০৬. ফুটপাত ধবে হাঁটছিল বন্ড
তার কিছু আগে বাইরে ফুটপাত ধবে হাঁটছিল বন্ড। দুপাশে গাছের সারি। সূর্যের তাপ, তাই গাছের ছায়া ভালো লাগছিল।
গাছতলায় দাঁড়ানো লোক দুটোর ভাব দেখলেই সন্দেহ জাগে! ওরা হোটেল স্প্লেনডিড এর মেইন গেট থেকে একশো গজ দূরে, ফিসফিস করে কথা বলছে। পরনে স্যুট, স্ট্র-হ্যাটে কালো ফিতে। দুজনের করে ক্যামেরা বক্স ঝুলছে–লাল, নীল।
বন্ড যখন ওদের থেকে মাত্র পঞ্চাশ গজ দূরে, তখন লাল ক্যামেরার কেস যার কাঁধে, সে নীলকে কী যেন বলল। সঙ্গে সঙ্গে বিকট বিস্ফোরণের শব্দ। চারদিকে কম্পন। বন্ড নিজেও ছিটকে পড়ল একটা গাছের তলায়। চিৎ হয়ে পড়ে শুনতে পেল মাটিতে গুমগুম ধ্বনি। আধাঅজ্ঞান অবস্থায় সে টের পেল শূন্যে উড়ছে, গাছের ডাল, চুন-সুরকি, পাথরের টুকরো এবং মানুষের খণ্ড-বিচ্ছিন্ন দেহ। বারুদের গন্ধ, পোড়া কাঠ, পোড়া মাংসের গন্ধ। রাস্তায় গর্ত, দুটো গাছ উপড়ে পড়েছে।
লোকদুটোর পাত্তা নেই। তবে লালরঙের কী একটা রাস্তায় পড়ে আছে।
বন্ড বমি করতে শুরু করল।
সামলে নিয়ে কোনো মতে গাছটা ধরে উঠে দাঁড়াল। এই গাছটাই তাকে বাঁচিয়ে দিয়েছে।
সামনে ম্যাথুস।
হোটেলের রুমে ঢুকে শুনল ঢং ঢং দমকলের গাড়ির শব্দ। পুলিশ ও অ্যাম্বুলেন্সের গাড়িও এসে গেছে।
বঙ রক্তমাখা পোশাক ছাড়ছে। ম্যাথুসের প্রশ্নের উত্তরে সে লোক দুটির চেহারার বর্ণনা দিহিতা।
হঠাৎ টেলিফোনে ম্যাথুস বলল–শোনো, পুলিশকে বলো, যে ইংরেজ ভদ্রলোক, জ্যামাইকা থেকে এসেছে, তাকে নিয়ে বেশি না ভাবলেও চলবে। ওরা বলবে— দুই বুলগেরিয়ানের মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্ব! প্রতিশোধ নেওয়ার ব্যাপার। আমি পরে বুঝিয়ে বলব। একজন অন্যজনকে বোমা মেরেছে। তৃতীয় জন এখন ঘুরঘুর করছে। যাই হোক, অপরাধী পালাতে চাইছে। ওকে ধরতে হবে।…. হ্যাঁ, অপরাধী প্যারিসে যাবার চেষ্টা করবে, খেয়াল রেখো।
টেলিফোন রাখল ম্যাথুস। বন্ডকে বলল–ওঃ, ভাগ্যের জোরে বেঁচে গেছ। তোমাকে লক্ষ করে বোমা ছুঁড়ে গাছের আড়ালে লুকাতে চাইছিল। লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে অন্যরকম হয়ে গেছে ব্যাপারটা। বুঝতে পারছি–ওরা তোমাকে এখনই খুব গুরুত্ব দিচ্ছে।
এ আবার কেমন কথা!
অপমানিত মুখে ম্যাথুস বলছে–শয়তান বুলগেরিয়ান দুটো পালাল কোথায়? লাল বাক্সের টুকরোটায় কী আছে দেখা দরকার।
বলল–আমি যাই, পুলিশকে ব্যাপারটা বুঝিয়ে বলতে হবে।
একা ঘরে বন্ড। চুপচাপ শুয়ে রইল।
খাবার এল। হ্যাঁ, দারুণ খিদে পেয়েছে।
খাবারের প্লেটে হাত দিতে রিং রিং টেলিফোন রিসিভার তুলতেই ওপারে নারীকণ্ঠ— আমি লিন্ড বলছি। আপনার কিছু হয়নি তো?
–না, না, আমি ঠিক আছি।
–যাক। কিন্তু সাবধানে থাকবেন।
বন্ড কিছু বলার আগেই ফোন রেখে দিল সে।
আগের পর্ব :
০১. সারারাত ধরে জুয়া খেলা চলেছে
০২. দুসপ্তাহ কেটে গেল
০৩. রুশ বিরোধী বিষয়
০৪. হোটেল বিছানায় শুয়ে
০৫. বন্ড হোটেল থেকে বেরোল
পরের পর্ব :
০৭. জুয়া শেষ হতে ভোর
০৮. আবার সাবধানী পর্যবেক্ষণ
০৯. কথাবার্তা জমে উঠেছে
১০. খেলা শুরু
১১. ল্য শিফের চোখের দৃষ্টি সাদা
১২. এখন কী করণীয়
১৩. ঘোষণা হল
১৪. ছোটো নাইট ক্লাব
১৫. চিঠিটা জাল
১৬. বন্ড গাড়ি থামায়নি
১৭. এই ঘরটা বিরাট
১৮. চেতনাহীন হয়ে পড়েছিল প্রায় বন্ড
১৯. ঘুমের মধ্যে স্বপ্নের প্রকৃতি
২০. ক্রমশ সুস্থ হচ্ছে বন্ড
২১. ভেসপার রোজই নার্সিংহোমে আসত
২২. বন্ড এখন প্রায় পুরো সুস্থ
২৩. বন্ড ও ভেসপারের ঘরের মাঝখানে বাথরুম
২৪. সমুদ্রে স্নান
২৫. এখন হোটেল অন্ধকার
২৬. আরও তিনটে দিন
২৭. পরদিন সকালে যা ঘটল