০৪. হোটেল বিছানায় শুয়ে
ঘুমের মধ্যে হোটেল স্প্লেনডিডের বিছানায় শুয়ে এসব কথা ভাবছিল বন্ড।
রয়্যাল লেজোতে সে দুদিন আগে এসেছে।
এখন লাঞ্চ টাইম। রেজিস্টারে সই করেছিল–জেমস বন্ড, পোর্ট মারিয়া, জ্যামাইকা। অর্থাৎ পরিচয় গোপন করে নি। এম-ও পরিচয় গোপন রাখতে বলে নি। শুধু বলেছিল— যখন তুমি খেলার টেবিলে ল্য শিফকে চ্যালেঞ্জ করবে তখন অনেকেই বুঝে যাবে।
কথাটা সত্যি।
তবু জ্যামাইকা সম্পর্কে একটু স্টাডি দরকার, দু-একজনের সঙ্গে আলাপ থাকলে ভালো। নিজের পরিচয় হিসাবে সে পরদের কাছে জ্যামাইকাবাসী এক ধনী বাগান মালিকের পুত্র, তামাক ও চিনির ব্যবসায়ে প্রভূত আয় হয়েছে তার।
ইতিমধ্যে দুটি রাত ক্যাসিনোতে কেটেছে। তিরিশ লাখ ফ্ৰা লাভ হয়েছে। ল্য শিফকে ভালো করে দেখেছে। লোকটা দক্ষ এবং খুবই সৌভাগ্যবান।
আজকের দিনটা উজ্জ্বল। স্নান সেরে অরেঞ্জ জুস খেতে খেতে লেখার টেবিলে বসল বন্ড। ডিম, বেকন এবং একটু পরে কড়া কফি খেয়ে সিগারেট ধরাল। বলকান ও টার্কিশ তামাকের মিশ্রণ এই সিগারেটে।
নীচ থেকে টেলিফোন। ওর অর্ডার দেওয়া রেডিও সেটটা এসেছে।
–পাঠিয়ে দিন।
বন্ড ভাবল–এখুনি ম্যাথুস এলে ভালো হয়। ঠিক কথা, ম্যাথুসই।
ম্যাথুস বলল–মঁসিয়ে, এই আপনার সুপারহিট রেডিও। ইউরোপের সবকটা রাজধানী ধরতে পারবেন।
–ফাইন!
–সাড়ে এগারোটা বাজে। রেডিও সেটটা একটু টেস্ট করা ভালো।
পুরো ভল্যুমে রেডিও ছাড়া হল, কিন্তু কোনো শব্দ নেই। অথচ লং ওয়েভের লাল ব্যান্ডে আলো জ্বলছে। একটু পরেই অবশ্য সাউন্ড এল।ম্যাথুস বন্ডের পিঠে একটা চাপড় মেরে বলল–টিউন ঠিক ছিলনা, সরি।
চাপড় মেরে আঙুল ঝাঁকাতে লাগল ম্যাথুস। বন্ডের মনে হল যেন ওর আঙুল ভেঙে গেছে। বিছানায় বসে সিগারেট ধরাল ম্যাথুস। বন্ড বলল–এবার খবর বলো।
ম্যাথুস বলতে থাকল— সত্যি এটা আশ্চর্যের ব্যাপার। ওরা কী করে টের পেল! মোটকথা, শত্রু সদলবলে হাজির। তোমার ঘরের উপরে আছেন মুনজ্ দম্পতি। লোকটা জার্মান। ওদের ইলেকট্রিক ওভেন আছে। চিমনির মধ্যে দিয়ে তার গেছে ওই ওভেন পর্যন্ত। স্ত্রী অসুস্থ, শয্যাশায়ী। মুনজ্ স্ত্রীর সেবায় রত। এখানে ঢুকে আমাদের ধারণা আরো বদ্ধমূল হল।
এবার রেডিও বন্ধ করল ম্যাথুস।
বন্ড বলল— এইরকম একটা সেট আমি জ্যামাইকা নিয়ে যেতে চাইছি।
–আরে দূর! জ্যামাইকার কথা বাদ দাও।
রেডিওতে রোমের মিউজিক বাজছে। বন্ড জিজ্ঞেস করল–আচ্ছা, জ্যামাইকার ব্যাপারটা কি রাশিয়ানরা ধরে ফেলেছে?
–আরেকটু হলেই ধরে ফেলত। লন্ডন এখন সংকেত বদলেছে। আচ্ছা, এবার কাজের কথাই বলি। প্রথম পয়েন্ট, মেয়েটা খুব সুন্দরী, রেডিও-র কাজে পাকা। সেলস্-এ আমাকে সাহায্য করে। তবে মেয়েটা মাঝে মাঝে বিগড়ে যায়। বেশ মেজাজি!
–তাহলে এমন মেয়েকে পাঠানো হল কেন? পাগল মেয়েকে–
–আরে, সেই অর্থে তুমিও পাগল! মেয়েটা ভালো কাজ জানে, তোমার কোনো অসুবিধা হবেনা।
–আর কী খবর?
-ল্য শিফ ভিলাতে সবাই উঠেছে। এখান থেকে দশ মাইল দূরে। তিনটে মনুষ্য-জন্তু এসেছে ওখানে। দুটো গার্ড আগে থেকেই ছিল। রাশিয়ান ওদের নানা কাজে লাগায়। বিশেষ করে খুনখারাপির কাজে। ধরা পড়লে ওদেরই বলির পাঁঠা করে।
–হুঁ, আমার কেসটাও তাই। যাইহোক, তারপর?
-আর বিশেষ কোনো খবর নেই।…তুমি লাঞ্চ সেরে বারে এসো, মেয়েটির সঙ্গে পরিচয় করে নাও। ওকে ডিনারে আমন্ত্রণ জানিও। পারলে ক্যাসিনোতে নিয়ে যেও। আমি আর আমার এক সঙ্গী ফেলিস লিটার একটু আড়ালে থাকব।
ম্যাথুস চলে গেল।
ওর কথা থেকেই বন্ড বুঝে গেল, ম্যাথুস ধরা পড়ে গেছে। ল্য শিফের বিরুদ্ধে নামার আগেই ওকে সরিয়ে দেবে ওরা। রাশিয়ানদের খুন করতে হাত কাঁপেনা। মেয়েটা একটা ঝামেলা। কাজের ক্ষতি হবে বেশি।
আগের পর্ব :
০১. সারারাত ধরে জুয়া খেলা চলেছে
০২. দুসপ্তাহ কেটে গেল
০৩. রুশ বিরোধী বিষয়
পরের পর্ব :
০৫. বন্ড হোটেল থেকে বেরোল
০৬. ফুটপাত ধবে হাঁটছিল বন্ড
০৭. জুয়া শেষ হতে ভোর
০৮. আবার সাবধানী পর্যবেক্ষণ
০৯. কথাবার্তা জমে উঠেছে
১০. খেলা শুরু
১১. ল্য শিফের চোখের দৃষ্টি সাদা
১২. এখন কী করণীয়
১৩. ঘোষণা হল
১৪. ছোটো নাইট ক্লাব
১৫. চিঠিটা জাল
১৬. বন্ড গাড়ি থামায়নি
১৭. এই ঘরটা বিরাট
১৮. চেতনাহীন হয়ে পড়েছিল প্রায় বন্ড
১৯. ঘুমের মধ্যে স্বপ্নের প্রকৃতি
২০. ক্রমশ সুস্থ হচ্ছে বন্ড
২১. ভেসপার রোজই নার্সিংহোমে আসত
২২. বন্ড এখন প্রায় পুরো সুস্থ
২৩. বন্ড ও ভেসপারের ঘরের মাঝখানে বাথরুম
২৪. সমুদ্রে স্নান
২৫. এখন হোটেল অন্ধকার
২৬. আরও তিনটে দিন
২৭. পরদিন সকালে যা ঘটল