১৬. বন্ড গাড়ি থামায়নি
বন্ড গাড়ি থামায়নি। হঠাৎ সামনের গাড়িটা কাছে এসে যাওয়ায় সে সজোরে ব্রেক কষল। কোনো লাভ হল না। ধাক্কাটা লাগলই। বন্ড ড্রাইভিং সিট থেকে ছিটকে পড়ে গেল। ওর গাড়ি এখন শূন্যে, হেডলাইট যেন আকাশের দিকে, এইবার আস্তে আস্তে উলটে গেল গাড়িটা।
ঝোপের আড়াল থেকে দুই সঙ্গী সমেত ল্য শিফ বেরিয়ে এল। হুকুম দিল আগেইংরেজটাকে বের করে আন। সাবধান যেন মরে না যায়। লোকটার বেঁচে থাকা আমাদের পক্ষে খুব জরুরি। কুইক, ভোর হয়ে আসছে!
ক্যানভাসের ছাদটা ছুরি দিয়ে কেটে বন্ডের সংজ্ঞাহীন দেহটা বের করল ওরা। বন্ড এখন রাস্তায় শোয়া। রোগা লোকটা ওর বুকে হাত রেখে দেখল, হৃদ্যন্ত্র কতটা সচল। তারপর বন্ডের দুই গালে টেনে চড় লাগাল। বন্ডের গলায় সামান্য আওয়াজ। একটা হাত একটু নড়ল। লোকটা আবার সজোরে চাপড় দিল।
ল্য শিফ বলল–ঠিক আছে ঠিক আছে। বাড়াবাড়ির দরকার নেই। ওর পকেট থেকে রিভলবারটা বের করে আমায় দাও। আর এই তারগুলো দিয়ে ওর হাত ভালো করে বাঁধ, এবার আমার গাড়িতে তোল ওকে।
লোকটা বন্ডের অটোমেটিক রিভলবারটা ল্য শিফকে দিল। এবার টেনে হিচড়ে গাড়িতে ভোলা হল বন্ডের দেহটা।
ইতিমধ্যে কিছুটা জ্ঞান ফিরেছে বন্ডের। পরিস্থিতিটা বুঝতে পেরেছে সে। সারা গায়ে প্রচণ্ড ব্যথা। কিন্তু হাড়গোড় ভাঙেনি বলেই মনে হচ্ছে। অপরিসীম ক্লান্তি! তাই আপাতত আত্মসমর্পণ ছাড়া গতি নেই।
গাড়িতে উঠেই প্রথম মনে এল, ভেসপারের কথা। কোথায় সে? তারপরেই চোখে পড়ল মেয়েটার অসহায় দুটি পা। লক্ষ করল, ওর স্কার্ট দিয়েই ওর মাথাটা পুটলির মতো করে বাঁধা হয়েছে। চুপি চুপি ডাকল–ভেসপার।
–শাট আপ! সঙ্গে সঙ্গে একটা প্রচণ্ড চাপড় বুকের ওপর।
বন্ড বুঝল, লোকটা পেশাদার খুনি। দুটি লোকই খুব ওস্তাদ। আপশোশ হল যে, সে বুঝতে পারেনি–যখন খুশি মনে সে শ্যাম্পেন খাচ্ছিল, তখন শত্রুপক্ষ ওদের যথেষ্ট বেগ দেওয়ার ব্যবস্থা করে ফেলেছে। ভেসপার বোকা কিন্তু বন্ড নিজেও কম বোকামি করেনি।
যাকগে, এখন আর ভেবে কী হবে। ল্য শিফের গাড়ি এখন সত্তর মাইল স্পিডে চলছে। বন্ড ঘাপটি মেরে শুয়ে রইল। জানলা দিয়ে দেখছে, ভোর হয়ে এল। এখন গাড়ি বোধহয় যাচ্ছে ল্য শিফের ভিলার দিকে, অর্থাৎ ভিলার মোড়টা আর এক দুমাইল দূরে। বোঝা গেল, ভেসপারকে এখন টোপ বানিয়ে এগোবে ওরা।
ল্য শিফের ভিলায় পৌঁছে গেছে ওর গাড়ি। ভিলার দশা এখন জীর্ণ কোনো স্থাপত্য বৈশিষ্ট্য নেই। অবশ্য ল্য শিফের কায়দা-কানুনের পক্ষে এমন বাড়িই উপযুক্ত। গুতো মারতে মারতে বন্ডকে নামানো হল গাড়ি থেকে। বন্ড বুঝল, এইবার তা ভেসপারের ওপর অকথ্য অত্যাচার শুরু হবে। ভাবতেই সাহসী বন্ডের বুকে কম্পন শুরু হল।
কর্সিকান লোকটি অশ্রাব্য গালাগাল দিয়ে ভেসপারকে বাড়ির মধ্যে নিয়ে গেল। বন্ড শান্ত মনে রোগা লোকটার পাশে পাশে চলল। ডানদিকের দরজার সামনে ল্য শিফ দাঁড়িয়ে আছে। ভেসপারকে ভিতরের ঘরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে আরেকজন। এই মুহূর্তে নিজেকে প্রস্তুত করল বন্ড।
মুহূর্তের মধ্যে বন্ডের প্রচণ্ড লাথি লোকটার হাঁটুর নীচে আঘাত করল। লোকটা চিৎকার করে ছিটকে পড়ল। হাত বাঁধা অবস্থাতেই বন্ড ছুটল ভেসপারের দিকে। তার এখন এই পা দুটোই শুধু সম্বল। কিন্তু কর্সিকানের উদ্দেশে মারা লাথিট লক্ষ্যভ্রষ্ট। বরং লোকটাই বন্ডের পা-টা ঘুরিয়ে দিতেই মেঝের ওপর উপুড় হয়ে পড়ে গেল বন্ড। এইবার রোগা লোকটা এগিয়ে এল। কলার ধরে টেনে তুলল বন্ডকে। পিস্তলটা দিয়ে বন্ডের পায়ে সজোরে আঘাত করল। আর্তনাদ করে কুঁকড়ে গেল বন্ড। লোকটা বলল–ফের এমন করলে সবকটা দাঁত ভেঙে দেব।
মুহ্যমান বন্ড দেখতে পেল, ল্য শিফ কয়েক পা এগিয়ে এসেছে। ভেসপার নেই। ল্য শিফের মুখে ব্যঙ্গ হাসি। বলল–ওয়েলকাম ফ্রেন্ড। সময় নষ্ট করে লাভ কী?
সত্যিই লাভ নেই। বন্ড এবার ওদের কবজায়।
আগের পর্ব :
০১. সারারাত ধরে জুয়া খেলা চলেছে
০২. দুসপ্তাহ কেটে গেল
০৩. রুশ বিরোধী বিষয়
০৪. হোটেল বিছানায় শুয়ে
০৫. বন্ড হোটেল থেকে বেরোল
০৬. ফুটপাত ধবে হাঁটছিল বন্ড
০৭. জুয়া শেষ হতে ভোর
০৮. আবার সাবধানী পর্যবেক্ষণ
০৯. কথাবার্তা জমে উঠেছে
১০. খেলা শুরু
১১. ল্য শিফের চোখের দৃষ্টি সাদা
১২. এখন কী করণীয়
১৩. ঘোষণা হল
১৪. ছোটো নাইট ক্লাব
১৫. চিঠিটা জাল
পরের পর্ব :
১৭. এই ঘরটা বিরাট
১৮. চেতনাহীন হয়ে পড়েছিল প্রায় বন্ড
১৯. ঘুমের মধ্যে স্বপ্নের প্রকৃতি
২০. ক্রমশ সুস্থ হচ্ছে বন্ড
২১. ভেসপার রোজই নার্সিংহোমে আসত
২২. বন্ড এখন প্রায় পুরো সুস্থ
২৩. বন্ড ও ভেসপারের ঘরের মাঝখানে বাথরুম
২৪. সমুদ্রে স্নান
২৫. এখন হোটেল অন্ধকার
২৬. আরও তিনটে দিন
২৭. পরদিন সকালে যা ঘটল