রক্তচোষা বউয়ের রক্তজমানো কাহিনি
[দি অ্যাডভেঞ্চার অফ দ্য সাসেক্স ভ্যাম্পায়ার]
ডাকের চিঠিটা খুঁটিয়ে পড়ল হোমস। তারপর হেসে উঠল খুকখুক করে শুকনো এই হাসিই ওর কাছে হা-হা হাসির কাছাকাছি। টুক করে টোকা মেরে চিঠিখানা ছুঁড়ে দিল আমার দিকে।
বলল, একাল আর সেকাল, বাস্তব আর দুর্বার কল্পনার অদ্ভুত জখাখিচুড়ির এইটাই বোধ হয় চূড়ান্ত সীমা ওয়াটসন, তোমার কী মনে হয়?
আমি পড়লাম :
৪৬, ওল্ডজুরি
১৯ নভেম্বর
বিষয় : ভ্যাম্পায়ার
মহাশয়, মিন্সিং লেনের চায়ের দালাল ফার্গুসন অ্যান্ড মুরহেডের মিস্টার রবার্ট ফার্গুসন আমাদের একজন মক্কেল। ভ্যাম্পায়ার সম্বন্ধে উনি খোঁজখবর করেছেন আমাদের কাছে। যেহেতু আমরা কলকবজা নিয়ে কারবার করি মিস্টার ফার্গুসনকে বলেছি আপনার সঙ্গে দেখা করতে। মার্টিলডা ব্রীগস-এর কেসে আপনার সাফল্য আমরা ভুলিনি।
আপনার বিশ্বস্ত
ই জে সি-র পক্ষে
মরিস, মরিস অ্যান্ড ডড
ওয়াটসন, স্মৃতি রোমন্থনের সুরে বলল হোমস, মার্টিলডা ব্রীগস কিন্তু কোনো মহিলার নাম নয়। একটা জাহাজের নাম সুমাত্রার দানব ইঁদুরের সঙ্গে জড়িত এই জাহাজের আশ্চর্য কাহিনি দুনিয়ার সামনে হাজির করার সময় এখনও হয়নি। কিন্তু ভ্যাম্পায়ার কি আমাদের আওতায় আসে? অবশ্য একেবারে নিষ্কর্মা হয়ে বসে থাকার চেয়ে কিছু একটা নিয়ে মাথাটাকে খেলানো মন্দ নয়। গ্রিমভাইয়ের উপকথা নিয়ে শেষকালে তদন্ত করতে হবে ভাবিনি। ভি ভলুমটা হাত বাড়িয়ে নামাও তো।
ইংরেজি ভি চিহ্নিত বিরাট আয়তনের নির্দেশিকা গ্রন্থটি নামিয়ে আনলাম তাক থেকে। এ-গ্রন্থে আছে ওর সারাজীবনের সঞ্চিত বহু তথ্য এবং পুরানো মামলার বৃত্তান্ত।
উচ্চ কণ্ঠে পড়ে গেল হোমস, গ্লোরিয়া স্কটের সমুদ্রযাত্রা। খুবই বাজে তদন্ত–এ নিয়ে ফলাও করে একটা গল্প তুমি লিখেছিলে ওয়াটসন–অভিনন্দন জানাতে কিন্তু পারিনি। জালিয়াত ভিক্টর লিঞ্চ। বিষধর গিরগিটি গিলা। কেসটা সত্যিই অত্যাশ্চর্য! সার্কাসবালা ভিক্টোরিয়া। ভ্যানডারবিল্ট আর এগম্যান। ভাইপার ভোগিস, হ্যামরস্মিথের বিস্ময়। এই তো! এই তো! খাসা নির্দেশিকাই বটে–এ-বইকে টেক্কা মারতে তুমি পারবে না ওয়াটসন–যত পুরোনো হচ্ছে, তত দাম বাড়ছে। শোনো। হাঙ্গারিতে ভ্যাম্পায়ারের উৎপাত। এই দেখো আবার ট্রানসিলভানিয়ায় ভ্যাম্পায়ারের দৌরাত্ম। সাগ্রহে পাতা উলটে পড়ে গেল হোমস। কিছুক্ষণ পরেই অবশ্য নিরাশ হয়ে দমাস করে নামিয়ে রাখল প্রকাণ্ড কেতাবখানা।
রাবিশ! হৃৎপিণ্ডে কাঠের গোঁজ ঠুকে যাদের কফিনে ঠেকিয়ে রাখতে হয় তাদের সঙ্গে আমার আবার কারবার কীসের? রাবিশ! পাগলামির একটা সীমা আছে।
ভ্যাম্পায়ার মানেই যে কেবল জ্যান্ত মড়া, তা তো নয়। জলজ্যান্ত মানুষরাও রক্ত শুষে খায়। আমি তো জানি যৌবনকে টিকিয়ে রাখার জন্যে এককালে কমবয়সিদের রক্ত পান করা হত।
সেরকম কিংবদন্তিও এ-বইতে আছে, ওয়াটসন। কিন্তু তা নিয়ে আমাদের মাথা ঘামানোর দরকার আছে কি? আমরা নিরেট বাস্তব নিয়ে দিব্যি খাড়া আছি–ভূতপ্রেতকে কাছে ঘেঁষতে দেব না। মিস্টার ফাগুসনের এ-কেস নেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়। এ-চিঠিখানা বোধ হয় উনিই লিখেছেন। দেখা যাক কীসের উদবেগে মরছেন ছটফটিয়ে।
প্রথম চিঠি নিয়ে তন্ময় হয়েছিল বলেই আরেকখানা লম্বা লেফাফার দিকে এতক্ষণ নজর দেয়নি হোমস। এবার তুলে নিল। পড়তে শুরু করল পরম কৌতুকে, কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই মুখের পরতে পরতে জাগ্রত হল অপরিসীম আগ্রহ আর কৌতূহল। পড়া শেষ করে দু-আঙুলে চিঠিখানা ঝুলিয়ে ধ্যানস্থ হয়ে রইল কিছুক্ষণ। তারপরেই যেন ঘুম থেকে ধড়মড়িয়ে জেগে উঠে বললে, চীজম্যান্স, ল্যামবার্লি। ল্যামবার্লি জায়গাটা কোথায়, ওয়াটসন?
সাসেক্স, হর্সম্যানের দক্ষিণে।
খুব দূরে নয় তাহলে। চীজম্যান্স কোথায়?
কয়েকশো বছর আগে ওই নামে যিনি ওখানে একগাদা বাড়িঘর তৈরি করে গিয়েছিলেন, তার নামেই জায়গাটার নাম হয়েছে চীজম্যান্স। বাড়িগুলো এখনও আছে। আমি চিনি।
ঠিক বলেছ। খুব একটা আগ্রহ না-দেখিয়ে বলল হোমস। আসলে নিজে যে-খবর জানে , তা চট করে জেনে নিয়ে মগজের ভাঁড়ারে জমিয়ে রেখে খবরদাতাকে খুব একটা আমল–দেওয়া ওর একটা স্বভাব। চীজম্যান্স আর ল্যামবার্লি সম্পর্কে পরে আরও খবর সংগ্রহ করা যাবেখন। চিঠিখানা রবার্ট ফার্গুসনই লিখেছেন। উনি তো বলছেন চেনেন তোমাকে।
আমাকে!
পড়েই দেখো।
পড়লাম চিঠিটা :
প্রিয় মিস্টার হোমস,
আমার উকিল আপনার সঙ্গে আমাকে দেখা করতে সুপারিশ করেছেন। বিষয়টা অসাধারণ আলোচনা করাটাও মুশকিলের ব্যাপার। আমার এক বন্ধুর হয়ে এ-চিঠি আমি লিখছি–সমস্যাটা তারই। বছর পাঁচেক আগে ইনি এক পেরুভিয়ান মহিলাকে বিয়ে করেন। ভদ্রমহিলার বাবা একজন পেরুভিয়ান কারবারি আলাপ হয়েছিল নাইট্রেট আমদানি করার সময়ে। ভদ্রমহিলা ডাকসাইটে সুন্দরী। কিন্তু ভিনদেশের ভিনধর্মী মেয়ে বলেই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে একটা ব্যবধান গড়ে উঠেছে এই ক-বছরে। ভদ্রলোকও এখন পস্তাচ্ছেন। ভালোবাসায় বলাবাহুল্য একটু ভাটা পড়েছে। মহিলাটি কিন্তু প্রকৃতই পতিভক্ত–অথচ তার চরিত্রের কয়েকটা দিক স্বামীর কাছে অনাবিষ্কৃত থেকে যাওয়ার ফলে ভদ্রলোকের মনোবেদনা ভাষায় ব্যক্ত করা সম্ভব নয়।
এবার যে-বিষয় নিয়ে আপনার সঙ্গে দেখা করতে চাই, তাই নিয়ে বসা যাক। এ-চিঠি শুধু একটু সূচনা–পড়বার পর আপনি চিন্তা করবেন কেসটা নেবেন কি না। ভদ্রমহিলা খুবই নরমস্বভাবা মিষ্টি মনের মেয়ে–অথচ এমন সব কাণ্ড ঘটিয়ে ফেলছেন যা তার চরিত্রের ঠিক উলটো। ভদ্রলোক বিয়ে করেছেন দু-বার, প্রথম পক্ষের এক ছেলে বর্তমান। পনেরো বছর বয়স ছেলেটার, দেখলেই ভালোবাসতে ইচ্ছে যায়, এত মিষ্টি স্বভাব। ছেলেবেলায় একটা দুর্ঘটনার ফলে একটু জখম হয়েছিল। দু-দুবার এই ছেলের ওপর চড়াও হয়েছিলেন সত্যা–একবার লাঠি দিয়ে এমন পিটিয়েছিলেন যে হাতে কালশিটে পড়ে যায়।
নিজের বছরখানেক বয়সের ছেলের সঙ্গে ভদ্রমহিলা যে-কাণ্ড করেছেন, সে তুলনায় সৎছেলের ওপর হামলাবাজি কিছুই নয়। মাসখানেক আগে একবার মিনিটকয়েকের জন্যে শিশুটিকে একলা রেখে যায় ধাইমা। সেই সময়ে যন্ত্রণায় ককিয়ে কেঁদে ওঠে ছেলেটা। শুনে দৌড়ে যায় নার্স। গিয়ে দেখে ভদ্রমহিলা যেন নিজের ছেলের ওপর ঝুঁকে ঘাড়ে কামড় বসাচ্ছে। ঘাড়ে একটা ছোট্ট ক্ষতও দেখা গেল–দরদর করে রক্ত পড়ছে ক্ষত দিয়ে। ভীষণ ঘাবড়ে গিয়ে ছেলের বাবাকে ঘটনাটা বলতে গিয়েছিল নার্স, কিন্তু কাকুতিমিনতি করে তাকে আটকান ছেলের মা। এমনকী মুখ বন্ধ রাখার জন্যে কড়কড়ে পাঁচটা পাউন্ড ঘুস পর্যন্ত দেন। ব্যাপারটা সেইখানেই ধামাচাপা পড়ে। ভদ্রমহিলাও বলেননি কেন এমন করে কামড়চ্ছিলেন নিজের ছেলেকে।
নার্স কিন্তু ভুলতে পারল না ভয়ংকর সেই দৃশ্য চোখে চোখে রাখল ছেলেকে। স্পষ্ট বুঝল, ছেলের মা-ও যেন চোখে চোখে রাখছে নার্সকে তার একটু সরে যাওয়ার আর ছেলেকে নিরিবিলিতে একলা পাওয়ার সুযোগ খুঁজছে। দিনরাত নার্স আগলে রইল ছেলে, দিনরাত ছেলের মা খরনজরে রাখল নার্সকে যেন মেষশাবককে একলা পাওয়ার তালে ঘুরছে ক্ষুধার্ত নেকড়ে। উপমাটা অবিশ্বাস্য কিন্তু হেসে উড়িয়ে দেবেন না–একটি শিশুর জীবন আর একজন ভদ্রলোকের মানসিক সুস্থতা নির্ভর করছে এর ওপর।
তারপর এল সেই ভয়ানক দিনটি যেদিন স্বামীর কাছে কোনো ব্যাপারই আর গোপন করা গেল না। স্নায়ুর ওপর দিবানিশি এই নিপীড়ন নার্স আর সহ্য করতে পারল না–ভেঙে পড়ল। মুক্তকণ্ঠে সব স্বীকার করল ছেলের বাবার কাছে। শুনে বিশ্বাস করলেন না ভদ্রলোক যেমন করছেন না আপনি। সৎছেলের ওপর হামলাবাজি করা ছাড়া ভদ্রমহিলার মিষ্টি চরিত্রে কোনোরকম কদর্যতা এবং পৈশাচিকতা কল্পনাও করা যায় না। মনিবানি সম্পর্কে এইসব কুৎসার জন্যে নার্সকে যেই ধমকাতে শুরু করেছেন ভদ্রলোক, ঠিক সেই সময়ে তীব্র যন্ত্রণায় ককিয়ে কেঁদে উঠল শিশুপুত্র। নার্সারিতে দৌড়ে গেলেন দুজনে। মিস্টার হোমস কল্পনা করুন ভদ্রলোকের তখনকার মনের অবস্থা যখন তিনি স্বচক্ষে দেখলেন ছোট্ট খাটের পাশে হেঁট হয়ে বসে নিজের ছেলের ঘাড় কামড়ে রয়েছেন তারই স্ত্রী, দেখলেন রক্তে মাখামাখি হয়ে রয়েছে ছেলের ঘাড় আর বিছানার চাদর। বিষম আতঙ্কে বিকট চেঁচিয়ে উঠে স্ত্রীর মুখ চেপে ধরে আলোর দিকে ঘুরিয়ে দিতেই দেখলেন রক্ত লেপে রয়েছে দুই ঠোঁটে। না, কোনো সন্দেহই নেই আর নিজের ছেলের রক্তপান করছিলেন ভদ্রমহিলা।
এই ব্যাপার। ভদ্রমহিলা এখন নিজের ঘরে অন্তরিন। কেন এমন করতে গেলেন, তা বলেননি। ভদ্রলোকও উন্মত্ত-প্রায়। ভ্যাম্পায়ার সম্পর্কে কিছুই তিনি জানেন না, আমিও জানি না। আগে ভাবতাম এসব বিদেশি গালগল্প। এখন তো দেখছি খাস ইংলন্ডের মাটিতেই এ-কাণ্ড ঘটছে। বিষয়টা নিয়ে সাক্ষাতে আলোচনা করতে চাই। আপনার অসামান্য ক্ষমতা যদি প্রয়োগ করতে চান, বিকৃত বুদ্ধি এক ভদ্রলোকের উপকার করতে চান, দয়া করে ফাগুসন্স, ল্যামবার্লি এই ঠিকানায় টেলিগ্রাম করে দিন। দশটার মধ্যেই আপনার ঘরে পৌঁছে যাব।
আপনার বিশ্বস্ত
রবার্ট ফার্গুসন।
পুনশ্চ–আপনার বন্ধু ওয়াটসন ব্ল্যাকহিদে যখন রাগবি খেলতেন, আমি তখন রিচমন্ডের তরফে থ্রিকোয়ার্টার ছিলাম। ব্যক্তিগত পরিচয় হিসেবে শুধু এইটুকুই বলা যায়।
চিঠি রেখে বললাম, চিনি বই কী ফার্গুসনকে। বব ফার্গুসন। রিচমন্ডে অমন দুঁদে থ্রিকোয়ার্টার আর ছিল না। দিলদরিয়া মানুষ। বন্ধুর সমস্যায় এত উদবেগ ওকেই মানায়।
চিন্তাকুটিল ললাটে আমার দিকে তাকিয়ে থেকে মাথা নেড়ে হোমস বললে, তোমার মধ্যে অনেক সম্ভাবনা আছে, ওয়াটসন। টেলিগ্রামটা লিখে ফেললা! সানন্দে গ্রহণ করব আপনার কেস।
আপনার কেস!
তা নয় তো কী! আমাদের এই এজেন্সি যে দুর্বলমনাদের জন্যে নয়, প্রথমেই তা সমঝে দেওয়া দরকার। এ-কেস তাঁর নিজের।
ফার্গুসন এল ঠিক দশটার সময়ে। এককালের সেই বিরাটকায় খেলোয়াড়ি চেহারা আর নেই–ধসে গেছে। চুল পাতলা হয়ে এসেছে, কাঁধ গোল হয়ে ঝুলে পড়েছে। এককালের দুর্দান্ত খেলোয়াড়দের এ-চেহারা দেখলে কষ্ট হয়। আমার তো মনে হল আমাকে দেখেও একই ভাবের উদয় হল ফার্গুসনের মনের মধ্যে।
বলেও ফেলল আগের মতোই গম্ভীর ভরাট আন্তরিক গলায়, হ্যালো ওয়াটসন, ওল্ড ডিয়ার পার্কে দড়ির ওপর দিয়ে ভিড়ের মধ্যে যে-ওয়াটসনকে ছুঁড়ে দিয়েছিলাম–দেখছি সে-ওয়াটসন তুমি আর নও। আমিও পালটেছি–বিশেষ করে গত দু-তিন দিনের মধ্যে হঠাৎ বয়সটা বেশ খানিকটা বাড়িয়ে ফেলেছি। মিস্টার হোমস আপনার চিঠি পড়ে বুঝলাম, কেসটা যে আমারই, তা আপনি ধরে ফেলেছেন।
সোজাসুজি কথা বলাই ভালো, বলল হোমস।
কথাটা ঠিক। কিন্তু কী জানেন, আমি যে কী করব, তাই ভেবে পাচ্ছি না। আমার স্ত্রী আমাকে ভালোবাসে–প্রচণ্ড ভালোবাসে। তাকে যেমন আলগাতে চাই, বাচ্চা দুটোকেও তেমনি আগলাতে চাই। বলুন এ-পরিস্থিতিতে কী করা উচিত আমার। কী মনে হয় আপনার? মাথার রোগ? পাগলামি? রক্তের দোষ? এ-রকম কে আগে হাতে কখনো পেয়েছেন? বলুন, মিস্টার হোমস, বলুন আমাকে, গাইড করুন, পরামর্শ দিন আমার মাথার একদম ঠিক নেই।
আগে বসুন। যা বলি, তার সোজা জবাব দিন, বুদ্ধিশুদ্ধি আমারও গুলিয়ে গেছে। প্রথমে বলুন, স্ত্রী কি এখনও ছেলেদের কাছে আছে?
না। ভয়ংকর সেই দৃশ্য স্বচক্ষে দেখবার পর পাগলের মতো তাকে বার বার জিজ্ঞেস করেছি, এ-কাজ সে কেন করতে গেল, কেন, কেন, কেন? ফ্যালফ্যাল করে আমার মুখের দিকে কীরকম ভাবে যেন চেয়ে রইল সে–একটা কথারও জবাব দিলে না। সে যে আমাকে বড়ো ভালোবাসে মিস্টার হোমস সমস্ত অন্তর দিয়ে উন্মাদিনীর মতোই ভালোবাসে। তারপরেই ছুটে চলে গেল নিজের ঘরে। খিল তুলে দিল ভেতর থেকে। আমার সঙ্গে দেখা পর্যন্ত করতে চাইছে না আর। ওর বাপের বাড়ির একজন ঝি আছে–ডোলোরেস তার নাম–ঝি না-বলে বান্ধবীই বলা উচিত। খাবারদাবার সে-ই ভেতরে নিয়ে যায়।
যাক। ছেলে দুটো তাহলে বিপদের মধ্যে আর নেই?
নার্স মিসেস ম্যাসন দিব্যি গেলে বলেছে, বাচ্চাকে এক সেকেন্ডের জন্যও আর চোখের আড়ালে করবে না। অস্বস্তি হচ্ছে কেবল জ্যাকের জন্যে আমার বড়ো ছেলে। এর আগে দু-দুবার তাকে মারধর করেছে আমার স্ত্রী।
জখম তো করেনি?
না, কিন্তু নিষ্ঠুরভাবে মেরেছে। বেচারা এমনিতেই পঙ্গু। শিরদাঁড়া বেঁকে গিয়েছে ছেলেবেলায় পড়ে যাওয়ার পর থেকে। দেখলে মায়া হয়–মনটা বড়ো ভালো, প্রাণে স্নেহ মমতা ভালোবাসা আছে–বলতে বলতে কোমল হয়ে এল ফাগুসনের বিরাট কাঠামো।
ফার্গুসনের লেখা গতকালের চিঠিটা পড়তে পড়তে হোমস বললে, বাড়িতে আর কে কে আছে?
দুজন চাকর, মাইকেল–আমার সহিস বাড়িতেই ঘুমোয়, আমার স্ত্রী। আমি, বড়ো ছেলে জ্যাক, বাচ্চাটা, ডোলোরেস আর মিসেস ম্যাসন। আর কেউ নেই।
বিয়ের সময়ে স্ত্রী সম্বন্ধে সব খবর নিশ্চয় জানা ছিল না?
কয়েক হপ্তা আলাপের পর বিয়ে হয়েছিল।
ডোলোরেস কদ্দিন আছে ওঁর সঙ্গে?
বেশ কয়েক বছর।
তার মানে, স্ত্রীর চরিত্র আপনি যা জানেন, তার চাইতে বেশি জানে ডোলোরেস?
তা বলতে পারেন।
কী যেন লিখে নিল হোমস।
বললে, তদন্ত এখানে বসে হবে না আপনার বাড়ি যেতে হবে। উঠব অবশ্য সরাইখানায়।
ফার্গুসন যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচল।
দুটোয় একটা ট্রেন আছে ভিক্টোরিয়ায়।
তাতেই যাব। হাতে এখন একদম কাজ নেই। ওয়াটসনও আসবে। তার আগে দু-একটা প্রশ্ন। ভদ্রমহিলা দুটো ছেলের ওপরেই চড়াও হয়েছেন?
হ্যাঁ।
কিন্তু ধরনটা দু-রকমের। জ্যাককে উনি মেরেছেন।
একবার লাঠি দিয়ে, আর একবার শুধু হাতে–অত্যন্ত নিষ্ঠুরভাবে।
কেন মেরেছিলেন, বলেছিলেন?
না। শুধু বলেছে জ্যাককে সে মনেপ্রাণে ঘৃণা করে–দু-চক্ষে দেখতে পারে না। একবার নয় বার বার ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বলেছে একই কথা।
সৎমা-রা ওইরকমই বলে বহুক্ষেত্রে! ঈর্ষার ব্যাপার। আপনার স্ত্রীর স্বভাবেও কি ঈর্ষার আগুন আছে?
প্রচণ্ডভাবে আছে। গরমের দেশে জন্মালে যা হয় আর কি।
জ্যাকের বয়স যখন পনেরো, মাথাও নিশ্চয় সাফ–বিশেষ করে শারীরিক বিকৃতি থাকার ফলে আর পাঁচটা সুস্থ ছেলের চেয়ে মগজের বুদ্ধি একটু বেশিই হয়েছে বলা যেতে পারে। কেন অমন মারা হয়েছে তাকে, সে কী বলেছে?
বলেছে স্রেফ অকারণে নাকি মেরেছে সৎমা।
স্নেহের সম্পর্ক নিশ্চয় এককালে ছিল দুজনের মধ্যে?
কোনোকালেই ছিল না।
কিন্তু আপনি যে বললেন ছেলেটার প্রাণে স্নেহ মমতা ভালোবাসা আছে?
এ-রকম পিতৃভক্ত ছেলে দুটি আর হয় না। আমার জীবনই তার জীবন। আমার কথায় আমার কাজে ড়ুবে থাকে অষ্টপ্রহর।
হোমস আবার কী যেন লিখে নিল। কিছুক্ষণ চুপ করে বসে রইল।
দ্বিতীয় বিয়ের আগে আপনি আর জ্যাক খুব কাছাকাছি ছিলেন–প্রাণের বন্ধু বলতে পারেন। তাই তো?
খুবই।
যার মনে এত স্নেহ মমতা ভালোবাসা, মরা মায়ের স্মৃতিও নিশ্চয় তার মনে খুব উজ্জ্বল?
খুবই।
ইন্টারেস্টিং ছেলে। আর একটা প্রশ্ন। বাচ্চা আর জ্যাকের ওপর কি একই সময়ে চড়াও হতে দেখা গেছে আপনার স্ত্রীকে?
প্রথমবারে তাই। যেন খুন চেপেছিল স্ত্রীর মাথায় একই সঙ্গে দুধের বাচ্চা আর জ্যাকের ওপর ঝাল বেড়েছে। দ্বিতীয়বারে মার খেয়ে মরেছে কেবল জ্যাক–বাচ্চা নিরাপদেই ছিল–বলেছে মিসেস ম্যাসন।
তাহলে তো আরও জট পাকিয়ে গেল ব্যাপারটা।
বুঝলাম না, মিস্টার হোমস।
এখন বুঝবেন না। থিয়োরির পর থিয়োরি খাড়া করে যাওয়া আমার মেথড। তার আগে মুখ খুলি না এবং সেটাই আমার বদভ্যাস। আপনার বন্ধু আমার সম্বন্ধে খুব বাড়িয়ে গল্প-টল্প লেখে। তবে কী জানেন আপনার এ-কেস খুব একটা দুর্ঘট নয়–মীমাংসা করা যাবে। যাই হোক, বেলা দুটোয় ভিক্টোরিয়ায় দেখা পাবেন আমাদের।
নভেম্বরের কুয়াশাচ্ছন্ন বিষণ্ণ সন্ধ্যায় ল্যামবার্লি এসে পৌঁছোলাম আমরা। সঙ্গের জিনিসপত্র সরাইখানায় রেখে সাসেক্সের কাদামাটি মাখা দীর্ঘ গলিপথ বেয়ে এসে দাঁড়ালাম অতি পুরাতন নিভৃত একটা খামারবাড়ির সামনে। বিরাট বাড়ি। মাঝের অংশ অতিশয় প্রাচীন, ধারের দিক অতিশয় আধুনিক। বেজায় উঁচু টিউডর চিমনি, ছাতলাপড়া হর্সাম টালি ছাওয়া ছাদ দেখবার মতো। চৌকাঠ ক্ষয়ে গেছে বহুবছর ধরে বহু মানুষের আনাগোনায়। প্রথম যিনি এ-বাড়ি বানিয়েছেন, তাঁর নাম লেখা রয়েছে সেকালের টালিতে। বাড়ির ভেতরে কড়িকাঠগুলো ভারী ওক কাঠের। মেঝে ক্ষয়ে গর্ত গর্ত হয়ে গেছে। পড়োপড়ো বাড়ির চারদিক থেকে যেন বয়স আর জরার গন্ধ নাকে ভেসে আসছে।
মাঝের একটা প্রকাণ্ড ঘরে আমাদের নিয়ে গেল ফার্গুসন। অতিশয় মান্ধাতার আমলের ফায়ার প্লেসে কাঠের গুড়ি জ্বলছে দাউদাউ করে। আগুনের পেছনে লোহার চাদরে লেখা সালটা–১৬৭০।
বিভিন্ন সময় আর বিভিন্ন দেশের সমন্বয় ঘটেছে ঘরখানার মধ্যে। দেওয়ালের তলার দিকে কাঠের প্যানেল–সপ্তদশ শতাব্দীতে নির্মিত, কিন্তু আধুনিক জলরঙে চিত্রিত। কাঠের তক্তার ওপরদিকে হলদে পলেস্তারার ওপর ঝুলছে সারি সারি দক্ষিণ আমেরিকার অস্ত্রশস্ত্র আর বাসনপত্র—ফার্গুসনের পেরুভিয়ান বউ নিশ্চয় বাপের বাড়ি থেকে এনে টাঙিয়ে রেখেছে দেওয়ালে। দেখেই জাগ্রত হল হোমসের কৌতূহল। দেওয়ালের সামনে দাঁড়িয়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগল প্রত্যেকটা অস্ত্র। ঘুরে দাঁড়াল চোখের মধ্যে একরাশ চিন্তা নিয়ে।
পরক্ষণেই বলল সবিস্ময়ে, আরে! আরে! এ আবার কী!
এক কোণে ঝুড়ির মধ্যে শুয়ে ছিল একটা স্প্যানিয়েল কুকুর। এখন বেরিয়ে এল বাইরে। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে, পেছনের পা টেনে, মেঝের ওপর ল্যাজ ঝুলিয়ে অতিকষ্টে এগিয়ে এসে হাত চাটতে লাগল ফার্গুসনের।
কী হল, মিস্টার হোমস?
কুকুরটার এমন দশা হল কী করে?
সেটাও একটা সমস্যা। পশুর ডাক্তাররাও বুঝতে পারছে না। এক রকমের পক্ষাঘাত শিরদাঁড়ার মেনিনজাইটিস। তবে আগের চাইতে ভালো আছে–সেরে উঠবে দু-দিনেই। না রে কালো?
কার্লোর ঝুলে পড়া ল্যাজের মধ্যে দিয়ে যেন একটা শিহরন বয়ে গেল। তাকে নিয়েই যে আলোচনা হচ্ছে বুঝতে পেরে কীরকম যেন করুণ চোখে পর্যায়ক্রমে দেখতে লাগল আমাদের।
রোগটা কি হঠাৎ হয়েছে?
রাতারাতি।
কদ্দিন আগে?
মাস চারেক আগে।
খুবই আশ্চর্য! খুবই ইঙ্গিতপূর্ণ।
কী বলতে চান, মিস্টার হোমস?
ঠিক যেরকমটি ভেবেছি, দেখছি তার সবই মিলে যাচ্ছে।
ভগবানের দোহাই মিস্টার হোমস, কী ভেবেছেন দয়া করে বলুন! আপনার কাছে এটা বুদ্ধির ব্যায়াম হতে পারে, আমার কাছে জীবন মরণের খেলা। আমার স্ত্রী ভাবী খুনি আমার ছেলের প্রাণ যেতে বসেছে! আমার সঙ্গে অন্তত খেলা করবেন না!
রাগবি থ্রি কোয়ার্টারের অতবড়ো দেহখানা থরথরিয়ে কাঁপতে লাগল বিষম উত্তেজনায়। বাহু স্পর্শ করে আশ্বস্ত করে হোমস বললে—
এই মুহূর্তে কিছুই বলব না। তবে সমাধানটা আপনার পক্ষে বেদনাদায়ক হবে–এইটুকুই শুধু শুনে রাখুন।
একটু বসুন। স্ত্রীর খোঁজটা নিয়ে আসি।
ফার্গুসন বেরিয়ে যেতেই ফের দেওয়ালের সামনে গিয়ে তন্ময় হয়ে অস্ত্রশস্ত্র নিরীক্ষণ করতে লাগল হোমস। একটু পরেই ফিরে এল ফার্গুসন–মুখ দেখে বুঝলাম অবস্থার তিলমাত্র উন্নতি ঘটেনি। পেছন পেছন এল ছিপছিপে লম্বা চেহারার বাদামি মুখ একটি মেয়ে।
ডোলোরেস, মিসেস ফার্গুসনকে চা দাও, বলল ফার্গুসন।
বিতৃষ্ণা জ্বলজ্বল চোখে মনিবের দিকে তাকিয়ে ডোলোরেস বললে দক্ষিণ আমেরিকার উচ্চারণে, ওঁর শরীর খুব খারাপ। কিছু খাচ্ছেন না। ডাক্তার ডাকতে বলছেন। আমার বড়ো ভয় হচ্ছে।
সপ্রশ্ন চোখে আমার দিকে ফার্সন তাকাতেই আমি বললাম, আমি গিয়ে দেখে আসতে পারি।
ডোলোরেস, মিসেস ফার্গুসন ডাক্তার ওয়াটসনকে ঢুকতে দেবেন তো?
দেবেন, দেবেন, জিজ্ঞেস করার দরকার নেই। আসুন আমার সঙ্গে। চলো।
আবেগকম্পিত ভোলোরেসের পেছন পেছন অনেক সিঁড়ি অনেক গলিপথ পেরিয়ে লোহার চাদর দিয়ে মজবুত করা প্রকাণ্ড একটা দরজার সামনে এসে দাঁড়িয়ে বুঝলাম গায়ের জোরে এ-দরজা ভেঙে বউয়ের সঙ্গে দেখা করার ক্ষমতা ফার্গুসনের হবে না। চাবি দিয়ে দরজা খুলে ভেতরে ঢুকল ডোলোরেস–পেছনে আমি। সঙ্গেসঙ্গে খিল তুলে দেওয়া হল দরজায়।
শয্যায় শুয়ে এক মহিলা। দেখেই বুঝলাম দারুণ জ্বরে প্রায় বেহুঁশ। আমার পায়ের আওয়াজ পেতেই জ্বরের ঘোরে অর্ধেক উঠে সভয়ে তাকালেন–বড়ো বড়ো সুন্দর দুটি চোখে অসীম আতঙ্ক ঘনিয়ে উঠল। আমাকে দেখে আশ্বস্ত হয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে ফের এলিয়ে পড়লেন বালিশে। নাড়ি দেখলাম। জ্বর হয়েছে ঠিকই, তবে আমার মনে হল কারণটা মানসিক নিদারুণ স্নায়বিক উত্তেজনা।
দিন দুই হল এইভাবে শুয়ে আছেন বাঁচবেন তো? ভয়ে বিকৃত শোনাল ডোলোরেসের গলা।
আরক্ত সুন্দর মুখ আমার দিকে ফিরিয়ে ভদ্রমহিলা বললেন, আমার স্বামী কোথায়?
নীচে। আপনার সঙ্গে দেখা করতে চান।
দেখা করব না–কখনোই করব না। বলতে বলতে যেন প্রলাপবকুনি আরম্ভ করে দিলেন, পিশাচ! পিশাচ! শয়তান কোথাকার!
বলুন আমি কী করতে পারি?
কিছু করতে পারবেন না–কেউ পারবে না। সব শেষ! সব শেষ! আমার যা খুশি করব। সব শেষ!
ভদ্রমহিলা নিশ্চয় কোনো বিচিত্র বিভ্রান্তিতে ভুগছেন। সজ্জন বব ফার্গুসনকে নরপিশাচ বা শয়তানের ভূমিকায় কল্পনাও করতে পারলাম না।
বললাম, ম্যাডাম, বুক দিয়ে আপনার স্বামী আপনাকে ভালোবাসেন। এ-ঘটনায় তিনি গভীর শোক পেয়েছেন।
আবার সেই জ্বালাময় চোখে আমার দিকে তাকালেন ভদ্রমহিলা।
বললেন, হ্যাঁ বাসে। আমিও কি বাসি না? ভালোবাসায় ভরা তার বুক ঘা মেরে ভেঙে টুকরো টুকরো করে দেওয়ার চাইতে নিজেকে তিল তিল করে মেরে ফেলার মতো ভালো কি আমি বাসি? আমার এই ভালোবাসার পরেও সে কিনা ওইভাবে আমার সম্পর্কে কথা বলতে পারে?
বড়ো দুঃখ পেয়েছে–বুঝতে পারেনি।
বুঝতে পারেনি ঠিকই–কিন্তু বিশ্বাস তো করা উচিত ছিল।
দেখাও করবেন না?
না, না। যেসব কথা ও বলেছে, যে-চোখে তাকিয়েছে–কোনোদিনই তা ভুলব না। দেখাও করব না। আপনি যান। কিছুই করতে পারবেন না আমার জন্যে। শুধু একটা কথা বলবেন। আমার ছেলেকে আমি চাই। আমার দাবি আছে বলেই চাই। এ ছাড়া আর কোনো কথা তার সঙ্গে আমার নেই। বলে, দেওয়ালের দিকে মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে শুলেন ভদ্রমহিলা–আর একটা কথাও বললেন না।
নীচের তলায় এসে বললাম সব। বিষম উৎকণ্ঠায় শুনল ফার্গুসন।
বলল, ছেলেকে পাঠানেনা কি যায়? ওর ভেতরে এখন কোন প্রবৃত্তি মাথা চাড়া দিয়েছে কেউ তা জানে না। রক্তমাখা ঠোঁটে যেভাবে উঠে দাঁড়িয়েছিল বাচ্চার পাশ থেকে আমি তা ভুলিনি–ভোলা যায় না। মিসেস ম্যাসনের কাছে ছেলে যেমন আছে থাকবে।
মান্ধাতার আমলের এ-বাড়িতে অত্যাধুনিক বস্তু দেখলাম একটিই–স্মার্ট চেহারার ফিটফাট একজন পরিচারিকা। চা নিয়ে ঘরে ঢুকল। চা দিচ্ছে সবাইকে, এমন সময়ে আবির্ভাব ঘটল বছর পনেরো বয়সের হালকা নীল চক্ষু এক কিশোরের, চুল সুন্দর, মুখশ্রী পাণ্ডুর। ফার্গুসনকে দেখেই আবেগ আর আনন্দের রোশনাই জ্বলে উঠল আশ্চর্য সুন্দর সেই চোখে। দৌড়ে এসে আদরিণী মেয়ের মতো বাপের গলা জড়িয়ে ধরে বললে সোল্লাসে, ড্যাডি, ড্যাডি, কখন এলে?
অপ্রস্তুত হয়ে আস্তে আস্তে নিজেকে আলিঙ্গন মুক্ত করে নিল ফার্গুসন।
সোনালি সিল্কের মতো হালকা চুলে হাত বুলাতে বুলোতে বললে পরম স্নেহে, মিস্টার হোমস আর ডাক্তার ওয়াটসনও এসেছেন।
ডিটেকটিভ মিস্টার হোমস?
হ্যাঁ।
অন্তর্ভেদী চোখে আমাদের দেখল কিশোর। গভীর সেই চাউনির মধ্যে বিদ্বেষের ভাবটাই যেন বেশি।
হোমস বললে, আপনার ছোটো ছেলের সঙ্গে এবার আলাপ করা দরকার।
ফার্গুসন বললে, জ্যাক, যা, মিসেস ম্যাসনকে বল বাচ্চা নিয়ে এখানে আসতে। বেরিয়ে গেল জ্যাক। আমার সার্জিক্যাল অভিজ্ঞতায় বুঝলাম, ছেলেটি কেঁপে কেঁপে হাঁটছে মেরুদণ্ডের বিকৃতির জন্যে। ফিরে এল একটু পরেই। পেছনে দীর্ঘকায়া আঁটসাঁট চেহারার এক স্ত্রীলোক–কোলে ভারি সুন্দর এক শিশু, কালো চোখ, সোনালি চুল, স্যাক্সন আর ল্যাটিনের অপূর্ব সমন্বয়। ফার্গুসন কোলে নিয়ে আদর করতে লাগল বাচ্চাকে–গভীর স্নেহ ফুটে উঠল চোখে-মুখে।
দেবশিশুর গলার মতো পেলব গলায় ছোট্ট একটা লাল টকটকে ক্ষতর দিকে তাকিয়ে বললে আপন মনে, এমন বাচ্চাকেও জখম করতে প্রাণ চায়?
ঠিক এই সময়ে হোমসের ওপর চোখ পড়ায় দেখলাম বিচিত্র তন্ময়তা জাগ্রত হয়েছে তার ভাবভঙ্গিতে। পুরোনো হাতির দাঁত খুদে তৈরি করা মুখের মতো স্থির হয়ে উঠেছে মুখভাব–যে-চোখ একটু আগেই ন্যস্ত ছিল বাপবেটার ওপর এখন তা দূর বিস্তৃত–ঘরের অন্যদিকে কী যেন দেখছে অপরিসীম কৌতূহল নিয়ে। ঔৎসুক্যের কারণ আবিষ্কারের জন্য দৃষ্টি অনুসরণ করে মনে হল যেন জানলার মধ্যে দিয়ে বাইরের বিষাদ-মলিন কুয়াশাভেজা বাগান দেখছে তন্ময় হয়ে। খড়খড়ি অর্ধেক নামানো–বাইরের দৃশ্য পুরো দেখা যাচ্ছে না–তবুও কিন্তু সেই আধবন্ধ কাচের জানলার দিকেই ধ্যানস্থ চোখে তাকিয়ে আছে শার্লক হোমস। হেসে উঠল পরের মুহূর্তেই দৃষ্টি ফিরে এল বাচ্চার ওপর। মোলায়েম ঘাড়ের ওপর ছোট্ট কুঁচকোনো ক্ষতচিহ্নটার দিকে চেয়ে রইল নির্নিমেষে। সযত্নে পরীক্ষা করল দাগটা। কথা বলল না। তারপর ফুলোফুলো নধর মুঠো দুটো ধরে অল্প নেড়ে দিয়ে বললে, গুডবাই, খুদে মানুষ। জীবনটাকে শুরু করলি কিন্তু বড়ো অদ্ভুত অভিজ্ঞতা দিয়ে। নার্স, তোমার সঙ্গে কথা আছে।
মিসেস ম্যাসনকে একপাশে ডেকে নিয়ে কিছুক্ষণ কী সব কথা বলল হোমস। শেষের কথা ক-টা কানে ভেসে এল–ভয় নেই, শিগগিরই উৎকণ্ঠার অবসান ঘটবে তোমার। বাচ্চা নিয়ে বেরিয়ে গেল স্বল্প আঁঝালো প্রকৃতির নার্স।
ফিরে এসে হোমস বললে, মিসেস ম্যাসনকে আপনার কীরকম মনে হয়?
মনটা ভালো বাইরে থেকে বোঝা যায় না। ছেলেটাকে প্রাণ দিয়ে ভালোবাসে।
জ্যাক কী বলে? পছন্দ হয় মিসেস ম্যাসনকে?
মুখ কালো হয়ে গেল জ্যাকের। মাথা নাড়ল। অর্থাৎ পছন্দ নয় কাঠখোট্টা চেহারার মিসেস ম্যাসনকে।
আদর করে বড়ছেলেকে কাছে টেনে নিয়ে ফার্গুসন বললে, জ্যাকের পছন্দ অপছন্দ বড়ো চুলচেরা। কপাল ভালো, ওর পছন্দসই মানুষদের মধ্যে আমি একজন।
বাবার বুকে মুখ গুঁজল জ্যাক। স্নেহভরে নিজেকে ছাড়িয়ে নিল ফার্গুসন।
বললে, যা পালা। দৌড়ে ঘরের বাইরে চলে গেল জ্যাক–পেছন থেকে গভীর স্নেহে চেয়ে রইল ফার্গুসন। চোখের আড়াল হতেই হোমসকে বললে, আপনাকে এই টানাপোড়েনের মধ্যে টেনে এনে কি ভুল করলাম? এত সূক্ষ্ম আর জটিল সমস্যায় আমাকে সহানুভূতি জানানো ছাড়া আর কি কিছু করতে পারবেন?
সুক্ষ্ম তো বটেই, কৌতুক হাসি হেসে বললে শার্লক, তবে জটিল নয়। ধাপে ধাপে বুদ্ধির বিশ্লেষণ বেয়ে সমাধানে পৌঁছে গেছি বেকার স্ট্রিট থেকে বেরোনোর আগেই। এসেছি কেবল নিজের চোখে দেখে বাজিয়ে নেওয়ার জন্যে।
বলি আঁকা কপালে হাত বুলিয়ে ভাঙা গলায় ফাণ্ডসন বললে, তাহলে আর আমাকে উদবেগের মধ্যে রাখছেন কেন?
খুলে বলার আগে আমি ভদ্রমহিলার সঙ্গে দেখা করতে চাই। ওয়াটসন, উনি কি পারবেন দেখা করতে?
পারবেন।
তবে চলো। জট পরিষ্কার তার সামনেই হোক।
ভাঙা গলায় ফার্গুসন বললে, অসম্ভব। আমার মুখ দেখবে না ও।
দেখবেন, দেখবেন, নিশ্চয় দেখবেন, বলতে বলতে এক টুকরো কাগজে খসখস করে কী যেন লিখে আমার হাতে দিয়ে হোমস বললে, ওয়াটসন, তুমি তো ভদ্রমহিলার সঙ্গে দেখা করার অধিকার পেয়েছ। এই চিরকুটটা পৌঁছে দেবে?
ওপরে গিয়ে দরজায় নক করতেই পাল্লা ফঁক করল ডোলোরেস—বাড়িয়ে দিলাম চিরকুটটা। একটু পরেই ভেতর থেকে ভেসে এল বিস্ময় আর হর্ষ ভরা চিৎকার।
ফাঁক দিয়ে মুখ বাড়িয়ে ভোলোরেস বললে, দেখা করবেন।
ডেকে নিয়ে এলাম হোমস আর ফার্গুসনকে। ঘরে ঢুকেই শয্যায় উঠে বসা বউয়ের দিকে এগোতে গিয়েছিল ফার্গুসন কিন্তু হাত তুলে ভদ্রমহিলা নিরস্ত্র করতেই ধপ করে বসে পড়ল আর্মচেয়ারে। অভিবাদন সেরে নিয়ে হোমস বসল পাশের চেয়ারে। ফ্যালফ্যাল করে বিষম বিস্ময়ে হোমসের দিকে তাকিয়ে রইলেন ভদ্রমহিলা।
হোমস বললে, সবচেয়ে চটপট অপারেশনই সবচেয়ে কম ব্যথা দেয়। তাই ছোট্ট করে বলি, মিস্টার ফার্গুসন, আপনার স্ত্রী রীতিমতো সাধ্বী, অত্যন্ত প্রেমময়ী এবং তার সঙ্গে খুবই জঘন্য ব্যবহার করা হয়েছে!
আনন্দে চেঁচিয়ে উঠল ফার্গুসন, প্রমাণ করুন মশায়, আজীবন দাসখত লিখে দেব আপনাকে।
প্রমাণ তো করবই–কিন্তু আপনাকে আহত করে।
পরোয়া করি না। আমার স্ত্রী অপরাধিনী নন যদি প্রমাণ করতে পারেন–সব আঘাত সয়ে যাব।
বেশ তাহলে শুনুন। বেকার স্ট্রিটের ঘরে বসে যখন রক্তপায়ী-পিশাচের কাহিনি বলেছিলেন, আমি একদম বিশ্বাস করিনি–ওসব গালগল্পেই মানায়। অথচ আপনি স্পষ্ট দেখেছিলেন বাচ্চার খাটের পাশ থেকে রক্তমাখা ঠোঁটে উঠে দাঁড়াচ্ছেন আপনার স্ত্রী।
হ্যাঁ—হ্যাঁ–
ক্ষতচিহ্ন থেকে রক্ত পান করা ছাড়াও অন্য কারণে রক্ত টেনে নেওয়া যায়–এ-ধারণাটা আপনার মাথায় এল না কেন বলতে পারেন? বিষ টেনে বার করার জন্যে ইংলিশ ইতিহাসের এক রানি ক্ষতমুখে মুখ দিয়ে রক্ত শুষে বার করেননি?
বিষ!
দক্ষিণ আমেরিকার জিনিসপত্র ছড়িয়ে রয়েছে বাড়িময়। দেওয়ালে ঝোলানো অস্ত্রশস্ত্র দেখেই মন টেনেছিল ওই কারণেই। অন্য কোনো বিষও হতে পারত কিন্তু আমার সহজাত প্রবৃত্তি মন থেকে বলে উঠল–বিষ এসেছে ওদের মধ্যেরই কোনো একটা থেকে। পাখি মারা পুঁচকে ধনুকটার পাশে ছোট্ট কিন্তু শূন্য তৃণটা দেখেই বুঝলাম–যা ভেবেছি তাই। তির নেই। তার মানে ক্যুরারিবা ওই জাতীয় কোনো মারাত্মক শেকড়ের রসে তিরখানা ড়ুবিয়ে নিয়ে যদি বাচ্চাটাকে খোঁচা মারা হয়–সে-বিষ মাখ দিয়ে টেনে সঙ্গেসঙ্গে বার করে না-দিলে প্রাণে বাঁচানো যাবে না কিছুতেই।
তারপর ধরুন স্প্যানিয়েল কুকুরটার রাতারাতি রোগ হওয়াটা। আগে অবশ্য কুকুরের কথা মাথায় আসেনি–দেখামাত্র বুঝলাম ব্যাপারটা কী। তিরের খোঁচায় কাজ কীরকম হয় দেখার জন্যে মহড়া দেওয়া দরকার। কুত্তা বেচারার ওপর সেই এক্সপেরিমেন্ট করা হয়েছিল। দেখা গেল বিষের ক্ষমতা মোটেই নষ্ট হয়নি।
আপনার স্ত্রী স্বচক্ষে দেখেছেন আপনার বড়ো ছেলে তার ছোটো ভাইকে তির দিয়ে খুঁচিয়ে পালাচ্ছে মেরেছেন সেই কারণেই কাহাতক আর সহ্য করা যায়। মুখ দিয়ে সঙ্গেসঙ্গে বিষ টেনে বার করে দিয়েছেন, কিন্তু আপনাকে জ্যাকের কুকীর্তি বলেননি পাছে আপনার মন ভেঙে যায়–ভালোবাসা কতখানি গভীর হলে এতখানি গোপনতা সম্ভব কল্পনা করতে পারেন?
জ্যাকি!
একটু আগেই তো দেখলাম, ছোটো ছেলেকে আপনার আদর করা দেখে নৃশংস ঘৃণা আর পাশবিক হিংসা ফুটে উঠেছে আপনার আদরের বড়ো ছেলের চোখে-মুখে দেখলাম জানলার শার্সিতে জ্যাকের হিংসায় কালো ঘৃণায় নিষ্ঠুর মুখের প্রতিবিম্ব দেখে আমি অবাক হয়ে গেছি এ-রকম জিঘাংসা কোনোদিন কারো মুখে এভাবে ফুটে উঠতে কখনো আমি দেখিনি।
জ্যাকি?
সহ্য করুন, মিস্টার ফার্গুসন, সহ্য আপনাকে করতেই হবে। ভালোবাসা বিকৃত চেহারা নিলে এই পথেই চলে। সে ভালোবাসে নিজের মায়ের স্মৃতিকে, ভালোবাসে আপনাকে সে জানে নিজের শরীরের দুর্বলতা কোথায়–ঠিক তার বিপরীত আপনার ছোটো ছেলে–ফুটফুটে সুন্দর যেন এক দেবশিশু–ঈর্ষার বিয়ে তাই অমানুষ হয়ে গেছে জ্যাকের মতো ছেলেও।
গুড গড! এ যে বিশ্বাস করাও যায় না।
ম্যাডাম, আমি কি মিথ্যে বলছি?
এতক্ষণ বালিশে মুখ গুঁজে কুঁপিয়ে কাঁদছিলেন ভদ্রমহিলা। এবারে মুখ ফেরালেন স্বামীর পানে।
এ-কথা কি তোমাকে বলা যায়, বব? আমি চেয়েছিলাম–আমি নয়, আর কেউ তোমাকে সব বলুক, এই ভদ্রলোকের সেই ক্ষমতা আছে–অলৌকিক ক্ষমতা। চিরকুটে লিখে পাঠালেন–সব জানেন, সমস্ত।
চেয়ার ছেড়ে উঠতে উঠতে হোমস বললে, আমার প্রেসক্রিপশন যদি শোনেন তো জ্যাককে বছরখানেক সাগরে হাওয়া খাইয়ে আনুন। মিসেস ফার্গুসন, একটা ব্যাপার এখনও ধোঁয়াটে রয়ে গেল আমার কাছে। বাচ্চাটাকে এই দু-দিন ছেড়েছিলেন কোন সাহসে?
মিসেস ম্যাসন সব জানে আমি বলেছি।
ঠিক, ঠিক। আমিও তাই আঁচ করেছিলাম।
ফার্গুসন দু-হাত বাড়িয়ে কাঁপতে কাঁপতে বিছানার ধারে এসে দাঁড়িয়েছে দেখে ফিসফিস করে হোমস বললে, ওহে ওয়াটসন, চলো এবার পালাই। ডোলোরেসের এক হাত তুমি ধরো, আর একটা হাত আমি ধরছি। তিনজনে বাইরে আসতেই দরজা বন্ধ করে দিয়ে বললে, বাকিটা নিজেদের মধ্যেই মিটিয়ে নিক।
যে-চিঠি পাওয়ার পর কেসের সূত্রপাত, হোমস তার জবাব দিল এইভাবে :
বেকার স্ট্রিট
২১ নভেম্বর
বিষয় : ভ্যাম্পায়ার
মহাশয়,
আপনার ১৯ তারিখের চিঠির জবাবে জানাচ্ছি, আপনাদের মক্কেল মিন্সিং লেনের চায়ের দালাল ফার্গুসন অ্যান্ড মুরহেডের মিস্টার রবার্ট ফার্গুসনের সমস্যার একটা সন্তোষজনক সমাধান আমি করেছি। আপনার সুপারিশের জন্য ধন্যবাদ।
আপনার বিশ্বস্ত
শার্লক হোমস
—
টীকা
রক্তচোষা বউয়ের রক্তজমানো কাহিনি : দি অ্যাডভেঞ্চার অব দ্য সাসেক্স ভ্যামপায়ার ইংলন্ডে স্ট্র্যান্ড ম্যাগাজিনের এবং আমেরিকার হার্স্টস ইন্টারন্যাশনাল ম্যাগাজিনের জানুয়ারি ১৯২৪ সংখ্যায় প্রথম প্রকাশিত হয়।
হা-হা হাসির কাছাকাছি : হোমসকে কিন্তু অনেক সময়ে উচ্চস্বরে হেসে উঠতে দেখা গিয়েছে।
ওল্ডজুরি : লন্ডনের ওল্ড জিউইস স্ট্রিটে ইহুদি শরণার্থীরা ঘাঁটি গেড়েছিল দ্বাদশ শতকে ইউরোপের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এসে। খুদে টাকা খাটানো ছিল এদের ব্যাবসা, কারণ তাদের অন্য ব্যাবসা করবার অনুমতি দেওয়া হত না।
কলকবজা নিয়ে কারবার করি : যে আইন ব্যবসায়ী সংস্থা কলকবজা নিয়ে কারবার করে, একজন চায়ের দালালের পক্ষে তাদের মক্কেল হওয়া বেশ অস্বাভাবিক।
জাহাজের নাম : একজন গবেষক, রিচার্ড ডবলু ক্লার্ক, জানিয়েছেন সাংহাইয়ের ওরিয়েন্টাল ট্রেডিং কোম্পানির মাটিলডা ব্রিগস নামে একটি জাহাজ ছিল।
সুমাত্রার দানর ইঁদূর : বৈজ্ঞানিক নাম সানডামিস ইনফ্রালুটিউস। একটি পুর্ণবয়স্ক পুরুষ ইঁদুরের ওজন বাইশ পাউন্ড এবং লেজসহ দৈর্ঘ্য চব্বিশ ইঞ্চি পর্যন্ত হতে পারে বলে জানা গিয়েছে।
ট্রানসিলভানিয়া : ভিক্টোরীয়-যুগে মধ্য রোমানিয়ার ট্রানসিলভানিয়া ছিল হাঙ্গেরির দখলভুক্ত। ব্রাখ স্টোকারের বিখ্যাত গল্প ড্রাকুলা-র পটভূমি হল এই অঞ্চল। কাহিনি অনুসারে এখানেই ছিল রক্তচোষা কাউন্ট ড্রাকুলার দুর্গ প্রাসাদ। এই অঞ্চলে বাস্তবেও একটি প্রাসাদ আছে যার নাম ড্রাকুলাস ক্যাসল। তবে ওই ক্যাসলের কাউন্ট ড্রাকুলা বাস্তবে ছিলেন উদার এবং উপকারী মানুষ।
নাইট্রেট আমদানি করার সময়ে : একজন চায়ের দালাল হঠাৎ পেরু থেকে নাইট্রেট আমদানি করতে গেল কী কারণে?
ব্ল্যাকহিদে : ব্ল্যাকহিদের রাগবি ক্লাব প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৫৮ সালে।
রিচমন্ডের : রিচমন্ডের রাগবি ক্লাব সংগঠিত হয় ১৮৬১-তে। ১৮৭১-এ এই দুই ক্লাব অন্য আরও কয়েকটি ক্লাব মিলে রাগবি ফুটবল ইউনিয়ন গঠন করে।
ওল্ড ভিয়ার পার্ক : রিচমন্ডের কাছাকাছি রয়্যাল বোটানিক্যাল গার্ডেন লাগোয়া ওল্ড ডিয়ার পার্কের দশ একর জমি রিচমন্ড ক্রিকেট ক্লাবকে লিজ দেওয়া হয় ১৮৬৫ সালে। পরের বছর ক্রিকেট ক্লাব ওই জমি রিচমন্ড ফুটবল ক্লাবকে ব্যবহার করতে দেয় শীতকালে রাগবি খেলবার জন্য।
ক্যুরারি : নিরক্ষীয় অঞ্চলের উদ্ভিদ থেকে লব্ধ এক ধরনের বিষ। দক্ষিণ আমেরিকার অধিবাসীদের মধ্যে শিকার করতে বা যুদ্ধের সময়ে শত্রুর ওপর তিরের বা বর্শার ফলায় মাখিয়ে এই বিষ ব্যবহারের প্রচলন ছিল।
কুকুরটার রাতারাতি রোগ হওয়াটা : ক্যুরারি বা কিউরারির প্রথম অভিঘাত লক্ষিত হয় রোগীর মুখের পেশিতে। কুকুরটার তা হয়নি। বিয়ের আক্রমণে কুকুরটির মুখ, ঘাড় বা পায়ে কোনো অস্বাভাবিকত্ব দেখা যাওয়ার কথা। কিংবা কুকুরটির মরে যাওয়ার কথা।