চা বাগানে দেখা রহস্যময় মেয়েটি

চা বাগানে দেখা রহস্যময় মেয়েটি

ঘটনাটি গত বছর নভেম্বর মাসের সিলেটের। যেখানে আমার বন্ধু নাবিলের বাড়ি। আর আমি চা বাগান দেখার উদ্দেশ্যে সিলেটে ওর বাড়িতে উঠেছিলাম। নাবিলের বাড়িতে চার পাঁচ জন সদস্য ছাড়া তেমন কেউ থাকতো না। অনেক নিরিবিলি ও সুন্দর একটি বাড়ি। আমি সিলেটে যাবার পর নাবিলের বাবা আমার থাকার ব্যবস্থা করে ছিলেন। তবে এখানে বলে রাখি আমি সিলেটে একা যাইনি। আমিসহ ঢাকা থেকে চার বন্ধু যাই। সবাই অনেক কৌতূহলী ছিলাম। কেননা সিলেটের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখার অনেক দিনের ইচ্ছা ছিল। আর সিলেট এমন একটি জায়গা যেটি ভ্রমণবিলাসী সব মানুষকেই মোহিত করতে পারে। আমরাও তার ব্যতিক্রম ছিলাম না। নাবিলের বাড়ি থেকে চা বাগানের দূরত্ব ছিল আনুমানিক ত্রিশ মাইলের মত।

যাইহোক, এবার ঘটনায় আসি, 25 নভেম্বর আমরা সবাই সকাল আটটায় চা বাগান দেখার উদ্দেশ্যে নাবিলের বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ি। আর নাবিলও আমাদের সাথে বেরিয়ে পরে। আর আগের দিন আমরা একটি প্রাইভেটকার রিজার্ভ করে ছিলাম যাতে সকাল সকাল বেরিয়ে পড়তে পারি।

তারপর, আনুমানিক এক ঘন্টা পর আমরা চা বাগানে পৌঁছে ছিলাম। আর সব বন্ধু মিলে ঘুরতে লাগলাম। সেই চা বাগানের সবুজের সমারোহ আমাকে এতটাই মোহিত করে ছিল, যা ভাষায় বলে আপনাদের বুঝাতে পারবো না। পরে অনেক ঘোরাঘুরির পর সবাই মিলে দুপুরে চা বাগানের পাশে অবস্থিত রেস্ট হাউজে খাওয়া দাওয়া করি । অবশ্য, এখানে আমরা দুই দিনের জন্য এসে ছিলাম।

যাইহোক,সেদিন আবার বিকাল চারটার দিকে আমি একাই চা বাগানে ঘুরতে বেরিয়ে পরলাম। কারণ সারাদিন ঘোরাঘুরির পর সবাই একটু বেশিই ক্লান্ত ছিল! নাবিল অবশ্য আমাকে একা বাহির হতে মানা করেছিল কিন্তু আমি নাছোড়বান্দা তাই ওর কথায় পাত্তা দেইনি।

যাইহোক, তারপর শীতের কাপড় চোপড় পড়ে ও আমার canon camera টি হাতে নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। আর চা বাগানে যতদূর চোখ যায় ততদূর পথ হাটতে লাগলাম আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কিছু ছবি তুলতে লাগলাম। এভাবে পথ চলতে চলতে কখন যে সন্ধ্যা নেমে আসে আমি বুঝতেই পারিনি। তখন রেস্ট হাউজে যাবার চিন্তা করি কিন্তু হায় কপাল চা বাগানের সবুজ অরণ্যে অনেকক্ষণ হাটার পরও রেস্ট হাউজে ফেরার পথটি খুঁজে পেলাম না! মানে রেস্ট হাউজে ফেরার পথটিই হারিয়ে ফেলেছি! তখন নাবিলকে একটা কল করার চিন্তা করলাম কিন্তু ভাগ্যটা এত খারাপ ছিল যে, সেলফোনটি ভুলে রেস্ট হাউজেই রেখে এসেছিলাম! এদিকে দিনের আলোও শেষ হয়ে এসেছে। আর কিছুক্ষণ পর মাগরিবের আযানও দিয়ে দিল! এখন কি করি! আমার অনেক ভয় লাগতে শুরু হলো। আর চারদিক থেকে ঝিঁ ঝিঁ পোকা ও বন্য জীব জন্তুর ডাক শুনতে পাচ্ছিলাম। তখন আমি আমার সাথে থাকা গ্যাস লাইটারের আগুন জ্বালিয়ে অজানা পথ চলতে শুরু করলাম। কিন্তু পরক্ষণে বুঝতে পারলাম ভয়ে আমার শরীর হিম হয়ে আসছে। আর এতটা ভয় পেয়েছি যে কাউকে চেঁচিয়ে ডাকবো সেটাও পাচ্ছিলাম না!

এমন সময় হঠাত্ দেখি, দূরে কে জানি একজন দাড়িয়ে আছে। আর তার সঙ্গে একটি হারিকেনও ছিল। যাক আলো দেখে কিছুটা ভয় কমে গিয়ে ছিল। তারপর কাছে গিয়ে দেখি আট দশ বছরের একটি মেয়ে সেই হারিকেনটি নিয়ে দাড়িয়ে আছে!

আমি বললাম… কে তুমি.? তোমার নাম কি.?

মেয়েটি বললো…আমি ফাতেমা, এই তো বাগানের পাশেই আমার বাড়ি।

স্যার আপনি কৈ যাবেন.?

আমি বললাম…আমাকে স্বর্ণালি রেস্ট হাউজে পৌঁছে দিতে পারবে?

ফাতেমা বললো…পারবো স্যার, আমার সাথে আসেন।

তারপর ফাতেমার সাথে রেস্ট হাউজের কাছাকাছি আসতে সে বললো…স্যার এখন আমি যাই, মা বকবে।

আমি তাকে বললাম…ফাতেমা পঞ্চাশ টাকা নাও কিছু কিনে খেও কিন্তু সে নিল না!

তারপর একটা মুচকি হাসি দিয়ে দৌড়ে কোথায় জানি অদৃশ্য হয়ে গেল!

আমি অবাক হয়ে ক্ষাণিকক্ষণ দাড়িয়ে ছিলাম! তারপর রেস্ট হাউজে আসলাম।

আসার পর নাবিল বললো…বারান্দা থেকে দেখলাম, তুই সামনের ঐ গাছের নিচে দাড়িয়ে একা একা কার সাথে জানি কথা বলছিস.?

আমি বললাম…কেন তুই দেখিসনি, ছোট একটি মেয়ের সঙ্গে কথা বলছিলাম। আর সেই তো আমাকে রেস্ট হাউজ পর্যন্ত এগিয়ে দিল!

নাবিল বললো…আমি তো স্পষ্ট দেখতে পেলাম তুই ছাড়া ওখানে কেউ ছিল না!

আমি অনেক ভয় পেয়ে গেলাম আর পরের দিন রেস্ট হাউজের গার্ডকে বললাম…আপনি ফাতেমা নামে কাউকে চেনেন? যে এই চা বাগানের আশপাশেই থাকে। আর বয়স আট দশ বছর হবে।

গার্ড বললো…স্যার, ফাতেমা আমার প্রতিবেশী ভাই কাশেম ভাইয়ের মেয়ে।

কিন্তু সে তো গত তিন বছর আগে এই চা বাগানের টিলা থেকে পড়ে মারা গেছে! আর ওর মা এই চা বাগানে চা পাতা তোলার কাজ করে।

এ কথা শুনে অনেক কষ্ট পেয়ে ছিলাম আর আজও ফাতেমার সেই মুচকি হাসি ও তার কথাগুলো আমার স্মৃতিকে নাড়া দেয়।

গল্পের বিষয়:
রহস্য
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত