রুসিলন ফরাসি সাম্রাজ্যের অধীনস্থ একটি প্রদেশ। সেখানকার শাসনকর্তা কাউন্টের মৃত্যুর পর নতুন কাউন্ট হলেন তারই যুবক পুত্র বারট্রাম। তার বাবা ছিলেন এক সাহসী যোদ্ধা। যুদ্ধে বীরত্ব দেখিয়ে তিনি ফরাসি সম্রাটের প্রিয়পাত্র হয়ে উঠেছিলেন। কাউন্টের মৃত্যুর খবর শুনে মনে খুব আঘাত পেলেন ফরাসি রাজ। তিনি তার প্রৌঢ় অমাত্য লর্ড লাফিউকে রুসিলনে পাঠালেন কাউন্টের ছেলে বারট্রামকে রাজসভায় নিয়ে আসতে। বারট্রামের বিধবা মার কানে যথাসময়ে পৌঁছে গেল সে খবরটা। ছেলেও তার বাবার মতো সাহসী, যুদ্ধবিদ্যায় পারদশী। সে সময় পার্শ্ববতী দেশগুলির ফ্রান্সের সঙ্গে ঝগড়া-বিবাদ লেগেই থাকত। কাজেই যুদ্ধ-বিগ্রহের প্রয়োজনেই যে বারট্রামকে নিয়ে যাওয়া হবে তা বুঝতে বাকি রইল না বিধবা কাউন্টেসের। যথা সময়ে লর্ড লাফিউ এলেন রুসিলনের প্রাসাদে! এগিয়ে গিয়ে তাকে সাদর অভ্যর্থনা জানাল বারট্রাম। লর্ড লাফিউকে দেখেই কান্নায় ভেঙে পড়লেন কাউন্টেস। লাফিউ এর কারণ জানতে চাইলে তিনি দুচোখমুছে ধরা গলায় বললেন, মি লৰ্ড, আপনি তো জানেন সামান্য কিছুদিন আগে আমি স্বামীহারা হয়েছি। এখন ছেলে বারট্রামই আমার একমাত্র অবলম্বন। ও যদি যুদ্ধে চলে যায় তাহলে আমার কী অবস্থা হবে, কীভাবে আমার দিন কাটবে–এসব ভেবেই কাদছি আমি।
তাকে আশ্বস্ত করে লর্ড লাফিউ বললেন, আপনি মিছামিছিই ছেলের জন্য চিন্তা করছেন কাউন্টেস। যুদ্ধ করতে গিয়ে যদি ওর কোনও ক্ষতি হয়, তাহলে স্বয়ং সম্রাট আপনার ভরণপোষণের দায়িত্ব নেবেন।
কাউন্টেস বললেন, আমি শুনেছিলাম সম্রাট খুব অসুস্থ। তা এখন তিনি কেমন আছেন?
মনোেবল ভেঙে পড়ছে। এমন কি রাজবৈদ্যের উপর ভরসা রাখতে না পেরে কদিন আগে তাকেও বিদায় করে দিয়েছেন। দুরারোগ্য রোগের দরুন হতাশা সম্বল করে কোনও মতে বেঁচে আছেন তিনি।
এ কথা শুনে আক্ষেপের সুরে কাউন্টেস বললেন, আজ যদি হেলেনার বাবা জীবিত থাকতেন তাহলে তিনি অবশ্যই সম্রাটকে সারিয়ে তুলতে পারতেন।
কার কথা বলছেন কাউন্টেস? জানতে চাইলেন লর্ড লাফিউ। কাউন্টেসের পাশে বসে একটি সুন্দরী যুবতি চুপচাপ চোখের জল ফেলছিল। তাকে দেখিয়ে কাউন্টেস বললেন, আমি এরই কথা বলছি। এর নাম হেলেনা। ওর বাবা গেরার্দ দ্য নিরবোন ছিলেন একজন নামি চিকিৎসক। বাবার মৃত্যুর পর থেকেই ও আমার কাছে আছে, লেখা-পড়া শিখছে। তাছাড়া আরও অনেক গুণ আছে ওর।
মার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে হেলেনাকে বললেন কাউন্ট বারট্রাম, হেলেনা, আমি যাচিছ। এখন থেকে মার দেখা-শোনার সব ভার রইল তোমার উপর। আর তুমিও নিজের শরীরের যত্ন নেবে। —এই বলে লর্ড লাফিউয়ের সাথে চলে গেলেন।
আশ্রিতা হলেও কাউন্টেসের ছেলে বারট্রামকে ভালোবাসে হেলেনা, যদিও তার মতো বংশমর্যাদা ও সামাজিক প্রতিষ্ঠা তার নেই। নামি চিকিৎসক হলেও হেলেনার বাবা ছিলেন সমাজের এক সাধারণ স্তরের লোক। এই সামাজিক ব্যবধানের দরুন বারট্রামকে ভালোবাসলেও সে তার স্ত্রী হবার স্বপ্নও দেখেন। ওদিকে বারট্রামও জানেনা হেলেনা তাকে এত ভালোবাসে। মৃত্যুর আগে হেলেনার বাবা তাকে হাতে-কলমে শিখিয়ে গিয়েছিলেন অনেকদুরারোগ্য ব্যাধির চিকিৎসা পদ্ধতি। দুস্তপ্রাপ্য শেকড়-বাকড় আর জড়িবুটির গুণাগুণ। সম্রাটের দূরারোগ্য ব্যাধির বিবরণ শুনে সে স্থির করল। প্যারিসে গিয়ে সম্রাটের চিকিৎসা করবে। তার বিশ্বাস, বাবার শেখানো চিকিৎসা পদ্ধতিতে সম্রাট অবশ্যই আরোগ্যলাভ করবেন। তার মনে এই আশাও উকি দিল প্যারিসে গেলে হয়তো বারট্রামের সাথে তার দেখাও হয়ে যেতে পারে।
হেলেন যে বারট্রামকে ভালোবাসে এ কথা অজানা নেই। কাউন্টেসের একদিন তিনি মুখ ফুটেই বললেন, হেলেনাকে তিনি পুত্রবধূ হিসেবে চান। তিনি তাকে প্যারিসে গিয়ে সম্রাটের চিকিৎসা করার অনুমতি দিলেন। সেই সাথে প্রয়োজনীয় টাকা-কড়ি আর কয়েকজন বিশ্বস্ত লোকও দিয়ে দিলেন তার সাথে।
শুরুতে রাজি না হলেও যখন শুনলেন হেলেনা গেরার্ড দ্য নিরবোনের মেয়ে, সম্রাট রাজি হলেন তাকে দিয়ে নিজের চিকিৎসা করাতে। তবে শর্ত রইল দু-দিনের মধ্যে সম্রাট সুস্থ হয়ে না। উঠলে প্ৰাণদণ্ড হবে হেলেনার। আর সম্রাট সুস্থ হয়ে উঠলে রাজসভার যে কোনও অভিজাত যুবককে বিয়ে করতে পারবে হেলেনা। সম্রাট নিজে দাঁড়িয়ে সে বিয়ে দেবেন। হেলেনা রাজি হল সম্রাটের প্রস্তাবে।
হেলেনার দেওয়া ওষুধ খেয়ে দুদিনের মধ্যেই পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠলেন সম্রাট। তার মনে হল তিনি যেন নতুন জীবন ফিরে পেয়েছেন। এবার সম্রাটের আদেশে রাজসভার অবিবাহিত অভিজাত যুবকেরা সবাই সারি দিয়ে দাঁড়াল একপাশে। সম্রাট হেলেনাকে বললেন, সে এদের মধ্য থেকে কাউকে স্বামী হিসেবে বেছে নেয়।
তাদের মধ্যে খুঁজতে খুঁজতে হেলেনার চোখে পড়ল রুসিলনের কাউন্ট বারট্রামকে। সে সরাসরি তার কাছে গিয়ে বলল, আমি আপনাদের আশ্রিতা। সেহেতু আপনাকে আমার স্বামীরূপে ভেবে নেবার সাহস বা অধিকার আমার নেই। আমি শুধু এটুকু আশ্বাস দিতে পারি। যতদিন বেঁচে থাকব। প্ৰাণ দিয়ে আপনাদের সেবা করে যাব।
তুমি ঠিক লোককেই বেছে নিয়েছ হেলেনা–বললেন সম্রাট। তারপর বারট্রামের দিকে চেয়ে তিনি বললেন, কাউন্ট বারট্রাম, এবার তুমি স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করা হেলেনাকে।
আমায় মাফ করবেন সম্রাট, বললেন কাউন্ট বারট্রাম, আমি ফ্রান্সের এক অভিজাত বংশের ছেলে, রুসিলনের কাউন্ট। আর হেলেনা এক সাধারণ ঘরের মেয়ে। বংশকৌলিন্য বলে ওর কিছু নেই। ও দেখতে সুন্দরী, অনেক গুণ আছে ওর–তা সত্ত্বেও ওকে বিয়ে করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। ওকে বিয়ে করলে অভিজাত সমাজে আমার মাথা নিচু হয়ে যাবে।
গভীর স্বরে সম্রাট বললেন, দেখ, কাউন্ট বারট্রাম! তুমি অভিজাত বংশের ছেলে হলেও আমার অধীনস্থ এক সামস্ত রাজা ছাড়া আর কিছু নও। এ কথা মনে রেখ রাজা কখনও তার প্ৰজার অবাধ্যতা সহ্য করে না। আর তার সাথে এটাও জেনে রাখা সম্রাট হিসেবে অধীনস্থ সমস্তরাজার পাত্রী নির্বাচনের অধিকার আমার আছে। সেই অধিকার অনুযায়ী আমি তোমায় আদেশ দিচ্ছি হেলেনাকে তুমি স্ত্রী হিসেবে মেনে নেবে।
এরপর বারট্রাম সাহস পেলেন না সম্রাটের আদেশ অগ্রাহ্য করার। পরদিন রাজকীয় সমারোহে গির্জায় তার বিয়ে হয়ে গেল হেলেনার সাথে। সম্রাটের আদেশে তাকে বিয়ে করতে বাধ্য হলেও বারট্রাম যে তাকে মন থেকে মেনে নেয়নি। সে কথা জানতে পেরে হতাশ হল হেলেনা।
এবার হেলেনার থেকে দূরে সরে থাকার এক উপায় খুঁজে বের করলেন বারট্রাম। শত্রুর সাথে মোকাবিলার জন্য ফ্লোরেন্সের ডিউক তার জ্ঞাতিভাই ফরাসি সম্রাটের সাহায্য চেয়েছিলেন। সম্রাট সসৈন্যে বারট্রামকে ফ্লোরেন্সে যাবার অনুমতি দিলেন। যাবার সময় হেলেনাকে ডেকে বারট্রাম বললেন, দ্যাখ, আমি ফ্লোরেন্সে যাচ্ছি যুদ্ধ করতে। কিছুদিন সেখানে আমায় থাকতে হবে। সম্রাটের আদেশেই আমি বাধ্য হয়ে তোমায় বিয়ে করেছি। কিন্তু মনের দিক থেকে তোমায় মেনে নিতে পারছি না।
হেলেনা বলল, তাহলে এখন আমি কী করব?
বারট্রাম বললেন, আমি মাকে একটা চিঠি লিখে দিচ্ছি। তুমি সেটা নিয়ে তার কাছে চলে যাও।
হেলেনা সম্রাটের দুরারোগ্য ব্যাধি সারাতে সক্ষম হয়েছে, বারট্রামের সাথে হেলেনার বিয়ে দিয়েছেন সম্রাট-এ খবর শুনে খুব খুশি হলেন কাউন্টেস। কিন্তু তার চেয়েও বেশি দুঃখ পেলেন যখন শুনলেন হেলেনার সাথে দুর্ব্যবহার করেছে বারট্রাম। মাকে লেখা চিঠিতে বারট্রােম একথাও উল্লেখ করেছেন যে শুধুমাত্র সম্রাটের আদেশেই হেলেনাকে বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছে, আর তার থেকে দূরে সরে থাকার জন্য ফ্লোরেন্সে যাচ্ছেন যুদ্ধ করতে। চিঠির শেষাংশে বারট্রাম হেলেনাকে উদ্দেশ করে লিখেছেন, …যদি কখনও আমার হাতের আঙুল থেকে আংটি খুলে নিতে পার আর আমার সন্তানের জননী হতে পোর, তবেই আমায় স্বামী বলে ডাকার ক্ষমতা পাবে তুমি।
হেলেনাকে সাস্তুনা দিয়ে কাউন্টেস বললেন, তুমি কিছু ভেবো না। আমার ছেলের ব্যবহারের জন্য আমি লজ্জিত। তবে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ, তোমাকে ছেলের বউ করে আমার শখ তিনি মিটিয়ে দিয়েছেন। বারট্রামের মতো আমিও তোমাকে নিজের সস্তান বলে ভেবে এসেছি। এখন থেকে ছেলের বউ হিসেবে তুমি আগের মতোই আমার কাছে থাকবে। আমার সমস্ত সম্পত্তিতে বারট্রামের মতো তোমারও সমান অধিকার আছে। আমার কথা বিশ্বাস কর হেলেন, আমি বলছি একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে।
কিন্তু হেলেনা মোটেও আশ্বস্ত হতে পারল না। কাউন্টেসের কথা শুনে। এভাবেই কয়েকদিন কেটে গেল। একদিন সকালে ঘুম ভেঙে হেলেনাকে আর খুঁজে পেলেন না কাউন্টেস। তাকে উদ্দেশ করে লেখা হেলেনার একটি চিঠি তার হাতে তুলে দিল গোমস্তা রোনাল্ডো। সেই চিঠিতে লেখা আছে — মা! আমারই জন্য আপনার ছেলে দেশত্যাগী হয়েছে। সে অপরাধে প্ৰায়শ্চিত্ত করতে আমি খালি পায়ে যাচ্ছি সেন্ট জ্যাকুইসে তীৰ্থ করতে। দয়া করে এ খবরটা আপনার ছেলেকে জানাবেন। অনুগ্রহ করে আপনি আমায় ভুল বুঝবেন না। বাবার মৃত্যুর পর আপনি আমায় আশ্রয় দিয়ে যে উপকার করেছেন তার জন্য আমি আপনার কাছে চিরকৃতজ্ঞ হয়ে রইলাম। ইতি —
হতভাগিনী হেলেনা।
ডিউকের সেনাবাহিনীর নেতৃত্ব দিয়ে ফ্লোরেন্সের যুদ্ধে বারট্রাম জয়লাভ করলেন। মায়েরচিঠি পেয়ে তিনি জানতে পারলেন তাদের প্রাসাদ ছেড়ে চলে গেছে হেলেনা। তিনি নিশ্চিন্ত হলেন এই ভেবে যে আপদ বিদেয় হয়েছে। এরপর তিনি রুসিলনে ফেরার আয়োজন করতে লাগলেন। কিন্তু ইতিমধ্যে হেলেনা যে ফ্লোরেন্সে এসে পৌঁছেছে সে খবর তখনও পর্যন্ত জানতেন না। তিনি! সেন্ট জ্যাকুইসে তীর্থযাত্রা করতে হলে ফ্লোরেন্সের মাঝ দিয়েই যেতে হয়। ফ্লোরেন্সে এসে এক বিধবা মহিলার কাছে আশ্রয় নিল হেলেনা। পরদিন সেই তাকে নিয়ে গেলেন ডিউকের সামরিক বাহিনীর কুচকাওয়াজ দেখাতে। সেনাবাহিনীর পুরোভাগে বারট্রামকে দেখে চমকে উঠল হেলেনা।
বারট্রামের সাথে তার পরিচয় করিয়ে বিধবা ভদ্রমহিলা হেলেনাকে বললেন, ইনি কাউন্ট বারট্রাম। নবপরিণীতা স্ত্রীর কাছ থেকে দূরে সরে থাকার জন্য ইনি ফ্রান্স থেকে ফ্লোরেন্সে এসেছেন। লড়াই করতে। ভদ্রমহিলার কথার জবাব না দিয়ে চুপ করে রইল হেলেনা। ভদ্রমহিলা বলেই চললেন, আমার মেয়েকে কাউন্ট বারট্রাম খুবই ভালোবাসেন। কিন্তু তিনি বিবাহিত হবার দরুন আমার মেয়ের কাছে বিয়ের প্রস্তাব করতে পারছেন না। আগামী কালই তিনি দেশে চলে যাবেন। তাই উনি চাইছেন আজ রাতে মেয়ের সাথে দেখা করতে। কিন্তু আমার মেয়ে তাকে মোটেও পছন্দ করে না। সে রাজি নয় তার সাথে দেখা করতে।
বাড়ি ফিরে এসে হেলেনা সেই ভদ্রমহিলাকে বললেন, দেখুন, আমার নাম হেলেনা। কিছুদিন আগে আমারই সাথে বিয়ে হয়েছে কাউন্ট বারট্রামের। আমার কাছ থেকে দূরে সরে থাকতেই উনি ফ্রান্স ছেড়ে ফ্লোরেন্সে এসেছেন। এবার আপনি আর আপনার মেয়ে — দুজনে সাহায্য করলে আমি ফিরে পেতে পারি। আমার স্বামীকে।
কী সাহায্য তুমি চাও? জানতে চাইলেন ভদ্রমহিলা।
হেলেনা বলল, আপনি এখনই কাউন্ট বারট্রামকে খবর পাঠান যে আপনার মেয়ে তার সাথে দেখা করতে রাজি আছে।
এর ফল কী হবে তা ভেবে দেখেছ? জানতে চাইলেন ভদ্রমহিলা।
হ্যাঃ আমি ভেবে দেখেছি, বলল হেলেনা, খবর পেলে কাউন্ট অবশ্যই এসে যাবেন আজি রাতে। তবে আপনার মেয়ের পোশাক পরে আমি দেখা করব তার সাথে আমার উদ্দেশ্য কাউন্টের আঙুলে যে আংটিটি রয়েছে তা খুলে নেওয়া। তিনি বলেছেন। আংটি খুলে নিতে পারলেই উনি আমায় স্ত্রীর সম্মান দেবেন। আপনি অনুগ্রহ করে কাউন্টকে জানিয়ে দিন যে তার স্ত্রী হেলেনা অর্থাৎ আমি আর বেঁচে নেই।
হেলেনার দুঃখের কাহিনি শুনে ভদ্রমহিলা তাকে সহানুভূতি জানিয়ে আশ্বাস দিলেন তার পরিকল্পনা রূপায়ণে তিনি অবশ্যই তাকে সাহায্য করবেন।
সেদিন গভীর রাতে সাজগোজ করে কাউন্ট এসে হাজির হলেন সেই মহিলার বাড়িতে। তিনি সোজা ঢুকে গেলেন তার মেয়ে ডায়নার ঘরে। সেখানে তখন ডায়ানার পোশাক পরে অপেক্ষা করছিল হেলেনা। তিনি তাকে চিনতে পারলেন না। ডায়ানা ভেবে তিনি তাকে প্রেম নিবেদন করতে লাগলেন। শেষমেশ তাকে বিয়ের প্রস্তাব দিলেন। সুযোগ পেয়ে প্রেমের নিদর্শন হিসেবে বারট্রামের একটি আংটি চাইল হেলেনা। শুরুতে রাজি না হলেও শেষমেশ আঙুল থেকে আংটিটা খুলে নিজেই পরিয়ে দিলেন হেলেনার আঙুলে। সারারাত ডায়না-বেশী হেলেনার সাথে কাটালেন বারট্রাম। সকাল হবার আগেই তিনি বিদায় নিয়ে যাত্রা করলেন রুসিলনের পথে। সেই একই দিনে ভদ্রমহিলা ও তার মেয়ে ডায়ানাকে সাথে নিয়ে হেলেনাও রওনা দিলেন রুসিলন অভিমুখে।
এদিকে বৃদ্ধ কাউন্টেসের অসুস্থতার কথা শুনে ফরাসি সম্রাট স্বয়ং এসেছেন তাকে দেখতে। হেলেনার মৃত্যুসংবাদ শুনে মনে খুব আঘাত পেলেন কাউন্টেস। হেলেনাকে পরিত্যাগ করার জন্য সম্রাট খুবই বাকা-ঝকা করলেন বারট্রামকে। এরই মধ্যে ডায়ানাকে বিয়ে করার সমস্ত ব্যবস্থা ঠিক করে রেখেছেন বারট্রাম। কিন্তু তার আগেই হেলেনা এসে হাজির সেখানে। তার হাতে নিজের আংটি দেখে চমকে উঠলেন বারট্রাম। তিনি হেলেনার কাছে জানতে চাইলেন আংটিটা সে কোথায় পেয়েছে। হেলেনা বলল ফ্লোরেন্সে সেই ভদ্রমহিলার বাড়িতে তিনি সারারাত তার সাথেই কাটিয়েছেন। কিন্তু তার পরনে ডায়ানার পোশাক থাকায় বারট্রাম তাকে চিনতে পারেননি। সে রাতে বারট্রাম নিজেই তার হাতে পরিয়ে দিয়েছেন সেই আংটি। হেলেনা বারট্রামকে এও জানাল যে সে তার সন্তানের জননী হতে চলেছে। বারট্রাম যে সে রাতে হেলেনার সাথেই কাটিয়েছেন তা সমর্থন করল। ডায়ানা ও তার মা। সব কথা শোনার পর কাউন্ট আর দ্বিধা না করে বৈধ স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করলেন হেলেনাকে।