১৭. এই ঘরটা বিরাট
এই ঘরটা বিরাট। ড্রয়িংরুম না ডাইনিং রুম কে জানে। সারা দেয়াল জুড়ে আয়না। রং ওঠা সোফা ঘরের মাঝখানে কোনো টেবিল নেই। শুধু একটা চৌকো কার্পেট। জানলার কাছে অদ্ভুত শেফের একটি চেয়ার। ভেলভেটের গদি। নীচু টেবিলে জলের বোতল আর দুটো গ্লাস। আর একটা গদিহীন বেতের চেয়ার আছে।
ল্য শিফ বলল–ওকে রেডি করে নিয়ে এস। গণ্ডগোল করলে উচিতমতো কিছুটা জখম করে দেবে।
এবার বন্ডের দিকে তাকিয়ে সে নিস্পৃহভাবে বলল–জামাকাপড় ছেড়ে ফেল। নইলে বেসিল একটা একটা করে তোমার আঙুল ভেঙে দেবে। তোমার শরীর নিয়ে আমাদের কোনো চিন্তা নেই। তবে তোমার মরণ বাঁচন নির্ভর করছে তোমার কথাবার্তার ওপর।
ল্য শিফের ইঙ্গিতে বন্ডের হাতের বাঁধন খুলে দেওয়া হল। ছুরি দিয়ে বন্ডের কোটের পিছনদিকটা চিরে দিতেই হাত দুটো আলগা হয়ে গেল। ডিনার জ্যাকেটও দুটুকরো। এটা একধরনের পুলিশি কায়দা। লোকটা বলল—কুইক।
গায়ের শার্টটা খুলে ফেলল বন্ড। ল্য শিফ বড়ো চেয়ারটায় সিংহাসনের মতো বসে ইশারা করল। কফি এল। আয়েস করে গেলাসে কফি ঢেলে নগ্ন এন্ডের দণ্ডায়মান শরীরটাকে ভালো করে লক্ষ করল মে। হ্যাঁ, আঘাতগুলো গায়ে চাপ চাপ দাগের সৃষ্টি করেছে। বন্ডের মুখে ক্লান্তি এবং আতঙ্ক।
–সিট ডাউন। বলে বেতের চেয়ারটা দেখিয়ে দিল ল্য শিফ। বন্ডের দুহাত চেয়ারের দুই হাতলের সঙ্গে দড়ি দিয়ে বাঁধা হল। বুকের ওপর দিয়েও একটা দড়ি চেয়ারের পিঠের সঙ্গে গিট দিয়ে বাঁধা হল। চেয়ারের পায়া দুটোর সঙ্গে দুই হাঁটু শক্ত করে বাঁধতে ভুল হল না।
এরপর স্নেহভরে বন্ডকে দেখতে দেখতে হাত উঠিয়ে এমন একটা টেকনিক্যাল অত্যাচারের চমক দিল ল্য শিফ, যে মুহূর্তের মধ্যে বন্ডের ঘাড় পিছনে হেলে পড়ল। সারা দেহ যেন রক্তশূন্য, যেন প্রচণ্ড ঘাম ঝরছে।
আর্তনাদ করল বন্ড।
ল্য শিফ বলল–আরো অনেক কায়দা আছে, বুঝেছ বন্ধু। সেগুলো ধীরে ধীবে প্রকাশ পাবে… যাই হোক, কাজের কথা শুরু করি। নিশ্চয়ই এও বুঝেছ, তোমার খেল খতম। আমাদের কাছে তুমি নেহাতই শিশু। তোমার কর্তারা তোমাকে পাঠিয়ে ভুল করেছে…. এবার বল, টাকাটা কোথায়?
এবার গর্জন করল ল্য শিফ। সঙ্গে সঙ্গে বেতের ঘা মেরে সেই টেকনিক্যাল যন্ত্রণা দান। বন্ড কাঁপতে থাকল।
ল্য শিফ বলল–শোন খোকা, আমার কথাবার্তাগুলোকে রূপকথার গল্প ভেব না। আমার অভিধানে দয়া-মায়া বলে কোনো শব্দ নেই। তাছাড়া গল্পে যা থাকে, বাস্তবে তা হয় না–ভিলেনের নিপাত, নায়কের পুরস্কার, নায়ক-নায়িকার মিলন–এসব হয় না। কথা যদি না শোন, তাহলে তোমার সামনে মেয়েটিকে এনে এমন অত্যাচার করা হবে, তা দেখলে তুমিও পাগল হয়ে যাবে। তবুও যদি গোঁয়ার্তুমি করো, তাহলে দুজনকেই বীভৎসভাবে আমরা খুন করতে বাধ্য। তোমার মৃতদেহ এখানেই পড়ে থাকবে। কবর দেবার লোকজনও পাওয়া যাবে না। আর আমি? হাঃ হাঃ–আমি চলে যাব বিদেশে। সেখানে চমৎকার একটি বাড়িতে বিয়ে করে সংসার পাতব। বউ ছেলেমেয়ে নিয়ে আনন্দে বাকি জীবনটা কাটিয়ে দেব। তুমি টাকা দিলে ভালো কথা,
দিলেও আমার কিছু আসে যায় না।
আবার সেই অত্যাচার। এখন পর্যন্ত বন্ড সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যতটা পারা যায় অত্যাচার সহ্য করতে হবে।
ল্য শিফ বলল–তুমি এবার ঠিক করো কী করবে। নাহলে বেশকিছু যন্ত্রণা–অবশেষে মৃত্যু। এই তোমার ভাগ্যে আছে।
বন্ডের কিছুসহকর্মী জার্মান ও জাপানিদের হাতে অত্যাচার সয়েছিল তাদের মুখে বন্ড শুনেছিল যে, অত্যাচার সইতে প্রথমদিকে কষ্ট হয় কিন্তু যদি কোনোমতে প্রথমদিকে সহ্য করা যায়। তবে আপনা থেকেই সহ্যশক্তি চলে আসে।
ল্য শিফ বলল–চার কোটি ফ্রাঁর চেকটা নিশ্চয়ই তোমার ঘরেই আছে। কিন্তু তোমার ঘর তন্ন তন্ন করে খুঁজে আমরা সেটা পাইনি। পেলে তোমার আর এই অবস্থা হত না। তাহলে তুমি এখন গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে আরামেই থাকতে … আর একটা কথা শোন, অত্যাচারীর পক্ষে নিগ্রহ চালানো খুবই সহজ এবং স্বাভাবিক কাজ। বিশেষ করে বন্দি যদি পুরুষ হয়। এই যন্ত্রণাই যথেষ্ট। তবে যুদ্ধের ব্যাপারে তো শুনেছ।… যদি তোমার পুরুষত্ব কেড়ে নেওয়া হয়, তাহলে বেঁচে থাকলেও তুমি কিন্তু আর পুরুষ থাকবে না। এমন মানসিক কষ্ট হবে যে আত্মহত্যার চেষ্টা করবে। সারা পৃথিবী তোমার কাছে তখন অন্ধকার।.. টাকাটা কোথায়?
বন্ড কোনোমতে বলল–জল।
–রাইট। জিভ শুকোলে তো আর কথা বলা যায় না।
উঠে এসে বন্ডের চুলের মুঠি ধরে মাথাটা ঠেলে কয়েক ফোটা কফি ওর মুখে ঢেলে দিল ল্য শি, তারপর মুঠো ছেড়ে দিতেই বন্ডের মাথা আবার ঝুঁকে পড়ল।
ল্য শিফ বলল–অবশ্য আমার কোনো তাড়া নেই। এখন যে খেলাটা চলছে সেটাই চলুক। অপরের সহ্যশক্তি পরীক্ষা করতে আমার বেশ ভালোই লাগে।
আবার সেই অত্যাচার। তার মধ্যেই বন্ডের চিন্তাশক্তি কাজ করে চলেছে। এখন হয়তো বেলা সাতটা। হয়তো লিটাব বা ম্যাথুস এখুনি এখানে এসে পড়বে। হয়তো বন্ডের গাড়িটা চোখে পড়েছে। এই যেকোনো একটা হয়তো সত্যি হলে ল্য শিয–ধরা পড়বেই।
দাঁতে দাঁত কামড়ে অত্যাচার সইতে লাগল বন্ড। এবার অত্যাচাবের মাত্রা বাড়ছে। হঠাৎ একসময় সাবা জগৎ অন্ধকার হয়ে গেল তার চোখে।
ল্য শিফ পরীক্ষা করল, বন্ড মরে গেছে কিনা। নিশ্চিত হল, না মরেনি। সে বলল–আপাতত তোমার ব্যাপারে থামছি। প্রাণে মারছি না অবশ্য। তবে যা বলেছি, ওই প্রাণে মারার চেয়েও ভয়ংকর কাণ্ডটা ঘটবে। তারপর মেয়েটাকে আনব এখানে। দেখি, ওকে নিয়ে কী করা যায়।
গম্ভীর গলা এবার ল্য শিফের–জেমস বন্ড, নিজেকে চিরকালের মতো হারানোর জন্য প্রস্তুত হও।
আগের পর্ব :
০১. সারারাত ধরে জুয়া খেলা চলেছে
০২. দুসপ্তাহ কেটে গেল
০৩. রুশ বিরোধী বিষয়
০৪. হোটেল বিছানায় শুয়ে
০৫. বন্ড হোটেল থেকে বেরোল
০৬. ফুটপাত ধবে হাঁটছিল বন্ড
০৭. জুয়া শেষ হতে ভোর
০৮. আবার সাবধানী পর্যবেক্ষণ
০৯. কথাবার্তা জমে উঠেছে
১০. খেলা শুরু
১১. ল্য শিফের চোখের দৃষ্টি সাদা
১২. এখন কী করণীয়
১৩. ঘোষণা হল
১৪. ছোটো নাইট ক্লাব
১৫. চিঠিটা জাল
১৬. বন্ড গাড়ি থামায়নি
পরের পর্ব :
১৮. চেতনাহীন হয়ে পড়েছিল প্রায় বন্ড
১৯. ঘুমের মধ্যে স্বপ্নের প্রকৃতি
২০. ক্রমশ সুস্থ হচ্ছে বন্ড
২১. ভেসপার রোজই নার্সিংহোমে আসত
২২. বন্ড এখন প্রায় পুরো সুস্থ
২৩. বন্ড ও ভেসপারের ঘরের মাঝখানে বাথরুম
২৪. সমুদ্রে স্নান
২৫. এখন হোটেল অন্ধকার
২৬. আরও তিনটে দিন
২৭. পরদিন সকালে যা ঘটল