দাড়ান

দাড়ান

পূর্ববর্তী ঘটনা:-শহরের ধনী এক ব্যক্তি মারা গেছেন।কিন্তু কিভাবে গেছেন তা পুলিশ ধরতে পারেন নি।শিল্পপতি নাদির শাহ।

তার একটি মাত্র মেয়ে। যে সিঙ্গাপুর থেকে পড়াশোনা করছে মেডিকেলে।আর কোন সন্তানাদি নেই।

ওনার স্ত্রী গত হয়েছেন অনেক আগেই।এ গুলো গেলো সাধারন কথা।
রহস্য হচ্ছে মৃত্যুর কোন আলামত খোজে পাননি পুলিশ। ফলে কোন ক্যাস ফাইল করা ছাড়াই মাটি দিবার অনুমতি দিয়েছেন।
.
যখন শহর বাসী জানাজার নামাজ শেষে লাশ কবরে নামাবেন তখন উপরোক্ত কথাটি কেউ বলে উঠলো।কিন্তু লোকটিকে বেশ সাধারন দেখাচ্ছে।

সাদা শার্ট আর কালো ঢিলে ঢালা প্যান্টে একদম বিশ্রী দেখাচ্ছে লোক টাকে। সম্ভবত ফিটিংস এর প্যান্টে মানাবে ভালো।
-আমি লাশ টাকে দুই ঘন্টার জন্য নিয়ে যেতে চাই(আগন্তুক)
-কে তুমি বাবা?(জনৈক বৃদ্ধ)
-আমি কে জানতে হবে না!তবে দুঘন্টা পরে লাশ টা আবার এখানে পৌঁছে যাবে।
-তোমার পরিচয় না পেলে আমরা লাশ দিতে রাজি না!
-আচ্ছা,এই যে দেখুন আমার পরিচয়!
-এস এস এ?
-জ্বি
-মানে কি?
-স্পেশাল সিকুরিটি এজেন্ট!
-কে? রাফায়েল???
-হ্যা মৌমি!
-দেখো না বাবার কি থেকে কি হয়ে গেলো!
-ধ্যাত পাগলি কাঁদে না!আমি এসেছি তো।
.
অতপর লাশ নিয়ে চলে গেলো রাফায়েল।
মৌমি কে সবাই ঘিরে ধরলো বিষয়টা জানার জন্য।
-কে মা ছেলে টা?
-ও আমার পরিচিত। আমি সিঙ্গাপুরে থাকার সময় তার সাথে পরিচিত হয়েছি।সে একজন ক্রাইম রিসার্চার। সিঙ্গাপুর হতে পড়েছে।
আবার বাংলাদেশে এসে গোয়েন্দার চাকরি পেয়েছে।অসম্ভব একটা ব্যক্তিত্ব!
–ওহ।বুঝলাম!
-সে কি সব খুজে বের করতে পারবে?
-হ্যাঁ।মনে হচ্ছে পারবে।
মৌমি উত্তর দিলো।আপনার কয়েকজন দুঘন্টা পরে ঠিক এখানে এসে যাবেন। লাশ ঠিক দুঘন্টা পরেই এসে যাবে চাচা।
-আচ্ছা মা!
.
ঘরে আসে মৌমি। বাবার ডায়রিটা পড়তে থাকে।কারন,সব ঘটনায় তার বাবা লিখে রাখতেন ডায়রিতে তারিখ সহ!

খুব বড় একটা ডায়রি তবে অনেক পুরোনো।কিন্তু দেখলে মনে হবে একদম নতুন।কিন্তু না।

অনেক যত্ন সহকারে রাখায় তা একদম নতুনের মত রয়ে গেছে।

না কোন আলামত খুজে পাচ্ছে না সেরকম। শুধু মাত্র লিখা আছে যে,, সেবিকা মেয়েটা ছুটি নিয়েছে পনের দিনের”।

ছুটি নিবার তিনদিন পরেই নাদির শাহ মারা যান।

কিন্তু দারোয়ান আরে সেই কুকুর তো ঠিকই আছে।তাহলে এটা কি কোন স্বাভাবিক মৃত্যু? না ভেবে পায় না!
.
-রাফায়েল যে? হঠাৎ করে বাড়িতে?
-হ্যা মৌমি।তুমি কি কিছু খুজে পেলে?
-না।বাবার একটা ডায়রি আছে পুরোনো।
সেটায় কেবল লিখা আছে যে নার্স মেয়েটার ছুটির কথা!
-আমি ডায়রিটা দেখতে চাই।
-হ্যা। আসো সাথে!
-তোমাদের এখানে সিসি ক্যামেরাও আছে দেখছি।
-হ্যা।বাবার নিরাপত্তার জন্য লাগানো হয়েছিলো।
-অনেক ভারী একটা ডায়রি।
-হ্যা।কিছু পেলে?
-হুম!
-কি পেয়েছো?
-এই তো একটা নাম্বার আর…..!
-আর কি?
-এই দেখ।ডায়রির এই ফিতা টা স্বাভাবিক স্থানে নেই!
-মানে…?
-মানে হলো।যে স্থানে লিখা শেষ হয় সে পাতার মাঝেই ফিতা টা থাকবে।কিন্তু এটা অনেক আগে। তার মানে এটা কেউ হাতিয়েছে।
-কি করে সম্ভব এটা?যেখানে সিসি ক্যামেরা কিংবা দারোয়ান সব ঠিক আছে!
-তুমি কি আগে দারোয়ান কে দেখেছো?
-হুম দেখেছিলাম।তবে চেহারা টা মনে নেই।
-আমার কিন্তু সন্দেহ হচ্ছে।ফরেন সিক রিপোর্ট অন্যটা বলছে!
-কি করে খুজে বের করবে তুমি?
-দাড়াও কম্পিউটার টা বের করি ব্যাগ হতে।
ততক্ষনে তুমি চা করে নিয়ে আসো!
.
-কি দেখছো এগুলো?
-ওহ চা হয়ে গেছে!
-হুম।
-এটা তোমার বাবার পার্সোনাল ডিটেলস।
যেটা ওনার কম্পিউটার একাউন্টে লিখা আছে।তবে সিকোরিটি খুব শক্ত।

আমি সেই নাম্বার টা দিয়ে সার্চ করে আইডি পেয়েছি কিন্তু তাতে লগিন করার সামর্থ্য নেই।
-তুমি কি খুজে বের করার চেষ্টা করছো?
-আমার সন্দেহ হচ্ছে দারোয়ান কে।তার পরিচয় জানতে চেষ্টা করছি আগে!
-কেন এমন টা মনে হচ্ছে?
-কারন ফরেনসিক রিপোর্ট বলেছে এটা একটা মার্ডার! যা সংঘটিত হয়েছে নির্মম ভাবে।উনার যৌনাংগে রক্ত জমাট বাধা পাওয়া গেছে।

যেটা ফরেনসিক পরীক্ষায় ধরা পরেছে।সম্ভবত খুব বেশি জোরে সেটাতে কেউ আঘাত করেছে।ফলে রক্ত জমাট বেধে মারা গেছেন তিনি।

নিশ্চয় একজন সুস্হ ব্যক্তি মরতে চাবেন না স্বেচ্ছায়!
-ও মাই গড!
-দেখো পেয়ে গেছি তথ্য!
-কি?
-লাস্ট দারোয়ান নিয়োগের যাবতীয় ডিটেলস!রক্তের গ্রুপ টা দেখো।
-ও নেগেটিভ?
-হুম।মনে হচ্ছে বর্তমান দারোয়ানের সাথে তা মিলবে না!
-আমার মাথা খেলছে না।
-দাড়াও। দারোয়ান কে নিয়ে যাচ্ছি এরেস্ট করে।সব পরিষ্কার হয়ে যাবে!
.
-স্যার বলছি স্যার।আর কষ্ট দিবেন না প্লিজ!
-হ্যা।তোকে ছেড়ে দিবো।বলে দে সব।ছাড়া পেয়ে যাবি।
-দাড়ান,,এভাবে পাবেন না।আপনি একটা ছোট তোয়ালে এনে দিন লজ্জা নিবারনের জন্য।
-মানে?
-আমি একটা টেটো দেখাবো যেটা আমার গোপন জায়গার উপরের দিকে লাগানো।খুব ছোট এক টা জিনিস।সেটা দেখলেই আপনি সব পেয়ে যাবেন।
-আচ্ছা।
.
-দেখেছো মৌমি?
-কি?
-টেটো টা দেখো যেটা আইডি তে দেখা
যাচ্ছে।খুব মারাত্মক একটা টেটো।
-ওনি কে?যার নাম দেখা যাচ্ছে সেই টেটো চিহ্নিত স্থানে।
-চিনতে পারলে না?
-আরে উনি তো তোমাদের কম্পানির ই একজন। সাবেক এম ডি।যিনি দুর্নীতির দায়ে
অপমানিত হয়ে বরখাস্ত হয়েছেন।
-এখন উনাকে পাবো কোথায়? ছবিও দেখি নি যে।
-হুম।বলেছিলাম না যে ডায়রিটা কাজে লাগবে।এই দেখো কেমন করে কাজে দিলো।
-কি করবে তুমি?
-এই দেখো, ডায়রির পাতা টাখুব নিখুত ভাবে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।যার কারনে এই দেখো আরেকটা পাতা ঢিলে হয়ে গেছে।

কিন্তু বাকি পাতা গুলো সেলাইয়ে আবদ্ধ।কিন্তু এই পাতা তার ব্যতিক্রম!
-এটাও সম্ভব?
-চলো পরীক্ষা করি তার পরের পাতা টা।
তাহলেই পরীক্ষার ও এম আর ফরমের মত সব বেরিয়ে যাবে।কারন, এটা ডায়রির একটা বিশেষ গুন যেটা নেটে সার্চ দিয়ে জেনেছি।
-তাহলে খুব তাড়াতাড়ি পেয়ে যাবো তাকে।
-না সহজ হবে না কাজ টা!
-কেন?
-কারন, খুব নিখুত একটা প্ল্যান এটা।
-ওহ…..!
.
-ইউ আর আন্ডার এরেস্ট মিষ্টার নওশের খান ওরফে আবেদ রহমান?
-মানে?
-শিল্পপতি নাদির শাহের হত্যার জন্য আপনাকে বিশেষ নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার করছি।
-তার কি প্রমান আছে?
-চলুন। প্রমান ছাড়া এসএসএ রাফায়েল আসে না!
.
-এসব কিছু দেখার পরেও কি আরো প্রমান চান? নাকি শেষ টা আমি দেখাবো।

তারপর বলবেন সবকিছু।নাকি এখন মুখ খুলবেন।
-জ্বি বলছি।

তখন আমি এমডি ছিলাম নাদির শাহের।কিন্তু কোনদিন খেয়ানত করি নি।কিন্তু এক বিশেষ প্রয়োজনে আমার অনেক গুলো টাকার দরকার হয়।

সে সময় ভাবার সময় ছিলো না।স্যার কে না বলেই টাকা টা নিয়ে নেই।কিন্তু পরে তিনি একাউন্ট চ্যাক করলে ধরা খেয়ে যাই।
তিনি অনেক অপমান করে বরখাস্ত করে দেন।
আমি গায়ে খেটে বেতন থেকে তা পরিশোধ করাে কথা বলি।স্যার শুনেন নি।তখন থেকেই আমি সুযোগের অপেক্ষায় ছিলাম।

কারন, সেই নার্স, দারোয়ান আর কুকুর টার জন্য আমার প্ল্যান ব্যর্থ হতে থাকে।তবে একদিন সুযোগটা পেয়ে যাই।নার্স ছুটিতে গেলো।

তার কুকুরটা ছিলো মাংস সহ হাড় লোভী।

তবে সেটা অনেক পরীক্ষা করে খেতো।হাড়ের ভেতরে খুব শক্ত বিষ ঢুকিয়ে সেটা কে ঠিক করে সামনে ফেলি কুকুরের।

যাতে ধরতে না পারে সেটা বিষাক্ত।তারপর কুকুর টা গেলো।

বাকি রইলো সুচতুর দারোয়ান।

প্ল্যান করে মাইক্রো গাড়ি করে দুজন কে পাঠালাম নাদির শাহের সাথে দেখা করার নাম করে যে তারা কোম্পানি হতে এসেছেন।

কিন্তু এটা ধরতে পারলো না দারোয়ান। তারপর দারোয়ান কে ক্লোরোফর্ম দিয়ে অজ্ঞান করে নিয়ে এলাম।

তার জায়গায় নতুন দারোয়ান আর নতুন কুকুর যেটা ঠিক আগের কুকুরের মত সব কিছু নকল করতে পারে:তা রেখে এলাম।

ওই দুজন ছিল প্রশিক্ষিত।

ফলে খুব সহজে আসল সিসি ক্যামেরা সরিয়ে নকল গুলো লাগিয়ে দিলো।
শেষ কাজ টা করে ফেললো।

তবে বুঝতে পারিনি যে সেই ডায়রিটা না সরানো আর রক্তের গ্রুপ টা সব ব্যর্থ করে দিবে….!

গল্পের বিষয়:
রহস্য
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত