দ্যা হ্যাটম্যান

দ্যা হ্যাটম্যান

কালো আধার রাত।দরজারটার ছোট্ট ফাকা দিয়ে আসা আলোটাই ঘরের একমাত্র আলোর উতস।চার বছরের বাচ্চার জন্য ঘরটা বেশ পরিস্কারই বলা চলে। খেলনা গুলো ঠিক জায়গায় রাখা,জামা কাপরগুলোও ড্রয়ারের বাইরে নয়।

বাচ্চা ছেলেটা আরামে ঘুমিয়ে আছে।তার বুকের ভেতর থেকে হালকা ঘরঘর আওয়াজ শোনা যাচ্ছে।তার দুটো হাতই আড়াআড়ি ভাবে বুকের উপরে রাখা।একটা হাত একটু নড়ে উঠলো,কিন্তু ক্ষনিকের জন্যই।তার নিশ্বাসের শব্দটাপুরো ঘর জুড়ে শোনা যাচ্ছে যেনো।

বাচ্চাটাকে ঘুমোতে দেখে তার খাটের নিচ হতে ছোট্ট জিনিসটা বেড়িয়ে এলো।ওটা ছোট্ট একটা মানুষের মতো দেখতে।তার ঠোটের উপর পুরু মোচ রয়েছে।কিন্তু তার উপরের নাকটা নেই।তার চোখ দুট কপালের দুপাশে যেনো বসিয়ে দেওা।কান দু্টো আথার দুপাশে বেশ খানিকটা জ্যগা দখল করে আছে।তার মাথায় ভেলভেটের একটা হ্যাট,পনেরোটা লাল রঙের কার্ড হ্যাটটাউপরে আটকে আছে।নিজের পায়ের উপর দাঁড়িয়ে বাচ্চাটার দিকে তাকালো ওটা,নিজের অজান্তেই জিহ্বা দিয়ে ঠোটটাকে ভিজিয়ে নিলো সে।

ছেলেটা একটু নড়লো বটে,কিন্তু জাগলো না।ছোট্ট মানুষটা বিছানা থেকে একটু পিছিয়ে গেলো।বড় বড় চোখ দুটো দিয়ে সে পুরো ঘরটায় নজর বুলিয়ে নিলো।হঠাত ছোট্ট একটু শব্দ হওয়ায় আবার বাচ্চাটার দিকে তাকালো।সে ক্রূর একটা হাসি হেসে বাচ্চাটার দিকে হাত বাড়ালো,ঠিক সে সময়ই বাচ্চাটা চোখ খুলে ফেললো।বাচ্চাটা চিল্লিয়েই উঠতো,কিন্তু লোকটার শান্ত চাহনী দেখে সে চুপ করে রইলো।

“হ্যা-হ্যালো।তো-তোমার নাম কি?” বাচ্চাটা জিজ্ঞেস করলো।তার দৃষ্টিতে কৌতুহল।

লোকটা হাসলো,এরপর তার হ্যাটটা একটু বাকা করলো।“আমি হ্যাটম্যান উইলিয়াম।তুমি আমাকে হ্যাট্ম্যান বলতে পারো।” সে থামলো কিন্তু বাচ্চাটা কৌতুহলী চাহনী থামালো না।“তোমাকে তো কখনো দেখি নি বাবু।তোমার নাম কি?” লোকটা জিজ্ঞেস করলো।

“আমার নাম জ্যাক।আমরা আজই এখানে এসেছি।”

হ্যাটম্যান আবারো ক্রূর হাসি হাসলো,আর বিছানার কোনায় গিয়ে বসে পড়লো।
“ওহ,এ কারনেই তোমাকে আগে এখানে দেখিনি।” কথাটা বলার সময় তার মুখটা বাকা হয়ে এলো।
জ্যাক উঠে বসলো আর চোখ ডলতে লাগলো।ওর বাদামী চুল গুলো বেশ উষ্কখুষ্ক হয়ে ছিলো।সে অদ্ভুত মানুষটার আরো কাছে এসে বসলো।

“তুমি খাটের নিচে কেনো ছিলে?” জ্যাক বললো। ছোট্ট জিনিসটাকে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে সে।
হ্যাট্ম্যান নিঃশব্দে উঠে দাড়ালো আর পুরো ঘরটা একবার ঘুরে দেখলো।তার মুখে খুশি খুশি ভাবটা ব্জয়ায় ছিলো,কিন্তু মনের ভাবটা সেরকম ছিলো না।এরা সবসময় তার কাছ থেকে গোপন কথা গুলো জানতে চায় ক্ষমতা প্রয়োগ করে।যেমন এই ছেলে,নিষ্পাপ চেহারা দেখিয়ে।

“আমি লুকিয়ে ছিলাম,যাতে তোমার বাবা মা আমায় না দেখতে পায়।যদি তারা আমায় দেখে ফেলতো তবে তোয়ামরা বন্ধু হতে পারতাম না।তুমি আমার বন্ধু হতে চাও না?” হ্যাটম্যান জ্যাকের দিকে ফিরে তাকালো,আর জ্যাকের চেহারায় খুশির বন্যা বয়ে গেলো।

“অবশ্যই।আমি অবশ্যই তোমার বন্ধু হতে চাই হ্যাট ম্যান।” কথাটা বলতে বলতে জ্যাকের মুখের হাসি আরো চওড়া হলো,আর তার ছোট্ট দুটো গাল লাল গোলাপের মতো লাল হয়ে এলো।

হলওয়ে থেকে তখনই একটা আওয়াজ হলো।ওরা দুজনই ওটা শুনে চমকে উঠলো।হ্যাটম্যান তড়িৎ বেগে খাটের নিচে ঢুকে গেলো। জ্যাকও হালকা ইতস্তত করে শুয়ে চোখ দুটো বন্ধ করে ফেললো। জ্যাক চোখ বন্ধ করতেই তার মা দরজাটা ফাকা করে ভেতরে তাকালো।তার বাদামী চুল গুলো তার মুখকে ঢেকে দিচ্ছিলো।ঘুমন্ত জ্যাককে দেখে নিশ্চিন্ত হয়ে মা তার ঘরে ফিরে গেলো,দরজাটা হালকা খোলা রেখে।

মা চলে যেতেই জ্যাক বালিশ থেকে মাথা তুললো। আস্তে করে ডাকলো, “হ্যাটম্যান!” কিন্তু সে রাতে আর হ্যাটম্যানের দেখা মেলে নি।

পরদিন সকালে জ্যাকের ঘুম ভাঙলো।সে জেগে উঠতেই হ্যাটম্যান খাটের নিচ থেকে বেড়িয়ে এলো।তার মুখে তখনও ক্রূর হাসিটা লেগে আছে।জ্যাক তাকে দেখে উষ্ণ করে হাসলো।

“তুমি কি আজ আমার সাথে খেল্বে জ্যাক?” হ্যাটম্যান জিজ্ঞেস করলো।তার কালো চোখ দুটো যেনো জ্বলছিলো।তার মাথার হ্যাটটা মুখের অর্ধেকটাই ঢেকে রেখেছিলো আর জানালার আলো পড়ায় লাল কার্ড গুলোকে বেশ উজ্জ্বল দেখাচ্ছিলো।

“খেলবো,এখনই খেলবো।” জ্যাক বলে উঠলো,তার মুখ ভর্তি হাসি।খুশিতে সে প্রায় লাফিয়ে উঠলো।
হ্যাটম্যান হাসলো।তার জিহ্বাটা আবারো তার ঠোট দুটোকে ভিজিয়ে দিলো।সেও খেলবে অবশ্যই খেলবে।এমন এক খেলা,যার কথা সে ছাড়া কেও জানে না।

“চলো লুকোচুরি খেলি।যদি তুমি জিতে যাও,তবে আমি চলে যাবো।আর আমি জিতলে।আমি জিতলে তুমি আজীবন আমার বন্ধু হয়ে থাকবে।” কথা গুলো বলতে বলতে তার গলাটা ঠান্ডা হয়ে এলো।কথাটা শেষ করেই সে গুনতে শুরু করলো, “এক………দুই……………তিন…………”

জ্যাক হাসলো,আর দৌড়ে ঘর থেকে বেড়িয়ে গেলো। তার বাবা-মা নিচতলায়।সে জানতো যে হ্যাটম্যানের কথা তারা জানলে হ্যাটম্যানকে থাকতে দিবে না তারা।তাই সে বাথরুমে গিয়ে লুকিয়ে পড়লো।

হ্যাটম্যান গননা থামালো।ঘরের চারদিকটা একবার দেখে নিলো।ঘরে লুকোনোর মতো সব জায়গায় দেখে নিলো,জ্যাক এখানে নেই।সে আস্তে করে রুম থেকে বেড়ীয়ে পাশের রুমে ঢুকে পড়লো,নাহ ছেলেটা এখানেও নেই।সে ওঘর থেকেও বেড়িয়ে এলো আর বাথরুমের দিকে পা বাড়ালো।সে স্মিত করে হাসলো,আর সিঙ্কের নিচে ক্যাবিনেটে হাত ঢোকালো।জ্যাক ওখানেই আছে,সে জানতো।সে জ্যাককে বের করে আনলো,জ্যাকের সময় শেষ!

হ্যাটম্যান টেনে জ্যাককে বের করে আনলো।ওর নোখ গুলো ধীড়ে ধীরে জ্যাকের চামড়ার উপর দিয়ে আসছিলো,বাচ্চাটার চামড়াকে উপড়ে নিয়ে।এরপরেই সে গলায় কামড় বসিয়ে দিলো আর ভোকালকর্ডটা ছিড়ে নিয়ে এলো। রক্ত ছিটে গিয়ে লাগলো আয়নাটায়।এরপর সে জিহ্বাটা এগিয়ে নিয়ে এলো গলাটার ওখানে,রক্ত গুলো শুষে নিবে! ক্ষনিকের মাঝেই জ্যাকের ফর্সা শরীরটা রক্তশূণ্য ফ্যাকাসে হয়ে উঠলো।হ্যাটম্যানের মুখের হাসিটা ক্রূর থেকে ক্রুরতর হয়ে উঠলো,আর তখন তার হ্যাটের উপর পনেরোটার বদলে ষোলোটা কার্ড শোভা পাচ্ছিল।

জ্যাককে অনেক পরে বাথরুমেই পাওয়া গিয়েছিলো,বাথটাবে,ডুবন্ত অবস্থায়।ওর রক্তশূন্য মুখেও সেই সুন্দর হাসিটা লেগেছিলো।আর হ্যাটম্যান? সে বাসায় আর তাকে কখনো দেখা যায় নি,অন্তত নতুন কেও আসার আগ পর্যন্ত!

…………………………………………………………………..সমাপ্ত…………………………………………………….

গল্পের বিষয়:
অনুবাদ
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত