁটছিল বন্ড
০৭. জুয়া শেষ হতে ভোর
০৮. আবার সাবধানী পর্যবেক্ষণ
০৯. কথাবার্তা জমে উঠেছে
১০. খেলা শুরু
১১. ল্য শিফের চোখের দৃষ্টি সাদা
১২. এখন কী করণীয়
১৩. ঘোষণা হল
১৪. ছোটো নাইট ক্লাব
১৫. চিঠিটা জাল
১৬. বন্ড গাড়ি থামায়নি
১৭. এই ঘরটা বিরাট
১৮. চেতনাহীন হয়ে পড়েছিল প্রায় বন্ড
১৯. ঘুমের মধ্যে স্বপ্নের প্রকৃতি
২০. ক্রমশ সুস্থ হচ্ছে বন্ড
পরের পর্ব :
২২. বন্ড এখন প্রায় পুরো সুস্থ
২৩. বন্ড ও ভেসপারের ঘরের মাঝখানে বাথরুম
২৪. সমুদ্রে স্নান
২৫. এখন হোটেল অন্ধকার
২৬. আরও তিনটে দিন
২৭. পরদিন সকালে যা ঘটল