হ্যাঁঁ আমি ই

হ্যাঁঁ আমি ই

আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমার মা কে খুন করব।হ্যাঁ আমার মা কে।আমরা এক বোন দুই ভাই।বড় ভাই শাওন ও বোন ইশিতা আমার সৎ ভাই বোন।শাওন ও ইশিতার মা আমার বাবার প্রথম বউ।

এরা আমার বাবার ১ম মারা যাওয়া বউ এর ছেলেমেয়ে।আমার মা কে দ্বিতীয় বিয়ে করে আমার বাবা।আমার মা ছিল একটু দজ্জাল টাইপ। আমার বড় বোন ও বড় ভাইকে কথায় কথায় খোটা দিত।তার কথার তীরে বিদ্ধ হওয়া সৎ বড় ভাই ও বোন ছিল আমার কাছে খুব প্রিয়। তারা ছিল আমার ছোট বেলার খেলার সাথি।আমার মা কে খুন করতেই হবে।কারণ এই মা আমার বড় ভাই ও বোন কে অনেক অত্যাচার করত।আমার সাথে মিশতে কম দিত।আমি সারাদিন একা একা বাসায় কি করব কিভাবে সময় কাটাব তা নিয়ে সে ভাবত না।আর আজ যা হয়েছে, সেটার জন্য আমি আমার মাকে কখনো ক্ষমা করব না। মাথার উপর ফ্যানের সাথে ঝুলে আছে মৃতদেহটা।

আমার সৎ ভাইয়ের মৃতদেহ।আমার নিজের আপন মা সৎ ভাইকে বলত,তার মারা যাওয়া মা নাকি বেশ্যা ছিল একটা।আর শাওন ভাই এর নাকি বাবার ঠিক নাই।আরো বলত “শাওন তুই যদি মানুষ হয়ে থাক তাহলে তোর আসল বাপের খোজ নে,যা,এখানে বসে বসে তোরা দুজন গিলিস না।” শাওন ভাই তার বোন কে নিয়ে কোথায় যাবে????

মা এর জেরে ছোট বেলা থেকে পড়ায় নি শাওন ভাই কে।আমি খুব ভাল স্কুল থেকে পাশ করে,এখন ঢাকার ভাল একটা কলেজে পড়লেও শাওন ভাই এর করা হয়নি মেট্রিক পাশ ও আর তার বোন তো বাসার বিনা বেতনের কাজের মেয়ে, তারপর ও তারা ছিল নিশ্চুপ।কখনো মুখ ফুটে বলে নি কিছু,কিন্তু একদিন যখন শাওন ভাই কে মা বলল,” বাসায় বসে বসে খাস,তোরা দুজন,কিছু একটা কর,নাইলে বের হ বাড়ি দিয়ে,”

শাওন ভাই বলল, আমরা কি করব কোন কাজ পাচ্ছি না তো এখন ও,তখন মা বলে তোর বোন কে দিয়ে ব্যাবসা কর,একদম নগদ টাকা পাবি,বালের বড় ভাই হইছস তুই,একটা বোন নিয়া চলার সামর্থ নাই তোর,এই রকম ভাই বেঁচে থাকা আর মারা যাওয়া সেইম কথা,

মা এর এরকম কথা সহ্য করতে না পেরে, সেবার সুইসাইড করার চেস্টা করেছিল শাওন ভাই।কিন্তু ভাগ্য ক্রমে বেঁচে যায় সে। এরপর বাবা সব জানতে পারার পর ও কিছুই বলেনি মা কে।শাওন ভাই এর বোন অনেক কান্না করেছিল। দু দিন অজ্ঞান ও ছিল। বলছিল,মা এর মত তুই আমাকে ছেড়ে যাস না ভাই।আমি খুব একা।আমার বাবা নাই,মা নাই,শুধু তুই আছস ভাই।সেদিন শাওন ভাই তার আপন বোন কে এবং আমাকে ধরে প্রমিস করেছিল সে নিজেকে আর হত্যা করার চেষ্টা করবে না।কিন্তু আজ কি হলো?? আজ সে প্রমিস রাখে নি।ঝুলে আছে ফ্যানের সাথে।

এ জন্য আমি আমার মা কে খুন করতে চাই।যদিও সেটা কলঙ্ককর হবে তবুও,তবুও হোক না একবার জয় মানবতার,আমার মা প্রেগন্যান্ট। তার পেটে আমার অনাগত ভাই।১০ মাসের অন্তঃসত্তা আমার মা।তবুও তাকে আমি মারব।খুব কঠিন ভাবে।মা কে মারা ব্যাপার না।সারাদিন খায় আর ঘুমায়।মা কে মেরে ফেলে আমাকে বাঁচতে হবে।ধরা পরা যাবে না।তাই সব কিছু প্লান মাফিক করতে হবে।

মা আমাকে অনেক বিশ্বাস করত।বলত ফাহাদ,আমি তোর থেকে তোর বাবা কে কম বিশ্বাস করি,আর এই আমি,তার সাথেই বিশ্বাসঘাতকতা করব।কাছের মানুষ শত্রুতে পরিণত হলে কোন নিস্তার থাকে না আর।মা কে ছাদ দেখার প্লান করে ছাদে নিয়ে আসি।প্রেগন্যান্ট হওয়ায় মা আমার হাত ধরে হাঁটছিল, প্লান মাফিক ছাদের কিনারা থেকে ধাক্কা দিয়ে দেই, মা কে। তিন তলা থেকে নিচে দেয়ালের বেড়ার উপর থাকা লোহার সুচালো ডগায় পরে সেখানেই ছটফটিয়ে মারা যায় আমার মা।

এবার আমার চোখ গেল আমার আদরের বোনের দিকে।আপন ভাই ছাড়া,অনেক কষ্টে আছে মেয়েটা।ওর তিলে তিলে শেষ হওয়া দেখতে ইচ্ছে করছিল না।মেরে ফেললেই সব শেষ হয়ে যাবে।

পুলিশ এসে আত্মহত্যা করার জন্য কেস লিখল।সহজেই আমার খুন করার রহস্য গোপন হয়ে গেল।

আজ ভাবছি আপুকে বালিশ দিয়ে চেপে খুন করে দড়িতে ঝুলিয়ে দিব।সবাই ভাববে আত্মহত্যা, কিন্তু আমি আসোলেই চাচ্ছি আপু মুক্তি পাক। বাবা ব্যাবসার কাজে ২৩ তারিখ বাইরে যাবে।রাতে আমি আর আমার বোন একা থাকব।সেদিন ই খুন করব তাকে।ক্যালেন্ডার এর পাতায় ২৩ তারিখে লাল মার্কার নিয়ে একটা লাল গোল্লা মারব।কিন্তু তখন খেয়াল করলাম,২৩ তারিখের উপর একটা কালো কালির গোল্লা ও আছে।

আজ ২৩ তারিখ। রাত ৩:৩০,এটাই বেস্ট সুযোগ। আস্তে আস্তে আমি আপুর রুমে ঢুকলাম। হ্যা এইত আপু কাঁথা গায়ে দিয়ে শুয়ে আছে হাতে আগে থেকেই আমি বালিশ নিয়ে এসেছি।বিছানায় নিজের সুবিধা মত অবস্থান এ বসে,আপুর নাক মুখ সোজা বালিশ সজোরে চেপে ধরলাম।

সব নিস্তব্ধ। চমকে উঠলাম আমি। তাড়াতাড়ি বালিশ সড়িয়ে কাঁথা তুলে দেখি, আমি বালিশ চাপা আপুর উপর দেই নি।আমি একটা কোল বালিশ কে চেপে ধরেছি। তাহলে আপু কোথায় গেল???

হঠাৎ করেই ধুম করে একটা আওয়াজ আসল।ঝিঁ ঝিঁ পোকা ডাকতে লাগল কানে।অনুভব করলাম মাথা গড়িয়ে হালকা তরল নেমে আসছে।তারপর কিছু মনে নেই আর। যখন হুশ ফিরল, আমার হাত পা বাঁধা একটা খাটের সাথে।মুখে রুমাল গোঁজা,কথা বলতে পারছি না।কপালে রক্ত শুকিয়ে জমাট বেধে আছে। প্রচুর ব্যাথা মাথার পিছনে।

হঠাৎ এক গাদা থু থু পড়ল আমার মুখে,সামনে চেয়ে দেখি,আমার হ্যাংলা পাতলা আপু দাঁড়িয়ে আছে।
: কি ভেবেছিলি ফাহাদ?? আমাকে মেরে ফেলবি??

: আপু, ভুল বুঝো কেন আমাকে??

: তুই শাওন কে মেরেছিস,ভাবছিস আমি দেখি নি?? যখন তুই শাওন কে ফ্যানের সাথে ঝুলাচ্ছিলি তখন আমি ঠিক ই দেখেছি।কিছু বলিনি,কারন তাহলে তোর বাবা মা টাকা দিয়ে সব কিছু চাপা দিয়ে দিত।আমিও মারা যেতাম,তোর বিচার হত না।তুই তারপর তোর মা কে খুন করলি,কারণ তোর মা এর পেটে আরেকজন ভাই ছিল, তোর সম্পদের আরেকজন ভাগিদারী।তারপর তোর সম্পদের লাস্ট অংশিদার ছিলাম আমি,আমি মরে গেলেই সব শেষ।হাহা, খুব সুন্দর প্লান ছিল ফাহাদ।

কিন্তু তুই জানিস না,আমি এই রাতের জন্য অপেক্ষা করছি অনেক দিন,আমি ক্যালেন্ডার এ কালো গোল্লা মেরেছিলাম তোকে খুন করার জন্য,কিন্তু যখন সেখানে লাল গোল্লা দেখলাম,তখন ই বুঝেছি,তুই আমাকে খুন করতে আসবি এই রাতে,আর আমার ফাঁদ টা ও ঠিকভাবে কাজ করেছে। এর পর আমি আর কিছু বলতে পারলাম না।

কথা গুল শুনতে শুনতে আমার হাত পা সব কেঁপে উঠছিল,আমার এ নিঁখুত প্লান কিভাবে জানল এ মেয়েটা!! ভাবনার রেশ শেষ হতে না হতেই অনুভব করলাম ধারাল কিছু একটা আমার বাম পাশের বুক ছিদ্র করে কলিজায় গিয়ে আঘাত করল,কয়েকবার।অনেক রক্ত পড়ছে।আমি মারা যাচ্ছি,কিন্তু ব্যাথা হচ্ছে না।কারন আজ অনেক আফসোস হচ্ছে,আফসোস এর ওজন এই ব্যাথার ওজনের চেয়ে এত বেশি যে আমি ব্যাথা পাচ্ছি না।

একজন মাস্টার প্লান করা খুনী হারিয়ে গেল দেশ থেকে,কালের আবর্তনে এভাবেই বুদ্ধিমান মানুষরা মারা যায় । পৃথিবী ও হারিয়ে ফেলে আমার মত লিজেন্ড দের।বিদায়.. নিষ্ঠুর পৃথিবী,বিদায় অভাগা পৃথিবী।

গল্পের বিষয়:
রহস্য
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত