১৮. চেতনাহীন হয়ে পড়েছিল প্রায় বন্ড
ক্রমাগত মারের ফলে চেতনাহীন হয়ে পড়েছিল প্রায় বন্ড। ল্য শিফের সব কথা তার কানে ঢুকছিল না। আচমকা এক বজ্রকঠিন স্বরে বন্ডের হুঁশ ফিরে এল।
নুয়ে পড়া মাথা সোজা হল বন্ডের। সামনের দিকে তাকাল সে। কয়েক সেকেন্ড লাগল অস্পষ্ট দৃষ্টি কাটতে। বন্ড এবার পরিষ্কার দেখতে পেল ল্য শিফের মুখের হিংস্র চেহারার বদলে এক ভয়ার্তভাব।
বন্ড শুনতে পেল আবার সেই শব্দ–হাত থেকে ওটা ফেলে দাও ল্য শিফ।
ল্য শিফের হাত কাঁপছে, মুখ ভয়ার্ত। বন্ড দেখল, ল্য শিফ যেই পকেটে হাত ঢোকাতে যাবে, সঙ্গে সঙ্গে পিছনের কণ্ঠস্বরটি বলে উঠল।–নো নো, কোনোরকম বাজে চেষ্টা কোর না। ট্রিগারে আঙুলটা শুধু ছোঁয়ানো আছে। আঙুলে চাপ দেওয়ার চেষ্টা করিও না।
কয়েকমুহূর্ত চুপচাপ। পিছনের লোকটি কি আছে? তবে চুপচাপ কেন? কে ও?
সেই লোকটির গলা আবার শোনা যায়—কী হল? আমি সময় নষ্ট করা একদম পছন্দ করি না। ফেলে দাও ওটা।
ল্য শিফের মুখের কথা আটকে যাচ্ছে–আসলে আমি মি. বন্ডকে একটু ভয়… মানে–
–চোপ। শয়তান, বিশ্বাসঘাতক, ঠগবাজ। শোন হে, আমাকে যারা সোভিয়েত ইউনিয়ন। থেকে পাঠিয়েছে, তার বলেছে, তোমার মৃত্যুটা যেন পরিপূর্ণ যন্ত্রণাময় হয়। যেরকম যন্ত্রণা তুমি একে দিচ্ছিলে। হাতে আমার সময় কম। তাই একটা মাত্র গুলিই আমাকে খরচ করতে হবে।
ল্য শিফ কাঁপা কাঁপা গলায় বলে — আমি মুক্তি চাইছি। আমি চলে যাব এখান থেকে। আমি যা করেছি–
আর কোনো কথা বলতে দিল না বন্ডের পিছনে দাঁড়ানো আগন্তুকের রিভলবার। ল্য শিফের নাকের ওপরে শুধু একটা ছিদ্র তৈরি হল। চোখ দুটো ঠিকরে বেরিয়ে এল। হুমড়ি খেয়ে ঘুরে গিয়ে একটা চেয়ারের হাতলের ওপর পড়ল ল্য শিফ।
ল্য শিফের দেহটার ওপর একটা পা রেখে, মাথায় টুপি, মুখে মুখোশ পরা সেই লোকটা এবার বন্ডের থুতনিটা নেড়ে দিয়ে বলে–তোমার কপাল ভালো মিস্টার। বেঁচে গেলে। এই নিয়ে দুবার। প্রথমবার বরাতজোরে, দ্বিতীয়বার আমরাই ভুল করেছি। অবশ্য যদি তোমার প্রাণ নেওয়ার হুকুম থাকত। শোন হে, তোমার দলকে বোল যে, এইসব গদ্দার ললাকেদের সাথে যদি তোমার মতো বিদেশি গুপ্তচরগুলোকে মারা যেত। হ্যাঁ, আর একটা কথা–স্মার্শ কাউকে ছেড়ে কথা বলে না, খাতির করতে জানে না।
লোকটা বলে চলে–তোমার মতো জুয়াড়ির সাথে আবার দেখা হবে কোথাও। কিন্তু তোমাকে এমনি ছেড়ে দেব না। গুপ্তচর বলে তোমার শরীরে বেশ ভালোরকম চিহ্ন বসিয়ে দিয়ে যাচ্ছি।
বলে বুটের চেন খুলে একটা ছুরি বার করে অতি দ্রুত এবং যন্ত্রণাদায়কভাবে সে বন্ডের ডান হাতে খুব দ্রুত এম কথাটা লিখে দিল। বন্ডের সারা দেহ যন্ত্রণায় কেঁপে উঠল। চোখ বুজে যন্ত্রণা সহ্য করতে লাগল বণ্ড।
লোকটার বুটের আওয়াজ মিলিয়ে গেল। বন্ডের হাত দিয়ে রক্ত ঝরে পড়ছে।
বন্ড জ্ঞান হারাল।
বেলা বাড়ছে। বন্ডের হাত থেকে পড়া রক্ত এখন জমাট বেঁধেছে, তার ওপর রৌদ্রের আলো এসে পড়েছে।
টাটকা রক্ত জমাট বাঁধতে বাঁধতে এক গোলাকার বৃত্তের সৃষ্টি হয়েছে। আর ওই বৃত্তের ওপব রোদ্র এসে এক আতঙ্কের দৃশ্য তৈরি করেছে।
আগের পর্ব :
০১. সারারাত ধরে জুয়া খেলা চলেছে
০২. দুসপ্তাহ কেটে গেল
০৩. রুশ বিরোধী বিষয়
০৪. হোটেল বিছানায় শুয়ে
০৫. বন্ড হোটেল থেকে বেরোল
০৬. ফুটপাত ধবে হাঁটছিল বন্ড
০৭. জুয়া শেষ হতে ভোর
০৮. আবার সাবধানী পর্যবেক্ষণ
০৯. কথাবার্তা জমে উঠেছে
১০. খেলা শুরু
১১. ল্য শিফের চোখের দৃষ্টি সাদা
১২. এখন কী করণীয়
১৩. ঘোষণা হল
১৪. ছোটো নাইট ক্লাব
১৫. চিঠিটা জাল
১৬. বন্ড গাড়ি থামায়নি
১৭. এই ঘরটা বিরাট
পরের পর্ব :
১৯. ঘুমের মধ্যে স্বপ্নের প্রকৃতি
২০. ক্রমশ সুস্থ হচ্ছে বন্ড
২১. ভেসপার রোজই নার্সিংহোমে আসত
২২. বন্ড এখন প্রায় পুরো সুস্থ
২৩. বন্ড ও ভেসপারের ঘরের মাঝখানে বাথরুম
২৪. সমুদ্রে স্নান
২৫. এখন হোটেল অন্ধকার
২৬. আরও তিনটে দিন
২৭. পরদিন সকালে যা ঘটল