খুব সম্ভবত ইতালির রাস্তায় এর জীবন শুরু হয়। কিন্তু তখন এর কোনো নাম ছিল না। আর রাস্তার কুকুরের কি কোনো নাম হয় কি? যদি কখন থাকেও তবে একটা নাম না, অনেকগুলো।
ঘটনাটি ইতালির।
১৯৪১ সালের নভেম্বরের কোনো একটা রাতে কার্লো সোরিয়ানি নাম এক ইট ভাটার শ্রমিক কাজ শেষে বাড়ি ফিরছিলেন। পথে দেখেন, একটা অসুস্থ কুকুর রাস্তার পাশের একটা নালার মধ্যে পরে আছে। ঘরে হয়তো নিজের রুটি রুজির ঠিক নেই কিন্তু মানবিকতার তাগিদে অসুস্থ কুকুরটিকে ফেলে আসতে পারলেন না কার্লো। কুকুরটিকে নিজের বাসায় নিয়ে আসেন। তার ও তার স্ত্রীর মমতার সেবায় অসুস্থ কুকুরটি সুস্থ হয়ে উঠে। এরপর তারা সিদ্ধান্ত নেন, কুকুরটিকে নিজেদের কাছে রাখবেন এবং রেখেও দেন।
এবার ওর জন্য তো একটা যুৎসই নাম দরকার। কি নাম রাখবে, ভাবতেই নাম খুঁজে পেলেন, ফিডো। যার অর্থ “বিশ্বাসী”। তারা সেদিন জানতেন কি না জানি না, কিন্তু মৃত্যুর আগে পর্যন্ত ফিডো তার নামের মর্যাদা রেখেছিল।
এরপর থেকে প্রতিদিন সকালে কাজে যাওয়ার সময় ফিডো কার্লোর সঙ্গী হয়ে নিয়ম করে বাস স্টেশনে যেত। কার্লো বাসে উঠলে পরেই ফিডো ঘরে ফিরত। আবার কার্লো যখন কাজ শেষে সন্ধ্যায় বাসায় ফিরত, বাস থেকে নেমেই দেখতো ফিডো তার জন্য স্টেশনে অপেক্ষা করছে। এরপর দু’জনের খুনসুটি করতে করতে বাড়ি ফেরা। শত অনিয়মের মাঝে টানা দুই বছর এটাই এদের নিয়ম ছিল। কোনো একটা দিনের জন্যও এর ব্যত্যয় ঘটে নাই।
১৯৪৩ সালের ৩০ ডিসেম্বর। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলছে। কার্লোর কর্মস্থল বার্গো সান লোরেনজো বিমান হামলার শিকার হয়। অনেক নাম না জানা মানুষের মতোই কার্লোর ভাগ্য মিশে যায় কালের স্রোতে। আর তার ফিরে আসা হয় নাই। ফিডো কি জানতো আজকের সকালের সময়টাই তার সাথে কার্লোর শেষ মুহূর্ত ছিল? আর জানলে কি ফিডো কার্লোকে যেতে দিতো? না, ফিডো জানতো না। আর এটা ফিডোর জানারও কথা না।
তাই ঐ দিনেও ফিডো কার্লোর অপেক্ষায় বাস স্টেশনে যায়। কিন্তু কার্লোর আর ফেরে না। ফিডো যে জানে না কার্লোর আর ফিরে আসা সম্ভব না। ও জানে, কার্লো ওকে না দেখে থাকতে পারে না। কার্লো ফিরবে, একবারের জন্য হলেও ফিরবে। আজ হোক কিংবা কাল হোক কার্লোকে ফিরতেই হবে।
এই আশায় ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত ফিডো প্রতিদিন সন্ধ্যায় কার্লোর জন্য বাস স্টেশনে অপেক্ষায় থাকতো যদি একটি বারের জন্যও কার্লো সোরিয়ানি ফিরে আসে আর ফিরে এসে ওকে না পায়। সেই খুনসুটি, কতো গল্প জমা পরে আছে, কতো জমে থাকা অভিমান, কতোকিছু। ফিডো হয়তো ভেবে রেখেছে, একবার ফিরে আসলেই আটকে রাখবে কার্লোকে। আর যেতে দিবে না। কিন্তু সেই সময়টা আর ফিডোর জীবনে ফিরে আসে না। বড্ডো নিষ্ঠুর সময়।
১৯৫৮ সালের ৯ই জুন কার্লোর জন্য অপেক্ষা করতে করতেই ফিডো পৃথিবীর কাছে এক নিঃস্বার্থ ভালোবাসার গল্প রেখে না ফেরার দেশে চলে গেলো…