হাতি, নাম শুনলেই আসে হাসি। কেনো বলো তো! ওই যে ওর লম্বা নাকটা যাকে আমরা শুঁড় বলি ওটার জন্যই তো। আজ সে গল্পই বলবো।
এমন একটা সময় ছিলো, যখন হাতির নাক এতোটা লম্বা ছিলো না। তোমার আর আমার মতোই কিছুটা বোঁচা, চ্যাপ্টা নয়তো একটু খাড়া ছিলো।
কিন্তু একদিন এক বাচ্চা হাতি সবকিছু বদলে দেয়। অনেক চটপটে আর বুদ্ধিমান সে বাচ্চা হাতি বাস করে গভীর সবুজ বনে। অন্য হাতি ও বনের পশুপাখিকে সে সারাক্ষণ এটা ওটা প্রশ্ন করে বেড়ায়। পুরো বন অস্থির তার উল্টাপাল্টা প্রশ্নে।
আসলে সে হলো জিজ্ঞাসু। অনেক কিছু জানার জন্য সে শুধু প্রশ্ন আর প্রশ্ন করে। বুদ্ধিমান শেয়ালও পালিয়ে বেড়ায় তার কাছ থেকে। কি জানি বাপু! কখন কী আজগুবি প্রশ্ন করে বসে!
একদিন শেয়ালকে পেয়ে সে জিজ্ঞেস করলো, ‘আচ্ছা বলোতো চাঁদটা চার কোণা না হয়ে গোল কেনো হলো?’
আপেল গাছকে জিজ্ঞেস করলো, ‘আচ্ছা তোমার ডালে শুধু আপেল কেনো হয়, কুমড়ো কেনো হয় না?’
জেব্রাকে জিজ্ঞেস করলো, ‘তোমাকে দেখলেই রাস্তা কেনো পার হতে চায় শিশুরা?’ জলহস্তিকে জিজ্ঞেস করলো, ‘তোমার চোখ কেনো এতো লাল?’
একদিন সে তার মামাকে জিজ্ঞেস করলো, ‘আচ্ছা মামা, কুমির তার দুপুরের খাবারের জন্য কী খায়?’ তার এতো সব প্রশ্নে মামা হাতি ধমক দিয়ে বললো, ‘চুপ করো’।
কিন্তু বাচ্চা হাতি চুপ করলো না। সে সবুজ বনের ভেতর হাঁটতে লাগলো আর তার প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে লাগলো।
পথের ধারে তার দেখা হলো মাছারাঙা পাখির সঙ্গে। মাছরাঙা তাকে বলে দিলো কোথায় গেলে সে এতোসব প্রশ্নের উত্তর পেতে পারে।
‘ধূসর, সবুজ, পিচ্ছিল লিপুপু নদীতে যাও। ওখানে আছে এক জ্ঞানী কুমির। তার কাছে গেলে সব উত্তর পাবে।’
লিপুপু নদী এখান থেকে অনেক দূর। তাই বাচ্চা হাতি যাত্রার আগে কলা, আখ আর তরমুজ সঙ্গে নিয়ে নিলো। পথে যখনই তার ক্ষুধা পায় তখন একটা কলা নয়তো তরমুজ খায়। আবার হাঁটে।
এভাবে হাঁটতে হাঁটতে সে দেখা পেলো বড় এক অজগরের। তাকে দেখে বাচ্চা হাতি বললো, ‘অজগর ভাই! অজগর ভাই! বলতে পারো লিপুপু নদী আর কতো দূর?’
অজগর বললো, ‘ওরে বাপরে! লিপুপু নদী, সেতো কুমিরে ভর্তি’। বলেই পালিয়ে গেলো অজগর।
বাচ্চা হাতি আবার হাঁটতে লাগলো। এক সপ্তাহ একদিন পর পা টেনে টেনে অতি কষ্টে সে লিপুপু নদীর ধারে পৌঁছলো।
নদীর কিনারে একটি গাছের গুড়িতে বসলো। হালকা জিরিয়ে নিয়ে সে গাছের গুড়িকে জিজ্ঞেস করলো, ‘আচ্ছা ভাই, তুমি কি বলতে পারো এ নদীতে কুমির ভাইকে কোথায় পাবো?’
বাচ্চা হাতি দেখতে পেলো গাছের গুড়ির মধ্যে একটা চোখ মিটমিট করছে। বাচ্চা হাতি আবার জিজ্ঞেস করলো, ‘দয়া করে বলবে কুমির ভাইয়ের দেখা কখন পাবো?’
গাছের গুড়ির মতো প্রাণীটির অন্য চোখ এবার মিটমিট করলো। তার লেজ আধাআধি বাঁকা করে কাদা মাটি থেকে উপরে উঠালো। ‘আমিই কুমির’, গম্ভীর গলায় সে বললো।
বাচ্চা হাতি এতে খুশিতে লাফিয়ে ওঠলো, নিচে হাঁটু গেড়ে বসলো। বললো, ‘আমি তোমাকে বেশ কিছুদিন থেকে খুঁজছি ভাই। দয়া করে আমাকে বলবে দুপুরের খাবারে তুমি কী খাও?’
লিপুপু নদীর কিনারে প্যাচপেচে কাদায় কুমিরের লেজ বাঁকা হয়ে গেলো। বললো, ‘আরেকটু কাছে এসো, বলছি’। হাতি কাছে গেলো।
‘আরেকটু কাছে। আমি তোমার কানে চুপিচুপি বলবো। এ বড় জ্ঞানের কথা, সবাই জেনে ফেলতে পারে!’, কুমিরটি বললো।
বাচ্চা হাতি তার মাথা কুমিরের দেঁতো হা করা মুখের কাছে নিচু করলো। সাথে সাথে দুষ্ট কুমির তার ছোট্ট নাকে কামড় বসিয়ে ধরে ফেললো।
বাচ্চা হাতি এবার বুঝতে পারলো, সে এখন বড় সমস্যায় পড়েছে। সে তার পেছনটা নিচে বাঁকিয়ে সামনের পায়ে খুঁটি করে প্রাণপণে নিজের নাক টানতে লাগলো। কিন্তু কুমির তার লেজ দিয়ে পানিতে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ঝাপটাচ্ছে আর টানছে।
হাতি ও কুমির একে অপরকে দু’দিকে জোরেসোরে টানাটানি করছে। এতে করে হলো কি, বাচ্চা হাতির নাক গেলো কিছুটা লম্বা হয়ে।
একসময় কুমির খুব ক্লান্ত হয়ে পড়ে। হাল ছেড়ে হাতিকে ফেলে জলে হারিয়ে গেলো।
বাচ্চা হাতি ধপাস করে হাঁটু-পানিতে পড়লো। পানিতে সে তার নাক দেখতে লাগলো। এখন তার নাক এতোটা লম্বা হয়েছে যে এটাকে সাঁই সাঁই করে সে ঘুরাতে পারে।
বাড়ি ফিরতে ফিরতে বাচ্চা হাতি বুঝতে পারলো, নাকটা বড় হওয়াতে তার ভালোই হলো। এখন সে কলাগাছ থেকে সহজে কলা ছিঁড়তে পারে, শরীর থেকে মাছি তাড়াতে পারে, মাটি থেকে ঘাস তুলতে পারে, এমনকি কারও সঙ্গে ঝগড়া হলে মাথায় তুলে আছাড়ও দিতে পারে।
শুধু কি তাই! এখন সে তার লম্বা শুঁড় দিয়ে জল ছিটাতে ও গান গাইতে পারে। লম্বা নাক নিয়ে হাতি তাই খুশি।