জাপানের সম্রাট ইশিরো মাতো বিলাসব্যসনে দিন কাটাতে ভালোবাসতেন। মন্ত্রী-সভাসদদের নিয়ে তিনি প্রতিদিনই পানাহারের আসর বসাতেন। আর আমোদপ্রমোদে এত বেশি আচ্ছন্ন থাকতেন বলে রাজা হিসেবে তাঁর কর্তব্যেও মনোযোগ দিতে পারতেন না।
একবার কর দফতরের সচিব রাজাকে জানালেন, “প্রভু, একবছরের ওপর কর সংগ্রহ করা হয়নি। আমাদের শস্যগোলা পূণরায় শস্যে পূর্ণ করবার জন্য রাজ্যের বার্ষিক আয় বাড়ানো দরকার।”
রাজা জবাব দিলেন, “হ্যাঁ হ্যাঁ, বড্ড ভুল হয়ে গেছে। কিন্তু আগে বল তো, আগামীকালের ভোজসভার সব আয়োজন প্রস্তুত আছে তো?”
প্রতিরক্ষামন্ত্রী তাকাগি উদ্বিগ্ন হয়ে বললেন, “আমাদের অস্ত্রশস্ত্রের অভাব। যা সামান্য আছে সেসব সেকেলে ধরণের। মহারাজ, অস্ত্রাগারে নতুন অস্ত্র মজুত করা দরকার।” আয়েসি রাজা তার কথায় কর্ণপাতও করলেন না।
একদিন রাজামশাই প্রাসাদের জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়েছিলেন। সামনেই ফুলে-ফলে সজ্জিত প্রশস্ত উদ্যান। সেদিকে নজর পড়ায় ভাবলেন, “আহা! আমার বাগানখানা সত্যিই চমৎকার! চেরি ব্লসম উৎসব এবার এখানেই পালন করব।”
আচমকা একটা তির তাঁর দিকে ধেয়ে এল। রাজা অবাক হয়ে দেখলেন, তিরের গায়ে একটা চিঠি আটকানো। চিঠিটা খুলে নিয়ে রাজা পড়তে লাগলেন,
“ইশিরো, মরবার জন্য প্রস্তুত হও। পূর্ণিমার তিনদিন বাদে আমরা তোমার রাজ্য আক্রমণ করে দখল করে নেব।”
ইতি সূর্যের সেনাবাহিনী।
আতঙ্কগ্রস্ত রাজা সঙ্গেসঙ্গে প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে তলব করলেন। চিঠিটা মন্ত্রীকে শুনিয়ে বললেন, “পূর্ণীমার পর তৃতীয় দিন। তার মানে আমাদের হাতে মাত্র আর দু’দিন সময়। রাজ্য ও রাজ্যবাসীকে রক্ষা করবার জন্য শত্রুকে প্রতিহত করতে প্রস্তুতি নিন।”
“কিন্তু প্রভু, যুদ্ধ করতে গেলে আমাদের নতুন অস্ত্রের প্রয়োজন। এত তাড়াতাড়ি…”
“দু’দিনের মধ্যে শত্রুদের ঘায়েল করবার কোনো উপায় আপনি মাথা খাটিয়ে বের করুন মন্ত্রী। না-হলে আমাদের সর্বনাশ হয়ে যাবে।”
মন্ত্রী ভাবতে লাগলেন… অবশেষে…
“হুজুর, আমার মাথায় একটা মতলব এসেছে। আমাদের এটা করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।”
রাজা মন্ত্রীর পরামর্শটা মন দিয়ে শুনলেন। তারপর বললেন, “সাবাশ। পরমোৎকৃষ্ট ব্যবস্থা। এক্ষুণি প্রস্তুতি শুরু করে দিন।”
প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজ্যের সমস্ত কুমোরকে ডাকিয়ে এনে তাঁর পরিকল্পনামাফিক কাজ আরম্ভ করে দিতে বললেন। জানালেন, সেদিন সন্ধের মধ্যে কাজ সম্পূর্ণ করে দিতে হবে তাদের।
ইতিমধ্যে শত্রুশিবিরে…
“হুজুর, আমাদের গুপ্তচরেরা খবর এনেছে যে রাজপ্রাসাদে অনেক তৎপরতা চলেছে। কিন্তু তাদের পরিকল্পিত ফন্দি সম্বন্ধে কারোর কোনো সঠিক ধারণা নেই।”
“হাঃ, হাঃ , হাঃ! শেষমুহূর্তে তারা আর কী করতে পারবে? আমরা নিশ্চিতভাবেই তাদের পরাজিত করে রাজাকে বন্দি করব।”
পরদিন সূর্যের সেনারা আক্রমণ হানল। শীঘ্রই তাদের সব্ব শত্রুরা ধরাশায়ী হল।
“বীর যোদ্ধারা থামো। যুদ্ধে আমাদের জয় হয়েছে।“ হেঁকে উঠল সূর্যের সেনাপতি। কিন্তু তার পরমুহূর্তেই…
“শত্রুপক্ষের সেনারা আক্রমণ চালিয়েছে। ওঃ! আমরা তিরবিদ্ধ হচ্ছি! এ…এ যে আমাদেরই তির!”
“কিন্তু… কীভাবে? আমরা তো ওদের খানিক আগেই আগেই…” কিন্তু সে রহস্যের উত্তর না জেনেই সূর্যের সেনারা পিছুহঠতে বাধ্য হল।
যুদ্ধে জয় করে ইশিরো মাতো যারপরনাই খুশি হলেন। প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়ে বললেন, “মাটির পুতুলদের সৈন্য সাজিয়ে তুলে ধরে তাদের গায়ে বিদ্ধ হওয়া শত্রুদের তিরের সাহায্যে প্রতিরোধ গড়ে তুলে আপনি আমাদের রাজ্য ও জীবন রক্ষা করবার যে অভিনব পরিকল্পনা করেছিলেন, তা সত্যই অনবদ্য।”
“হ্যাঁ প্রভু। আমরা শত্রুর তিরেই শত্রুকে পরাস্ত করলাম।”
মন্ত্রীকে বুকে টেনে নিয়ে রাজা ঘোষণা করলেন, “আজ থেকে তুমিই আমার প্রধান পরামর্শদাতা হলে। রাজ্যের সব বিষয়ে তোমার পরামর্শই আমি মেনে চলব এবার থেকে।”
“মহিমান্বিত সম্রাট, আমি সম্মানিত বোধ করছি,” জবাব দিলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী।