অপু গ্রামের পোস্টমাস্টার বয়স 35/36.খুভি নিরীহ ভালোমানুষ,গ্রামের এক পাশে একটি ঘরে তার মায়ের সাথে থাকে.পোস্ট অফিশের কাজ বাদে তার একটি নেশা রাতে হলো মাছ ধরা,জেইসেই পুকুরে সে মাছ ধরেনা শুধু যেসব পুরনো বিশাল পুকুরে বড় বড় মাছ থাকে সেই সব পুকুরেই সে ছিপ দিয়ে মাছ ধরতে যায়.মাছ ধরেই সে খুশি,তবে বড় মাছ ধরলে বেশির ভাগ সময় ভাগ করে তার প্রতিবেশি দের বিলিয়ে দেয়.তোবে কেও কোনো বড় মাছ ভর্তি বড় পুকুরের খোজ পেলেই তাকে এসে জানায়.একবার একজন এসে জানালো পাশের অজম্নগর গ্রামের জমিদার বাড়ির দিঘিতে নাকি অনেক বড় বড় রুই কাতলা আছে ,অনেক পুরোনো দিঘি, যাবে নাকি একবার? শুনে অপুর চোখটা আনন্দে ঝকমক করে ওঠে .বড় মাছ ছিপ দিয়ে ধরার মজায় আলাদা.সে মনে মনে ঠিক করে ফেলে সময় করে সে সেখানে মাছ ধরতে যাবে.
একদিন সকালবেলা সে ছিপ,বর্ষি,মাছের কারা ( মাছের খাবার ) নিয়ে বেরিয়ে পরে সেই গ্রামের দিঘির উদ্দেশে.১ ঘন্টার মধ্যে সে সেই গ্রামে পৌছে যায়. প্রথমে সে ঘুরে ঘুরে জমিদার বাড়িটা দেখে ,প্রকান্ড সেই বাড়ি,বোঝাই যায় এককালে খুব জৌলুস ছিল বাড়িটার কিন্তু এখন যত্নের অভাবে ভগ্ন দশা.বাড়িটার দেখাশোনার জন্য একজন দাড়োয়ান আছে, তার সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বলে সে দিঘির পারে আসল.বিরাট সান বাধানো দিঘি.ঘাটের দুপাশে দুটি শেত পাথরের মত্সকুমারির মূর্তি.এবার সে ভালো করে নিরীক্ষণ করে বুঝতে পারল এ জায়গাতে অনেক বড় বড় মাছ আসে, দিঘির পানি ঘন সবুজ আর তার চার পাশে বিশাল বিশাল বিভিন্ন গাছে ভরে আছে, চারিদিক একদম চুপচাপ নিস্তব্ধ.এবার সে দিঘির ঘাটের শেষ ধাপে বসে মাছ ধরার আয়োজন করে বসে পড়ল.এককালে এই ঘাটে জমিদার বাড়ির মেয়েরা বসে গল্প করত ,গোসল করত, আর আজ তাদের কেও নেই এসব ভাবতে ভাবতে সে কিছুটা আনমনা হযে গিয়েছিল, হটাত তার ছিপের সুতোয় টান পড়ল আর সে কল্পনার জগত থেকে বাস্তবে ফিরে তার ছিপের সুতোর দিকে মন দিল, সে পাকা মাছ শিকারী সুতোর টানেই বুঝতে পারল বিশাল মাছ টোপ গিলেছ! আনন্দে উত্তেজনায় সে দ্রুত সুতিয় ঢিল দিতে লাগলো,সে পাকা শিকারী কোন মাছ কি ওরে খেলিয়ে তুলতে হয় তার চেয়ে বেশি আর কি জানে? এভাভে বেশ কিছু সময় সুত ছারে আবার টেনে চলল, এমন করতে করতে মাছ টা বাগে এসে গেল মাছটা অচতে অচতে সুত গুটিয়ে আনার সাথে সাথে ঘাটের কিনারে চলে আসতে লাগলো,অপু এবার সাবধান হলো, কারণ সাবধান না হলে মাছ টেনে তুলার সময় মাছের লেজের ঝাপটায় সে পানিতে পরে যেতে পারে.মাছটি বিশাল এক কাতল মাছ,ওজন ১৫ কেজির এর বেশি হবে,দেখেই বোঝা যায় অনেক বয়স মাছটার, মাছটার গায়ে বড় বড় আশ ও শেওলায় ঢাকা. কিন্তু সে অবাক হয়ে দেখল মাছটার নাকে সোনার নথ পরানো.সে অবাক হয়ে ভাবছে কে এই নথ মাছটার নাকে পরিয়ে ছিল? এমনসময় সে হটাত চমকে ওঠে পিছনে সব্দ পেয়ে,পিছন ফিরে দেখে ৫ বছরের ফুটফুটে একটি মেয়ে , গায়ে ধব ধবে সাদা দামী একটি ফরক, আর কি মায়া ভরা তার চেহারা.সে মেয়েটিকে বলল মামনি তুমি কার সঙ্গে এসেছ?একা একা দিঘির পারে ছোট সোনাদের আসতে নেই যে.কিন্তু মেয়েটি তার উত্তর দিল না বরং বলল, কাকু তুমি মাছটাকে ছেড়ে দাও,ও খুব কষ্ট পাছে তো আমার খুব কষ্ট লাগছে.অপু বলল সব মাছি তো দেকতে এক? ইটা তোমার পোষা তুমি বুঝলে কি করে?মেয়েটি বলল আমি আদরে করে ওর নাকে নথ পরিয়ে দিয়েছিলাম সেটা এখন আছে, তুমি ওকে তারাতারি ছেড়ে দাও ,পানি ছাড়া ও আর বেশি খন বাচবেনা .মেয়েটির কান্না ভেজা মুখটা দেখে তার বুকটা ব্যথায় মচর দিয়ে উঠলো. তো সে বলল এইত মামনি আমি এখুনি তোমার মাছ কে ছেড়ে দিচ্ছি বলে পিছন ফিরে যত্নের সাতে মাছের মুখ থেকে বর্ষি খুলে তাকে আবার পানিতে ছেড়ে দিয়ে বলল এইযে দেখো মামনি তোমার মাছ আবার পানিতে চলে গেছে বলে সে তাকিয়ে দেখে সেখানে কেও নেই, অপু খুব অবাক হয়ে গেল এত তারাতারি সে কথায় চলে গেল?সে তখন জমিদার বাড়িতে যেয়ে দেখে পাহারাদার আর একজন মহিলার সাথে কথা বলছে, আর সেখানে একটি গাড়ি দাড়ানো.কথা বলে মহিলাটি চলে গেল, অপু যেয়ে পাহারা দরের কাছে মেয়েটির কথা জিগ্গাস করলো, পাহারাদার মেয়েটার কথা সুনে বিমর্ষ হয়ে গেল, জিজ্ঞাসা করলো মেয়েটার চেহারা সম্পর্কে, অপু যাদেখেছে তা বলল সুনে সে বলল , সে মেয়েটির নাম তুলি এবং আজ থেকে ১০ বসর আগে ৫ বসর বয়েসে সে পানিতে ডুবে মারা যায়, এর কিসুদিন পরে তুলির বাবা-মা ঢাকায় চলে যায়.আজ ছিল তুলির মৃতু দিবস তো ওর মা আজ এসেছিল,প্রতিবসর এই দিনে সে এখানে আসে বেশ কিছুক্ষণ থেকে আবার চলে যায়.একথা সুনে ভয় তো দুরের কথা অপুর মনটা ভিশন খারাপ হয়ে যায়.সে আর এখন মাছ ধরে না.কেও মাছ ধরার কথা বললে তার মনে পরে যায় সেই বিষন্ন ধুখিনি কছি মুখতার কথা আর তার সেই কথাটা, কাকু আমার পোষা মাছটাকে ছেড়ে দাও ওর খুব কষ্ট হচ্ছে.