দুসপ্তাহ কেটে গেল।
হঠাৎ, এম এর কাছে পৌঁছে গেল ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা দপ্তরের চিঠি। বিভাগীয় প্রধান লিখেছেন (বার্তার স্টাইলে)–
…. টু এম
ফ্রম দ্য চিফ অব দ্য ডিফেন্স মিনিস্ট্রি,
ইংল্যান্ড,
বিষয় : মঁসিয়ে ল্য শিফকে ধ্বংসের পরিকল্পনা। (ল্য শিফ দা নামবার, হের নামবার, হির জিফার….)। ল্য শি শত্ৰুদলের চিফ এজেন্ট, ফ্রান্সে। আলসেস-এর শিল্পাঞ্চলে কম্যুনিস্ট প্রভাবিত ট্রেড ইউনিয়নগুলোকে গোপনে অর্থ দেয়। এই ট্রেড ইউনিয়ন যুদ্ধের সময় শত্রুপক্ষের হয়ে স্পাইং করতে পারে–এটা আমরা জানি। বার্তায় আরও জানানো হয়েছে, আমাদের অনুমান ল্য শিফ আগুন নিয়ে খেলছে। স্মার্শ এবং গুপ্তচর সংস্থা তবে সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। এদের সোভিয়েট রাশিয়ার উপযুক্ত এজেন্ট বলা যায়। কিন্তু তাদের কতগুলো নীতিগত দুর্বলতা রয়ে গেছে, সেটা আমরা জেনেছি। ল্য শিফের একজন বান্ধবী আছে (নং ১৮৬০), সে আমাদেরই লোক। স্টেশন এফ থেকে নির্দেশ পেয়ে সে ল্য শিফ সম্পর্কে অনেক ব্যক্তিগত ঘটনা আমাদের জানিয়েছে।
…এখন ল্য শিফের চরম আর্থিক সংকট চলছে। নং ১৮৬০ জানিয়েছে, ল্য শিফ গয়না বিক্রি করেছে, অ্যান্টিবেসের বাড়িটাও বিক্রি করেছে। আগে সে যথেচ্ছ খরচ করত, কিন্তু এখন ব্যয়বাহুল্য সংযত করেছে। এই কেস-এ আমাদের সাহায্য করছেন দোয়াজিয়েম ব্যুরো।
তাছাড়া ১৯৪৬-এর জানুয়ারিতে ল্য শিফ কতগুলি খারাপ ব্যবসার মালিক হয়ে ওঠে। কর্ডন জুন নামে পরিচিত এই সংস্থার অনেকগুলো ব্রাঞ্চ আছে নৰ্মান ডি এবং ব্রিটানিতে। এই আপত্তিকর সংস্থাটি কেনার জন্য সে পাঁচকোটি ফ্রাঁ ব্যয় করে। লেনিনগ্রাড থেকে ফ্রান্সের ট্রেড ইউনিয়নকে যে টাকা দেওয়া হত ল্য শিফের মাধ্যমে, সেই টাকা এই খারাপ ব্যবসায়ে লাগিয়ে সে বিরাট বোকামি করেছে। যদি টাকা খাটিয়ে ইউনিয়নের সম্পত্তি বাড়ানো তার উদ্দেশ্য হত, সেদিক থেকে অবশ্য এই খারাপ ব্যবসাটাই ভালো ছিল। কিন্তু তার উদ্দেশ্য ব্যক্তিগত সম্পদ বৃদ্ধি, এবং সেইসঙ্গে নিন্দনীয় আত্মতৃপ্তি। ফলে যা হবার তাই হল।
তিন মাসের মধ্যে, ১৩ই এপ্রিল ফ্রান্সে একটি নতুন আইন পাস হল….
এম-কে এই বার্তাটা ফরাসিতে লেখা হয়েছে।
–হুম….
ইনটারকমের সুইচ টিপে বললেন–হেড অফ এস্?
-ইয়েস!
–একটা শব্দের মানে জিজ্ঞেস করছি।
শব্দটা বলার পর উত্তর এল— এর মানে হচ্ছে দালালি।
–তাহলে, ইংরেজিতে লেখাই ঠিক হতো। অহেতুক ভাষাজ্ঞান….
–সরি স্যার।
এম আবার লেখাটা পড়তে শুরু করলেন।
লেখাটা এই : সুতরাং সমস্ত আপত্তিকর সংস্থাগুলো, খারাপ ভাষায় লেখা বই, নারীর মর্যাদা নিয়ে ব্যবসাগুলোর উপর নিষেধাজ্ঞা জারি হল ল্য শিফ-এর অবস্থা সঙ্গীন। তবু সে তার অসৎ, অসাধু পথে চলতে থাকল। কিছু খারাপ ছবির ব্যবসাও চালাবার চেষ্টা করল। চলল না। এবার সব কিছু বেচে দিয়ে সে একটা মোটা টাকা জোগাড়ের ধান্দা করল। কিন্তু পুলিশ সতর্ক ছিল, তার সমস্ত আপত্তিকর ব্যবসা কেন্দ্রগুলো বন্ধ হয়ে গেল।
….. পুলিশ তাকে চিনত অসাধু, অশ্লীল বিষয়ের ব্যবসায়ী বলে। দোয়াজিয়েম ব্যুরোতে রচিত তার ফাইলটি বের করে আরো বিশদ খবর পাওয়া গেল। সুতরাং আমরা এবং ফরাসি বন্ধুরা জোর কদমে এগোতে থাকি। এতে কাজ দেয়। জানা যায়, ল্য শিফেব অবস্থা এখন কাহিল। সবই বন্ধ হয়ে গেছে। এমন কি তার কাছে জমা থাকা ইউনিয়নের ফান্ডেও পাঁচ কোটি ফ্রাঁ কম দেনা যাচ্ছে।
… কিন্তু এখনও লেনিনগ্রাড যথেষ্ট সতর্ক হয়নি। হয়তো স্মার্শ কিছুটা সন্দেহ করছে। পি স্টেশন থেকে জানা গেছে, এক সোভিয়েট সংস্থা থেকে একজনকে পাঠানো হয়েছে। সে ওয়ারশ, পূর্ব বার্লিন হয়ে স্ট্রাসবার্গ যাবে। একজন ডাবল এজেন্টও আছে।
… সুতরাং ল্য শিফ-এর পালানো বা আত্মহত্যা ছাড়া পথ নেই। সে টাকা উদ্ধারে মরিয়া, কিন্তু তার প্রাণহানির সম্ভাবনা সে বোধহয় টের পায়নি। আমরা উলটো চাল চালছি।
… ল্য শিফ জুয়ার আড্ডা বসাচ্ছে। অন্য বে-আইনি ব্যবসায়ে এত টাকা তাড়াতাড়ি পাওয়া যাবেনা। রেস খেলেও হবেনা।
…. ইউনিয়নের ফান্ড থেকে সে লুকিয়ে বাকি দুকোটি পঞ্চাশ লক্ষ ফ্রাঁ নিয়ে নিয়েছে, কিন্তু তহবিল নিঃশেষিত। দুপ্তাহ পরে সে উত্তবে রয্যাল লিজোর বাংলোতে যাবে।
… তাই রয়্যাল ক্যাসিনোতে টাকার খেলা জমবে। গ্রীষ্মের সিজনে এখানে বহু ধনীরা আসবে। ল্য শিফেব আশা তখন প্রায় পাঁচ কোটি ফ্ৰাঁ লাভ হতে পারে। ১৫ জুনের মধ্যে।
…এবং সংক্ষেপে আমাদের পরিকল্পনা এই–শুধু সোভিয়েট নয়, উত্তর আটল্যান্টিক চুক্তিভুক্ত সব দেশকেই পর্যুদস্ত করতে হবে। বামপন্থী ট্রেড ইউনিয়নের সম্মান তো যাবেই। এদের গুপ্তচর ও অন্যান্য সদস্য মিলে সংখ্যাটা কম নয়— প্রায় ৫০,০০০। ল্য শিফকে খুন করে লাভ নেই, ববং জুয়াব টেবিলে তাকে পথের ভিখারি বানানোই কাজ দেবে। সিক্রেট সার্ভিসের দক্ষ জুয়াড়িদের নিযোগ কবছি। যদি কাউকে না পাঠানো হয়, তবে সব কাগজপত্র সি আই.এ-র বা দোয়াজিয়েম ব্যুরো-ব হাতে তুলে দেওয়া হবে। স্বা এস। অ্যাপেন্ডিক্স এ। নাম ল্য শিফ। ছদ্মনাম…..ইত্যাদি, যেমন হের জিফাব। কেস হিস্ট্রি–অতীতের জানা নেই। তবু গুজব আছে যে, ১৯৪৫-এ সে ছিল মার্কিনীদের দখলে উদ্বাস্তু শিবিবে। স্মৃতিভ্রংশ ও পক্ষাঘাতে আক্রান্ত রোগীর ভান করত। জাল পাসপোর্টের নম্বর ছিল ৩০৪ ৫৯৬। সে থেকে সে নিজের নাম ল্য শিফ বলে চালু করে।
বার্তা শেষে তার চেহারার বিবরণ আছে। দৈর্ঘ্য ৫ ফুট ৮ ইঞ্চি, ওজন ১৮ স্টোন…ইত্যাদি। অভ্যাস সম্পর্কে বলা হয়েছে বেশ কিছু বদ-অভ্যাস, নারীঘটিত দুর্বলতা, হাইস্পিডে গাড়ি চালানো, দ্রুত অস্ত্র চালানো ইত্যাদি। জরুরি বিষয় : হ্যাট ব্যান্ড, বাঁ দিকে জুতোর সেলে এবং সিগারেট কেসে তিনটে ধারালো ব্লেড থাকে। ভালো জুয়াড়ি, বডিগার্ড দুজন একজন ফরাসি, একজন জার্মান। এককথায় বিপজ্জনক রাশিয়ান এজেন্ট। প্যাবিসে পোস্টেড। স্বা. আর্কাইভিস্ট।
অ্যাপেন্ডিক্স বি: বিষয় স্মার্শ। সংবাদ সূত্র . সি. আই. এ. ইত্যাদি।
স্মার্শ শব্দটি দুটি রুশ শব্দের মিশ্রণে তৈরি, যার মানে–স্পাইদের হত্যা করো।
সর্বময়কর্তা, বেরিয়া। হেড কোয়ার্টার : লেনিনগ্রাদ। মস্কোতেও শাখা আছে।
এদের পরিচয় গুরুত্বপূর্ণ : ১৯৪০-এ ট্রটস্কি হত্যাকান্ড এদেরই ছক। এই SMARS হিটলারের সঙ্গে রাশিয়ার যুদ্ধে সক্রিয় ভূমিকা নেয় রাশিয়ার গুপ্তশত্রুদের খতম করার। নানা শাখা নানা কাজ করে— দেশ বিদেশে গুপ্তশত্রুদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ। সক্রিয়কাজ বলতে হত্যাও বোঝায়। আর্থিক পরিচালনা, আইন, বিচার ও দণ্ডদান এদের শাখার নির্দিষ্ট কাজ।
রিপোর্ট বলছে : এ পর্যন্ত আমাদের হাতে মাত্র একজন স্মার্শ ধরা পড়েছে। গয়েৎশভ ওরফে গ্যারাড জোন্স ১৯৪৮ সালে ৭ আগস্ট হাইডপার্কে যুগোশ্লাভ দূতাবাসেব মেডিক্যাল অফিসারকে গুলি করে হত্যা করে। তদন্ত চলার সময় সে পটাসিয়াম সাইনাইড দিয়ে তৈরি কোর্টের বোতাম খেয়ে আত্মহত্যা করে। বহু ব্রিটিশ ডাবল এজেন্ট স্মার্শের হাতে মরেছে।…. সুতরাং আমাদের দিক থেকে এদের মোকাবিলার মধ্যে যে কোনো গলতি না থাকে।…
রিপোর্ট শেষ।
আগের পর্ব :
০১. সারারাত ধরে জুয়া খেলা চলেছে
পরের পর্ব :
০৩. রুশ বিরোধী বিষয়
০৪. হোটেল বিছানায় শুয়ে
০৫. বন্ড হোটেল থেকে বেরোল
০৬. ফুটপাত ধবে হাঁটছিল বন্ড
০৭. জুয়া শেষ হতে ভোর
০৮. আবার সাবধানী পর্যবেক্ষণ
০৯. কথাবার্তা জমে উঠেছে
১০. খেলা শুরু
১১. ল্য শিফের চোখের দৃষ্টি সাদা
১২. এখন কী করণীয়
১৩. ঘোষণা হল
১৪. ছোটো নাইট ক্লাব
১৫. চিঠিটা জাল
১৬. বন্ড গাড়ি থামায়নি
১৭. এই ঘরটা বিরাট
১৮. চেতনাহীন হয়ে পড়েছিল প্রায় বন্ড
১৯. ঘুমের মধ্যে স্বপ্নের প্রকৃতি
২০. ক্রমশ সুস্থ হচ্ছে বন্ড
২১. ভেসপার রোজই নার্সিংহোমে আসত
২২. বন্ড এখন প্রায় পুরো সুস্থ
২৩. বন্ড ও ভেসপারের ঘরের মাঝখানে বাথরুম
২৪. সমুদ্রে স্নান
২৫. এখন হোটেল অন্ধকার
২৬. আরও তিনটে দিন
২৭. পরদিন সকালে যা ঘটল