ছদ্মবেশীর ছলনা [এ কেস অফ আইডেনটিটি]
বেকার স্ট্রিটের আস্তানায় বসে আছি আমি আর হোমস। সামনে আগুনের চুল্লি।
হোমস বললে, ভায়া, কল্পনার রং কখনো বাস্তবের রঙের চেয়ে জোরদার হতে পারে না। আটপৌরে নাটক নভেল মাঠে মারা যাবে যদি জীবন থেকে তুলে নেওয়া সত্য ঘটনাকে সঠিকভাবে দেখা যায়।
আমি বললাম, আমার তাতে সন্দেহ আছে। কই, হাজার রং চড়িয়েও তো পুলিশ কোর্টের কেসগুলোকে নিছক কেলেঙ্কারির উর্ধ্বে তোলা যায় না?
সেটা হয় খুঁটিয়ে রিপোর্ট পেশ করার মতো মগজ নেই বলে। যা নজর কাড়ে না, তা এড়িয়ে যাওয়া বোকামি। তুচ্ছ বিষয়ের মধ্যেই বৃহৎ চমকে থাকে।
মেঝে থেকে দৈনিক সংবাদপত্রটা তুলে নিয়ে বললাম, তোমাকে ঘায়েল করার জন্যে একটা শুধু উদাহরণ দিচ্ছি। এই দেখ একটা কেলেঙ্কারির খবর। স্ত্রী-র ওপর স্বামীদেবতার অকথ্য অত্যাচার। ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে যা লেখা হয়েছে যেকোনো নিকৃষ্ট লেখকও এর চাইতে ভালো জিনিস মন থেকে লিখতে পারবে।
কাগজটা হাতে নিয়ে হোমস চোখ বুলিয়ে বললে, ভায়া নিজের উদাহরণেই ঘায়েল হলে তুমি। কেসটা অসাধারণ। আমি নিজে তদন্ত করেছিলাম। স্বামীটি মোটেই বদচরিত্রের লোক নন। তিনি মদ খাওয়া বরদাস্ত করেন না, পরকীয়া ব্যাপারটা দু-চক্ষে দেখতে পারেন না–তা সত্ত্বেও বিবাহবিচ্ছেদের মামলা রুজু করা হল তার বিরুদ্ধে? কেন? না, তিনি খাওয়ার শেষে বাঁধানো দাঁত ছুঁড়ে স্ত্রীকে মারতেন। অদ্ভুত ঘটনা, তাই নয় কি? কল্পনা করতে পারবে কোনো লেখক? নাও হে, এক টিপ নস্যি নিয়ে মাথাটা সাফ করো।
বলে এগিয়ে দিল দামি অ্যামেথিস্ট রত্ন বসানো সোনার নস্যির ডিবে।
অবাক হয়ে বললাম, এটা আবার কোথায় পেলে?
বোহেমিয়ার সেই রাজা দিয়েছে। তোমাকে বলতে ভুলে গিয়েছিলাম।
অনামিকার হিরের আংটি দেখিয়ে বললাম, এটা?
হল্যান্ডের রাজপরিবারের উপহার। তাদের একটা গোপন ব্যাপারে সাহায্য করেছিলাম।
এখন কী করছ? হাত খালি, না কেস আছে?
আছে দশ বারোটা, কিন্তু কোনোটাই চিত্তাকর্ষক নয়। যে-মামলা যত বিরাট বলে মনে হয়, আসলে তা তত সহজ। আকারটাই প্রকাণ্ড–ভেতরে ফক্কা। মিনিট কয়েকের মধ্যে আর একজন মক্কেল আসতে পারে।
বলে, উঠে গিয়ে দাঁড়াল জানলায়। আমিও ওর দৃষ্টি অনুসরণ করলাম। ফুটপাথে দাঁড়িয়ে একজন মহিলা। সাজপোশাক জমকালো। ভীষণ উত্তেজিত। আঙুল কাঁপছে। আমাদের জানলায় চোখ পড়তেই জলে ঝাঁপ দেওয়ার মতো সাঁৎ করে রাস্তা পেরিয়ে এসে ঢং ঢং করে বাজিয়ে দিলেন দরজার ঘণ্টা। হোমস বললে, প্রেমের কেস মনে হচ্ছে নইলে ঘণ্টা নিয়ে এভাবে হ্যাচকা টান কেউ মারে? গোপনীয় কাণ্ড বলেই প্রথমটা মনস্থির করতে পারেননি দোটানায় পড়েছিলেন।
একটু পরেই চাকরের পেছন পেছন হাজির হলেন ভদ্রমহিলা। নাম মিস সাদারল্যান্ড। শিষ্টাচার বিনিময়ের পর পা থেকে মাথা পর্যন্ত চোখ বুলিয়ে নিল হোমস।
বললে, চোখের বারোটা বাজিয়ে বসে আছেন। অথচ টাইপের কাজ করেন কী করে বুঝলাম না।
প্রথম প্রথম খুবই অসুবিধে হত, এখন অভ্যেস হয়ে গেছে–আন্দাজে বুঝি কোথায় কোন টাইপটা আছে। এই পর্যন্ত বলেই যেন আঁতকে উঠলেন ভদ্রমহিলা। কিন্তু আপনি জানলেন কী করে? নিশ্চয় আগে শুনেছেন?
জানাটাই আমার কাজ, স্মিত মুখে জবাব দেয় হোমস। অন্যের চোখে যা ধরা পড়ে না আমি তা দেখে ফেলি।
দেখুন, আমি খুব বড়োলোক নই। টাইপের কাজ করে সামান্য রোজকার করি, তা ছাড়াও কে-শো পাউন্ড হাতে আসে। সব আপনাকে দেব শুধু একটা খবরের বিনিময়ে। মিস্টার হসমার ঞ্জেল এখন কোথায় আছে বলে দিন।
শিবনেত্র হয়ে হোমস বললে, এসেছেন তো দেখছি ঊর্ধ্বশ্বাসে। কেন বলুন তো?
অবাক হলেন মিস সাদারল্যান্ড, ঠিক ধরেছেন তো! সত্যি আমি ছুটতে ছুটতে আসছি। হার বাবা, মি. উইন্ডিব্যাঙ্ক, একদম পাত্তা দিচ্ছেন না ব্যাপারটাকে। পুলিশে খবর দেবেন না,
তপনার কাছেও আসবেন না। তাই খুব রাগ হয়ে গিয়েছিল।
সৎ-বাবা? পদবি আলাদা দেখছি।
হ্যাঁ। বয়সে আমার চেয়ে মোটে পাঁচ বছর দু-মাসের বড়ো। মায়ের চেয়ে পনেরো বছরের ছোটো। বিধবা হয়েই এঁকে বিয়ে করে মা। বাবার ব্যাবসা ছিল টটেনহ্যাম কোর্ট রোডে। মি. উইন্ডিব্যাঙ্ক নানা জায়গায় ঘুরে মদ বেচেন। তিনি মাকে দিয়ে বাবার ব্যাবসা বিক্রি করে দিলেন–তাতে সুদে আসলে যা পাওয়া যায়–বাবার জীবদ্দশায় তার চাইতে বেশি আসত।
আপনার রোজগারের টাকা কি এ থেকেই আসে?
না। কাকার মৃত্যুর পর তার কিছু কোম্পানির কাগজ আমি পেয়েছি। তা থেকে বছরে সুদ পাই প্রায় এক-শো পাউন্ড।
ছদ্মবেশীর ছলনা
সে তো অনেক টাকা। বছরে ষাট পাউন্ডেই একজন মহিলার জীবন বেশ কেটে যায়।
কিন্তু একসঙ্গে থাকতে গেলে আমাকেও কিছু দিতে হয়। তিন মাস অন্তর সুদের টাকাটা মিস্টার উইন্ডিব্যাঙ্ক এনে মাকে দেন। আমি টাইপ করে যা পাই, তাতে নিজের খরচ বেশ চলে যায়।
হসমার এঞ্জেলের সঙ্গে আপনার কী সম্পর্ক, দয়া করে খুলে বলুন। সংকোচ করবেন না ডক্টর ওয়াটসন আমার বন্ধু।
প্রদীপ্ত মুখে মিস সাদারল্যান্ড বললেন, গ্যাসফিটারের নাচের আসরে হসমার এঞ্জেলের সঙ্গে আলাপ হয় আমার। এসব আসরে আমার যাওয়াটা পছন্দ করতেন না মিস্টার উইন্ডিব্যাঙ্ক। কোথায় যাব শুনলেই খেপে যেতেন। কিন্তু আমি যখন বেঁকে বসলাম, তখন উনি রাগ করে ফ্রান্সে চলে গেলেন। মা আর ফোরম্যান মি. হার্ডির সঙ্গে গেলাম নাচের আসরে। আলাপ হল মিস্টার হসমার এঞ্জেলের সঙ্গে।
ফ্রান্স থেকে ফিরে মিস্টার উইন্ডিব্যাঙ্ক নিশ্চয় তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলেন?
মোটেই না। হাসতে লাগলেন। বললেন, মেয়েরা বড্ড জেদি যা করব বলে, তা করে ছাড়ে। খুব সহজভাবে নিলেন সমস্ত ব্যাপারটা।
আলাপ হওয়ার পর?
বাড়িতে একবার এসেছিলেন। আমিও দু-বার তাঁকে নিয়ে বেড়াতে বেরিয়েছিলাম। মিস্টার উইন্ডিব্যাঙ্ক ফ্রান্স থেকে ফিরে আসার পর আর বাড়িমুখো হননি।
কেন?
বাড়িতে কারো আসাটা সৎ-বাবা পছন্দ করেন না বলে। ওঁর মতে মেয়েদের উচিত ঘরকন্না নিয়ে থাকা।
মিস্টার হসমার এঞ্জেল তখন কী করলেন?
চিঠিতে যোগাযোগ রাখলেন। বলতেন, সৎ-বাবা ফের ফ্রান্সে গেলে বাড়ি আসবেন।
বিয়ের কথা কি চিঠির মধ্যেই হয়?
প্রথমবার বেড়াতে যাওয়ার সময়ে। উনি লেডেনহল স্ট্রিটে একটা অফিসের ক্যাশিয়ার—
কোন অফিস?
তা তো জানি না।
আস্তানা?
অফিসেরই ঘরে।
ঠিকানা?
লেডেন হল স্ট্রিট।
চিঠি কোন ঠিকানায় লিখতেন?
লেডেন হল পোস্ট অফিসের ঠিকানায়। পাছে অফিসের মেয়েরা পেছনে লাগে আমার চিঠি দেখলে, তাই উনি নিজে গিয়ে পোস্ট অফিস থেকে নিয়ে আসতেন প্রত্যেকটা চিঠি। আমি টাইপ করে চিঠি লিখতে চেয়েছিলাম–উনি রাজি হননি। আমার হাতের লেখার মধ্যেই যেন আমাকে দেখতে পান। কতখানি ভালোবাসলে এমন কথা বলা যায় ভাবুন তো?
হোমস বললে, ব্যাপারটা ছোট্ট হলেও বেশ সংকেতময়। এ-রকম ছোটোখাটো ব্যাপার আর মনে পড়ছে?
রাত না-হলে আমার সঙ্গে বেড়াতে যেতেন না–এত লজ্জা। নিরালায় থাকতে ভালোবাসেন, কথা বলেন খুব আস্তে গ্ল্যান্ডের অসুখ হওয়ার পর থেকেই জোরে কথা বলা বন্ধ। খুব ফিটফাট। চোখে রঙিন চশমা–চোখটাও নিশ্চয় আমার মতো খারাপ।
মিস্টার উইন্ডিব্যাঙ্ক ফ্রান্সে যাওয়ার পর কী হল?
হসমার আমার বাড়ি আসতে লাগলেন। সৎ-বাবা ফিরে আসার আগেই এই সপ্তাহেই বিয়েটা সেরে ফেলতে চাইলেন। আমাকে দিয়ে বাইবেল ছুঁইয়ে কথা আদায় করলেন কখন কী ঘটে বলা যায় না কিন্তু আমি যেন তাকে না-ভুলি। সৎ-বাবার মত নেওয়ার ব্যাপারে মা আর হসমার দুজনেই বললেন, তার দরকার কী? মা আমার চেয়েও যেন বেশি ভালোবাসত হসমারকে। বললে, মিস্টার উইন্ডিব্যাঙ্ককে বোঝানোর ভার তার। তা সত্ত্বেও সৎ-বাবাকে একটা চিঠি লিখলাম ফ্রান্সের ঠিকানায় কিন্তু চিঠি পৌঁছোনোর আগেই উনি ইংলন্ড রওনা হওয়ায় চিঠি ফিরে এল বিয়ের দিন সকালে।
আচ্ছা! বিয়েটা তাহলে শুক্রবারেই হয়ে যেত? কোথায়?
সেন্ট জেভিয়ার্স গির্জেতে। একটা ভাড়াটে গাড়িতে আমাকে আর মাকে বসিয়ে উনি পেছন পেছন এলেন আর একটা গাড়িতে। গির্জের সামনে আমরা নামতেই পেছনের গাড়ি এসে দাঁড়াল–কিন্তু ভেতরে কাউকে দেখা গেল না। অথচ গাড়োয়ান তাকে ভেতরে ঢুকতে দেখেছেন। সেই থেকে তাকে দেখিনি।
আপনার সঙ্গে তার ব্যবহারটা খুবই যাচ্ছেতাই হয়েছে মনে হচ্ছে।
না, না, ওসব ভাববেন না। ওঁর মতো মানুষ এ-কাজ করতেই পারেন না। সকাল থেকেই কিন্তু একটা কথা বার বার বলেছিলাম। আচমকা কোনো কারণে যদি আমাদের ছাড়াছাড়ি হয়–আমি যেন তাঁকে না-ভুলি–শপথটা মনে রাখি। বিয়ের ঠিক আগে এসব কথার তখন মানে খুঁজে পাইনি–এখন পাচ্ছি।
আপনার বিশ্বাস তাহলে উনি সাংঘাতিক কোনো বিপদে পড়েছেন?
নইলে আগে থেকেই ওইসব কথা বলবে কেন?
বিপদটা কি আঁচ করতে পারছেন?
না।
মায়ের মত কী?
রেগে গেছে। এ নিয়ে আর কোনো কথা আমি না-বলি।
বাবার?
বাবা সব শুনে বললেন, হসমারের খবর নিশ্চয় পরে পাওয়া যাবে। আমার সম্পত্তির ওপর তার একদম লোভ ছিল না। কাজেই খামোকা বিয়ের লোভ দেখিয়ে গির্জে পর্যন্ত ছোটাতে যাবেন কেন? নিশ্চয় কিছু একটা ঘটেছে। এদিকে ভাবনাচিন্তায় আমার রাতের ঘুম উড়ে গেছে। বলতে বলতে রুমালে মুখ ঢেকে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলেন ভদ্রমহিলা।
উঠে দাঁড়াল হোমস। বললে, আমার যথাসাধ্য করব কথা দিচ্ছি। আপনি কিন্তু মন থেকে দুশ্চিন্তা ঝেড়ে ফেলুন। হসমার এঞ্জেলকে ভুলে যান।
সে কী। আর কি তাহলে দেখা হবে না?
মনে তো হয়।
কিন্তু তার হলটা কী?
জবাব পরে দেব। আপাতত তাঁকে দেখতে কীরকম বলে যান, আর চিঠিপত্র কিছু থাকে তো দিয়ে যান।
গত শনিবার খবরের কাগজে ওঁর জন্যে একটা বিজ্ঞাপন দিয়েছিলাম–এই নিন চারখানা চিঠি।
আপনার ঠিকানা?
৩১, লায়ন প্রেস, ক্যাম্বার ওয়েল।
আপনার সৎ-বাবার কারবারের ঠিকানা?
ফেনচার্চ স্ট্রিটের ওয়েস্ট হাউস অ্যান্ড মারব্যাঙ্ক কোম্পানি।
ধন্যবাদ। ফের বলছি, ব্যাপারটা ভুলে যান।
কিন্তু তা তো আমি পারব না। হসমারকে যে কথা দিয়েছি–সারাজীবন পথ চেয়ে থাকব তার জন্যে।
কাগজপত্র টেবিলে রেখে বিদায় নিলেন মিস সাদারল্যান্ড। সাদামাটা মুখ আর বদখত টুপি দেখে প্রথমটা মনে অন্য ধারণা হয়েছিল, এখন কিন্তু শ্রদ্ধা না-করে পারলাম না। সরল ভাবে যে বিশ্বাস করতে পারে, তার ভেতরটা অনেক পবিত্র।
দু-পা সামনে ছড়িয়ে শিবনেত্র হয়ে কিছুক্ষণ বসে রইল শার্লক হোমস। তারপর পাইপ বের করে তামাক ঠেসে ধোঁয়া ছাড়তে লাগল ভলকে ভলকে।
অনেকক্ষণ পরে বললে—কেসটা নতুন কিছু নয়–এ-রকম ঘটনা এর আগেও ঘটেছে–আমার কাগজপত্র লেখা আছে। কিন্তু মেয়েটি ইন্টারেস্টিং।
বললাম, কী দেখলে ওর মধ্যে?
ভায়া, দেখেছ তুমিও, কিন্তু দৃষ্টি এড়িয়ে গেছে। জামার হাতা, বুড়ো আঙুলের নখ আর জুতোর ফিতের মধ্যেও অনেক রহস্য থাকে। মেয়েটাকে দেখে তোমার কী মনে হল শোনা যাক।
মাথায় পালক গোঁজা চওড়া-কিনারা কালচে-ধূসর বেতের টুপি, গায়ে পুঁতি বসানো কালো পাথরের ঝালরওলা কালো জামা, হাতার বেগুনি দাগ, ধূসর দস্তানা–ডান হাতের আঙুলের ডগা ছিড়ে গেছে, কানে দুল, জুতো দেখিনি। সব মিলিয়ে অবস্থা ভালো, কিন্তু শৌখিন নন।
হাততালি দিয়ে উঠল হোমস। হাসতে হাসতে বলল, চমৎকার বলেছ! খুঁটিয়ে দেখেছ। কিন্তু আসল জিনিসগুলোই দেখনি। রঙের তফাতটা বেশ চোখে পড়েছে দেখলাম। আমি কিন্তু মেয়েদের আস্তিন আর পুরুষদের ট্রাউজার্সের হাঁটু আগে দেখি অনেক খবর ওইখানেই থাকে। মেয়েটার আস্তিনে তুমি বেগনি দাগ দেখেছ, কিন্তু কবজির ঠিক ওপরে সমান্তরাল দুটো রেখা লক্ষ করনি টাইপিস্ট টেবিলে হাত রাখলে এই দাগ দেখা যায়। সেলাই মেশিনেও হয় তবে দাগটা তখন এতটা চওড়া হয় না। মেয়েটির নাকের দু-পাশেও প্যাসনে চশমার দাগ–যা থেকে বললাম চোখ খারাপ সত্ত্বেও টাইপের কাজ করেন কী করে। শুনে খুবই অবাক হলেন ভদ্রমহিলা।
আমিও।
অবাক আমিও হয়েছিলাম ভদ্রমহিলার জুতো দেখে। দু-রকমের জুতো পরেছিলেন। বোতামগুলোও সব লাগাননি। এক পাটিতে পাঁচটা বোতামের শুধু তলার দুটো লাগিয়েছেন। আরেক পাটিতে একনম্বর, তিননম্বর আর পাঁচনম্বর বোম লাগিয়েছেন। এ থেকেই বোঝা যায় কীরকম ছুটতে ছুটতে তিনি এসেছিলেন।
আর কিছু? যুক্তি আর বিশ্লেষণের চমক লাগে আমার মনে।
আসবার আগে তাড়াতাড়ি করে একটা চিঠি লিখে এসেছিলেন ভদ্রমহিলা। দোয়াতে কলমটা একটু বেশিই ড়ুবিয়েছিলেন–আঙুলে তাই দাগ লেগেছিল। দস্তানা ছেড়া তুমি লক্ষ করেছিলে–কিন্তু দাগটা দেখনি। আজ সকালেই দাগটা লেগেছিল বলে অত স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল। যাকগে সে-কথা, বিজ্ঞাপনের কাটিং থেকে হসমার এঞ্জেলের সুরতটা কীরকম একটু পড়ে শোনাও তো ওয়াটসন।
আমি পড়লাম, গত, চোদ্দো তারিখ থেকে হসমার এঞ্জেল নামে এক ভদ্রলোককে পাওয়া যাচ্ছে না। লম্বায় পাঁচ ফুট সাত ইঞ্চি, ভাললা গড়ন, পাণ্ডুর বর্ণ, সামান্য টাক আছে, কালো গোঁফ আর জুলপি আছে, চুলের রংও কালো। রঙিন চশমা পরেন, ফিসফিস করে কথা বলেন। গায়ে কালো ফ্রককোট, কালো ওয়েস্টকোট। ধূসর টুইডের ট্রাউজার্স আর সোনার অ্যালবার্ট চেন। পায়ে ইলাস্টিক বুট আর বাদামি চামড়ার পটি। লেডেনহল স্ট্রিটের একটা অফিসে কাজ করেন। যদি কেউ দয়া করে–
এতেই হবে, বলল হোমস চিঠিগুলোয় চোখ বুলিয়ে নিয়ে, মামুলি চিঠি। কিন্তু একটা ব্যাপার চোখে পড়ার মতো।
কী?
সব চিঠিই তো দেখছি টাইপ করা–তলায় হসমার এঞ্জেল নামটাও টাইপ করা। তারিখ আছে, ঠিকানা নেই। লেডেনহল স্ট্রিট নামটা আবছাভাবে লেখা। মোক্ষম প্রমাণ কিন্তু নামের সইটা।
কীসের প্রমাণ?
ভায়া ওয়াটসন, সইটাই এ-কেসের মোদ্দা রহস্য।
চুক্তি না-রাখার মামলায় সই অস্বীকার করবে বলেই নামটা টাইপ করেছে?
আরে না। যাকগে, দুটো চিঠি লিখতে হবে এখন। একটা লন্ডনের একটা কোম্পানিকে। আর একটা মিস্টার উইন্ডিব্যাঙ্ককে কাল সন্ধে ছটায় যেন দেখা করেন আমার সঙ্গে। দুটো চিঠির জবাব না-আসা পর্যন্ত এ নিয়ে আর কোনো কথা নয়।
হোমসের বিচার বুদ্ধি আর বিশ্লেষণী যুক্তির ওপর অগাধ আস্থা আমার। বেশ বুঝলাম, রহস্য আর রহস্য নেই ওর কাছে তাই এত নিশ্চিন্ত।
পরের দিন রুগি নিয়ে কাটল সারাদিন। সন্ধে ছটা নাগাদ হন্তদন্ত হয়ে বেকার স্ট্রিটে ঢুকে দেখলাম, ইজিচেয়ারে গুটিসুটি মেরে ঝিমোচ্ছে বন্ধুবর সামনে গাদা গাদা টেস্টটিউব। রাসায়নিক গবেষণায় বুদ হয়ে ছিল এতক্ষণ নিশ্চয়।
বললাম, ওহে, সমস্যার সমাধান হল?
হ্যাঁ, হ্যাঁ, বাইসালফেট অফ ব্যারাইটা।
আরে দুর! সেই কেসটার কী হল?
সে তো হয়েই রয়েছে। ওর মধ্যে আবার সমস্যা কোথায় দেখলে? তবে কী জানো, আইন নিয়ে শয়তানটার চুল পর্যন্ত ছোঁয়া যাবে না।
কে সে?
জবাব শোনবার আগেই করিডরে ভারী পদশব্দ শুনলাম।
হোমস বললে, মিস্টার উইন্ডিব্যাঙ্ক এলেন। ছ-টার সময়ে আসবেন চিঠি লিখে জানিয়েছিলেন। ঘরে ঢুকল মধ্যমাকৃতি এক ভদ্রলোক। বয়স বছর তিরিশ। দাড়ি গোঁফ কামানো মুখ, রংটা একটু ফ্যাকাশে, ধূসর চোখে আশ্চর্য খরখরে দৃষ্টি।
অভিবাদন বিনিময়ের পর চেয়ার টেনে নিয়ে বসে বলল, একটু দেরি হয়ে গেল আমার। মেয়েটা অযথা আপনাকে জ্বালাতন করে গেছে। বড্ড জেদি আর আবেগপ্রবণ। বারণ করা সত্ত্বেও তুচ্ছ ব্যাপার নিয়ে আপনার কাছে আসা উচিত হয়নি। অবশ্য আপনি পুলিশের লোক নন–কাজেই ঘরের কেলেঙ্কারি খুব বেশি পাঁচ কান হবে না। তা ছাড়া, হসমার এঞ্জেলকে খুঁজে পাওয়াও আর যাবে না।
আমার তো বিশ্বাস পাওয়া যাবে?
উইন্ডিব্যাঙ্ক যেন আঁতকে উঠল। হাত থেকে দস্তানা ছিটকে গেল মেঝেতে, তাই নাকি! তাহলে তো খবর খুব ভালোই।
মিস্টার উইন্ডিব্যাঙ্ক, হাতের লেখার মতো টাইপ করে লেখারও জাত থাকে আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্য থাকে। খুব নতুন না-হলে এক-একটা মেশিনে এক একরকম লেখা হয়। টাইপগুলো বিশেষভাবে ক্ষয়ে যায়, চোট খায়। যেমন ধরুন আপনার এই চিঠিই। E ভালো নয়, R-এর তলায় দোষ। এ ছাড়াও চোদ্দোটা বৈশিষ্ট্য আছে।
কুতকুতে তীক্ষ্ণ্ণ চোখে হোমসকে দেখতে দেখতে উইন্ডিব্যাঙ্ক বললে, অফিসের মেশিন, সব কাজ এতেই হয়।
হোমস বললে, এবার এই চারখানা চিঠি দেখুন। সবগুলোই নিখোঁজ হসমার এঞ্জেল পাঠিয়েছে। প্রত্যেকটায় E খারাপ, R-এর তলায় গলদ। মাইক্রোস্কোপে দেখলে দেখবেন আরও চোদ্দোটা বৈশিষ্ট্য এতেও আছে।
তড়াক করে লাফিয়ে উঠে দরজার দিকে পা বাড়িয়ে উইন্ডিব্যাঙ্ক বললে, বাজে কথা শোনবার সময় আমার নেই। যদি তাকে ধরতে পারেন, আমাকে জানাবেন।
ততোধিক বেগে এগিয়ে দরজার চাবি লাগিয়ে দিয়ে হোমস বললে, ধরে তো ফেলেছি। কোথায়? ফঁদে আটকানো ইঁদুরের মতো চিমড়ে গেল উইন্ডিব্যাঙ্ক, সাদা হয়ে গেল ঠোট। ওতে সুবিধে হবে না, মিস্টার উইন্ডিব্যাঙ্ক। বসুন।
ঘামতে ঘামতে বসে পড়ল উইন্ডিব্যাঙ্ক। মুখ থেকে সমস্ত রক্ত নেমে গেল যেন। বলল তোতলাতে তোতলাতে, কিন্তু কিসু করতে পারবেন না। এ-কেসে মামলা হয় না।
জানি। কিন্তু কাজটা খুব নোংরা। নিষ্ঠুর স্বার্থপরতা। আমি বলে যাচ্ছি, আপনি শুনুন।
উইন্ডিব্যাঙ্কের অবস্থা দেখে মনে হল যেন নাভিশ্বাস উঠেছে মাথা ঝুলে পড়ল বুকের ওপর। ম্যান্টলপিসের কোণে পা তুলে দিয়ে পকেটে হাত ঢুকিয়ে যেন নিজের মনে কথা বলে গেল হোমস।
বয়সে বড়ো মহিলাকে বিয়ে করেছিল একজন শুধু টাকার লোভে মহিলাটির মেয়ের টাকাও সংসারে খরচ হচ্ছিল।
কিন্তু মেয়েটা বড়ো আবেগপ্রবণ আর জেদি। হাতে টাকা থাকায় বেশিদিন আইবুড়ি নাও থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে বছরে এক-শো পাউন্ড লোকসান হবে। তাই তাকে বাড়ি থেকে বেরোতে দেওয়া হত না। কারো সঙ্গে মিশতে দেওয়া হত না। কিন্তু একদিন সে বেঁকে বসল নাচের আসরে যাবে বলে।
মেয়েটির মা আর সৎবাবা তখন জবর ফন্দি আঁটল। সাবা ছদ্মবেশ ধরল। রঙিন চশমা পরে ধারালো চাহনি ঢাকা দিল। নকল গোঁফ আর জুলপি লাগিয়ে মুখের চেহারা পালটাল। গলা শুনে যাতে চিনতে না-পারে, তাই ফিসফিস করে কথা বলতে লাগল। রাত্রে মেয়েটির সঙ্গে দেখা করত এই কারণেই। চোখ খারাপ থাকায় মেয়েটিও কিচ্ছু ধরতে পারল না। এই হল গিয়ে হসমার এঞ্জেল। মেয়েটিকে দিয়ে বিয়ের চুক্তি করিয়ে নিয়ে অন্যের সঙ্গে বিয়ের পথ বন্ধ করা
হল।
আকুল কণ্ঠে উইন্ডিব্যাঙ্ক বলল, আমরা একটু রগড় করতে চেয়েছিলাম। ও যে অমন মজবে কে জানত।
মেয়েটা সরল মনে ভাবতেও পারেনি কী নিষ্ঠুর খেলা হচ্ছে তাকে নিয়ে। ব্যাপারটাকে জমাটি করার জন্যে ঘনঘন দেখাসাক্ষাৎ চলল তার সঙ্গে। বাইবেল ছুইয়ে দিব্যি করানো হল–যাতে আর কাউকে মনে ঠাঁই না-দেয়। বিয়ের দিন কিছু একটা ঘটতে পারে, এমন ইঙ্গিতও দেওয়া হল। ফ্রান্স যাতায়াতে অসুবিধা হচ্ছিল বলে এবং বেশ কিছুদিন মেয়েটিকে মুহ্যমান রাখার জন্যে এবার বিয়ের খেলায় নামা হল। হসমার এঞ্জেল গাড়ির এ-দরজা দিয়ে ঢুকে ও-দরজা দিয়ে নেমে গেল। গিঞ্জেয় পৌঁছে দেখা গেল গাড়ি ফাঁকা। কী মশাই, ঠিক ঠিক বলছি তো?
উঠে দাঁড়াল উইন্ডিব্যাঙ্ক। নির্বিকার মুখে তাচ্ছিল্যের সুরে বললে, ঠিক হতে পারে, বেঠিকও হতে পারে। আপনার ঘটে এত বুদ্ধি আছে, কিন্তু এটুকু কেন বুঝছেন না যে আমার কাজে আইন ভাঙা হয়নি কিন্তু আপনি আমাকে দরজা বন্ধ করে আটকে রেখে আইন ভাঙছেন।
দরজা খুলে দিল হোমস।
বলল, কথাটা সত্যি। আইন আপনাকে শাস্তি দিতে পারে না। কিন্তু মেয়েটার যেকোনো বন্ধু পারে। এই ঘোড়ার চাবুকটা দিয়ে আগাগোড়া চাবকানো উচিত আপনাকে।
মুখে অবজ্ঞার ভাব ফুটিয়ে তুলল উইন্ডিব্যাঙ্ক। দেখেই তবে রে বলে দেওয়ালে ঝোলানো চাবুকের দিকে এগোল হোমস। পরমুহূর্তেই দুমদাম শব্দ শোনা গেল করিডর আর সিঁড়িতে, দড়াম করে দরজা খোলার শব্দ হল নীচে। জানলা দিয়ে দেখলাম পড়ি কি মরি করে রাস্তা দিয়ে ছুটছে মিস্টার উইন্ডিব্যাঙ্ক।
হাসতে হাসতে চেয়ারে বসে পড়ল হোমস।
বলল, লোকটা নিজের ফাঁদেই একদিন নিজে জড়িয়ে পড়বে, ফাঁসিকাঠে উঠবে। কেসটা কিন্তু সহজ হলেও বেশ ইন্টারেস্টিং।
কিন্তু ধরলে কী করে বল তো?
মোটিভ বিচার করে। এ-ব্যাপারে সবচেয়ে কার লাভ? না, মেয়েটির সৎ-বাবার। তাকে আর হসমার এঞ্জেলকে কখনো এক জায়গায় দেখা যায়নি একজন না-থাকলে আরেকজনের আবির্ভাব ঘটেছে। ফিসফিস করে কথা বলা, জুলপি গোঁফ আর রঙিন চশমা কিন্তু ছদ্মবেশে কাজে লাগে। মোক্ষম প্রমাণ ওই নাম সই হাতে লেখা নয়–টাইপ করা। কেন? না, হাতের লেখাটা এত চেনা যে দুটো শব্দ দেখলেও মেয়েটা চিনে ফেলতে পারে। সন্দেহগুলো যাচাই করলাম দুটো চিঠি লিখে। উইন্ডিব্যাঙ্কের অফিসের ঠিকানা জেনে নিয়ে চিঠি লিখলাম। বিজ্ঞাপনের বর্ণনায় হসমার এঞ্জেলের মুখে জুলপি, গোঁফ আর রঙিন চশমার কথা আছে। ফিসফিস করে বলাটাও ছদ্মবেশ ধরতে কাজে লাগে। এইসব বাদ দিয়ে একটা বর্ণনা খাড়া করে জানতে চাইলাম এই ধরনের কেউ তাদের কোম্পানির ট্রাভেলিং সেলসম্যানের কাজ করে। উইন্ডিব্যাঙ্ককে লিখলাম এখানে আসতে। তার জবাব এল। হসমার এঞ্জেলের চিঠির টাইপে যেসব গোলমাল, এর চিঠিতেও তাই লক্ষ করলাম। এদিকে কোম্পানির জবাবও এসে গেল। জেমস উইন্ডিব্যাঙ্কের চেহারার সঙ্গে আমার দেওয়া বর্ণনা মিলে যায়।
মিস সাদারল্যান্ডের এখন কী হবে?
কী আবার হবে–মেয়েদের ভুল ভাঙতে নেই১৪। বাঘিনীর বাচ্চা কেড়ে আনার মতো বিপজ্জনক কাজ হবে সেটা।
————
টীকা
১. ছদ্মবেশীর ছলনা :আ কেস অব আইডেনটিটি১৮৯১-এর সেপ্টেম্বর মাসের স্ট্র্যান্ড ম্যাগাজিনে প্রথম প্রকাশিত হয়।
২. বাঁধানো দাঁত ছুঁড়ে : বাঁধানো দাঁত এভাবে ছুড়লে তা প্রথমদিনই ভেঙে যাওয়ার কথা। তাই এই ঘটনা দিনের পর দিন ঘটার সম্ভাবনা কতখানি, সে-বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বেশ কিছু সমালোচক।
৩. নস্যি : হোমসকে অন্য কোথাও নস্যি নিতে দেখা যায়নি। তবে দ্য গ্রিক ইন্টারপ্রেটার গল্পে শার্লকের দাদা মাইক্রফটকে দেখা গিয়েছে নস্যি নিতে। বাংলা সাহিত্যের গোয়েন্দাদের মধ্যে হেমেন্দ্রকুমারের জয়ন্ত নস্যি নিতেন। নস্যি নেন অদ্রীশ বর্ধনের লেখা গল্পের ডিটেকটিভ ইন্দ্রনাথ রুদ্র।
৪. চাকরের : চাকরের উল্লেখ বেশ কয়েকটি গল্পে পাওয়া গেলেও, তার নাম বলা হয়েছে মাত্র খান-তিনেক গল্পে। নামটি হল বিলি।
৫. গ্যাসফিটারের : গ্যাসের পাইপ বা অন্য যন্ত্রাংশ বিষয়ক মিস্ত্রিকে গ্যাসফিটার বলা হয়।
৬. লেডেনহল স্ট্রিট : লেড (Lead) বা সিসার ছাউনি দেওয়া হল ঘরের নাম লেডেন হল। সেই হলের নামেই রাস্তার নাম, লন্ডনের এক খ্যাতনামা মেয়র ডিক হুইটিংটন শহরের তরফে এই হল কিনে নেন।
৭. উনি রাজি হননি : সেক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠতে পারে, হসমার এঞ্জেলের টাইপ করে লেখা চিঠির সম্পর্কে মিস সাদারল্যান্ড কিছু বলেননি কেন।
৮. কাগজপত্র : এই কাগজপত্র ঘেঁটেই ড. ওয়াটসন হোমসের কাহিনি লিখতেন কি না সঠিক বলা যায় না।
৯. টাইপিস্ট টেবিলে হাত রাখলে : একজন সমালোচক বলেছিলেন, ড্রেসিং টেবিল বা পিয়ানোতে হাত রাখলেও ও-রকম দাগ হওয়া সম্ভব।
১০. প্যাসনে : এই বিশেষ ধরনের চশমার বহুল ব্যবহার দেখা যেত ভিক্টোরীয় যুগে। অনেক গল্প-উপন্যাসে একটু মেয়েলি-গোছের পুরুষ চরিত্রদের পাসনে ব্যবহার করতে দেখা যেত। হোমসের গল্প, দ্য গোল্ডেন প্যাসনে-তে এইরকম একটি চশমা গল্পের কেন্দ্রবিন্দুতে দেখা গিয়েছিল।
১১. ফ্ৰককোট : পুরুষদের ব্যবহার্য এই কোটের আসল বিশেষত্ব হল এর সামনে এবং পেছনে হাঁটু পর্যন্ত লম্বা ঝুল। এগুলি সাধারণত ডাবল-ব্রেস্টেড।
১২. রাসায়নিক গবেষণায় বুদ : আ স্টাডি ইন স্কারলেট উপন্যাসে ওয়াটসনের সঙ্গে প্রথম সাক্ষাতেই হোমস তার এই অভ্যাস বা বদভ্যাসের কথা জানিয়েছিল ওয়াটসনকে।
১৩. বাইসালফেট অব ব্যারাইটা : রসায়নশাস্ত্রে সালফেট হল লবণ বা সালফিউরিক অ্যাসিড থেকে প্রাপ্ত কোনো পদার্থ। ব্যারাইটা হল বেরিয়াম সালফেট। বাইসালফেট অব ব্যারাইটা নামক যৌগিক পদার্থটির সম্পর্কে কোনো রাসায়নিক পরীক্ষা কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়।
১৪. মেয়েদের ভুল… : এই উক্তিটির সঙ্গে সাদৃশ্য বিশিষ্ট একটি উদ্ধৃতি পাওয়া যায় বিখ্যাত পারসিক কবি হাফিজের একটি কবিতায়। হাফিজের সম্পূর্ণ নাম মহম্মদ সামসুদ্দিন হাফিজ (১৩২৫-১৩৮৯)।