১৯. ঘুমের মধ্যে স্বপ্নের প্রকৃতি
ঘুমের মধ্যে স্বপ্নের প্রকৃতি মানুষকে কখনো ঘুম পাড়িয়ে রাখে, আবার কখনো বা নিদ্রাভঙ্গ ঘটায়। আধোজাগরিত তন্দ্রার মধ্যেও ছন্দহীন স্বপ্ন একে একে চলে যায়।
বন্ড এখন একটা শয্যায় শায়িত। কখনো গভীর ঘুমে, কখনো আচ্ছন্নের মতো। বুঝতে পারছে বন্ড, তার পাশে মাঝে মধ্যে কেউ এসে তাকে দেখে যাচ্ছে। কিন্তু সে নিজের মুখ খুলতে চায়নি। এর মধ্যেই তার স্বপ্নে ঘটে গেল এমনই ঘটনা, যা বন্ডকে বিছানা থেকে উঠতে বাধ্য করল।
বন্ড বুঝতে পারল দুটো কোমল হাত তাকে আস্তে আস্তে বিছানায় শুইয়ে দিল। এই ঘরটাও প্রায় অন্ধকার। কে এই মেয়েটি? শত্রুডেরার কোনো মেয়ে কি? মেয়েই এবার সুগন্ধীমাখা একটা টাওয়েল দিয়ে তার মুখ, হাত, চাদর সরিয়ে বক্ষদেশ, একটু পাশ ফিরিয়ে দিয়ে পিঠ সব স্নেহভরে মুছিয়ে দিল।
ধীরে ধীরে বন্ড আবার ঘুমের দেশে চলে গেল।
যখন ঘুম ভাঙল তখন তার নিজেকে যেন বেশ তরতাজা বলে মনে হচ্ছিল। কানে এল। পক্ষীকুলের কলতান, আর সমুদ্রের গর্জন। তার মানে এখন সে অন্যত্র! বন্ড আস্তে আস্তে উঠে বসল এবং সঙ্গে সঙ্গে একজন নার্স ঘরে ঢুকে বন্ডের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল আশা করি, এখন বেশ সুস্থ বোধ কবছেন।
–অনেকটা। আপনি কে? আর আমি এখন কোথায়?
–আমি নার্স। গিবসন। আর আপনি এখন রয্যালের নার্সিংহোমে। আপনার পরিচর্যার ভার আমার হাতে। আচ্ছা, আমি ডক্টরকে খবর দিয়ে আসি।
নার্স বেরিয়ে গেল।
হঠাৎ হাঁটুতে আর কবজিতে টান ধরল। ডান হাতের কবজিতে ঐ রাশিয়ানটা ছুরি দিয়ে এম লিখে দিয়েছিল।
–গুড মর্নিং মি. বন্ড।–ঘরে ঢুকে ডাক্তার বলে। সঙ্গে নার্স আর ম্যাথুস। ম্যাথুসের মুখে হাসি। বন্ড অনেকটা স্বস্তি পেল।
দোয়াজিয়েম বুরোর এই ফরাসি ডাক্তার বন্ডকে পরীক্ষা করতে করতে বলে মি, বন্ড, আপনি এখন অনেকটাই সুস্থ। মঁসিয়ে ম্যাথুসের সাথে ঠিক পাঁচ মিনিট কথা বলবেন।
–আচ্ছা, আমি এখানে কী করে এলাম?
–বয়্যালে যাবার সময় রাস্তায় এক চাষি আপনার গাড়ি দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ এসে আপনাকে, ল্য শিফ আর মিস লিন্ডকে উদ্ধার করে। মিস লিড অক্ষত আছেন। অবশ্য খুব শকড়। আপনি সম্পূর্ণ সুস্থ হওয়া অবধি উনি এখানেই থাকবেন। সেরকমই নির্দেশ আছে। আচ্ছা মি. বন্ড, ল্য শিফেব হত্যাকারীদের আপনি কি দেখেছেন?–ডাক্তাব বলে।
–ইয়েস।
ডাক্তার বলে–আচ্ছা, আপনি কতক্ষণ ধরে ওদের অত্যাচারের শিকার?
–ধরে নিন, এক ঘন্টারও বেশি সময়।
–হুঁ। যাই হোক, আপনার চিন্তার কিছু নেই। ওষুধের সঙ্গে চাই এখন ঠিকমতো খাওয়া আর ঘুম। হ্যাঁ, আপনি ঘুমিয়ে পড়লে আপনার হাত-পা বেঁধে দেওয়া হবে। যাতে ঘুমের মধ্যে কোনোরকম খকতি না হয়। সত্যি বলতে কী, আপনার মতো বেদম মার খাওয়াওনেকে লোকেরই চিকিৎসা করতে হয়েছে আমাকে। সেটা মঁসিয়ে ম্যাথুস ভালোই জানেন। সেই তুলনায় আপনি যথেষ্ট শক্তিশালী। দেন ও, কে. টেক রেস্ট। এবার মঁসিয়ে ম্যাথুস কথা বলুন। ঠিক পাঁচ মিনিট।–ডাক্তার ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।
ম্যাথুস একটা দীর্ঘনিশ্বাস ছাড়ে। এতক্ষণ চুপ করে সব শুনছিল সে। দরজার পাশ থেকে এসে এবার সে ডাক্তারের চেয়ারে বসে।
বন্ড নার্সিংহোমের বেড়ে হেলান দিয়ে আধশোয়া অবস্থায়। ডান দিকের হাতটা মাথার ওপরে তুলতে যায়। অসহ্য যন্ত্রণায় কঁকিয়ে ওঠে। নার্স ছুটে আসে। ব্যথার জায়গাটায় কী যেন একটা স্প্রে করে দেয়।
নার্স বলে–বেশি নড়াচড়া করার চেষ্টা না করাই ভালো।
নার্স বেরিয়ে যায়।
হাসতে থাকে মঁসিয়ে।
–কী হল, হঠাৎ পাগলের মতো হাসতে শুরু করলে যে?
ম্যাথুস বলে–না এমনিই। আসলে মহাশক্তিমান জেমস বন্ডের এরকম দুরবস্থা, এটা ঠিক বিশ্বাসযোগ্য নয়।
ভেতরে ভেতরে রেগে গেলেও শান্তভাবেই বন্ড বলে–কোনো খবর যদি না থাকে, তাহলে আমি এখন একা থাকতে চাই।
–সরি সরি ফ্রেন্ড।, প্যারিস, লন্ডন সব জায়গা থেকে খবরের জন্য ওরা অপেক্ষা করে আছে। লিটারকে ওরা যোগাযোগ করছে। এম আমাকে ফোনে তোমাকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বললেন যে, ট্রেজারি বিভাগ দুশ্চিন্তামুক্ত আছে।…
–যেদিন তোমাকে উদ্ধার করা হল সেদিন একটা হাতকাটা লোক–রোগাটে, লম্বা এসে তোমার সব ব্যবস্থা করে গেল। মনে হল সে ভেসপারের ওপরওয়ালা হবে। ভেসপারকে সব দায়িত্ব দিয়ে গেছে।
–সে কিগো! আমি যে একেবারে ভি ভি আই পি–যাকগে, এবার বলি, ল্য শিফের মার্ডারার হল স্মার্শ।
এরপর বন্ড ল্য শিফের খুনের ঘটনা সব বলল। এবং–
ম্যাথুস বুঝল, বন্ড আবার অসুস্থ হয়ে পড়েছে। ম্যাথুস বলে–যাকগে যাকগে, তুমি এসব নিয়ে আর কোনোরকম দুশ্চিন্তা করবে না।
বন্ডের মুখ ঘামে ভরে ওঠে।
ম্যাথুস ভয় পেয়ে যায়। নার্সকে ডাকতে গিযেও ডাকে না। নার্স এলে তাকে প্রচণ্ড ঝাড়বে। খাটের পাশে স্ট্যান্ডে রাখা টাওয়েলটা নিয়ে বন্ডের মুখ মুছিয়ে দেয়।
বন্ড আরাম অনুভব করে।
ম্যাথুস বলে–আমরা রটিয়ে দিয়েছি, শিফ তার দুই সহকর্মীকে খুন করে নিজেকে শেষ করে দিয়েছে। কেননা, ইউনিয়নের টাকা নয়ছয় করার কোনো উত্তর ছিল না ওর কাছে।
ম্যাথুস এবার লক্ষ করল, বন্ড এসব খবরে বেশ উৎসাহিত বোধ করছে। ওকে আগের থেকে ফ্রেশ লাগছে। ম্যাথুস বলতে লাগল আবার।
–উত্তর অঞ্চল আর স্ট্রাসবর্গে এখন খুব অশান্তি। নিস্ট পার্টির এক বিরাট নেতা হিসেবে ও আর ওর দলের ক্যাসিনো ও অন্যান্য অ-সামাজিক কাজকর্ম প্রকাশ হয়ে পড়াতে অসম্মানিত হতে হয়েছে চতুর্দিকে, এমনকি ওদের পাটির কাছেও।.. বন্ড, নার্স হয়ত এখুনি এসে পড়বে। পাঁচ মিনিট হয়ে গেছে। এখন বল, ওই টাকাটা কোথায়? কোথাও পাইনি আমি।
বন্ড এবার হো হো করে হেসে উঠল। যেন কিছুই হয়নি তার।
বন্ড বলে–সেদিন লিটার চলে যাওয়াব পর দরজার বাইরে কালো প্লাস্টিকের নাম্বারপ্লেটটা খুলে চেকটা ভাঁজ করে আমি নাম্বারপ্লেটটা আগের মতোই করে রেখেছি। এতে কী প্রমাণিত হয় জান?
–কী?
–বোকা ইংরেজরাও চালাক ফরাসিদের একটু আধটু শেখাতে পারে।
ম্যাথুস হেসে উঠল। বলল–তোমার জবাব নেই। শোন, মুনজদের খবরটা আমিই দিয়েছিলাম। ওরা ধরা পড়ে গেছে। সব ভাড়াটে ওরা। তাহলে এখন আসি। তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে ওঠ।
ডাক্তার ইতিমধ্যে এসে গেল।
বন্ডের ঘুম পাচ্ছে। সে ভাবতে থাকে–এখনও অনেক সমাধান বাকি রয়ে গেল।
এই ভাবনার মধ্যে ভেসপারের চেহারাটাও ভেসে উঠল। তাকেও ভোলেনি বন্ড।
আগের পর্ব :
০১. সারারাত ধরে জুয়া খেলা চলেছে
০২. দুসপ্তাহ কেটে গেল
০৩. রুশ বিরোধী বিষয়
০৪. হোটেল বিছানায় শুয়ে
০৫. বন্ড হোটেল থেকে বেরোল
০৬. ফুটপাত ধবে হাঁটছিল বন্ড
০৭. জুয়া শেষ হতে ভোর
০৮. আবার সাবধানী পর্যবেক্ষণ
০৯. কথাবার্তা জমে উঠেছে
১০. খেলা শুরু
১১. ল্য শিফের চোখের দৃষ্টি সাদা
১২. এখন কী করণীয়
১৩. ঘোষণা হল
১৪. ছোটো নাইট ক্লাব
১৫. চিঠিটা জাল
১৬. বন্ড গাড়ি থামায়নি
১৭. এই ঘরটা বিরাট
১৮. চেতনাহীন হয়ে পড়েছিল প্রায় বন্ড
পরের পর্ব :
২০. ক্রমশ সুস্থ হচ্ছে বন্ড
২১. ভেসপার রোজই নার্সিংহোমে আসত
২২. বন্ড এখন প্রায় পুরো সুস্থ
২৩. বন্ড ও ভেসপারের ঘরের মাঝখানে বাথরুম
২৪. সমুদ্রে স্নান
২৫. এখন হোটেল অন্ধকার
২৬. আরও তিনটে দিন
২৭. পরদিন সকালে যা ঘটল