No Smoking

No Smoking

গতবছর গ্রীষ্মে মামার বাড়ি বেড়াতে গিয়েছিলাম। দুপুর বেলা খাসির মাংস দিয়ে ভরপেট ভাত খাওয়ার পর আর কিছু ভাল লাগলো না। মনে হল,একটা সিগারেট না খেলে পদ্মা সেতুর প্রথম পিলারটা এক্ষুনি ভেঙে পরবে। অথবা ঢাকা মেডিকেলের আই সি উ তে যে রোগীটা কিডনী ট্রান্সপ্লান্টের পর ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে যাচ্ছে, সে এই মুহুর্তে হার্ট অ্যাটাক করবে।

তাদের বাচানোর জন্য হলেও একটা সিগারেট খেতে হবে। শুধু খেতে হবে তাই না, ব্যাপারটা আসলে খেতেই হবে। মামাতো বোন বাড়ির আঙিনায় কতগুলো ওয়ান টু এর ছানাপোণা পড়াচ্ছে। দৈনিকই পড়ায়। মাসে দুশো করে টাকা পায়। বোনকে আস্তে করে ডাক দিয়ে বললাম,

– বোন আমার, একটা কাজ করে দিবি?

– কি কাজ?

– রান্না ঘরে গিয়ে চুপি চুপি লাইটারটা নিয়ে চলে আয়। সাবধানে আনবি। মামি যেনো না দেখে। লাইটার কেন? গু খেতে যাবি এখন তাই না?

না গু খাবো না। গু থেকে যে ধোয়া বেড় হয়, সেটা খাবো।  ছি ছি ছি! ধমক দিয়ে বললাম, যা লাইটার নিয়ে আয়।এক শর্তে লাইটার এনে দিতে পারি।

– কি শর্ত?

– টাকা দিতে হবে।আগে লাইটার নিয়ে আয় পরে টাকা দেব। আগে টাকা দে।

– কত?

– ২০ টাকা।

২০ টাকা বোনের হাতে ঘুস দিয়ে লাইটার আর সিগারেট নিয়ে বাড়ির পেছনে ঘন বাঁশবাগানে চলে গেলাম। সিগারেট একটান দিতে না দিতেই, মামাতো বোনের এক ছাত্র দূর থেকে দেখে ফেলল। কিছু বুঝে ওঠার আগেই লাড্ডু চিৎকার করে ওর মাকে ডাকতে লাগল। এমা? মা- রে? ঐ দেখ নূর ভাই সিগারেট খাইতাছে। দেখ রে তোরা দেখ, লুকিয়ে লুকিয়ে কেমনে সিগারেট খায়।

মনে হচ্ছিলই বড় কোনো ঝামেলায় ফেসে যাচ্ছি। বাচ্চা মানেই বিপদ। যদি মামা শোনে আমি লুকিয়ে সিগারেট খাই। দারূন অপমান করবে। মামা ভীষন রাগী মানূষ।সিগারেট রেখে দৌড়ে গিয়ে লাড্ডুর বাচ্চাকে ধরে নিয়ে আসলাম। লাড্ডুর হাতে পাঁচটাকা ধরিয়ে দিয়ে বললাম, ভাই আমার তোর পায়ে ধরি, তোকে প্রতিদিন ৫ টাকা করে দেব কাউকে কিছু বলিস না ভাই ঠিক আছে?

লাড্ডু মাথা নাড়লো। আমি সস্তি পেয়ে সিগারেটে আরেকটান দিলাম। লাড্ডু আবার চিৎকার দিয়ে বলল, এই রিতু আপু দেইখা যা, নূর ভাই নাক দিয়া ধোয়া বাইর করে। এই বলে দৌরে পালাতে লাগলো লাড্ডু।

আমিও ওর পেছন পেছন ধাওয়া করতে লাগলাম। ওকে যদি একবার হাতছাড়া করি, ওর বন্ধুদের নিয়ে গোটা গ্রামে বলে বেড়াবে, নূর ভাই পালিয়ে পালিয়ে সিগারেট খায়। আবার নাক দিয়ে ধোয়া বেড় করে। কেমন শোনাবে সেটা?

দৌরে লাড্ডুর বাচ্চাকে ধরা সহজ না। একদম বাড়ির আঙিনার কাছে গিয়ে পাছরে ধরলাম লাড্ডুকে। লাড্ডূ চিৎকার করতে লাগলো। এই রিতু আপু দেখ নূর ভাই নাক দিয়ে ধোয়া বাইর করে। আমারে ৫ টাকা দিছে…

লাড্ডুর মুখ চেপে ধরে আবার বাঁশ বাগানে নিয়ে গেলাম। এই শালা বেইমান, (না থাক) সোনা ভাই আমার। পাখি আমার, আমার কলিজার টুকরা, তোমাকে না আমি ৫ টাকা দিলাম তুমি তবুও সবাইকে বলে দিচ্ছো কেন?

– এই নাও আরো ৫ টাকা দিলাম তোমাকে। কাউকে বলো না হ্যা?

– আরো ৫ টাকা দাও।

(মনে মনে বললাম শালা সুদখোর তোকে আমি ছাড়বো না একদিন দেখে নিস)

– এই নে ভাই তুই আরো ১০ টাকা নে, তাও তুই কাউকে বলিস নে ভাই। আমার মান সম্মান চলে যাবে।

বাড়ির পেছনে বাশঁবাগানের ধার দিয়ে একটা রাস্তা চলে গেছে। সেই রাস্তা দিয়ে মামাতো বোন রিতুর গোটা গোটা ছাত্র ছাত্রী প্রাইভেট শেষ করে বাড়িতে চলে যাচ্ছে। সিগারেটে এখনো ঠিক মতো দুইটান দিতে পারিনি। পদ্মা সেতুর পিলার এখনো নড়বড় করছে। গোটা সিগারেট না খেতে পারলে হয়ত ভেঙেই পরবে। এরই মধ্যে আবার লাড্ডু বলে উঠল আরো দশ টাকা দাও। এই কথা আবার রাস্তার পিচ্চিগুলোও শুনে ফেলেছে। আমাদের দিকে এগিয়ে আসছে।

ওদের এগিয়ে আসা দেখে আমার মেজাজ গরম হয়ে গেল। একটাকেই সামলাতে পারছিনা আরো আটজন এর মধ্যে ঢুকলে কি যে হবে আল্লাহ মালুম।কিন্তু সিগারেট আমাকে খেতেই হবে। ধরা যখন খেয়েই গেছি সিগারেট ফেলে দিয়ে লাভ কি। তার চেয়ে বরং সিগারেট টানতে টানতে দেখি মাথায় কোনো বুদ্ধি আসে কিনা। আর কোন পড়োয়া না করে ওদের সামনেই মনের সুখে সিগারেট টানতে লাগলাম। ৫-৬ বছরের নাটবল্টু গুলো আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। ওদের মধ্যে কানা ঘুষো শুরু হয়েছে। আমি শুনতে পাচ্ছি।

নাটঃ দেখছিস কেমনে সিগারেট খায়?

বল্টুঃ পালিয়ে পালিয়ে খায়।

ট্যাবলেটঃ নাক দিয়ে ধোয়া বেড় করতেছে দেখছিস?

ব্যাটারিঃ ফোস ফোস করে টান দেয়।

গোল আলুঃ কইয়া দিমু।

আমিঃ এইবার কাম সারছে রে…

আমাকে থামিয়ে দিয়ে লাড্ডু বলল, তোরা কাউরে কইস না। তাইলে টেকা দিব। আমারে ২০ টাকা দিছে। লাড্ডুর দিকে তাকিয়ে নাগরাজের মত রাগে ফোস ফোস করতে লাগলাম। কিন্ত কিছু বলার নেই। সবাই একসাথে টাকা চেয়ে বসল। সবাইকে ২০ টাকা করে দিলাম। খুশি হয়ে চলে গেল সবাই। কিন্তু কিছুদূর গিয়ে আবার একসাথে হৈ হৈ করে উঠল। সবার মুখে এখন একটাই বুলি, কি মজা… কি মজা… ২০ টেকা পাইছি রে… কি মজা…

কেউ যদি জিজ্ঞেস করে ২০ কে দিলো? কেন দিলো? তাহলেই আমার খেল খতম। রাগ করে বাড়ি ফিরে গেলাম। মামাতো বোন রিতু আবার পাছড়ে ধরল। ২০ টাকা দিতে হবে নইলে সরাসরি মামাকে বলে দেবে… পকেটের শেষ বিশ টাকা বেড় করে দিলাম। মামির সামনে যেতেই মামি নাক শিটকে বলল,

– কিরে নূর? তোর মুখ থেকে ভগ ভগ করে সিগারেটের গন্ধ বেড় হচ্ছে কেন রে?

তুই কি সিগারেট খেয়ে আসলি?

– আমিও নাক শিটকে জবাব দিলাম, সরি টাকা শেষ হয়ে গেছে। পকেটে আর কোনো ২০ টাকার নোট নেই। যাকে খুশি বলে দিও। কিছু করার নেই আমার…

পরের দিনের কথা আর নাই বা বললাম। শুধু মসজিদের কয়েকটা ইমাম, মেম্মার, মাতাব্বর, শ-খানেক মহিলা, আরো কিছু সম্মানিত ব্যক্তি এবং আমার মামা আমাকে একবার করে জিজ্ঞেস করেছিল,

-নূর বাবা?

তুমি নাকি পলায়া সিগারেট খাওয়া ধরছো? শুনলাম নাক দিয়ে নাকি ধোয়াও বেড় করতে পারো…

গল্পের বিষয়:
অনুবাদ
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত